গুরুতর অন্ধকার
ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্যের
অধিকাংশ পর্যালোচনাতে প্রাক-আর্য ভারতীয় সভ্যতার, ভাষা সমেত, যথাযথ
বীক্ষণ দেখা যায়না। কারণ এই সহস্রাব্দগুলি এখনও অন্ধকারে। খননে পাওয়া তথ্য সাবুদ
বস্তু ভিত্তিক অতীতকে অনেকটা আলোকিত করতে পারলেও সভ্যতার বহু আঙ্গিক আবিদ্বার এখনও
অন্ধকারে। পৃথিবীতে সাহিত্যের প্রথম সৃজন ঋকবেদ সংহিতা হলেও বৈদিক অক্ষর মালা ও
লিপির স্বরূপ কেমন ছিল এবং কতটা ভিন্ন ছিল পরবর্তীকালের ব্যবহহৃত সংস্কৃত থেকে তা
অনুমান করা এখনও কঠিন। আবার বৈদিক লিপি এবং ব্রাহ্মী লিপির মধ্যেকার বিবর্তনের
ধাপগুলি কি ধরণের এবং কত সময়ের উপর তাও অজানা। তেমনি ব্রাহ্মী থেকে অশোক লিপির
বিবর্তনের কথা তাও অজ্ঞাত। কিন্তু প্রাকবৈদিক তান্ড সভ্যতার ভাষা সম্বন্ধে অনেকটা
জানা গেছে। এই যুগ থেকে ভারতীয় ভাষাগুলির ক্রমবিকাশ অধ্যয়নের সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে
দেখা গেছে, পৃথিবীর প্রাচীনতম অক্ষর
মালা ও লিপি (২৫০ অক্ষর ও লিপির) ছিল সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতার। এই দীর্ঘ-মালা থেকে
এবং আর্যদের কথ্য ভাষার শব্দ ভান্ডার ও উচ্চারণের মিশ্রণে কম সংখ্যার বৈদিক অক্ষর
মালা ও লিপির উদ্ভাবন। তার পরেই দ্রাবিড় ভাষা কেননা মহীশূর ও ত্রিবাণুর রাজ্যে
খননে পাওয়া অতি প্রাচীন পাত্রের গায়ে ১৩১টি চিহ্ন আবিষ্কৃত হয়েছে তার অনেকগুলি
নবোপলীয় (Neolithic) যুগের এবং কিছু প্রত্নোপলীয় (Paleolithic)
নবোপনীয় যুগের সন্ধিক্ষণের (Mesolithic) যুগের।
তামিল ভাষার ইতিহাসে বৈদিক ঋষিদের অন্যতম অগস্ত্যঋষির ঐ ভাষার বিবর্তনে মূল্যবান
অবদানের কথা স্বীকৃত। তাম্রযুগে শুধু সিন্ধু-সরস্বতীর মানুষরা কয়েকটা শব্দে
মুদ্রার পরিচিতি, পাথর ও তাম্রফলকে নির্দেশ
খোদাই করতে পেরেছিলেন। দীর্ঘ কিছু রচনা করতে পেয়েছিলেন বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া
যায়নি। বৈদিক অক্ষর লিপির পরে ব্রাহ্মীর দরকার হলো কেন, কোনো
ভাষাগত বা অঞ্চলগত বিরোধ দেখা দিয়েছিল কি? ব্রার্থীর
উদ্ভাবনার প্রয়াসের দরুণই কি দ্রাবিড়, থেকে
তামিল আর বৈদিক অক্ষর থেকে দেবনাগরী অক্ষরের সৃষ্টি আপৎকালীন গতিতে হয়েছে কি? অন্যান্য
প্রাচীন আঞ্চলিক লিপিগুলির উদ্ভাবন হয়েছে তার অনেক পরে। সাহিত্য রচনাতেও তাই। এইসব
