Advt

Advt

gyaner-sadbyabohar-galpo-story-by-bama-chakraborty-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-জ্ঞানের-সদ্ব্যবহার-গল্প-বামা-চক্রবর্তী

 

gyaner-sadbyabohar-galpo-story-by-bama-chakraborty-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-জ্ঞানের-সদ্ব্যবহার-গল্প-বামা-চক্রবর্তী

গৌতম বুদ্ধের আশ্রমে অনেক শিষ্য আসতেন,তারপর জ্ঞান অর্জন করলে গৌতম বুদ্ধদেব তাঁদের একটি দিক দেখিয়ে দিতেন তারপর শিষ্যরা ঐ দিকে চলে গিয়ে  সেদিকের লোকেদের  সেবা করতেনওই আশ্রমে একজন শিষ্য প্রায় এক বছর ধরে শিক্ষা গ্রহণ করছিলেন,কিন্তু গুরুদেব তাকে আশ্রম থেকে কোন দিকে যেতে বলতেন না। তখন ওই শিষ্য ভাবলেন, আমিতো অনেক দিন ধরে এই আশ্রমে শিক্ষা গ্রহণ করছি, জ্ঞান অর্জন করেছি, কিন্তু গুরুদেব আমাকে কেন কোন দিকে যেতে বলছেন না । আমার পরে কত শিষ্য এলো কত চলে গেল, কিন্তু আমাকে কেন যেতে বলছেন না, আজ আমি গুরুদেবকে জিজ্ঞেস করব। সেই শিষ্য গৌতম বুদ্ধকে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,আপনি আমাকে কেন কোন দিকে যেতে বলছেন না। গুরুদেব উত্তরে বললেন,তোমার শিক্ষা গ্রহণ এখনও সম্পন্ন হয়নি । তখন সেই শিষ্যললেন,আমার পরে কত শিষ্য এলো এবং চলে গেল,তাহলে কী আমার শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়নি!

একথা শুনে গুরুদেব বললেন,ঠিক আছে তবে তাই হোক। তোমাকেও বলছি তুমি বেড়িয়ে পড়। গুরুদেব শিষ্যের হাতে একটা বাটি দিয়ে বললেন,তুমি পূর্বদিকে যাও আর গিয়ে ভিক্ষা করে সন্ধ্যা পর্যন্ত আশ্রমে ফিরে আসবে । সেই শিষ্য খুশী হয়ে বাটি হাতে নিয়ে পূর্বদিকে একটি গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন, কিন্তু সেখানে গিয়ে ভিক্ষা চাইলে গ্রামের লোকেরা তাঁকে ভিক্ষা না দিয়ে উল্টে তাঁকে ধরে মারতে লাগলো। সে শিষ্য সন্ধ্যা বেলা যখন আশ্রমে ফিরে আসে,  তখন গুরুদেবকে বলে,আপনি ইচ্ছা করে আমাকে দুষ্টু লোকেদের গ্রামে পাঠিয়েছিলেন, ওরা আমাকে কিভাবে মেরেছে, ভিক্ষা তো দিলই না বরং শুধু ভিক্ষার বাটিতে মাত্র একটা রুটিই পেয়েছেন। ওই শিস্য গুরুদেবকে বললেন, আগামীকাল আপনি আমাকে অন্য দিকে পাঠাবেন, আমি আপনাকে অনেক ভিক্ষাকরে এনে দেব । তখন  গৌতম বুদ্ধ বললেন, কাল তুমি আশ্রমেই থাকবে,

