Advt

Advt

baikunthadham-darshan-galpo-story-by-bama-chakraborty-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-বৈকুণ্ঠধাম-দর্শন-বামা-চক্রবর্তী

baikunthadham-darshan-galpo-story-by-bama-chakraborty-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-বৈকুণ্ঠধাম-দর্শন-বামা-চক্রবর্তী

একবার নন্দরাজা একাদশীর নির্জলা উপবাস করলেন, রাত্রি জাগরণ করছিলেন, ঠিক যখন নিশুতি রাত, তখন উনি ভাবলেন ভোর হয়ে গেছে, কারণ তখন উনি যথেষ্ট বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন,তাই মাঝ রাতে যমুনাতে স্নান করতে গেলেন। সেই সময় বরুণদেবের নিদ্রার সময়। যেই নন্দরাজা স্নান করার জন্য জলে ডুব দিলেন ঠিক সেই সময় বরুণদেবের দারোয়ানরা ওনাকে ধরে বরুণ লোকে নিয়ে চলে গেল,কারণ বরুণদেবের নিদ্রায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে। সকাল বেলা দরোয়ানরা বরুণদেব কে বলল, মহারাজ,কাল মাঝরাতে আপনি যখন ঘুমিয়ে ছিলেন তখন উনি যমুনাতে স্নান করতে এসেছিলেন, তাই ওনাকে বন্দী বানিয়ে রেখেছি,এখন তো সকাল হয়ে গেছে,এখন কি নন্দরাজাকে ছেড়ে দেব?

বরুণদেব বললেন,না,এখন না, কারণ উনি হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণের পিতা,তাই শ্রীকৃষ্ণ ওনাকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে আসবেন। শ্রীকৃষ্ণ হলেন স্বয়ং ভগবান নারায়ণ। আর আমি স্বয়ং ভগবানের দর্শন পাব এবং সেবা করার সুযোগ,তাই একটু অপেক্ষা কর ।

   সকাল হল,মা যশোদা কৃষ্ণকে বললেন দেখতো, তোর বাবা সেই ভোর বেলা যমুনাতে স্নান করতে গেলেন,এখনও এলেন না কেন? কৃষ্ণ বাবাকে খুঁজতে যমুনার তীরে গিয়ে উপস্থিত হলেন, কিন্তু কোথাও বাবাকে দেখতে পেলেন না । বাবাকে দেখতে না পেয়ে যমুনাতে ডুব দিলেন এবং সোজা বরুণ লোকে পৌঁছে গেলেন

সেখানে গিয়ে বরুণদেব কে বললেন তুমি যাকে বন্দী বানিয়ে রেখেছ,উনি আমার পিতা,ওনাকে ছেড়ে দাও। বরুণদেব হাত জোর করে শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, আপনাকে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না । তারপর বরুণদেব শ্রীকৃষ্ণ ও নন্দরাজা,দুজনেরই পদসেবা করলেনএরপর শ্রীকৃষ্ণ নন্দ বাবাকে নিয়ে সোজা যমুনার তীরে এসে উঠলেন সেখান থেকে বাড়ী ফিরে গেলে সকলে নন্দরাজাকে দেখতে এসে জিজ্ঞেস করলেন,আপনি কোথায় চলে গিয়েছিলেন? তখন নন্দরাজা সবাইকে বললেন, জানো,শ্রীকৃষ্ণ হল ভগবান ।

তখন সবাই ওনার কথা শুনে হাসতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন,বাবার বয়স হয়ে গেছে,তাই উনি এই কথা বলছেন ।

নন্দরাজা বললেন না না,কৃষ্ণের  জন্মের পর থেকে যে সব ঘটনা ঘটে চলেছে,সেগুলোকে একবার ভেবে দেখ,যেমন পূতনা বধ,শকট বধ,কালিয়া দমন, গিরি গোবর্ধন ধারণ এগুলো কি কোন সাধারণ বালকের পক্ষে সম্ভব ? গরগমুনি যখন ওর নামকরণ করতে এসেছিলেন,তখন মুনিবর ওর লক্ষণ দেখে বলেছিলেন এতো নররূপী নারায়ণ,কিন্তু আমি কাউকে বলিনি,কারণ কেউ বিশ্বাস করবেনা উল্টে হাসাহাসি করবে।

তখন বৃন্দাবনের লোকেরা শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, তুমি নাকি ভগবান, তুমি ওনাকে বরুণ ধাম থেকে ফিরিয়ে এনেছ,এ কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে তুমি আমাদের ‘বৈকুণ্ঠ ধাম’ দর্শন করাও তো দেখি?

তখন শ্রীকৃষ্ণ বললেন,বৈকুণ্ঠ ধাম দর্শন ?

