ধারাবাহিক উপন্যাস – প্রতি বৃহস্পতিবার ।
It
moves.They are all alive.
Even the
moon bulges in its orange irons
To push
children, like a god,from its eye.
The old
unseen serpent swallows up the stars.
পূর্ণিমার লাল চাঁদ বৈশালীর আকাশে। আম্রপালির আম্র কুঞ্জের
উপর বর্ষিত হইতেছিল
চন্দ্র কিরণ।স্নিগ্ধ!শান্ত!জ্যোতির্ময়।ঘনিষ্ঠ ভালবাসায় শশাঙ্ক
আম্রকুঞ্জের আম্র পল্লবে ঘন সন্নিবদ্ধ। আম্রপালির আনন্দ আজ চন্দ্র কিরণের ন্যায় উপচে
পড়ছিল। আম্রপালির আম্র কুঞ্জে আজ
স্বয়ং বোধিসত্ত্ব আসবেন তাঁর প্রধান শিষ্যদের
সঙ্গে নিয়ে। আম্রপালি নিজের হাতে
আজ তাঁদের সকলের
জন্য খাবার বানাবে বলে রন্ধনশালায় পরিচারিকা এবং পাচকদের ছুটি দিয়ে রন্ধন কার্যে পরিবৃত।
আজকের দিনটি সহজ ভাবে আম্রপালির জীবনে আসেনি। অনেক বাঁধা,অনেক
রাজনৈতিক বেড়াজালের বাঁধন পেরিয়ে আসতে
হয়েছে ওকে।
"শুনতে চাই
আম্রপালি, সেই কাহিনী শুনতে চাই--"
বাভ্রবির মনে তখন সরোজ আর আম্রপালি--দুজনেই সমান আসনে আসীন।
অনেক দিন পর--বাভ্রবি লাদাখের একটি বিখ্যাত
বৌদ্ধ বিহারের লাইব্রেরিতে
লিপিবদ্ধ দেখতে পেয়েছিল। চাইনিজ পর্যটকের
বিবরণ এবং --"ত্রিপিটকে"-ও
আম্রপালির কথা রয়েছে। কিন্তু কাশ্মীরের
গিলগিট এরিয়া থেকে পাওয়া বৌদ্ধ
পাণ্ডুলিপি --মূলাসারবস্তুবাদ-এর তিব্বতিয়ান এবং সংস্কৃত ভাষায় লেখা পাণ্ডুলিপিতে
আম্রপালিকে এক অসাধারণ শ্রদ্ধার আসনে বসানো হয়েছে। অন্য পাণ্ডুলিপিতে ওকে --"গণিকা" হিসেবে
নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখালেও এই তিব্বতিয়ান সংস্কৃত
পাণ্ডুলিপিতে ওকে সেভাবে দেখানো হয় নি।
এই বিভিন্ন
মতামত থেকেই যেন সত্যিকারের এক নারী এবং অবশ্যই সেই
সময়কার সমাজ ব্যবস্থার
একটি চিত্র ফুটে ওঠে। কিন্তু সরোজ আর আম্রপালির--সামাজিক অবস্থান
এর তো কোনও বদল হয় নি--তাহলে কি সমাজ সেই
সময় যা ছিল আজও --এই একবিংশ
শতাব্দীতে ও সেখানেই আছে?