জানা অজানার কথার পরেও এটা নিশ্চিত করে জানা গেছে যে আর্যদের অক্ষর ও লিপি ছিল না
এবং কয়েক দশকের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধান্তে বিরতির পর বৈদিক অক্ষর-লিপির সৃজন হয়েছে
সিন্ধু-সরস্বতী ও আর্য গোষ্ঠীগুলির মানুষদের যৌথ প্রয়াসে। এটাও দৃঢ়তার সাথে বলা
হয়েছে যে ভারতের বাইরের কোনও দেশের বা গোষ্ঠীর অবদান নেই বৈদিক ও প্রাচীন আঞ্চলিক
ভারতীয় ভাষাগুলির উদ্ভাবনীতে (হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৭৬, অতুল সুর
১৯৮৮, দীনেশচন্দ্র দাস ২০২০)।
দীনেশ চন্দ্র সেন (১৮৯৭)
বঙ্গভাষা ও সাহিত্য শীর্ষক বইতে বহু বিদেশি ভাষাবিদদের বক্তব্য খন্ডন করে অতুল
সুরের অনেক পূর্বেই বলে গেছেন যে ভারতীয় লিপি ও ভাষাগুলি সব হিন্দুদের অর্থাৎ
তৎকালীন ভারতীয়দের দ্বারাই আবিষ্কৃত। পরবর্তী ভারতীয় ভাষাগুলির, দ্রাবিড়
গোষ্ঠী ও সংস্কৃত সহ, অক্ষর মালা ও মিপির আবিষ্কার
ও বিবর্তনের ইতিহাস গোড়ার বছরগুলির অস্পষ্টতার দরুণ অনিশ্চিত। এটুকু বলা যায় যে
বৈদিক ভাষার উদ্ভাবনার পরে তামিল, সংস্কৃত ও
প্রার্থী লিপিত্র আবিষ্কার এবং আরো কয়েক মজার বছর অর্থাৎ রামায়ণ এবং মহাভারতের যুগ
পেরিয়ে, ব্রাহ্মী লিপি থেকে অশোক লিপির উদ্ভাবন হয় কিন্তু কেমন করে কত ধাপে তা এখনও
অজ্ঞাত। আবার সম্রাট অশোক দেবনাগরী হরফ ব্যবহার না করে অশোক লিপির উদ্ভাবন কেন
করলেন? আঞ্চলিক ভারতীয় ভাষাগুলির উৎপত্তি অন্বেষণের জন্য দীনেশ চন্দ্র সেনের
মন্তব্য অনুধাবনীয়-"মনুষ্য ভাষার যে সর্ব প্রাচীন অমর নিদর্শন রহিয়াছে বঙ্গ
ভাষার আদি রূপ অন্বেষণ করিতে গেলে সেই লেদকেই অবলম্বন করিতে হইবে।” তিনি আরও
বলেছেন যে ভাষা অক্ষর লিপির আলোচনাতে-নতুন খননে পাওয়া তথ্য ও সাবুদ থেকে হয়তো
অনুমান করা যাবে ব্রাহ্মী লিপির আগের লিপি অক্ষরমালা চিত্রাক্ষর আরও কত পুরাতন তখন
হয়তো প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস আরও কয়েক সহস্র বছর খৃষ্ট পূর্বে চলে যাবে।
আর্ন্তজাতিক ভাষা শিক্ষালয়ের
গবেষণাতে জানা গেছে প্রাগৈতিহাসিক মানুষ আফ্রিকাতে ৪০০-এর মত বিভিন্ন শব্দ বার
করতে পারত। প্রবসিত ভারতীয়রা ১৩১ এবং ২৫০ শব্দ চিহ্নিত করেছিল, সেই
অক্ষরমালা ও লিপি কেমন ছিল? আবার প্রায় সমকাল থেকেই
অর্থাৎ আর্য ও অস্ট্রো-এসিয়াটিকরা ভারতে আসার আগেই বাংলা কৃষিধন্য এবং বাঙালি কৃষি
