রামপুর
গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান নন্দকুমার,সে
গ্রামের লোকেদের কাছে খুব জনপ্রিয়। তিনি সব সময় গ্রামের লোকেদের সুখে,দুঃখে
পাশে থাকে। নন্দকুমারের গত বছর বিয়ে হয়েছে,আজ তার
শ্বশুর বাড়ি থেকে খবর এলো নন্দকুমার বাবা হয়ে গেছে, তার একটা
ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে।
নন্দর মা, নন্দ কে বলল,তাড়াতাড়ি
চল,আমার
নাতনি মানে তোর মেয়েকে দেখতে। নন্দকুমার চেয়ারে বসে ছিল,চেয়ার থেকে
উঠে দাঁড়াল,দাড়িয়ে বলল,মেয়েকে
দেখতে?
-হ্যাঁ, তোর
মেয়েকে দেখতে ।
নন্দ বলল, - না, ওখানে
কেউ যাবে না। মেয়েরা কিছুই পারেনা, কি
পারে বলো! কি দেখতে
যাব?
নন্দকুমার
খুব রাগী, তাই ওর মা আর কিছু বলল না । শ্বশুর বাড়ি থেকে
বার বার খবর আসছে মেয়ে কে দেখতে যাবার জন্য কিন্তু নন্দকুমার কিছুতেই গেল না।ভওদিকে
নন্দকুমারের স্ত্রী রোহিণী,নন্দকুমার
আসবে না খবর জানতে পেরে রাগে ও দুঃখে তার বাবা-মাকে
বলল, ওকে আর দেখতে আসতে বলবে না,আমার
মেয়েকে আমি নিজেই লালন-পালন করতে
পারব। আজকের এই আধুনিক যুগে এই রকম
মানষিকতা? ছিঃ ! আমি তো লেখাপড়া জানি, আমার
ও আমার মেয়ের জন্য তোমরা কোন রকম চিন্তা করবে না । রোহিণীর বাবা ভদ্র ও শিক্ষিত মানুষ,তাই
তিনি মেয়ের কথায় সহমত হয়ে গেলেন ।
এই ভাবে
বছর দুই কেটে গেছে । এক দিন নন্দকুমার মোটর বাইকে চেপে পঞ্চায়েত অফিস যেতে গিয়ে
রাস্তার ধারে একটা গাছে ধাক্কা লাগে । ধাক্কা লাগলে নন্দকুমার পাশে যে নদী বয়ে
যাছে,
তাতে গিয়ে ছিটকে পড়ে এবং বাঁচাও, বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকে। ঠিক
সেই সময়ন ওই নদীর পাশের রাস্তা দিয়ে একটি ছোট মেয়ে যাচ্ছিল, সে নন্দ কুমারকে জলে হাবু ডুবু খেতে দেখে দূরে মাঠে ওর
বাবা কাজ করছিল,তাকে সাহায্যের জন্য ডেকে আনে।
ছোট মেয়েটির
বাবা সঙ্গে সঙ্গে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নন্দকুমারকে ডাঙায় তুলে আনে এবং তার পেট থেকে জল
বের করতে শুরু করে। ততক্ষণে
আরও বেশকিছু লোকজন আশেপাসে এসে জমা হয়ে যায়।
পাশে পরে
থাকা মোটর বাইকটি গ্রামের লোকজনেরা একপাশে সরিয়ে রাখে। কিছুক্ষণের
মধ্যে নন্দকুমার সুস্থ হয়ে উঠলে ছোট মেয়েটির বাবা বলে,- আজ
আপনি আমার এই মেয়ের জন্যেই বেঁচে গেলেন, ওই
আপনাকে প্রাণে বাঁচাল। নন্দকুমার মেয়েটিকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করল, কি
নাম তোমার ? মেয়েটি বলল, আমার নাম
নন্দিনী । পড়াশুনা কর ? নন্দিনী বলল, হ্যাঁ
। কোন ক্লাস ? ক্লাস থ্রিতে পড়াশুনা করি ।
নন্দকুমার
মনে মনে খুব লজ্জিত হল,এবং নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে গেল। ভাবতে লাগলো- আজ
অন্যের মেয়ে এসে আমাকে বাঁচাল আর আমি আজ পর্যন্ত নিজের মেয়েকে দেখতেও গেলাম না? এরপর আর দেরী না করে নন্দকুমার
সবাইকে নমস্কার জানিয়ে সোজা শশুর বাড়ি পৌঁছে শশুর মশাই ও শাশুড়ি মায়ের কাছে ক্ষমা
চেয়ে নিজের মেয়ের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে প্রকাশ করল।
এমন সময় ঘরের
ভেতর থেকে নন্দকুমারের গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে রোহিণী মেয়েকে নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এলো
। নন্দকুমার মেয়েকে কোলে নিয়ে বলল কি নাম তোমার? মেয়ে আধো
আধো করে বলল,নন্দিনী !
নন্দকুমার
মেয়েকে আদর করতে করতে বলল,মেয়েরা কি পারে? মেয়েরা
সব পারে !
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি –
জন্ম বিহারের কিশানগঞ্জ-এ। প্রা্থমিক থেকে স্নাতকোত্তর কিষান গঞ্জেই কেটেছে। আঞ্চলিক বার্ষিক পত্রিকা, উত্তরবঙ্গ সংবাদে অনুগল্প, ছোট গল্প লেখেন। সঙ্গীত, বই পড়া, ভ্রমণ ও আধ্যাত্মিকতায় রুচিশীল এবং কুসংস্কার বিরোধী ।