আমি প্রায়
মাকে জিজ্ঞেস করতাম,ভগবান কে?মা
বলতেন,যে
কাজ মানুষের পক্ষে করা অসম্ভব,সেই কাজকে যিনি সম্পাদন
করতে পারেন তিনিই ভগবান। যেমন মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব
কিন্তু ভগবানের পক্ষে তাহা সম্ভব। তাহলে উদাহরণ দিয়ে ভাগবতে বর্ণিত একটি গল্প বলি।
আজ থেকে
প্রায় ৫ হাজার বছর পূর্বে শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম নিজেদের বাল্য লীলা শেষ করে গুরুকুলে
গিয়ে শিক্ষা নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তারপরে বাবা মায়ের অনুমতি নিয়ে অবন্তিপুরে
সন্দীপনী মুনির আশ্রমে গিয়ে সন্দীপনী মুনির অনুমতি নিয়ে গুরুকুলে শিক্ষা লাভ করার
জন্য প্রবেশ করলেন। গুরুর নির্দেশে তাদের জীবন যাত্রা শুরু হল। গুরুর প্রতি শিষ্যর
আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ সেই আদর্শ স্থাপনের জন্য তাঁরা গুরুকে শ্রদ্ধা ও ভক্তির সঙ্গে
সেবা করতে লাগলেন। এখানে তাঁরা গায়ত্রী জপ,বেদ,উপনিষদ
পাঠ করতে লাগলেন। তাছাড়া গুরুদেব ধনুর্বেদ,মনু
স্মৃতি,ধর্ম
শাস্ত্র,
মীমাংসা, নির্ণায়ক শাস্ত্র, তর্ক
বিদ্যা প্রভৃতির শিক্ষা দিলেন তার সঙ্গেই সন্ধি, বিগ্রহ, যান, ব্যায়াম, রাজনীতি
বিদ্যা ও অধ্যয়ন করালেন।
গুরুদেবের মুখে একবার শোনা মাত্র তাঁরা সেই
বিদ্যা সঙ্গে সঙ্গে অধিগত করে নিচ্ছিলেন। এইভাবে মাত্র ৬৪ দিন ও ৬৪ রাতে ৬৪ কলা
বিদ্যা শিখে নিলেন তারা দুজনেই। গুরুকুলে শিক্ষা শেষ হল। এবার বিদায় নেওয়ার পালা।
শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরাম গুরুদেবকে প্রার্থনা করলেন “এবার আমদের বিদায় নেওয়ার সময়
হয়েছে,তাই
আপনি আমদের কাছে গুরু দক্ষিনারূপে যা ইচ্ছা চান”। গুরুদেব বললেন,যা
ইচ্ছা?
শ্রীকৃষ্ণ বললেন,হ্যাঁ।
আচার্য সন্দীপনী মুনি তাদের গুরুকুলে শিক্ষা
নেওয়ার সময় অদ্ভুত ও অলৌকিক বুদ্ধি বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করেছিলেন, এরা
যে আর পাঁচটা বালকের মত সাধারণ বালক নয় তা তিনি বুঝতে পেরে ছিলেন । তাই তিনি নিজ
পত্নীর সঙ্গে পরামর্শ করে প্রভাস তীর্থে সাগরে ডুবে তাদের একমাত্র মারা যাওয়া
ছেলেকে গুরুদক্ষিণারূপে ফিরিয়ে দিতে বলবেন । গুরুপত্নী বললেন, এটা
কি সম্ভব? আচার্য বললেন, হ্যাঁ, ওদের
কাছে সম্ভব ।
আচার্য শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামকে বললেন, প্রভাস
তীর্থে সাগরে ডুবে মারা যাওয়া আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও,এটাই
হবে আমার গুরুদক্ষিণা। তাঁরা এই গুরুদক্ষিণা দিতে স্বীকৃত হলেন।
তারপর দুজনে গিয়ে প্রভাস ক্ষেত্রে উপস্থিত হন
এবং সমুদ্র কে বললেন, তুমি আমাদের যে গুরু পুত্রকে গ্রাস
করেছিলে তাকে আমদের ফিরিয়ে দাও। সমুদ্র বলল,আমি
আপনাদের গুরু পুত্রকে হরণ করিনি,ওকে আমার জলের মধ্যে পঞ্চজন
নামক দৈত্য বাস করে, সে হরণ করেছে। সমুদ্রের কথা শুনে
মহা প্রভাবশালী শ্রীকৃষ্ণ জলে প্রবেশ করে সেই দৈত্যের পেট ফাটিয়ে দিল কিন্তু
গুরুপুত্রকে পেল না,পেল পঞ্চজন শঙ্খ। তখন সমুদ্র বলল,আপনাদের
গুরুপুত্র বহুদিন আগে মারা গেছে,তাই আপনি যমপুরী যান।
সমুদ্রের কথানুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ তখন যমপুরী গেলেন এবং যমরাজকে তাঁদের গুরুপুত্রকে
ফিরিয়ে দিতে বললে, যমরাজ সঙ্গে সঙ্গে সন্দীপনী মুনির
সেই পুত্রকে ফিরিয়ে দিলেন।
কথা অনুযায়ী, শ্রীকৃষ্ণ
ও বলরাম তাঁদের গুরুদেব সন্দীপনী মুনিকে ওনার জীবিত পুত্র গুরুদক্ষিণা স্বরূপ
ফিরিয়ে দিল।
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি -
জন্ম বিহারের কিশানগঞ্জ । প্রা্থমিক থেকে স্নাতকোত্তর কিষান গঞ্জেই। আঞ্চলিক বার্ষিক পত্রিকা,উত্তরবঙ্গ সংবাদে অনুগল্প,ছোট গল্প লেখালেখি করেন। সঙ্গীত,বই পড়া,ভ্রমণ ও আধ্যাত্মিকতায় রুচিশীল এবং কুসংস্কার বিরোধী ।