ও বাণিজ্যে সমৃদ্ধতমদের মধ্যে। তাদের কথাভাযা ও স্থানীয় শব্দ ভান্ডারও ছিল যা
প্রাকবৈদিক, প্রাক সংস্কৃত তো বটেই।
দীনেশচন্দ্র সেন প্রাচীন পুস্তক - ললিত সার, কাশীখণ্ড, বাঁকুড়ার
শুশুনিয়া পাহাড়ে চতুর্থ শতাব্দীতে বঙ্গ অক্ষরে খোদিত শিলালিপি এবং গ্রীয়ারসনদের
১৮৯১ সালের ভাষা সেনসাসের তথ্য বিচার করে বলেছেন যে বাংলাভাষা ১০০০ বছর থেকে অনেক
পূর্ববর্তী তবে কত প্রাচীন তা এখনও অনিশ্চিত। কাজেই নতুন দৃষ্টিতে এই যহ আলোচিত
বিষয়টিকে আলোচনা করা হয়েছে। প্রাসঙ্গিকতাতে (দাশ, ২০২০ক)
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যতে ইতিহাস আলোচনার প্রয়োজনীয়তা প্রতিপাদিত করা হয়েছে যাতে সুনীতি কুমার
চট্টোপাধ্যায়ের বর্ণিত আর্যামী (আর্য বিজয়,আর্য
উপনিবেশন,আর্য ভাষার উপর ভ্রান্ত ধারণা) দানবটার অবদানের
কথাগুলি না ছাড়লে এই বিষয়ের উপর চর্চ্চা ঠিক হবেনা। তাই ভাষার উৎপত্তি ও বিবর্তন
এবং সাহিত্যের শুরু ও ক্রমবিকাশের দীর্ঘ সময় ও বহুবিধ বিস্তার বিবেচনা করে এই
আলোচনা দুই ধারাতে এবং অনেক কটা ভাগে বা পর্বে করা
হয়েছে।
সাহিত্য, ধর্ম কলহ
ও আন্তরাষ্ট্রীয় বিবাদ:
সাহিত্যের ক্ষেত্রে এতটা
ধূসরতা নেই কেননা হাতে লেখা বেশ কিছু পুঁথি পুস্তক পাওয়া গেছে যদিও অনেক বেশী
সংখ্যায় হারিয়ে গেছে ও আগ্রাসী কাজে নষ্ট হয়েছে। কেননা "প্রাচীন কীর্তির উপর
এরূপ ধর্ম কলহ এবং অশ্রুতপূর্ব অত্যাচার অন্য কোনও দেশে সংঘটিত হয় নাই"
(দীনেশ চন্দ্র সেন ১৮৯৬)। ধর্মে- ধর্মে কলহ ছাড়াও হিন্দু ধর্মে আভ্যন্তরীন কলহ বা
শ্রেণী দ্বন্দু এক দুঃখজনক ও আত্মঘাতী ইতিহাস এবং এই কালো দাগটা এখনও বর্তমান। এই
বহুবিধ শ্রেণীদ্বন্দ্বের বর্ণনা পাওয়া যায় চিরঞ্জীবী ভট্টাচার্যের সংস্কৃত পুস্তক
- বিদ্যোম্মাদতরঙ্গিণী, রতিদেবের মৃগলব্ধ পুস্তকে
এবং বাংলাদেশের অধুনাতন গবেষণাতে। তাই বাংলা সাহিত্য আলোচনাতে নানা ধরণের ধর্ম
কলহের পাশাপাশি রাষ্ট্রের অস্থিরতার ও আর্ডরাষ্ট্রের যুদ্ধের কথাটাও ভাবতে হবে
(দীনেশ চন্দ্র সেন ১৮৯৬, হানস টি বেককার ২০১৪ এবং
সিরাজুল ইসলাম ও অন্যরা ২০২০)। ভারতে তাম্রসভ্যতা চলা কালে প্রায় পাঁচদশক জুড়ে
ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হয়েছে নবোপলীয় সিন্ধু-সরস্বতীর নগরবাসীদের সাথে বিশ্বের অধিক
প্রত্নোপলীয় আর্যগোষ্ঠীদের। অগ্রিম যুদ্ধ আদীনা-দূযস্বতী নদী অববাহিকায় ঘটে, অস্বাভাবিক
ক্ষয় ক্ষতির পর স্থায়ী বিরতি হয়। দুই বিবাদী গোষ্ঠীর গুরু বশিষ্ঠ ও বিশ্বামিত্রের
নেতৃত্বে দুই পক্ষের যৌথ প্রয়াসে ও মিশ্রণে বৈদিক সভ্যতা, সাহিত্য
সমেত, গড়ে ওঠে (ঋকবেদ-৭।১৮, ৩।৫৫)। বৈদিক যুগের বেশ কিছু
পরে পৌরাণিক যুগে গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের গরিমা নিয়ে রাজতন্ত্র বহাল হয়েছে, রাজায়
রাজায় যুদ্ধও অনিবার্য ভাবে ঘটেছে, তার থেকে
আর্য-অনার্য বিভাজন মাথা তুলেছে তাতে বৈদিক ঋষিদের বিভিন্নতাকে সমন্বয় করার ধারা
বিঘ্ন হয়েছে বার বার। দুই বড় যুদ্ধ, রাম-রাবণের
ও কুরু-পান্ডবের, আজ যা ঐতিহাসিক বলে স্বীকৃত, তার
প্রমাণ। বেদ-উপনিষদের বক্তব্যে নির্ভর করে পৌরাণিক সাহিত্যের অনেক বিস্তার ঘটে, অলৌকিকতা
ও অতিকথার সৃষ্টি হয় তাতে বিরোধও বাধে, যার জন্য
পুরাণ ও পরবর্তী রচনাগুলিকে ঐতিহাসিক বলে মানা হয় না (হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
১৯৭৬)। অনেক অংশ হারিয়ে গেলেও পৃথিবীর প্রথম রচনা ঋকবেদ এবং বৈদিক সাহিত্যের
অনেকটাই এখনও রয়েছে আমাদের কাছে। তাতে অলৌকিকতা ও অতিকথা নেই, ইতিহাস, ভূগোল
সমাজ বিদ্যা, বিজ্ঞান, মেধা, তন্ময়তা ও
হহৃদয় স্পন্দনের কথা ইত্যাদি আছে (দাস ২০১৯ এবং দাস ২০২০)। পৌরাণিক যুগ থেকে
বুদ্ধদেবের আবির্ভাব অব্দি সাহিত্যের, বিশেষ করে
ধর্মসাহিত্যের কোনও অংশের ধ্বংস বা বড় ধরণের ক্ষয় ক্ষতির কথা আলোচিত হয়নি। কিন্তু
দীনেশ চন্দ্র সেনের পরবর্তী কালের কলহ ও আগ্রাসী ধাংসের কথা জানার পর এই সম্ভাবনা
অস্বীকারও করা যায় না যে বিশাল অংশ হারিয়ে গেছে তাও হিন্দুদের আভ্যন্তরীণ
শ্রেণীদ্বন্দ্ব ও যুদ্ধের দরুণ। বিশেষ করে যখন ইতিহাস বলে যে সম্রাট অশোকের পরের
সময়টাতে হিন্দু-বৌদ্ধদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বিরোধের শুরু এবং তিক্ততা ক্রমশ বেড়ে
চলে। বোধহয় সেটা পৌরাণিক ও স্মৃতির সন্ধিক্ষণ। প্রতিহিংসাপরায়ণ হিন্দু ও বৌদ্ধ রাজন্যবর্গের
প্রচন্ড আঘাত প্রতিঘাতে উভয়দিকের জ্ঞান ভান্ডার পুস্তক ও গ্রন্থশালা ধ্বংস হয়।
আবার গুপ্ত সম্রাটগণ হিন্দু ধর্ম ও রাজ্যের ধবজা আবার সর্বত্র উড়ান এবং বৌদ্ধ সমাজ
ক্ষতবিক্ষত হয়ে সন্ত্রাসে থাকে। হিন্দু প্রাধান্য সর্বত্র স্থাপিত হলেও আভ্যন্তরীণ
