শহরের কোলাহল আর যন্ত্র দানবের উৎপাতের হাত থেকে রেহাই পেতে যারা অনাবিল প্রকৃতি , অখণ্ড নির্জনতা আর সবুজের গালিচায় মোড়া কোনও জায়গায় গিয়ে দুদন্ড নিভৃতে কাটাতে চান, তাঁদের জন্য অন্যতম স্থান হল এই কিরিবুরু -- মেঘাতাবুরু ।
প্রকৃতপক্ষে এই কিরিবুরু আর
মেঘাতাবুরু দুটি আলাদা আলাদা পাহাড় চূড়া। একটি থেকে অপরটিতে হেঁটেই ঘুরে আসা
যায়। এশিয়ার বৃহত্তম শাল গাছের অরণ্য সারান্ডা ফরেস্ট। আর সেই সারান্ডা ফরেস্টের
মধ্যমণি হল এই কিরিবুরু আর মেঘাতাবুরু। এখান থেকে নাকি আশেপাশের অঞ্চলের মোট ৭০০
টি পাহাড়ের চূড়া দেখা যায় বলে অনেকে দাবি করেন। এই কারণে অনেকেই একে ৭০০
পাহাড়ের দেশ বলে অভিহিত করেন।
সমুদ্রপৃষ্ঠ
থেকে ২৭৭৭ ফুট উচ্চতায় ঝাড়খণ্ড ওড়িশার
সীমান্তে অবস্থিত এই কিরিবু্রু মেঘাতাবুরু এবং তৎসংলগ্ন এই সারাণ্ডার অরণ্য একসময়
ছিল সিংভূমের রাজাদের শিকার করার স্থান। কিন্তু বর্তমানে প্রকৃতি প্রেমিক
পর্যটকদের অন্যতম প্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। চতুর্দিকে শাল, শিমুল, পলাশের অরণ্য, আর পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই স্থান তার
আপন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কারণেই সহজেই জয় করতে পারে প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকের
হৃদয়। এখানকার অরণ্যে রয়েছে বুনো কুকুর ( যাদের স্থানীয় ভাষায় বলা হয় "
ঢোল " , বুনো শুকর, হরিণ ,
এবং দামাল হাতির পাল। আর আছে অজস্র বিভিন্ন প্রজাতির, বিভিন্ন রঙের পাখি । কিরিবুরু থেকেই ঘুরে নেওয়া যায় পুণ্ডিল ফলস,
সান সেট পয়েন্ট প্রভৃতি। আর হ্যাঁ, অবশ্যই
দেখে নিন এখানকার অন্যতম পবিত্র এবং জনপ্রিয় এক মন্দির , " মুর্গা মহাদেব " মন্দির ।
এবার ঘুরে আসা যাক মুর্গা মহাদেব মন্দির থেকে । সাধারণত
কিরিবুরু মেঘাতাবুরু থেকেই পর্যটকরা দর্শন করে নেন এই মন্দির। ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম
সিংভূম জেলা এবং ওড়িশার প্রায় সীমান্ত অঞ্চল নোয়ামুন্ডি। এই নোয়ামুন্ডি শহরের
কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ৫ কিমি দূরে টিসকো টাউনশিপের কাছে মুর্গা পাহাড়ে অবস্থিত
এই মন্দিরটিতে মুর্গা মহাদেব মন্দিরটির শিল্পশৈলী অনেকটাই ওড়িশার মন্দিরগুলির
শিল্পশৈলীর মতো। মন্দিরের প্রবেশের জন্য যে তোড়ন আছে তার শীর্ষদেশে রয়েছে
নীলকণ্ঠ মহাদেবের নীল রঙের মুখাবয়ব। মূল মন্দিরের প্রবেশদ্বারের দুই পাশে রয়েছে
দুটি সিংহ মূর্তি। মন্দির চত্বরে রয়েছে একটি ষাঁড়ের মূর্তি , যাকে অনেকে নন্দী বলেও বলেন। অনেকটাই
লালচে এবং গেরুয়া রঙের মন্দিরটির অভ্যন্তরে পূজিত হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান মহাদেব।
প্রতিদিন এখানে অনেক ভক্ত আসেন এখানে পুজো দিতে। শিবরাত্রিতে প্রবল আড়ম্বরে এবং
পবিত্রতার সঙ্গে এখানে পুজোপাঠ করা হয়। তখন
অসংখ্য ভক্ত সমাগম হয় এই মন্দিরে । রীতিমতো উৎসবের আবহে সেজে ওঠে এই
মন্দির ।
মন্দিরের কাছেই
রয়েছে একটি ঝর্ণা। অনেকেই এই ঝর্ণাধারায় স্নান করে তারপর পুজো দিতে যান।
মন্দিরটির আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অসাধারণ। সবুজের গালিচায় মোড়া অরণ্যের
মাঝখানে অবস্থান এই মন্দিরের।
কিরিবুরু থেকে
এই মন্দিরে যাওয়ার পথ হবে এই রকম , কিরিবুরু -- বড়া জামদা -- নোয়িমুন্ডি
-- মুর্গা মহাদেব মন্দির।
যাতায়াত, থাকা খাওয়া -- কিরিবুরু মেঘাতাবুরু
যাওয়ার জন্য ট্রেনে এসে নামতে হবে বড়া জামদা। কলকাতা থেকে যাচ্ছে হাওড়া --
বড়বিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস । বড়া জামদা থেকে সামান্য পথ কিরিবুরু। যেতে হবে
গাড়িতে বা ট্রেকারে ।
মুর্গা মহাদেব
মন্দিরের কাছে থাকার তেমন ব্যবস্থা নেই । সেক্ষেত্রে কিরিবুরু থেকে ঘুরে নেওয়াই
ভালো। কিরিবুরুতে আছে সেইল ( S A I L )- এর গেস্ট হাউস। বুকিং - এর
জন্য প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন ০৯৮৩৬৪৬৮১৭৮ নম্বরে । আর গাড়ি বা প্যাকেজের প্রয়োজনে যোগাযোগ
করতে পারেন ০৮৯৮১৬১২১০০ নম্বরে।
লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখক পরিচিতি -
জন্ম কলকাতায়। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করেন। সাপ্তাহিক বর্তমানে ভ্রমণ নিয়ে নিয়মিত লেখেন। বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে এবং তথ্য সংগ্রহে আনন্দ পান ।