ধারাবাহিক উপন্যাস – প্রতি বৃহস্পতিবার ।
পর্ব-- ৪৪
I am the
only actor.
It is
difficult for one woman
to act
out a whole play.
The play
is my life,
my solo
act.
পাতাদের উপর থেকে রাতকালারের
কয়েকটি ঢেউ অথবা ঢেউ খেলানো বিন্যস্ত স্তর ক্রমশ
নেমে আসছে অথবা খেলা করছে। বাভ্রবি,রঞ্জাবতী
আর রূপালী --একটা ত্রিকোণ কিংবা একটা সরলরেখার উপর স্থাপিত তিনটি বিন্দু। বাভ্রবি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না। বাভ্রবি লেখক নয়। বাভ্রবি সাংবাদিক। অথবা আরও বিশদে বলতে
গেলে শখের সাংবাদিক। রাতের বারান্দায় এখন
চাঁদের আলোক কণা। চাঁদকেও মানুষ
ছাড়ে না। একটা মাত্র
বাসযোগ্য গ্রহ এই
পৃথিবী। নেশাগ্রস্থ উন্মাদের মত এই গ্রহটিকে
প্রাণী জগতের বাসযোগ্য থাকতে দিচ্ছে
না। এভাবেই কি একদিন মানুষ মেফোষ্টোফেলিস হয়ে ওঠে?
কিছুক্ষণ আগে বাভ্রবি আর কে নারায়ণের মালগুড়ি এবং
অন্যান্য উপন্যাস নিয়ে বসেছিল। জার্নালিষ্টরা সমাজ
সংস্কারের কাজ করেন--এরকম একটা কথা বারবারই বাভ্রবিকে ভাবাচ্ছিল। যদি তাই
হয় তাহলে -"ইয়েলো জার্নালিজম" শব্দটি সৃষ্টির রহস্য
কি? ভাবতে ভাবতেই ব্যালকনির
দোলনায় চুপচাপ। খসখস পাতার শব্দ তুলে সুন্দরী রাত শিকারে;সুন্দরীর
মা কালচু ছোট্ট ছানাকে ল্যাজে খেলাচ্ছে। মালগুড়ি একটি
কাল্পনিক নাম?
--"সবাই তাই
ভাবে। হোসপেটের কাছে মালপান গুড়ি--"
বাভ্রবির সামনে লেখক। দূরে মালগুড়ি ষ্টেশন-এ শেষ
ট্রেন,পাস করিয়ে ষ্টেশন মাষ্টার
নিজের ডেরায়।
--"ইয়েলো
জার্নালিজম নিয়ে ভাবছিলে তাইতো?"
মানুষ যখন সততা হারায়,ভালোমন্দের ভারসাম্যহীন
জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে--তখন অনেক কথামালার
সৃষ্টি হয়। আজকাল তো
শুনি-"সিচুয়েনশন শিপ শিরোনামে একটি শব্দ বন্ধ খুব চলে।
--"হ্যাঁ,এখন আর
রিলেশনশিপ নয়--সিচুয়েশন শিপ--
--"অর্থাৎ?"
আর কে নারায়ণ এর চোখে বালক সুলভ কৌতূহল লেপটে আছে। চোখের চশমা
বুঝি সেই অনুভূতি কে সম্পূর্ণ আড়াল
করতে পারল ন।
বাভ্রবি মৃদু হেসে
বলল--"মানে,সিচুয়েশন বুঝে ডিসিশন নেবো--সংসার
করব কি করব না, বিয়ের গ্যাঁড়াকলে ঢুকব কি ঢুকব না--"
আর কে নারায়ণ একটি কৃত্রিম
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন--"হুম।
ইট ইজ পোষ্ট মডার্ন সিনড্রোম?"
বাভ্রবি মাথা নেড়ে আলগা
হেসে বলল--"নট রিয়েলি স্যার। মেনকাইন্ড
অলরেডি হ্যাভ পাসড দ্যাট এরা--উই ক্যান কল ইট
নিও মডার্ন সিমড্রোম!"
দুজনেই শব্দ
করে হেসে উঠলে একটি লক্ষ্মী পেঁচা
ডানা ঝাপটে সায় দিল।
আর কে নারায়ণ এবার একটু
গম্ভীর গলায় বললেন--"ট্রু। এই নিও
মডার্ন সিনড্রোম আমরা পৃথিবীর
শুধুই সামাজিক চালচিত্রে দেখতে পাচ্ছি,এমনটা
নয়। আর্থ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দিকে তাকালে এই সিনড্রোম
গুলো আরও স্পষ্ট এবং ভয়াবহ ভাবে দেখা যায়।"
বাভ্রবি অল্প চাপা উত্তেজনা নিয়ে জিজ্ঞেস করল
-"আপনি কি
বিশেষ কোনও বিশেয়ের দিকে আলোকপাত
করতে চাইছেন?"
--"আর্কটিক রিজিয়ন। আমি আর্কটিক রিজিয়ন নিয়ে যে বর্তমানে এক ঠাণ্ডা লড়াই-এর খেলা
চলছে --সেদিকটার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি। আর্কটিক এরিয়ার
দ্বীপ সহ কোষ্টাল এরিয়া
মাত্র কয়েকটি দেশের কন্ট্রোলে--রাইট?