শ্রেণীদ্বন্দু, যেমন শৈব ও বৈষ্ণবদের মধ্যে
বাড়তে থাকে। এই সময়টা স্মৃতিযুগ এবং শাস্ত্রযুগের সন্ধিক্ষণ। গুপ্ত সাম্রাজ্য শেষ
দিকটাতে হুণদের আক্রমণ বার বার ব্যর্থ করে এবং আভ্যন্তরীন কলহেতে আর্থিক দিক থেকে
দুর্বল হয়ে পরে (হানস টি বেককার ২০১৪)। অর্ন্তদ্বন্দু দুই ধারাতে রাজনৈতিক ও ধর্ম
সম্প্রদায়গত। রাজনীতিতে গুপ্ত, মৌখারিয়াস
ও বন্ধন বংশীয়দের মধ্যে আর ধর্ম কলহ বৈষ্ণব ও শৈব-পশুবাদীদের মধ্যে। উদারপন্থী ও
জন সমাজে বিস্তৃত পশুবাদী শিব ভক্তরা বেশি জনপ্রিয় হতে থাকে। এই দুই
শ্রেণীদ্বন্দ্বের কারণে আভ্যন্তরীণ শাসনে সম্রাট বা কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়
এবং সমাজ ব্যবস্থাপনা শাস্ত্রবিধানের শক্ত গেরোতে বাঁধা পড়ে। সনাতন ধর্মবোধ ও
ধর্মাভ্যাস কেমন করে বাংলা সাহিত্যের মধ্য যুগে শাস্ত্রধর্মের বোধি ও ধর্মাভ্যাসের
শক্ত বাঁধনে পড়ল এবং নানা ধরণের ধর্মশ্রেণী-উপশ্রেণীর কলহের কথা বুঝাবার জন্য দীনেশ
চন্দ্র সেন (১৮৯৬) পাঁকুড়ের রাজা পৃথ্বীচন্দ্রের রচিত গৌড়ীমঙ্গল (১৮০৬ খৃষ্টাব্দে)
পুস্তকের অবতারণার কিছুটা তুলে ধরেছেন যেমন-
"সত্যযুগে
বেদ অর্থ জানি মুনিগণ সেইমত অলাইল সংসার। যেতা মুখে বেদ অর্থ আানিতে নারির, তে কারণে
মুনিগণ পুরাণ চরিল। অনেক পুরণ উগ-পুরাণ হইল। দ্বাপরে মুনয্যগণ ধারণে নারিল, স্মৃতি
করি মুনিগণ সংগ্রহ করিল। কলিযুগে তা বুঝা তার হইল।।" এরপর ক্রমে ক্রমে
নানাধরণের বৈদ্য, জ্যোতির্থী ও মঙ্গল কাব্যের
উল্লেখ করে, গৌড় মঙ্গল রচনার ইচ্ছা
প্রকাশ করেন। কিন্তু ধর্ম কলহ এবং আভ্যন্তরীণ শ্রেণীদ্বন্দ্বে ভাষার বিশেষ করে
শব্দভান্ডারের ও সাহিত্যের সমৃদ্ধি বেড়েছে (দীনেশ চন্দ্র সেন ১৮৯৬)। তাই ধর্মের
আবরণে লুকিয়ে রেখে বা ইতিহাসের অস্পষ্টায় সাহিত্যের স্বরূপকে অস্বীকার করা
বাঞ্চনীয় নয়।
তথ্যসূত্র:
১) অতুল সুর: ভারতের
নৃতাত্ত্বিক পরিচয় প্রবন্ধ- ভারতের আবায়বিক নৃতত্ত্ব, ডাযার
যাদুঘর, গ্রামীণ সমাজ ও জীবনচর্যা এবং প্রাগৈতিহাসিক প্রেক্ষাপট-সাহিত্যলোক, কলকাতা, ১৯৮৮।
২) দীনেশচন্দ্র দাস: ধর্ম
চেতনা এবং ধর্ম সংশয়ে আজকের হিন্দু: প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত প্রবন্ধ সমূহ।
প্রজাবিকাশ, কলকাতা, ২০১৯, পৃঃ ৪০-৪৫, ২০৭-২৩২।
৩) দীনেশচন্দ্র দাস:
