ধারাবাহিক উপন্যাস – প্রতি বৃহস্পতিবার ।
We were
the circle of the crazy ladies
Who sit
in the lounge of the mental home
And smile
at the smiling woman
Who
passes us each a bell.
আম্রপালি আর সরোজ কে
মুখোমুখি একটি গোল টেবিলে বসিয়ে মডারেটর এর আসনে বাভ্রবি। টাইম লাইন ছিন্ন ভিন্ন
একটি কালখণ্ডে দুই নারী--
--দিল্লির একটি আধুনিক বিউটি পার্লার--স্পা--সরোজকে একদিন
যেভাবে রাজস্থানে নিয়ে যাওয়া
হয়েছিল-সেভাবেই আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসা হলো। আবার মালিকানা হাত বদল। এবার মালকিন--মিসেস দীনা--। সরোজ মাসাজ করা জানত
না--ওকে ট্রেনিং দেওয়া হলো--এবং সরোজ
বুঝতে পারল ঠাণ্ডা,বন্ধ ঘরে মৃদু সঙ্গীত চালিয়ে ওকে পুরুষের বডি মাসাজের সাথে আর যা যা করতে হবে,সেটা
এতদিন ধরে প্রতিরাতেই সে করে আসছে। শুধুমাত্র ফারাক এটাই--এখানে দিন রাতের ফারাক নেই। কখনও কখনও
দিল্লির তথাকথিত পশ এরিয়া থেকে কল আসতো মাসাজ এর জন্য। সরোজ
আস্তে আস্তে এই বারবণিতার জীবন
যাপনে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধেই
অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল। আর এরকমই একটি পশ বাড়ি থেকেই ওর মুক্তির দরজা খুলে গেলো।
সরোজ-এর কথার
জবাবে কৌতূহল নিয়ে বাভ্রবি জিজ্ঞেস করল
--"ক্যায়সে?"
আম্রপালির ঠোঁটের
কোণে মৃদু হাসির রেখা। করুণাধারা
যেন অবিরাম ঝরে পড়ছে ওর চোখ থেকে।
--"মুক্তির
পথ হয়ত এভাবেই আসে--কারুর না কারুর হাত ধরে। আমার
মুক্তি আলোর রেখা ধরে নেমে এসেছিল প্রভু
তথাগতের হাত ধরে।"
সরোজ ম্লান হেসে
বলল--"আপনার মতো সৌভাগ্য আমার
কোথায়? তবে আমাকে এই নরকের
দরজা খুলে উদ্ধার করার পথ দেখিয়েছিলেন নয়না দিদি--আমার সেই পশ
এরিয়ার একটি কোঠির কোটিপতি মালিক মিঃ কাক্কার
এর স্ত্রী নয়না শর্মা। সরোজ
সেদিন মিঃ কাক্কারের ফোন কল পেয়ে যখন কোঠিতে পৌঁছল
তখন দুপুর ১ টা। সাধারণত এরকম সময়ই
সরোজ বডি মাসাজের ডাক পায়। যথারীতি সিকিউরিটি
গার্ড ওকে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে দিল--কিন্তু, যথারীতি মিঃ কাক্কার
এসে ওকে দরজা খুলে দিলেন না--দরজা খুলে দাঁড়িয়েছিলেন নয়না। বয়স
পঞ্চাশের নীচে বলে মনে হলো--সেরকম কোনও
সাজগোজও ছিল না--সাধারণ
সালোয়ার কুর্তা-শুধু বাঁ হাতের
অনামিকায় একটি প্লাটিনাম-এর আংটি। সরোজ আগে হলে এটাকে মামুলি টিন বলেই ভুল করত-কিন্তু এই নতুন বারবণিতার কাজে আসার পর থেকে সে অনেক কিছুই বুঝতে এবং চিনতে শিখেছে। নয়নাকে দেখে
সরোজ একটু অবাকই হলো। আজ অব্দি কোনও দিন,সে
নয়নাকে দেখেনি।
--"মিঃ
কাক্কার নে তুমকো বুলায়া?"
মাথা নেড়ে সায় দিল সরোজ।
--"বডি মাসাজ?"
আবার ও মাথা নেড়ে
সায় দিল।
--"যাও। সায়েদ
মিঃ কাক্কার ইজ ওয়েটিং ফর ইউ।"
--"আপ?"
মৃদু হেসে নয়না উত্তর দিলেন
--"আই
অ্যাম নয়না-নয়না শর্মা--ওর ইউ ক্যান কল
মি মিসেস কাক্কার।"
অবাক হয়ে তাড়াতাড়ি দুহাত জোড় করে সরোজ
--"নমস্তে
ম্যাডাম। ম্যাডাম কভি --"
--"মুঝে দেখা
নেহি?" যাও। তুম লেট হো যাওগে।"
বাভ্রবি অবাক বিস্ময়ে বলল--"স্ত্রীর সামনে লোকটা তোমাকে নিজের বেডরুমে ঢোকালো?"
