"বৌমা কোন্
সাহসে একাকী মার্কেট যাচ্ছে? রবু, তুমি
বৌমাকে বলে দাও --একা যেন বাজারে না যায়। জমিদার বংশের বউ হয়ে সে যাবে একাকী
বাজারে!"
শ্বশুর মহাশয়ের-এহেন কথা
শুনে পুত্রবধূর মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। জমিদার প্রথা কোন্ যুগে উঠে গেছে, তার জের
চলছে এখনও। স্নিগ্ধা রাগান্বিত স্বরে স্বামীকে বলে---মেয়ের স্কুলের
পেরেন্টস্-টীচার মিটিং এ্যাটেন্ড করতে দশ কিলোমিটার দূরে যাচ্ছি বাসে একাকী, তার বেলায়
তোমাদের জমিদার বংশের গৌরব ক্ষুণ্ণ হচ্ছে না। ---আর পাড়ার বাজারে একাকী গেলেই
তোমাদের সু-উচ্চ বংশের মর্যাদাহানি হবে। ঠিক আছে এবার থেকে অফিস ছুটি নিয়ে,মেয়ের
স্কুলের যাবতীয় কাজ তুমিই কোরো। কাল থেকে পিয়া স্কুল যাবে না। কারণ, স্কুলে
ক্রাফক্টের জিনিস না নিয়ে গেলে ও পানিশমেন্ট পাবে।
ওদিকে শাশুড়ী চিৎকার করে বলে
যাচ্ছেন -এ সব মেয়েরা,ঘোরা মেয়ে। ঘরের বাইরের
হাওয়া গায়ে না লাগলে এদের ভাত হজম হয় না। শুধু ছুতো খোঁজে,একা একা
ঢ্যাং ঢ্যাং করে ঘুরে বেড়াবার।
দুদ্দাড় করে পা ফেলে
স্নিগ্ধা দড়াম করে নিজের ঘরের দরজা দেয়।
অফিস ছুটি নিয়ে মেয়ের স্কুলে
যাওয়া, ইংরাজী মিডিয়াম স্কুলের নিত্য নতুন ফরমায়েশ পুরো করতে বাজার ছোটা সৌমেনের
পক্ষে সম্ভব নয়। সে কড়া স্বরে বলে ---বাড়ির বৌমার বাজারে গেলেই যদি বাড়ির গৌরব
ক্ষুণ্ণ হয়, তাহলে আমাকে অফিস ছেড়েটেরে
বাড়িতে বসতে হয়। বাড়ির মর্যাদা রক্ষা করতে। সে তো আর সম্ভব নয়। স্নিগ্ধার যখন
প্রয়োজন হবে ও বাজারে যাবে। একাকীই যাবে। আমার পক্ষে তো সব সময় ওর সঙ্গে যাওয়া
সম্ভব নয়।
স্নিগ্ধাকে ব্যাগ নিয়ে
বাজারে যেতে দেখে, শাশুড়ী বলেন--- বাজারে যাচ্ছ, বৌমা? আমার জন্য
জর্দা দেওয়া একটা পান এনো তো! শ্বশুর মহাশয়ও বলে ওঠেন ---বৌমা, আমার
উইলস্ ফিল্টার শেষ হয়ে গেছে। এক প্যাকেট এনো তো!
লেখিকার পরিচিতিঃ
যদিও জন্ম পলাশীপাড়া, নদিয়া জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, কিন্তু তাঁর শৈশব, বেড়ে ওঠা, শিক্ষা-দীক্ষা সব এলাহাবাদেই। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থশাস্ত্রে এম.এ.। ১৯৮১ সালে এলাহাবাদ থেকে একটি ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা "তূণীর" প্রকাশ করতেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় (দেশে ও বিদেশে) লেখা প্রকাশিত হয়। হিন্দী ও ইংরাজিতেও লেখা প্রকাশিত হয়েছে। পানামার কবি, রোখেলিও সিনান এর দশটি স্প্যানিশ কবিতা বাংলায় অনুবাদ করেছেন। 'অনুশীলন পত্রিকা'সুইডেন থেকে রাইটার্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৩ সালে পেয়েছেন। ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছে "ঈশ্বর ও মানুষ" ( অণু গল্প ও ছোট গল্প সংকলন)। লেখিকার অভিজ্ঞতাজাত কোভিড সংক্রান্ত বই "কোভিড-১৯ আমার জীবন আমার লড়াই" গাঙচিল থেকে প্রকাশিত হয়েছে, ডিসেম্বর ২০২২ সালে।