Advt

Advt

gras-o-shikkha-duti-anu-galpo-by-rekha-nath-tatkhanik-digital-bengali-web-bengali-online-e-magazine-গ্রাস-ও-শিক্ষা-দুটি-অণুগল্প-রেখা-নাথ

gras-o-shikkha-duti-anu-galpo-by-rekha-nath-tatkhanik-digital-bengali-web-bengali-online-e-magazine-গ্রাস-ও-শিক্ষা-দুটি-অণুগল্প-রেখা-নাথ

গ্রাস

রেখা নাথ

রথীন বলল- দাদা,goggles-টা দিয়ে দিস্। আমার জয়বাংলা (conjunctivities) হয়েছে। যতীন অনিচ্ছাসত্ত্বে goggles-টা দিল ভাইকে।

প্রতিদিন সকালে উঠেই যতীন ভাইকে জিজ্ঞেস করে---তোর চোখটা ঠিক হয়ে গেছে?

---না এখনও হয়নি, রথীন বলে।

স্ত্রী, অমিতা বঝাঁঝিয়ে উঠে বলল---একটা goggles কিনতে পারো না। দাদার কাছ থেকে নেওয়ার কি দরকার।

রথীন অমিতাকে বলল---চশমাটা আমার প্রাণাধিক প্রিয়। ব্যবহার করতাম খুব সযত্নে। চাকরীতে ঢুকেই প্রথম মাইনে পেয়েই কিনেছিলাম। খুব দামী রেব্যানের চশমা। মাইনের অর্ধেক টাকাই তখন ওই চশমা কিনতে চলে গিয়েছিল। তখন দাদা বলেছিল---এত দামী চশমা কিনেছিস্।

তাহলে চশমাটা দাদা নিজের কাছে কেন রাখে? অমিতা জিজ্ঞেস করল।

---একসময় দাদার চোখে জয় বাংলা হয়েছিল। তখন চশমাটা চেয়ে নিয়েছিল দাদা। তারপর থেকেই চশমাটা দাদার কাছে। দাদাই ব্যবহার করত। একটা কাঁচ দাদার কাছে ভেঙ্গে গিয়েছিল। দাদা সারিয়ে নিয়েছিল। তাই ওটা এখন দাদার সম্পত্তি। হাসতে-হাসতে রথীন বলল।

---বাঃ রে, দাদা ভেঙ্গেছে, দাদারই তো সারিয়ে ফেরৎ দেওয়া উচিৎ।

---যারা অন্যের জিনিষ গ্রাস করে তারা উচিৎ-অনুচিত দেখে না। রথীন মনে মনে ভাবল কিন্তু কিছু বলল না।

**************************************************************

শিক্ষা?

রেখা নাথ

শান্তাবাই ও তার দশ বছরের নাতনী সঁতরীকে ডি স্কুলের সকলেই চেনে। দশ বছর ধরে শান্তাবাই আসছে এই ডি স্কুলে। ছাত্র-ছাত্রী,শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে ভিক্ষে চায়। ভিক্ষাই তার জীবিকা। যদিও ঠাম্মার সঙ্গে সঁতরী প্রতিদিন ডি স্কুলে আসে কিন্তু সে ভিক্ষে চায় না। সে ওজনমাপা যন্ত্র নিয়ে বেশীরভাগ সময় দিদিদের পিছু-পিছু ঘোরে এবং পীড়াপীড়ি করে দয়া করে দিদিরা যদি তার ওজন মাপা যন্ত্রে ওজন মেপে নেয় তাহলে তার কিঞ্চিৎ কামাই হয়।

প্রতিবছর এক ঝাঁক সতেজ তরুণ-তরুণী ডি স্কুলে ভর্তি হয়। তারাও দূ দিনেই শান্তাবাই ও সঁতরীকে চিনে যায়। কেউ-কেউ দয়া পরবশ হয়ে শান্তাবাইকে টাকা দেয়, সঁতরীর ওজন মাপা যন্ত্রে নিজের ওজন দেখে নেয়। কেউ-কেউ মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়। কেউ-কেউ বিনি পয়সায় উপদেশ দিতে ছাড়ে না---'বেশ তো হাট্টাকাট্টা কাজ করে খেতে পারো না।'

ডি স্কুলে রোশনী অরোরা ও নেহা কক্কড়ের তুমুল উপস্থিতি সবার নজর কাড়ে। ধনীর দুলালী দুই বন্ধু যেন হরিহরাত্মা। একই কলেজ থেকে পাস করে ওরে এই দিল্লী স্কুল অব ইকোনমিক্সে এ্যাডমিশান নিয়েছে। রূপের জলুশ ও প্রাচুর্যের জাঁক যেন ঠিকরে পড়ছে তাদের শরীর থেকে। সব দিক দিয়ে চৌকশ স্মার্ট তার ডি স্কুলের প্রাঙ্গণ দাপিয়ে বেড়ায়।

শান্তাবাই ও সতরী দুজনেই রোশনী অরোরা ও নেহা কক্কড়কে চিনে গেছে। প্রথমদিন থেকেই। অবশ্য রোশনী ও নেহা এই দীন,হীন,তুচ্ছ মানুষদুটিকে কোনওদিন ভালভাবে দেখেনি পর্যন্ত। ওরা প্রায় প্রতিদিন ডি স্কুলের ক্যান্টিনে কিঞ্চিৎ জলযোগ সেরে দুটি মিনারেল ওয়াটারের বোতল নেয়। এক চুমুক,দুচুমুক জল খেয়েই বোতল দুটি ছুঁড়ে ফেলে দেয়। শান্তাবাই সযত্নে বোতলদুটি ধুলোর থেকে তুলে নেয়। বোতলের অবশিষ্ট জল গাছের ওপর ঝরিয়ে বোতলদুটি ডাস্টবিনে ফেলে দেয়।

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

 লেখিকার পরিচিতিঃ 

যদিও জন্ম পলাশীপাড়ানদিয়া জেলাপশ্চিমবঙ্গকিন্তু তাঁর শৈশববেড়ে ওঠাশিক্ষা-দীক্ষা সব এলাহাবাদেই। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থশাস্ত্রে এম.এ.। ১৯৮১ সালে এলাহাবাদ থেকে একটি ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা "তূণীর" প্রকাশ করতেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় (দেশে ও বিদেশে) লেখা প্রকাশিত হয়। হিন্দী ও ইংরাজিতেও লেখা প্রকাশিত হয়েছে। পানামার কবিরোখেলিও সিনান এর দশটি স্প্যানিশ কবিতা বাংলায় অনুবাদ করেছেন। 'অনুশীলন পত্রিকা'সুইডেন থেকে রাইটার্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৩ সালে পেয়েছেন। ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছে "ঈশ্বর ও মানুষ" ( অণু গল্প ও ছোট গল্প সংকলন)। লেখিকার অভিজ্ঞতাজাত কোভিড  সংক্রান্ত বই "কোভিড-১৯ আমার জীবন আমার লড়াই" গাঙচিল থেকে প্রকাশিত হয়েছেডিসেম্বর ২০২২ সালে।