দ্বিতীয় এক শিষ্যকে বলল আগামী কাল তুমি পূর্বদিকে গিয়ে ভিক্ষা করে সন্ধ্যা অবধি আশ্রমে ফিরে আসবে । পরেরদিন দ্বিতীয় শিষ্য পূর্বদিকে ভিক্ষা করতে যায়, ওখানে ভিক্ষা চাইলে, এই শিষ্যকেও গ্রামের লোকেরা মারতে শুরু করে। তারপর সে একটু এগিয়ে গিয়ে আবার আরেকজনের কাছে ভিক্ষা চাইলে লোকটি একটা রুটি মাটিতে ছুড়ে দেয়, ওই শিষ্য তখন রুটিটা মাটি থেকে তুলে লোকটাকে বললেন, তোমার কল্যাণ হোক বৎস। তখন ওখানে যারা দাঁড়িয়ে ছিল,তাঁরা শিষ্যটি কে বললেন তুমি কি পাগল ? লোকটি তোমাকে রুটিটা মাটিতে ছুড়ে দিল আর তুমি ওকে বলছ তোমার কল্যাণ হোক । তখন দ্বিতীয় শিষ্যটি উত্তর দিলেন,মাটিতে ছুড়েই দিক কিন্তু সে ভিক্ষা তো দিল, বলে সে এগিয়ে গেল । কিছুদূর যাওয়ার পর দেখল অনেক ভিড় জমে আছে, ভিড়ের কাছে গিয়ে দেখল একটা ছেলে প্রায় মরণাপন্ন অবস্থায় শায়িত এবং কি করে ছেলেটিকে ঠিক করবে আসে-পাশের কেউ তা বুঝে উঠতে পারছে না । তখন দ্বিতীয় শিষ্যটি এগিয়ে গিয়ে ছেলেটিকে দেখে বললেন,একে যদি ওই গাছের পাতার রস করে খাওয়ানো হয় তাহলে ছেলেটি সুস্থ হয়ে যাবে । তাঁর কথা শুনে দুষ্টু লোকেরা মারতে আসে, কিন্তু তখন যে লোকটি রুটি দিয়েছিল সে বলল আমার মনে হয় আমাদের একবার ওর কথাটা শুনা উচিৎ । তখন গ্রামের লোকেরা বলল ঠিক আছে তুমি গিয়ে ওই গাছের পাতা নিয়ে এস । শিষ্যটি জঙ্গলে পাতা আনতে গেলে সেখানকার লোকেরা তাঁকে মারতে আসে, তখন সে ছেলেটির অসুস্থতার কথা বললে তাঁকে ছেড়ে দেয় এবং সে পাতা নিয়ে ফিরে এসে পাতার রস করে ছেলেটিকে খাওয়ালে কিছুক্ষণের মধ্যে ছেলেটি ঠিক হয়ে যায় । সবাই খুব খুশী হয়ে দ্বিতীয় শিষ্যটিকে বলল - কালকে তুমি আমাদের গ্রামে আসবে,আমরা সবাই তোমাকে ভিক্ষা দেব ।

   সন্ধ্যাবেলা শিষ্যটি আশ্রমে ফিরে আসে এবং গুরুদেবের কাছে সম্পূর্ণ ঘটনাটি বলে। দ্বিতীয় শিষ্যের মুখে সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে গৌতম বুদ্ধ প্রথম শিষ্যটিকে বলেন - আমি তোমাকে কেন কোন দিকে পাঠাচ্ছিলাম না তাঁর কারণ হল,তোমার এখনও শিক্ষা গ্রহণ সম্পূর্ণ হয়নি কারণ ও এখানে পাওয়া শিক্ষাকে গ্রামের লোকেদের মধ্যে প্রয়োগ করেছে যা তুমি করনি ।

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

লেখিকার পরিচিতি ঃ- 

জন্ম বিহারের কিশানগঞ্জ । প্রাথমিক থেকে স্নাতকোত্তর কিশানগঞ্জেই । আঞ্চলিক বার্ষিক পত্রিকাউত্তরবঙ্গ সংবাদে অনুগল্পছোট গল্প লেখালেখি করেন । সঙ্গীতবই পড়াভ্রমণ ও আধ্যাত্মিকতায় রুচিশীল এবং কুসংস্কার বিরোধী ।