ফুলমণি সন্ধ্যাবেলায় বাড়ি
ফিরে এসে একৌটো ওকৌটো নাড়ানাড়ি করে পেটের জ্বালা মেটাবার জন্য। কিছুই পায় না
হাতের কাছে । ভাবে মাও তো বাড়ীতে নেই। ঘোষ
দাদুর বাড়ী থেকে রান্না করে ফিরতে দেরি হচ্ছে। বাবা তো কবেই নিরুদ্দেশ! মা তো সারাদিন
অনেক খাটনি করে আমার জন্য। ফুলমণিও রোজগারের চেষ্টা করেছিল,কিন্তু
কোনও কাজ পায় নি। বাড়ি থেকে অনেক দূরে সাইকেল চালিয়ে কলেজ গিয়েছিল, কলেজ শেষে
মাঠে ছুটতে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরে খিদের জ্বালায় ছটফট করছে। মাও তো খুবই অসহায় __ কোনোক্রমে
বাড়ি বাড়ি রান্না করে দুজনের সংসার টেনে নিয়ে চলছে। ফুলমণি সব বোঝে কিন্তু ' পেটের
জ্বালা বড় জ্বালা '।
ফুলমণি বাড়ীর দরজায় তালা দিয়ে
গ্রামেরই একটা দোকানে মুড়ি বাতাসা কিনতে যায়। দোকানে পয়সা বাকি রেখে রহিম চাচার
কাছ থেকে কিনে খেতে খেতে সে বাড়ির পথ ধরে। ফুলমণি খুব শান্ত মেয়ে। স্কুলে, কলেজে,পাড়ায়
তার খুব সুনাম । সে পাড়ার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়ায়। কিন্তু তারা খুব গরীব বলে
পয়সা নেয় না। হাঁটতে হাঁটতে মুড়ি চিবোতে থাকে । হঠাৎ রাস্তার ধার থেকে কে যেন
ফুলমণি বলে চীৎকার করছে । আবছা অন্ধকারে ভালো দেখতে পাওয়া যায় না ! মনে হচ্ছে
কারা যেন পেছনে হেঁটে আসছে ! ফুলমণির খুব ভয় করে, গা ছমছম
করে । পেছন ফিরে না দেখেই সে তার হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয় । মনে মনে সাহস সঞ্চয়
করে , ভয়কে দূর করে দেয় । হঠাৎ পেছন থেকে ওড়নায় টান পড়ে । চোয়াল শক্ত করে
সে ঘুরে দাঁড়ায় । কাউকেই চিনতে পারে না তাই সজোরে একজনের গালে চড় বসায় ।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই চড় খেয়ে ছেলেটি ঘাবড়ে যায় ।
পাশের ছেলেটা ফুলমণির হাত ধরতেই সে প্রচণ্ড চীৎকার জুড়ে দেয় এবং তার গালেও আর
একটি জোরে চড় বসায় । দলে থাকা তৃতীয়টি তার মুখ চেপে ধরে ।
ফুলমণিও তার হাতটা কামড়াতে ভোলে না ।
ইতিমধ্যে চীৎকার চেঁচামেচি শুনে দূরে কিছু লোক ছুটে আসছে দেখে শয়তানগুলো
দৌড়ে পালাতে থাকে । ফুলমণি রোজ মাঠে ছোটা
মেয়ে,তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সহজ নয়।
সেও ছুট লাগায়, ধরে ফেলে
একজনকে । ইতিমধ্যে অনেক মানুষ এসে বাকি দুটিকে ধরে ফেলে । সবাই মিলে তিনটি
শয়তানকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ।
গ্রামের মানুষ খুব খুশি হয় ফুলমণির
কৃতিত্বে । এতক্ষণে মা রান্না করে বাড়ি ফিরছে । এই সব জটলা থেকে সে সব জানতে পারে
। উপস্থিত বুদ্ধির জোরে ফুলমণি আত্মরক্ষা করতে পারে । পেটে খিদের জ্বালা থাকলেও সে
প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে ।
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখিকার পরিচিতি –
শিক্ষকতা ও সংসার সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে সাহিত্য চর্চার সময়ে টান পড়েছিল এক সময়ে। মনের সুপ্ত বাসনা মনেই লুকিয়ে ছিল । সময় পেলেই খাতা, কলম নিয়ে বসে যান লিখতে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখেন। মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অনুভূতিগুলো বেড়িয়ে আসে কবিতা হয়ে। কবিতাকে ভালবেসে ফেলেছেন।