আম্রপালির মুখে মৃদু হাসি।
--"আমার সময়
এরকম টা হতো না। রাজপুরুষরা,অমাত্যরা নগর-বধূর বাড়িতেই
মিলিত হতো।"
সরোজ তেতো হাসি
হাসল--"সময় বদল গিয়া।"
--"হুঁ। তারপর?"
সরোজ যখন
মাসাজ এবং আনুষঙ্গিক কাজ সেরে
বেরুতে যাবে তখন আবার নয়না শর্মার
সঙ্গে দেখা। নয়না মৃদু হেসে
বললেন--"ইস দলদল সে তুম নিকালনা চাহতে
হো?""
সরোজ অবাক
হয়ে দুচোখ তুলে তাকালো। অজান্তেই
হয়ত ওর দুচোখে জল ভরে উঠেছিল।
--"আপ মজাক
কর রহে হ্যাঁয় ম্যাডাম?"
নয়না দৃঢ় সুরে বলেছিলেন--"নেঁহি। মেঁ মজাক নেঁহি
কর রহি হুঁ। ইয়ে মেরা কার্ড হ্যায়। যব চাহে মিল সঁকতে হো।"
সরোজ অবাক
হয়ে কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখেছিল
নয়না শর্মা একটি উইমেন রি হ্যাবিটেটের সঙ্গে যুক্ত এবং তিনি একজন এডভোকেট। অবাক হয়ে সরোজ
জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল এরকম একটা লোকের
সঙ্গে নয়না শর্মার মত মহিলা আছেন
কেন? নয়না ওকে কোনও কথা বলার
সুযোগ না দিয়ে বলেছিলেন--"এখন যাও। সময় এবং সুযোগ এলে সব বলব,সব
শুনব।"
সরোজ মিসেস দীনার ট্রাষ্ট
অর্জন করে ফেলেছিল। তাই যখন কফিশপে
নয়না শর্মার সঙ্গে দেখা করতে যেতো,তখন
সরোজ কে কেউ সন্দেহ করতো না। নয়নার কাছ থেকেই সরোজ জানতে পারল ওদের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলেটি বাবার এই
চরিত্র মেনে নিতে পারেনি--বিদেশে
চলে গেছে।
--"ম্যাডাম,আপ
কিঁউ নেঁহি চলে গঁয়ে?"
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নয়না শর্মা তখন বলেছিলেন ওদের মেয়ে--জন্ম
থেকেই হাঁটতে চলতে পারে না--কথাও
ভাল করে বলতে পারে না--মেয়ের চিকিৎসা,আয়া--ইত্যাদির জন্য
প্রচুর খরচ--মেয়ের জন্যই নয়না শর্মা এখানে রয়ে গেছেন।
তারপর এলো সেই
দিন--হাতেনাতে মিসেস দীনার এই মধুচক্রকে ধরার জন্য
যাবতীয় তথ্য,প্রমাণ সহ
একদিন গোপন ডেরায় হানা দিল দিল্লি পুলিশ--গ্রেফতার হলো দীনা এবং তার সঙ্গী সাথী--উদ্ধার করা হলো সরোজ সহ আরও কুড়ি
পঁচিশটি মেয়েকে। এদের মধ্যে
পাঁচজন ছিল নাবালিকা।
সরোজ একবার ওর মার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চাইলো--পুলিশ এক লেডি কনেষ্টবল সহ ওকে কাটোরিয়া সরাই নিয়ে এলো! নয়না শর্মা প্রেস কনফারেন্স,ডাকলেন।
লিপিবদ্ধ হলো সরোজের
সমস্ত স্টেটমেন্ট!
বাভ্রবি আম্রপালির দিকে তাকিয়ে দেখল আম্রপালির চোখে জল--আম্রপালি বলল--
-"সেদিন
সন্ধ্যায় এলেন তথাগত--আম্রকুঞ্জে তাঁর পঞ্চশীল নীতি,তাঁর সেই
দর্শন,বাণী শেষে আমি নিজের হাতে তাঁকে নিবেদন করলাম আমার হাতের অন্ন,ব্যঞ্জন--তারপর
আমি ফেলে দিলাম আমার রাজনর্তকীর বেশভূষা--গ্রহণ করলাম চীর
বস্ত্র! নগর-বধূ আম্রপালির গণিকা
জীবন শেষে তথাগত তাঁকে দীক্ষা দিলেন--
--"বুদ্ধম্ শরণম্ গচ্ছামি
ধম্মম শরণম্ গচ্ছামি
সংঘম শরণম গচ্ছামি।"---
ক্রমশ …………
২৩তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি
–
জন্ম-কলকাতায় । আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা ।
প্রকাশিত
গ্রন্থ
১--সাপ শিশির
খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)
ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত