Advt

Advt

taltor-jamidar-barir-durgapujo-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-তালতোড়-জমিদার-বাড়ির-দুর্গাপুজো

 নিচের প্রতিবেদনটি এবং 

তালতোড় জমিদার বাড়ির 

দুর্গাপুজোর ছবিগুলো পাঠিয়েছেন 

শ্রাবণী চ্যাটার্জী।


taltor-jamidar-barir-durgapujo-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-তালতোড়-জমিদার-বাড়ির-দুর্গাপুজো

তালতোড় জমিদার বাড়ি

  দুর্গাপুজো মানেই কাশের বনে হাওয়ার দোলা, শিউলি ফুলের গন্ধমাখা ভোরের বাতাস আর ঘাসের আগায় শিশির বিন্দু উতলা মন নিয়ে পুজোর দিন গোনা শুরু এখন তো আবার মহালয়ার দিন থেকেই দুর্গোৎসব শুরু হয়ে যায় পুজোর কদিন ছোট বড়ো, ধনী-দরিদ্র, নামী-অনামী সকলেই নিজের মতো করে একরাশ আনন্দ, হৈ চৈ, খাওয়া-দাওয়া, আর কাছে বা দূরে সামর্থ্য অনুযায়ী বেরিয়ে পড়ার জন্যে সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়ি আমিও সারাবছর কোথাও যাই বা না যাই পুজোর কদিন শহর ছেড়ে বেরিয়ে পড়িবর্তমানে শহর জুড়ে বনেদিবাড়ির পুজো ছড়াছড়ি তবুও শহর-নগর ছাড়িয়ে বহু দূরে কোনও অজানা অচেনা গ্রামের জমিদারবাড়ি বা রাজবাড়ির প্রাচীন পুজোয় হাজির থাকতে পারলে আমার মন ভালো হয়ে যায়

 পুজোর দিনগুলোতে বেড়ানোর ব্যাপারে আমরা দুজনে খুবই খুঁতখুঁতে কোথায় যাবো সেটা আগে থেকে ঠিক করা থাকে না এমনও হয়েছে একবছর কোথাও গিয়ে ভালো লাগলে পরের বছর আবার সেখানেই গিয়েছি পুজো দেখতে সপ্তমীর সকালে ব্যান্ডেল ষ্টেশন থেকে গণদেবতা এক্সপ্রেস ধরলাম আমাদপুর জমিদারবাড়ির দুর্গাপুজো দেখতে যাবো বলে শুনেছি আমাদপুর গ্রামের জমিদার বাড়ির পুজো প্রায় সাড়েতিনশো বছরের পুরোনো প্রাচীন ঐতিহ্য এবং পুঁথি মেনে এখানে পুজো হয়ট্রেনে যেতে যেতে সহযাত্রীর কাছে শুনলাম আমাদপুরের জমিদার বাড়ির পুজোয় ভীষন ভীড় হয় গ্রামের লোক ছাড়াও বাইরের লোক প্রচুর আসে পুজো দেখতে ভোগের লাইন পড়ে বিশাল এসব শুনে আর যেতে ইচ্ছে করলো না বোলপুরের পর প্রান্তিক তারপর আমাদপুর ষ্টেশন বোলপুর পেরিয়ে যেতেই ঠিক করলাম আমরা প্রান্তিক ষ্টেশনেই নামবোপ্রান্তিক আমার খুব পছন্দের জায়গা

 প্রান্তিক ষ্টেশনটা ছবির মতো সুন্দরঅপেক্ষাকৃত নিরিবিলি ষ্টেশন প্রান্তিক তার নামের মাধুর্যের সঙ্গে  প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যেও ভরপুরযেন গভীর নিস্তব্ধতায় মগ্ন চুপ করে দীর্ঘসময় এখানে বসে থাকলেও হিসেবহীন সময় পেরিয়ে যায়ততক্ষণে ক্যামেরার সাটার টিপেছি অসংখ্যবার একসময়ে প্রান্তিক ষ্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এক অদ্ভুত নির্জনতা বিরাজ করতো কখনও আনমনে বসে থাকতে থাকতে হটাৎ ট্রেনের হুইসিল শুনে চমকে উঠতে হতো তবে বর্তমানে চারপাশে যেভাবে জনবসতি এবং হোটেল গড়ে উঠেছে তাতে প্রান্তিকএর সৌন্দর্য্য হারাতে বেশি সময় লাগবে না এখান দিয়েই বয়ে গিয়েছে কোপাই নদী

 প্রান্তিক ষ্টেশনে নেমে আমরা বেশ কিছুক্ষণ বসেছিলাম সেখানেই পরিচয় হয়েছিল স্থানীয় এক গ্রামবাসির সঙ্গে আমাকে ছবি তুলতে দেখে এগিয়ে এলেনঅনেকক্ষণ গল্প হলো তার সঙ্গে পুরোনো জমিদারবাড়ির পুজো দেখতে বেরিয়েছি শুনে সে জানালো এখানকার সবচেয়ে কাছের এবং ভালো পুজো যদি দেখতে চান তাহলে তালতোড়ের জমিদার বাড়ির পুজো দেখে আসতে পারেন খুব ভালো লাগবে

 কথায় কথায় জানলাম ভোর ফর্সা হওয়ার আগে   কাঁসর ঘণ্টা বাজিয়ে পালকিতে করে নবপত্রিকা স্নান করাতে নিয়ে যাওয়া হয় কোপাই নদীতে কাকভোরে কাশফুলে ঢাকা কোপাই নদীতে নবপত্রিকা স্নানযাত্রা দেখতে অসাধারণ লাগে।  পরিবারের রীতি অনুযায়ী দশমী দিন কাঁসর ঘণ্টা সানাই বাজিয়ে আগে নবপত্রিকা এবং ঘট বিসর্জন হয় কোপাই নদীতে তারপরে প্রতিমা বিসর্জন হয় জমিদারবাড়ির নিজেদের পুকুরে।

 তালতোড়" জমিদার বাড়ি সম্মন্ধে আমাদের আগ্রহ ঘনীভূত হতে লাগলো ষ্টেশনের বাইরে এসে একটা টোটো বুক করে নিলাম তারসঙ্গে চুক্তি করে নিলাম সে আমাদের প্রান্তিক এর কাছাকাছি সব পুজো বাড়িগুলো ঘুরিয়ে দেখাবে এবং অবশ্যই তালতোড় রাজবাড়িতে নিয়ে যাবেপ্রায় দুপুর গড়িয়ে গেল ঘুরতে ঘুরতে ক্ষিধেও পেয়েছে খুব ইদানিং প্রাচীন পুজোবাড়িগুলোতে ভিড় বেশি হওয়ার কারণে হোটেলগুলোতে থাকা-খাওয়ার ভীড়টাও খুব বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে ইদানিং প্রায় অনেকেই শহরের পুজো ছেড়ে পারি দিচ্ছেন ওইসব দিকে

 খাবারের অর্ডার দিয়ে বসে না থেকে আমি তালতোড় জমিদার বাড়ির ইতিহাস সার্চ করতে শুরু করলাম অল্প সমযে সংক্ষেপে জানলাম…… তালতোড় গ্রাম রূপপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনএই গ্রামের দূরত্ব বর্ধমান থেকে ষাট কিলোমিটার, বোলপুর থেকে ছয় কিলোমিটার আর প্রান্তিক ষ্টেশন থেকে দুকিলোমিটারউনিশশো পঞ্চাশ সালের ওয়েস্টবেঙ্গল ল্যান্ড রিফর্মস এক্ট সংক্রান্ত কিছু নিয়ম কানুনের জন্য ওনাদের সমস্ত জমিজমা ভাগ করে দিতে হয় জমিদারীর বেশিরভাগঅংশ আত্মীয় স্বজনের মধ্যে, স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে, যারা জমিদারীর কাজে সাহায্য করতো তাদের মধ্যে এবং সম্পত্তির বাকি অংশ বিশ্বভারতীকে নিঃশর্তে দান করেছেন এই পরিবার এখন মূল জমিদার বাড়ির এই অংশটি দুর্গাদালান হিসাবে ব্যবহার করা হয় তালতোড় জমিদার পরিবারের পদবী হলো ঘোষ এই জমিদার বংশের শেষ জমিদার ছিলেন ভদ্রেশ্বর ঘোষ,যিনি এলাকায় ভাদুবাবু নামে পরিচিত ছিলেনদুর্গাপুজোর সময় মহাধুমধাম সহকারে এখনও পুজো চলে আসছে 

 হোটেলেই আলাপ হলো এক পর্যটকের সঙ্গে তিনি বিভিন্ন পুজো বাড়ির ইতিহাস নিয়ে রিসার্চ করছেন সেই সুবাদে এসেছেন এখানে তাঁর কাছে জানলাম শুধু দুর্গাপুজো নয় শান্তিনিকেতনের তালতোড় জমিদার বাড়ির লক্ষ্মীপুজোরও নাকি একটা বিশেষত্ব আছে এখানে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে একই বেদীতে পূজিত হন দেবী সরস্বতী এখানকার দুর্গাপুজো প্রায় তিনশো বছর ধরে একইরকমভাবে চলে আসছে

  টোটোচালক সুবলকে নিয়েই আমরা খেতে বসেছিলাম হঠাৎই তার একটা ফোনকল আসতেই সে একটু বিচলিত হয়ে পড়েছিল তারপর ফোন রেখে বললো বাড়িতে একটা সমস্যা হয়ে গিয়েছেআমি যাচ্ছি এখানে একটু অপেক্ষা করুন আমি ফিরে এসে আপনাদের নিয়ে যাবো কি যেন মনে হতেই আমি যেচে তাকে আমার ফোন নম্বরটা দিয়ে দিলাম অপেক্ষা করতে করতে বেলা প্রায় পড়ে এসেছেহঠাৎই সুবল ফোন করে জানালো তার বউ ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হচ্ছে তার আসার কোনও উপায় নেই

  সৌভাগ্যবশতঃ ওই হোটেলেই একটা থাকার ঘর ভাড়া পেয়ে গেলাম যার নামে ঘরটা ছিল কোনও কারণবশতঃ তারা আসতে পারেনি কাউন্টারে বিল বিল মেটানোর সময় জানতে পেরে সেটা আমরা হাফ ভাড়ায় পেয়ে গেলাম কিন্তু আমার মাথায় রয়ে গিয়েছে তালতোড় রাজবাড়ি যাওয়ার কথা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই একটা ট্যাক্সি এসে সামনে দাঁড়ালো সে যে প্যাসেঞ্জার নিয়ে এসেছে, তাঁরা বয়স্ক মানুষ আজ দিনটা বিশ্রাম নিয়ে কাল শান্তিনিকেতন বেড়াবেনতাই সেদিনের মতো ড্রাইভারকে তারা ছুটি দিয়েছে

ভাড়ায় তালতোড়জমিদারবাড়ি যাবে কিনা জিজ্ঞাসা করতেই ড্রাইভার জানালো সে এখানকার কিছুই চেনে না তবে গুগল ম্যাপ দেখে সে আমাদের নিয়ে যেতে পারবে যাওয়া প্রায় কপালে নেই বললেই চলে আর আমি নাছোড় যাওয়ার জন্যেশেষ পর্যন্ত গাড়িতে উঠে বসলামট্যাক্সি চলতে শুরু করলো তারপরই বেশ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো সব ধরনের পরিস্থিতি মানিয়ে নিয়েই আমরা বেড়িয়ে পড়ি

 তালতোড় রাজবাড়ির কথা গুগলে থাকলেও তা তেমনভাবে এখনও পরিচিতি পায়নি সেদিকে লোকজনের যাতায়াত বেশ কমই আছে আমরা সুবলের সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে বোলপুরের দিকেই অনেকটা চলে গিয়েছিলাম অন্ধকার নেমে গিয়েছে গ্রামের দিকে রাস্তায় আলো খুব কম গুগল সবসময় গন্তব্যের সঠিক পথটা দেখাতে পারে না গাড়ি থেকে মুখ বাড়িয়ে যাকেই জিজ্ঞাসা করছি, কেউ বলছে জানে না, তো কেউ বলছে এখনও অনেকটা পথ যেতে হবে কেউবা বললো এই সামনেই আর এক কিলোমিটার হবে এই করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছি

 বুঝতে পারছি আমার কত্তাবাবু একটু উতলা হয়ে পড়েছেন। ড্রাইভার বলছে দাদা আর যাওয়া যাবে না মনে হচ্ছে। ফিরে যাওয়াই ভালো, তার উপর খুব হালকা বৃষ্টি পড়ছে। কত্তাবাবু আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো, আমার মনে হয় অচেনা জায়গা, লোকালিটি থেকে দূরে না যাওয়া ভালো আর এবারে আমরা শুধুই দুজনে বেরিয়েছি সঙ্গীসাথী কেউ নেই সেটাও একটু চিন্তা করছি আমি যে চিন্তা করছি না তা নয়, তবে মুখে কিছু বলছিলাম না

 একেবারে জলকাদা মাখা ধু ধু গ্রামের ভেতরে ঢুকে পড়েছি, গাড়ি ঘোরাবারও জায়গা নেই  হঠাৎ দেখি সামনেই পাশাপাশি কটা মাটির বাড়ি। তাতে টিম টিম করে আলো জ্বলছে। জায়গাটা একটু চওড়া। রাস্তার পাশে একটা টাইম-কল লাগানো কিন্তু দেখে মনে হলো পরিতক্ত, তাতে জল নেই। বাড়ি থেকে দুজন মহিলা সঙ্গে বাচ্ছা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সময় উল্টো দিক থেকে একটা গাড়ির হেড-লাইট পড়লো আমাদের গাড়ির উপর। এই জায়গাটা ছাড়া উল্টোদিকের গাড়িকে পাশ দেওয়ার জায়গা নেই। তাই আমদের গাড়ি যতটা সম্ভব বাঁদিক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে গেকাঁচামাটির রাস্তা,চাকা বসে গেলে তোলাও যাবে না বিপদ বাড়বে তাতে

  ল্টো দিকের গাড়িটা জনা পাঁচেক সওয়ারী নিয়ে পাশে আসতেই বুঝলাম এনারাও এখানে বেড়াতে এসেছেন জিজ্ঞাসা করলাম এদিকে কোনও রাজবাড়ী বা জমিদার বাড়ি আছে? সেখানে কি পুজো হয়েছে? ওরা  বললো হ্যাঁ আছে তালতোড় রাজবাড়ী আর মাত্র হাফ কিলোমিটার মতো যেতে হবে। আপনারা যান,ুব ভালো লাগবে। ওদের গাড়িকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চললাম গিয়ে দেখি  প্রায় গোটা পাঁচ-সাত গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আলো জ্বলছে তবে উজ্জ্বলতা কমজায়গাটা আলো আঁধারী হয়ে রয়েছেলোকজন আছে তবে কম ্রামের লোকেরা সব দূর দূর থেকে এসেছে। বেশির ভাগই আদিবাসী শ্রেণীর এবং নিম্ন বর্গের মানুষের ভীড় ঢুকে পড়লাম বাড়িভেতর

taltor-jamidar-barir-durgapujo-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-তালতোড়-জমিদার-বাড়ির-দুর্গাপুজো


 বাড়িতে ঢুকেঅবাক হলাম লম্বায় চওড়ায় বিরাট বড়ো দালান তার শেষ মাথায় বাঁধানো বেদীতে একচালার মাদুর্গা আর সঙ্গে লক্ষ্মী সরস্বতী কাত্তিক গণেশপ্রতিমার পিছনের চালচিত্রটা খুব সুন্দর ওইরকম শান্ত-স্নিগ্ধ মূর্তি খুব কমই দেখা যায় অতবড় ঠাকুর দালানের লাল মেঝে জুড়ে সাদা আলপনা ঝলমল করছে আমরা যখন বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম তখন সন্ধ্যারতি চলছে ঘোষ বাড়িতে ঢুকেই নজরকাড়া ঢাকের বাদ্যি আর সেই সঙ্গে ঢাক নিয়ে বিভিন্ন কসরত এবং ঢাক নৃত্য বেশ মন ছুঁয়ে গিয়েছে দালানের দুপাশে সারি দিয়ে মানুষজন বসে আছে তার মাঝখানে ঢাক আর কাঁসরের যুগলবন্দী চলছে সে একেবারে দেখার মতো, উপভোগ করার মতো আমরা দালানের পাশ দিয়ে এগিয়ে গেলাম ঠাকুরের বেদির দিকে পুরোহিতমশাই এত সুন্দর করে আরতি করছেন যে তা দেখে আপনা থেকেই হাত জোড় হয়ে মনে ভক্তি সঞ্চারিত হয়ে যায়

 ওখানে গিয়ে এক মহিলাকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম অনেক কটা গ্রামের মধ্যে এই একটাই পুজো। দিনের বেলা প্রচুর লোকজনের ভীড়  হয়,সকলকে বসিয়ে ভোগ খাওয়ানো হয় কিন্তু রাতে ফেরার সমস্যা তাই সবাই এসে দিনমানে ঘরে ফিরে যায়। আর যারা যায় না,তারা প্রসাদ খেয়ে দুর্গা-দালানে শুয়ে থাকে

taltor-jamidar-barir-durgapujo-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-তালতোড়-জমিদার-বাড়ির-দুর্গাপুজো


 খানিক বাদে আরতি শেষ হলো ঢাকের বাজনা থামলো আবার কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ হলো জানলাম কলকাতা, ভদ্রেস্বর ছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসেছে। কেউ বাড়ির লোক,সঙ্গে পরিচিত কাউকে নিজেদের পুজো দেখাতে নিয়ে এসেছে কেউ আমাদের মত বেড়াতে এসে হোটেলে উঠে পুজোর খবর পেয়ে এসেছে। আবার বাড়ির সদস্যদের বাপের-বাড়ি, শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়-স্বজন ইত্যাদি ইত্যাদি।

 দুর্গা-দালান ঘিরে দুপাশে অনেক ঘর আছে। কয়েকটা ভোগের ঘর,ভাঁড়ার ঘর ছাড়াও আরও অনেক ঘর আছে যেখানে পুজো হয় সেটা হলো দুর্গা বাড়ি। এর ভেতর দিয়ে গিয়ে আছে বসত বাড়ি। আছে বাগান বাড়ি পুরোনো দিনের জমিদার বাড়ি যেমন হয় তালতোড় জমিদার বাড়ির আদলসেই একই রকম ওই রকম জায়গায় এমন একটা বাড়ি থাকতে পারে,না গেলে ধারণা হতো না। আরতি শেষ হবার পর প্রসাদ খেয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলাম ভাগ্যিস হোটেলের ঘরটা পেয়েছিলাম, তাই নিশ্চিন্ত সারাদিনের ধকলে এবার বেশ ক্লান্ত লাগছিল যথা সময়ে হোটেলে পৌঁছে গেলাম। সপ্তমীর দিনটা ভীষণ ভালো কাটলো। দেখা-শোনা-জানার ইচ্ছা অনেকটাই পূরণ হলো। ভোরের বেলা ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে নিলাম ফিরতি পথেট্রেন ধরবো বলে টোটোচালক সুবলকে ফোন করে ষ্টেশনে ডেকে নিযে ওর ভাড়ার টাকাটা মিটিয়ে দিলামটাকাটা পেয়ে ও খুব খুশি হয়েছে মনে থেকে গেল তালতোড় রাজবাড়ীর সপ্তমীর সন্ধ্যা আরতি আর ঢাকের নাচ এমন ঢাকি নৃত্য আমি আগে কখনও দেখিনি

সমাপ্ত

 

লেখিকার পরিচিতি –

লেখিকার জীবনের সঙ্গে গল্প অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িয়ে আছে যা দেখেন, যা শোনেন, যা শোনেন, যা কিছু স্মৃতির পাতায় জড়িয়ে আছে মনের সাথে,তাই নিয়ে লিখতেই বেশি পছন্দ করেন

লেখা শুরু স্কুল-ম্যাগাজিন, কলেজ -ম্যাগাজিন দিয়ে বর্তমানে কিছু লেখা প্রকাশিত হচ্ছে কয়েকটি মাসিক-ত্রৈমাসিক পত্রিকায়  পাখিদের নিয়ে অনেক লিখেছেন। গল্পভ্রমণফিচারকবিতা নিয়মিতভাবে লিখে থাকেন।  দিল্লি থেকে প্রকাশিত কলমের সাত রঙ এবং তাৎক্ষণিক ডট কম-এর নিয়মিত লেখিকা।