শীতের বিকেল। মরা রোদ গাছের পাতায় যাই-যাই করছে। আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় বাচ্চা ছেলেরা ইট সাজিয়ে ক্রিকেট খেলছে। আমি কলেজ থেকে ফিরে এসে গেটের ধারে দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের ক্রিকেট খেলা দেখছিলাম। একটি ৮-১০ বছরের মেয়ে।
মেয়েটির মুখটি ভারি মিষ্টি এবং সারল্যে ভরা।
তেলহীন রুক্ষ জটা ভর্তি একমাথা ঝাঁকড়া চুল। পরনে ময়লা-ছেঁড়া জামা। গায়ে কোনও গরম
জামা নেই। আবর্জনা ঘেঁটে-ঘেঁটে কাগজ, পলিথিনের
প্যাকেট কুড়চ্ছিল। আমাদের বাড়ির সামনে পড়ে থাকা আবর্জনা থেকে হঠাৎ সে একটা ছাতা
ধরা পচা নারকেল পেয়ে যায়। মেয়েটা ওই ময়লা হাতে নষ্ট, পচা
নারকেলটা খেতে থাকে। আমি চিৎকার করে বলে উঠি---আরে, আরে মৎ
খাও। বিমার পড় যাওগী (আরে, আরে খেও না অসুখে পড়ে যাবে।)
মেয়েটি হাসে। হাসতে থাকে। তারপর দার্শনিক গলায় বলে---দিদিজী, ইয়েহী
খাকে তো হম জীতে হ্যাঁয় (এই খেয়েই তো আমরা বেঁচে থাকি।) ---বলে অম্লান বদনে পচা
নারকেলটা খেতে থাকে।
আজ বুঝি। বেঁচে থাকার লড়াই মানুষকে কত অভিজ্ঞ করে। পরিণত করে। আজও চোখ বুজলে মেয়েটির হাসিমাখা মুখ দেখতে পাই। যেন আমার অজ্ঞতায় হাসছে।
লেখিকার পরিচিতিঃ
যদিও জন্ম পলাশীপাড়া, নদিয়া জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, কিন্তু তাঁর শৈশব, বেড়ে ওঠা, শিক্ষা-দীক্ষা সব এলাহাবাদেই। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থশাস্ত্রে এম.এ.। ১৯৮১ সালে এলাহাবাদ থেকে একটি ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা "তূণীর" প্রকাশ করতেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় (দেশে ও বিদেশে) লেখা প্রকাশিত হয়। হিন্দী ও ইংরাজিতেও লেখা প্রকাশিত হয়েছে। পানামার কবি, রোখেলিও সিনান এর দশটি স্প্যানিশ কবিতা বাংলায় অনুবাদ করেছেন। 'অনুশীলন পত্রিকা'সুইডেন থেকে রাইটার্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৩ সালে পেয়েছেন। ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছে "ঈশ্বর ও মানুষ" ( অণু গল্প ও ছোট গল্প সংকলন)। লেখিকার অভিজ্ঞতাজাত কোভিড সংক্রান্ত বই "কোভিড-১৯ আমার জীবন আমার লড়াই" গাঙচিল থেকে প্রকাশিত হয়েছে, ডিসেম্বর ২০২২ সালে।