Advt

Advt

baramangwa-chotamangwa-saranda-by-biswajit-chakraborty-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-বড়ামাঙ্গোয়া-ছোটামাঙ্গোয়া-সারান্ডা

baramangwa-chotamangwa-saranda-by-biswajit-chakraborty-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-বড়ামাঙ্গোয়া-ছোটামাঙ্গোয়া-সারান্ডা
 

পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার অন্যতম সেরা পর্যটনকেন্দ্র তিনচুলে বর্তমানে প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই তিনচুলে থেকে প্রায় ৪ কিমি দূরে এক অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর স্থান বড়ামাঙ্গোয়া। প্রায় ৪৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এক নির্জন, অনাবিল পাহাড়ি গ্রাম বড়ামাঙ্গোয়া। একদিকে পাহাড়ের গায় ঝুম চাষ , কমলা লেবুর বাগান, অপরদিকে তিস্তা নদীর সর্পিল জলধারার পাহাড়ি সুর মূর্ছনা , তার সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করে তুলেছে আকাশ ছুঁতে চাওয়ার দুঃসহ স্পর্ধা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ের সারি, মন ভালো করে দেওয়ার জন্য যা যা থাকা দরকার, তার সব কিছুই উপস্থিত এখানে। এখান থেকে বিভিন্ন ছোট ছোট ট্রেকিং রুট চলে গেছে বিভিন্ন দিকে। নেচার ট্রেইলে হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে দেখে আসা যায় প্রায় জনমানবহীন সুন্দর পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত ভিউ পয়েন্ট এবং চোরতেন ।

বড়ামাঙ্গোয়া থেকে ঘুরে নেওয়া যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার ছায়ায় ঢাকা পেশক চা বাগান ।

baramangwa-chotamangwa-saranda-by-biswajit-chakraborty-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-বড়ামাঙ্গোয়া-ছোটামাঙ্গোয়া-সারান্ডা


বড়ামাঙ্গোয়া থেকে আরও প্রায় ৩ -- ৪ কিমি ট্রেকিং করে যাওয়া যায় আরও একটি সুন্দর পাহাড়ি গ্রাম ছোটা মাঙ্গোয়া । বর্তমানে ইকো ট্যুরিজমের নয়া পীঠস্থান হয়ে উঠেছে এই বড়ামাঙ্গোয়া এবং ছোটামাঙ্গোয়া। কমলা বাগানে ঘেরা এই ছোটামাঙ্গোয়া থেকে একদিকে বয়ে চলা তিস্তা আর অপর দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার রুপ দেখে মুগ্ধ হতে হবেই । এই ছোটামাঙ্গোয়া থেকে ভোরের সূর্যোদয় দর্শন করা এক অভাবনীয় অনুভূতি। এছাড়াও বড়ামাঙ্গোয়া এবং ছোটামাঙ্গোয়ায় শুধু যে কমলালেবুর বাগান আছে তাই নয়
, এখানে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন অরগ্যানিক সারের ব্যবহারে তৈরি করা বিভিন্ন মূল্যবান ভেষজ উদ্ভিদ। শুধু আপেল নয় ,  এখানকার মুসম্বি লেবুর সুখ্যাতি আছে সর্বত্র। এখান থেকে তিস্তা ও রঙ্গিত নদীর বুকে রাসন

এখান থেকে তিস্তা ও রঙ্গিত নদীর বুকে rafting - ও করে নেওয়া যায়। ঘুরে নেওয়া যায় কাছেই পাশের তাকলিঙ গ্রামের মনাস্ট্রিটিও ।

যাতায়াত -- কলকাতা থেকে ট্রেনে এন জে পি অথবা ধর্মতলা থেকে বাসে শিলিগুড়ি এসে সেখান থেকে সেবক ও তিস্তাবাজার হয়ে প্রায় ৬০ কিমি পথ এই বড়ামাঙ্গোয়া। যেতে হবে গাড়িতে। আর বড়ামাঙ্গোয়া থেকে একটু কষ্ট করে পাহাড়ি পথে কমলালেবুর বাগানের মধ্য দিয়ে প্রায় ২ কিমি দূরে ছোটামাঙ্গোয়া ।

বড়ামাঙ্গোয়া আর ছোটামাঙ্গোয়া রয়েছে অসংখ্য হোমস্টে । এগুলিতে একদম ঘরের আতিথেয়তায় , স্থানীয় মানুষজনের সহজ সরল জীবনের সঙ্গেও পরিচিত হওয়া যায় ।

-----------------------------------------------------------------------------------------

baramangwa-chotamangwa-saranda-by-biswajit-chakraborty-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-বড়ামাঙ্গোয়া-ছোটামাঙ্গোয়া-সারান্ডা

  
এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ও সেরা শাল অরণ্য । পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র এই সারান্ডা ফরেস্ট,যার মধ্যমণি হল কিরিবুরু আর মেঘাতাবুরু। এখান থেকে সামান্য দূরত্বে অবস্থিত শতাধিক বছরের প্রাচীন এই মন্দির " মুর্গা মহাদেব" মন্দির। স্থানীয় মানুষজনেরা এই মন্দিরকে অত্যন্ত পবিত্র ও জাগ্রত বলে বিশ্বাস করেন। ভক্তদের বিশ্বাস, এখানে মানত করে পুজো দিলে সকল মনস্কামনা পূরণ হয়।

  ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূম জেলা ও ওড়িশার প্রায় সীমান্ত অঞ্চল নোয়ামুন্ডি। এই নোয়ামুন্ডি শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় তিন ৪--৫ কিমি দূরে টিসকো টাউনশিপের কাছে মুর্গা পাহাড়ে অবস্থিত মন্দিরটির শিল্পশৈলী অনেকটাই ওড়িশার মন্দিরগুলির শিল্পশৈলীর মতো। মন্দিরের প্রবেশের যে তোড়ণদ্বার রয়েছে তার শীর্ষদেশে রয়েছে নীলকন্ঠ মহাদেবের নীল রঙের মুখাবয়ব।

  মূল মন্দিরটির প্রবেশদ্বারের দুই পাশে দুটি সিংহ মূর্তি। মন্দির চত্বরে রয়েছে একটি ষাঁড়ের মূর্তি, যাকে অনেকে নন্দী বলেও বলেন।

 অনেকটাই লাল এবং গেরুয়া রঙের মন্দিরটির অভ্যন্তরে পূজিত হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান মহাদেব।। প্রতিদিন এখানে অসংখ্য ভক্ত সমাগম হয় মহাদেবের কাছে পুজো দিয়ে মনোস্কামনা পূর্ন করার অভিপ্রায় নিয়ে। শিবরাত্রি এবং দূর্গা পূজার সময় এখানে প্রবল আড়ম্বরে এবং পবিত্রতার সঙ্গে এখানে পুজোপাঠের আয়োজন করা হয়। হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয় তখন। রীতিমতো উৎসবের আবহে সেজে ওঠে তখন এই মন্দির।

  মন্দিরের কাছেই রয়েছে একটি সুন্দর ছোট্ট ঝর্ণা। অনেকেই এই ঝর্ণাধারায় স্নান করে তারপর পুজো দেন এই মন্দিরে । সবুজের গালিচায় মোড়া পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এই মন্দিরের আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অসাধারণ ।

   এই মন্দিরের কাছাকাছি থাকার জায়গা তেমন নেই । সাধারণতঃ পর্যটকরা এই মন্দির ঘুরে নেন খুব কাছের, সারান্ডা অরণের কিরিবুরু মেঘাতাবুরু থেকেই।

এবার আসা যাক কিরিবুরু মেঘাতাবুরু থেকে।

প্রকৃতপক্ষে কিরিবুরু আর  মেঘাতাবুরু দুটি আলাদা আলাদা পাহাড় চূড়া । একটি পাহাড় থেকে অন্যটিতে পায় হেঁটেই ঘুরে আসা যায় । সারান্ডার গভীর অরণ্যের অভ্যন্তরে অবস্থিত এই কিরিবুরুকে বলা হয় ৭০০ পাহাড়ের দেশ । এখান থেকে নাকি আশেপাশের অঞ্চলের ৭০০ টি পাহাড়ের চূড়া দেখা যায়। তাই এই নাম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭০০ ফুটের মতো উচ্চতায় অবস্থিত এই বনাঞ্চল একসময় ছিল সিংভূমের রাজাদের শিকার করার স্থান। বর্তমানে এই অঞ্চল প্রকৃতিপ্রেমিক পর্যটকদের কাছে এক অত্যন্ত প্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিনত হয়েছে।

  শাল, মহুয়া, পলাশ, শিমুলের এই অরণ্যে দেখা মেলে বুনো শুকর , বন্য কুকুর , যাদের স্থানীয় ভাষায় বলে ঢোল, হাতি , এবং জানা অজানা, হরেক রঙের, হরেক কিসিমের পাখির। এখানে এলে এক যাত্রায় দেখে নেওয়া পুন্ডিল ফলস , সান সেট পয়েন্ট প্রভৃতি। আর প্রাণভরে উপভোগ করা যায় অরণ্যের শীহরণ। সঙ্গে এই মুর্গা মহাদেব মন্দির দর্শনের পুন্য তো রইলই।

তবে মনে রাখা দরকার, এখানে ঘোরাঘুরির জন্য সর্বদা সঙ্গে গাড়ি রাখা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সুবিধার এবং অপেক্ষাকৃত কম খরচ হয় প্যাকেজ ট্যুরে ঘুরে নিলে। সেক্ষেত্রে জঙ্গলে সাফারি, এবং অন্যান্য ঝক্কির হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় ।

কিরিবুরু থেকে মুর্গা মহাদেব যাওয়ার পথ হবে এই রকম ---- কিরিবুরু -- বড়া জামদা -- নোয়ামুন্ডি । আর কিরিবুরু যাওয়ার জন্য প্রথমে আসতে হবে বড়া জামদা। কলকাতা থেকে আসছে হাওড়া --- বরবিল জন শতাব্দী এক্সপ্রেস। বড়া জামদা থেকে গাড়ি বা ট্রেকারে সামান্য পথ কিরিবুরু।

  থাকার জন্য এখানে কিরিবুরুতে আছে সেইল ( SAIL )- এর গেষ্ট হাউজ। বুকিং - এর জন্য প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন ০৯৮৩৬৪৬৮১৭৮ নম্বরে। আর গাড়ি বা প্যাকেজের প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন ০৮৯৮১৬১২১০০ নম্বরে ।

লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

লেখক পরিচিতি -

জন্ম কলকাতায়। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করেন। সাপ্তাহিক বর্তমানে ভ্রমণ নিয়ে নিয়মিত লেখেন। বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে এবং তথ্য সংগ্রহে আনন্দ পান     

ছবি - সংশ্লিস্ট সংস্থার সৌজন্যে