ভারতের পবিত্র মন্দিরগুলির মধ্যে প্রথমেই উঠে আসে একান্ন
সতীপীঠের নাম। আর এই একান্ন সতীপীঠের মধ্যে একই নামে দু-দু'টি সতীপীঠ
বর্তমান। কথিত, দক্ষযজ্ঞের পর সতী দেহত্যাগ করলে দেবাদিদেব
মহাদেব সতীর দেহ নিয়ে প্রলয় নৃত্য শুরু করলে ভগবান বিষ্ণু তাঁর চক্র দিয়ে সতীর দেহ
খণ্ড বিখণ্ড করলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সতীর দেহাংশ ছড়িয়ে পড়ে।
সতীর একটি নয়ন পড়ে হিমাচলপ্রদেশে। সেখানে গড়ে ওঠে নৈনি
দেবীর মন্দির।
আবার দেবীর অপর নয়ন পড়ে উত্তরাখণ্ডের নৈনিতালে। এখানেও
গড়ে ওঠে নৈনি মন্দির। একেও অনেকে একান্ন সতীপীঠের অন্যতম মনে করেন। বলা হয়, এই সতীর নয়ন
থেকেই পরিবর্তিত হয়ে স্থানের নাম হয়েছে নৈনিতাল। (তাল কথার অর্থ লেক বা সরোবর)।
নৈনিতাল লেকের অপর প্রান্তে এই মন্দির একটি পাহাড়ের উপর।
কোনও কোনও ঐতিহাসিকের মতে, এখানে ১৫ শতকে কোনও মন্দির ছিল। এই মন্দিরটি ১৮৮০-র
ভূমিকম্পে নষ্ট হয়ে গেলে ১৮৮৩ সালে এর পুনর্নিমাণ হয়। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়,
বিভিন্ন রাজবংশের সহায়তায় পুনর্নির্মাণের পর মন্দিরটির বর্তমান রূপ
নির্মিত হয়।
আবার কারও মতে কুষাণ যুগে এই মন্দিরের অস্তিত্ব মেলে। ১৫
শতকে এই মন্দিরে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন দেবীর এক পরম ভক্ত মোতিরাম শা ১৮৪২ সালে, ১৮৮০ সালে এক
ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মন্দিরটি বিনষ্ট হলে ১৮৮৩ সালে মন্দির
পুনর্নির্মাণ হয়।
নৈনি দেবীর মন্দিরের ভিতরে দেবীর দু'টি চোখ বা নয়ন
দেখা যায়। মাঝে চিত্রিত করা হয়েছে দেবী নয়নাকে। দেবীর চারপাশে দেবী কালী, সিদ্ধিদাতা গণেশের মূর্তি রয়েছে। মন্দিরের বাইরেই রয়েছে প্রসাদ,ফুল-মালাসহ পুজোর বিভিন্ন সামগ্রী।
নৈনি মন্দিরের অবস্থান উত্তরাখণ্ডের নৈনিতালের নৈনি
লেকের অপরপ্রান্তেই। কাজেই প্রথমে আসতে হবে নৈনিতাল। কলকাতা থেকে হাওড়া-লালকুঁয়া
এক্সপ্রেস ট্রেনে এসে নামতে হবে কাঠগোদাম। লালকুঁয়া, হলদোয়ানি বা
কাঠগোদাম এই তিন জায়গা থেকেই বাস যাচ্ছে সরাসরি নৈনিতাল। দূরত্ব যথাক্রমে লালকুয়া
৬০কিমি, কাঠগোদাম ৩৫ কিমি, দুই জায়গা
থেকেই সরাসরি বাস যাচ্ছে নৈনিতাল।
নৈনিতালে থাকার জন্য রয়েছে কেএমভিএনের বেশ কয়েকটি
ট্যুরিস্ট রেস্ট হাউস। এগুলি হল স্নো ভিউ (০৯৪১১১৩৮০১৭), মালিততাল রেস্ট
হাউস (০৫৯৪২২৩৫৫৭০), তালিতাল রেস্ট হাউস (০৫৯৪২২৩৫৫৭০),
নকুচিয়াতাল রেস্ট হাউস (০৫৯৪২২৪৭১৩৮), সাততাল
রেস্ট হাউস (০৫৯৪২২৪৭০৪৭), ভাওয়ালি গেস্ট হাউস (০৫৯৪২২০০৬২)।
এছাড়াও রয়েছে বেশকিছু বেসরকারি হোটেল।
লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখক পরিচিতি -
জন্ম কলকাতায়। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করেন। সাপ্তাহিক বর্তমানে ভ্রমণ নিয়ে নিয়মিত লেখেন। বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে এবং তথ্য সংগ্রহে আনন্দ পান ।
ছবি - সংশ্লিস্ট সংস্থার সৌজন্যে