রাজশক্তি সমাজ ও ধর্ম অনুশাসনের পেষণে বাংলা সাহিত্য-প্রাসঙ্গিকতা। ফিরে দেখা
মাসিক, সপ্তবিংশতি বর্ষ, দশম ও একাদশ সংখ্যা, কলকাতা, ২০২০৩, পৃঃ ৭-৮।
৪) দীনেশচন্দ্র দাস।
বঙ্গদেশ বঙ্গবাসী বঙ্গনায় ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে। উন্মুক্ত উচ্ছ্বাস ত্রিভাষিক সাহিত্য
পত্রিকা, ত্রৈমাসিক, বড়বিংশ বর্ষ, বইমেলা
সংখ্যা, ২০২১ (মুদ্রণে)।
৫) দীনেশ চন্দ্র সেন।
বঙ্গভাষা ও সাহিত্য ইন্ডিয়ান গ্রেস, ৩য়
সংস্করণ, এলাহাবাদ এবং ইন্ডিয়ান পাব্লিসিং হাউস কলকাতা, ১৮৯৬।
৬) হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
১৯৭৬: শুকাবেন পরিচয়: ঋকবেদ সংহিতা বাংলায় অনুদিত ডঃ রমেশচন্দ্র দর, হ্যাক
প্রকাশনী, কলকাতা, প্রথম
খন্ড, ১৯৭৬, পৃঃ ১৯-৭৮।
৭) D.C Das:
Man's Tryst with Destiny in World and India-Part-A: Food to Religion BUUKS
Publishers, Chennal / Amazon, 2020: chap.3. pp-197-207.
৮) Hans T.
Bekker: The World of Skanda Purana-The Religious Landscape: The Political
Landscape of northern India in 6th & 7th Centuries. NWO of the Netherlands
Organisation, BRILL, 2014.
৯) Islam
Sirajul etal History of Bengal Language and Literature. Eds. National
Encyclopedia of Bangladesh, Dhaka, July, 2020
লেখক পরিচিতি –
স্কুল-কলেজ পেরিয়ে উচ্চশিক্ষা পান আই টি খরগপুর, নেডারল্যান্ডস্ ও জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইউ এস এ -তে । কর্মক্ষেত্র উত্তর প্রদেশ-এর তরাই অঞ্চলের গ্রাম, ভারত সরকার-এর অধীনে অরুণাচল-এ, (শিলং-এ থেকে), উটি (তামিলনাড়ু), দেরাদুন-এ (উত্তরাখণ্ড) , কৃষি এবং পরিবেশ মন্ত্রালয়, দিল্লি-তে।
দিল্লির ৩৪ পল্লীর কালীবাড়ির সাথে যুক্ত আছেন বিগত ৩০ বছর ধরে। ১৯৪৮ সাল থেকেই লেখেন কিন্তু প্রথম প্রকাশন ২০১৫-তে। কবিতা , গল্প, ভ্রমণ কাহিনী ও প্রবন্ধ ছাপতে থাকে দিল্লির পত্র-পত্রিকাগুলোতে। কলকাতা এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। প্রথম বই ' অনুভূতি বহুরূপে'। অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে দিল্লিথেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিন ' কলমের সাথ রঙ' পত্রিকার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এবং উচ্চপদে আছেন।