বাভ্রবি জবাব দিল
--"হ্যাঁ,আট টি
দেশ--কানাডা,ডেনমার্ক (গ্রিনল্যান্ডের মাধ্যমে),ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে ,রাশিয়া, সুইডেন এবং ইউনাইটেড স্টেটস।"
আর কে নারায়ণ চশমা খুলে
চশমার কাঁচ মুছে বললেন--"ঠিক। কিন্তু এদের
নিজেদের মধ্যেই টেনশন রয়েছে--তার আসল কারণ ইদানীং এক
প্রতিবেদন বলছে এই অঞ্চলে রয়েছে পৃথিবীর,অনাবিষ্কৃত তেল সম্পদের
তেরো শতাংশ;এবং তিরিশ শতাংশ আনটেপড
প্রাকৃতিক গ্যাস এবং এই সব ই রয়েছে সী বেডের নীচে।এবার--"
বাভ্রবির উত্তেজিত হয়ে বলল--"কি সাংঘাতিক! আইস গলে গেলে
এনভিরনমেন্ট বিপর্যস্ত হবে--"
আর কে নারায়ণ মৃদু হেসে
বললেন--" এটা নিয়ে তো সবাই ভাবছে
না--মুনাফার দিকেই সবার
নজর। আর এই যে বরফ গলে গেল
নতুন নতুন সী রুটের সম্ভাবনা রয়েছে,সেদিকে ও
নজর--তথাকথিত পোলার সিল্ক রুট--শব্দ
বন্ধ ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে।"
বাভ্রবির সামনে মালগুড়ি
ষ্টেশন - এর গ্রীন সিগন্যাল--দেখতে দেখতে দিনের
শেষ ট্রেন বেরিয়ে গেলে আর কে নারায়ণ
জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে হাসি মুখে বললেন--"বা-ই--"
--"আপনার আনগাইডেড গাইড
--নন ফিকশন লেখাটি অসাধারণ--"
--"একা একা
ব্যালকনিতে বসে কি করছ? রাত হয়েছে,শোবে না?"
বেডরুমের দরজা খুলে
যুধাজিত !নাইট ড্রেস হাতে একটি সিগারেট।
--"নাহ্। ভাবছিলাম।তুমি
তো এখন সিগারেট পান করবে?"
যুধাজিত হাসল--"হ্যাঁ,আজকাল তো
অনেক কমিয়ে দিয়েছি--ব্যস--রাতে
ঘুমোতে যাবার আগে একটা-"
যুধাজিত এমন ভাবে তাকালো,যেন
পারমিশন চাইছে। বাভ্রবি হাসল।
-"ঠিক আছে--আমি ভেতরে গিয়ে চেঞ্জ টেঞ্জ
করি,ততক্ষণ
তুমি ধুম্রপান সেরে ফেলো।"
যুধাজিত ধোঁয়ার রিং বানাতে বানাতে হঠাৎই জিজ্ঞেস
করল--"বাবি,আজ রূপালী তোমার কাছে এসেছিল?"
বেডরুমের দরজায় হাত রেখে ঘুরে দাঁড়ালো বাভ্রবি।
--"তোমাকে কে
বলল? তুমি তো অফিসে ছিলে?"
--"হ্যাঁ। অফিসেই-সপ্তর্ষি বলল।"
এবার দুই
ভুরুর খাঁজে ভাঁজ । বাভ্রবি একটু
কঠিন অথচ কষ্টের গলায় বলল
--"সপ্তর্ষি
আর রূপালীর জীবন যাপন ঠিক চলছে না। সপ্তর্ষি অন্য এক বিবাহিতা মহিলার সাথে-"
মাঝপথেই বাধা দিয়ে
যুধাজিত বলল--"এটা সম্পূর্ণ ওদের
স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার বাবি--।"
বাভ্রবি দরজা ঠেলে ভেতরে
যেতে যেতে একটু তেতো হেসে বলল--"কি জানি। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স,পরকীয়া-অবৈধ
সম্পর্ক গুলো কি করে পার্সোনাল হয়,আমি জানি
না। আমার মতে এগুলো ভীষণ ভাবেই সামাজিক
সমস্যা।"
--"তবু
আমাদের এর ভেতরে মাথা না গলানোই ভালো। হয়ত
ওদের রিলেশন আবার ঠিক
হয়ে যাবে--তখন--।"
রাতের বেডরুমে যুধাজিতের
পাশাপাশি শুয়ে বাভ্রবির ঘুম আসছিল
না--যুধাজিত দিব্যি ঘুমোচ্ছে-মৃদুমন্দ নাক
ডাকছে! রূপালী আর সপ্তর্ষির সমস্যাটা কি
সত্যিই নেহাতই ব্যক্তিগত!
বাভ্রবি জানালার
পর্দা তুলে রাত আকাশের দিকে তাকালো
একফালি করুণ চাঁদ--ম্লান
জোছনা ফেলতে ফেলতে আকাশ ভাঙছে---
ক্রমশ …………
৪৫তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি
–
জন্ম-কলকাতায় । আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা ।
প্রকাশিত
গ্রন্থ
১--সাপ শিশির
খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)