Advt

Advt

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-43rd-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী

ধারাবাহিক উপন্যাস প্রতি বৃহস্পতিবার ।

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-43rd-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী
পর্ব-- ৪৩

And all these streets leading

So crosswose,honking,lengthily,

by avenues

stalked by high buildings  or crusted into slums

thru such halting traffic

screaming cars and engines.

ভাঙ্গাচোরা দোকানপাটে পুরনো খবরের কাগজ ঢাঁই করা;ছোট খাট ঘূর্ণির ভেতর লাটখাচ্ছে ভালবাসা এবং তদজনিত  যাবতীয় ক্রিয়া প্রক্রিয়া। মসৃণ জলদাগ লেপটে থাকা ভালবাসা জাহাজ গুলো এখন হরবোলা বাতাসে  টালমাটাল। ভালবাসার  ভেতর এক ঘুণপোকা,ছেঁড়া চিঠির  পাতা খায়;ম্যাগপাই  জল খেতে গিয়ে খুন হয়ে যায়--অক্ষরে অক্ষরে তাই চূর্ণ  ভালবাসা মিশে আছে-সপ্তর্ষি আর রূপালী ;

পালিয়ে বিয়ে--

-"সোজা সোভিয়েত ইউনিয়ন?

--"কি যে বলেন  বৌদি! সপ্তর্ষি তখন কানপুর আই আইটিতে পি এইচ ডি করছে;আমি জাস্ট  গ্রাজুয়েশন  কমপ্লিট করেছি। দুজনেই  বেকার। বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে! এক কাপড়ে চলে আসা।

আমি ভেবেছিলাম  চাকরি করে ওকে সাপোর্ট  করব। কিন্তু  এই  দেশে একজন সাধারণ  আর্টস গ্রাজুয়েটের  চাকরি কোথায়? তাই সপ্তর্ষির  স্কলারশিপ - এর টাকাতেই টানাটানির সংসার। তবে জানেন তো বৌদি টানাটানির  সংসার  হলেও  আমরা খুব  ভাল  ছিলাম।

একে অন্যের  জন্য  বাঁচতাম!

ফুলগুলি নাভি মূল।লাল লাল।গার্ডেন হাটের পাশে গাড়ি থামিয়ে ফুল এবং ফুলের চারাগুলির  দিকে তাকিয়ে বাভ্রবি!

-"সপ্তর্ষি থিসিস  লিখছে--আমি রান্নাবান্না করছি,বাসন মাজছি  আর ভোরবেলা একচিলতে বাগান  কে সাজাচ্ছি।মোটা একটা আম গাছের  ডালে ছোট্ট  বেতের  দোলনা--দুজনে দোলনায় দোল খেতে খেতে চা খেতাম-গান শুনতাম,গান করতাম।

টেরাকোটা কাজ করা মাটির টব। হাতে নিয়ে  উঠে দাঁড়াল  বাভ্রবি।

--"পি এইচ  ডি থিসিস  কমপ্লিট  করে পোষ্ট  ডক করতে রাশিয়া--সেখানে চাকরি। তারপর-""

-"ও সেখানেই বুঝি তুমি রাশিয়ান শিখেছে?"

-"আমাদের  দুজনকেই  শিখতে হয়েছে। ওখানে থাকতে গেল ভাষা শেখা আবশ্যিক।"

--"হুঁ। তোমরা বেশ কয়েক বছর ছিলে?"

--"১৯৯১ তে যখন সোভিয়েত  ইউনিয়ন  ডিসলভড হয়ে গেল-তারপর চলে এলাম।"

কিছুক্ষণ  চুপ করে থেকে রূপালী আবার  বলেছিল তখন আমি প্রেগন্যান্ট! দেশে এসে --"

একটা দেশ ভেঙ্গে যায়--একটা দেশ ভেঙ্গে টুকরো টুকরো  হলে কতটা রক্ত  ক্ষরণ-কতটা অন্ধকার,কতটা দূরত্ব-কতটা কাঁটাতার। কত  যোজন যোজন দূরত্ব,কতটা আড়াল!

--এটা কি স্বাধীনতা। যে স্বাধীনতায়  নিজের  দেশে যেতে ভিসা,পাসপোর্ট  লাগে।"

ঠাম্মির  কাতর গলা এতো এতো যোজন অন্ধকার  থেকে বড় বেদনার  মত বুকে বাজে।

-"এ কেমন স্বাধীনতা--যখন নিজের পরিচয় পত্র  নতুন  করে লিখতে হয়।"

---"এ কেমন স্বাধীনতা যখন জন্মভূমি পাল্টে যায়?"

--"এ কেমন স্বাধীনতা যখন রাণীবালার ঘর সংসার  নীলাম হয়ে যায়?"

একটি দেশ কি  কাগজের  নৌকো? যখন খুশি যেমন খুশি জলে ভাসানো যায়?

-একটি দেশ কি শুধুই ভূখণ্ড মাত্র? যখন খুশি যেমন খুশি লাইন টানা যায়?

--চেনা পৃথিবীর রঙ পাল্টে গেলে নদী এবং সমুদ্র  ও বদলে যায়,

পর দেশি আকাশের নীল রঙ জুড়ে

উড়তে  থাকা পাখিগুলোও পাল্টে যায়

আমার  দেশের  বর্ষার রঙ কি অন্য দেশের

বর্ষার  রঙে আঁকা যায়?

ভোরের  আকাশ  কি তেমনই  বিস্তারিত  লাল

গাছেদের শরীর কি পরেছে তেমনই  আঁচল,তেমনই  দুকুল?

আমিতো খুঁজে ফিরি সেই  দেশ

যে দেশ হারিয়ে গেছে মেহগনি অরণ্যের  আড়ালে--

ড্রাইভ ওয়েতে গাড়ি ঢোকাতে  ঢোকাতে  বাভ্রবি  দেখল লিভিংরুমে আলো জ্বলছে-রূপালীর গলা শোনা যাচ্ছে--যুধাজিত, প্রকৃতি,প্রাকৃত সবাই  জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে--কিন্তু  সপ্তর্ষির  গলা তো শোনা যাচ্ছে না---

একটু চিন্তিত  হয়েই গাড়ি বন্ধ  করে বারান্দায় উঠল বাভ্রবি। গ্র্যান্ডি বারান্দার কোণে বসে ছিল--আস্তে  আস্তে বাভ্রবির  হাত চেটে  দেয়। মাধবীলতার বৃন্ত  থেকে খসে পড়ল একটি নিটোল ভিজে পাপড়ি।

ক্রমশ …………

৪৪তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন । 

লেখিকার পরিচিতি –        

জন্ম-কলকাতায়  আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা 

প্রকাশিত গ্রন্থ

১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)