সবাই হেসে বলল, হ্যাঁ,বৈকুণ্ঠ ধাম দর্শন । শ্রীকৃষ্ণ বললেন,ঠিক আছে, তাহলে চল সবাই। তখন সবাইকে নিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যমুনার তীরে উপস্থিত হলেন । তারপর বললেন, যার যার বৈকুণ্ঠ ধাম দর্শন করার ইচ্ছা আছে,তাঁরা যমুনায় ডুব দাও । তারপর এক এক করে সবাই যমুনায় ডুব দিল আর গিয়ে উঠল বৈকুণ্ঠ ধামে। সবাই দেখল যে সেই স্থানটি খুবই সুন্দর,সবাই তখন হেঁটে চলেছে কথা বলতে বলতে হঠাত একজন প্রহরী এসে বলল, এখানে কেউ কথা বলেনা।  তোমরা এখানে কেউ কথা বলবে না। তখন সবাই বলল,আমরা যদি কথা না বলি,তাহলে এখানকার যিনি মালিক তিনি আমাদের কথা শুনবেন কি করে? প্রহরী উত্তর দিল, এখানকার যিনি মালিক, তিনি আপনাদের সকলের কথা আগে থেকেই জানেন,তাই ওনাকে কিছু বলার প্রয়োজন নেই । এবার সবাই বৈকুণ্ঠ ধামের অধিকর্তার সামনে উপস্থিত হয়ে দেখল,এখানকার যিনি মালিক তিনি তো অবিকল তাদের বৃন্দাবনের শ্রীকৃষ্ণের মতো দেখতে,শুধু ওনার দুটো হাত বেশী,চারতে হাত সেখানে কেউ কথা বলছেনা, সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন

সবাই লক্ষ্য করলেন যে স্বয়ং মহাদেব একটি খাতা এনে তাঁর সব কাজের হিসেব নিকেশ চার হাতবিশিষ্ট শ্রীকৃষ্ণের সামনে রেখে চলে গেলেন । এরপর এলেন নারদ মুনি এবং তিনিও একটা খাতা রেখে চলে গেলেন, সবাই নিজের নিজের কর্মের হিসেবের খাতা রেখে দিয়ে চলে যাচ্ছেন,কেউ কোন কথা বলছেন না।

এসব দেখে বৃন্দাবনবাসীরা আর চুপ করে থাকতে পারলেন না বিরক্তি প্রকাশ করতে লাগলেন মনে মনে ভাবতে লাগলেন এ কেমন জায়গা,যেখানে কথা বলা যায় না!

এমন সময় প্রহরী জিজ্ঞাসা করলো, এখন আপনারা কি করবেন বলুন?

একথা শুনে সবাই একসাথে বলে উঠলেন, আমরা বৃন্দাবনে ফিরে যাব ।

  - ঠিক আছে, তাহলে আপনারা সবাই আমার সঙ্গে আসুন প্রহরী সবাইকে সাথে নিয়ে একটি সরোবরের সামনে উপস্থিত হল, এবং বলল, এবার তোমরা এই সরোবরে এক এক করে ডুব দাও, সবাই এক এক করে ডুব দিল ও একসঙ্গে যমুনার তীরে গিয়ে উঠল । তখন দেখল ওখানে শ্রীকৃষ্ণ মাঝখানে ও সখারা শ্রীকৃষ্ণের চারিদিকে বসে রয়েছে ।

-       শ্রীকৃষ্ণ সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন, কিগো ! বৈকুণ্ঠ ধাম দর্শন করলে! 

-    হ্যাঁ, করলাম ।

-    কেমন লাগল ?

   - বৈকুণ্ঠ ধামের চেয়ে আমাদের বৃন্দাবন অনেক ভালো । এখানে আমাদের তোমার সঙ্গে কথা বলতে লাইন দিতে হয় না,যখন ইচ্ছে তোমার সঙ্গে দেখা করতে পারি,কথা বলতে পারি ।

এই গল্পটির সারকথা হল,বাস্তব জীবনে আমরা ভগবানকে যেখানে সেখানে খুঁজে বেড়াই,কিন্তু আসলে ভগবান আমাদের মধ্যেই রয়েছেনএটা আমরা বুঝে উঠতে পারিনা ।    

 লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

লেখিকার পরিচিতি -

জন্ম বিহারের কিশানগঞ্জ । প্রা্থমিক থেকে স্নাতকোত্তর কিষান গঞ্জেই। আঞ্চলিক বার্ষিক পত্রিকা,উত্তরবঙ্গ সংবাদে অনুগল্প,ছোট গল্প লেখালেখি করেন। সঙ্গীত,বই পড়া,ভ্রমণ ও আধ্যাত্মিকতায় রুচিশীল এবং কুসংস্কার বিরোধী ।