-"কি
ভাবছ।"
--"কিছু না। তোমার
কথা বল পিয়ে।"
আম্রপালি যখন তথাগত বুদ্ধের অর্চনা এবং আপ্যায়ন এর,জন্য মনে প্রাণে প্রস্তুত হচ্ছিল তখন বৈশালীর রাজ পরিবার থেকে তাকে নিরস্ত করার জন্য প্রভূত চেষ্টা চলেছিল।
আম্রপালির যুগল ভুরু কুঞ্চিত হয়ে উঠল। শুভ্র দাঁত দিয়ে নীচের
ওষ্ঠাধর চেপে বলল--"এখানে
তাকে সসম্মানে নিয়ে এসো।"
রাজদূত আম্রপালিকে সম্মান জানিয়ে বলল--"ভদ্রে,জনপদ
কল্যাণী,মহারাজ আপনার জন্য
একটি পত্র এবং সঙ্গে এই বিবিধ স্বর্ণালংকার
উপঢৌকন পাঠিয়েছেন।
আম্রপালি এতো বিশাল স্বর্ণালংকার
এবং স্বর্ণ মুদ্রা দেখে বিস্মিত
হলো।
শান্ত চোখ দুটি তুলে বলল--"রাজদূত,এতো
উপঢৌকন আমার জন্য? কেন? আমি তো এর
যোগ্য নই।"
রাজদূত আম্রপালির সামনে আর্মি নত হয়ে বলল--"ভদ্দে
অম্বাপালি,রাজা আপনার
জন্য একটি পত্র পাঠিয়েছেন।"
পত্রটি পড়তে পড়তে
আম্রপালির মুখ রক্তিম
হয়ে উঠল। আঁখিপল্লব,অধর কাঁপতে লাগল। চিঠিতে রাজা আদেশ
করছেন আম্রপালিকে যে এক গণিকার
গৃহে আহার গ্রহণ
করলে বোধিসত্ত্ব তো বটেই, এমনকি
বৈশালী রাজ্যের সম্ভ্রম নষ্ট
হবে। সুতরাং আম্রপালি যেন এই স্বর্ণ
মুদ্রার বিনিময়ে
বোধিসত্ত্বের প্রতি তার আমন্ত্রণ ফিরিয়ে নেয়। সেদিন তাহলে তিনি রাজ পরিবারেই
আহার করবেন। অন্যথায় আম্রপালিকে
রাজরোষে পড়তে হবে।
আম্রপালির অবস্থা দেখে
রাজদূত শিহরিত হলো। সে বুঝতে পারল আম্রপালিকে অপমান করা হয়েছে।
বিনীত ভাবে সে বলল--"ভদ্দে আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি পত্র বাহক মাত্র।"
আম্রপালি মৃদু হেসে
বলল--"ভদ্দ, আপনার কোনও
দোষ নেই। আপনি রাজাদেশ পালন করেছেন মাত্র।"
রাজদূতের সামনেই
আম্রপালি সেই ভূর্জ পত্র
বিনষ্ট করে বলল--"রাজদূত, আপনি
এই সমস্ত
উপঢৌকন--না,উৎকোচ ফিরিয়ে নিয়ে যান। আর
রাজাকে গিয়ে বলবেন--আম্রপালিকে উৎকোচ
দিয়ে ক্রয় করা যায় না। সে নগরবধূ
হলেও তার একটা সম্মান আছে।"
--"তারপর?"
--"তারপর,দুবার আমার এবং আমার কিশোর পুত্র
বিমলের উপর অতর্কিত আক্রমণ হয়েছে। কিন্তু তথাগত
বুদ্ধের অসীম কৃপা --আমাদের কিছুই হয় নি। আমি তথাগত বুদ্ধের
জন্য চিন্তিত হয়ে পড়লাম। শুনলাম রাজার লোকেরা এবং স্বয়ং রাজা নাকি তথাগত বুদ্ধের
কাছে গিয়ে অনুরোধ করেছেন যে ঐ
পূর্ণিমার রাতে এক গণিকার আম্রকুঞ্জে না গিয়ে বোধিসত্ত্ব যেন রাজার
অতিথি হোন।"
বাভ্রবি কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস
করল--"বোধিসত্ত্ব কি বলেছিলেন?"
আম্রপালি মৃদুল হেসে
বলল--"তিনি তাঁর সৌম্য,শান্ত স্বরে
রাজাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আমি ভগবান
বুদ্ধের সুরক্ষার জন্য অস্থির
হয়ে তাঁর কাছে ছুটে গেলাম--"প্রভু,আপনার যদি কোনও
ক্ষতি হয়--আপনি বরং রাজা--"
তথাগত সৌম্য
হেসে বলেছিলেন--"ভদ্দে
আম্রপালি,আমি আগামী পূর্ণিমায় তোমার আম্রকুঞ্জে যাব। আর মাত্র দুদিন
বাকি। তুমি আয়োজন কর
কল্যাণী।"
আজ সেই পূর্ণিমার রাত। আম্রপালির
আম্রকুঞ্জে আম্রপালি অপেক্ষারত--তথাগত
বুদ্ধের চরণধ্বনি বেজে উঠল--ভিক্ষুর বেশে---পরিত্রাতা রূপে।
ক্রমশ …………
২১তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি
–
জন্ম-কলকাতায় । আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা ।
প্রকাশিত গ্রন্থ
১--সাপ শিশির
খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)
ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ।