ধারাবাহিক উপন্যাস – প্রতি বৃহস্পতিবার ।
Looking glass
upon the wall--
The
mirror told
and
so the queen dressed herself in rags
and went out like a peddler to trap—
-"-হলা
পিয়ে
আমি
জানি তোমার গর্ভে আমার সন্তান
ভ্রূণের আকারে বড় হচ্ছে। পিয়ে, তোমার এমত সময় সন্তান এবং নিজের
যথেষ্ট পরিমাণ পরিচর্যা
করা প্রয়োজন"
এটুকু
পড়ে আম্রপালি চিঠিটি হাতের মুঠোয় নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল।
বিম্বিসারের
মুখটা মনে পড়ে উচাটন হয়ে উঠল আম্রপালির অন্তর। বুকের ভেতর দুরন্ত ঢেউ। তারপর আবার চিঠির পাতায়
চোখ:
"পিয়ে,
এমত সময় তোমার কাছে আমার থাকাটা উচিত
ছিল। কিন্তু আমি অপারগ। আমার রাজপাট সামলে, প্রজা, রাজ পরিবার সব সামলে আমি পাটলিপুত্র ছেড়ে একরাতের
জন্যও তোমার কাছে যেতে পারছি না।
একান্তে
একটা অনুরোধ জানাই--যদি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়,
তাহলে তোমার কাছে, তোমার সাহচর্যে, তোমার মতই কলা
কুশলী করে তোলো--; আর যদি পুত্র সন্তান হয়,
তাহলে অবশ্যই আমার কাছে পাঠিয়ে দেবে। নৃপতি বিম্বিসারের
পুত্র--রাজমহলেই রাজপুত্রের ন্যায়
প্রতিপালিত হবে। মহারাজ বিম্বিসারের
মতই প্রতাপশালী হয়ে উঠবে।"
অলম
ইতি।
আম্রপালির ঠোঁটের
কোণে মৃদু, ফিকে হাসির রেখা! বিম্বিসারের
চিঠির উত্তর লিখতে খাগের কলম আর ভূর্জ পত্র টেনে নিলো।
আর্যপুত্র
হ্যাঁ,আজ
এই নামেই
সম্বোধন করলাম। আপনি ঠিকই লিখেছেন--আপনার পতিত বীর্যই
ভ্রূণের আকারে আমার জঠরে বড় হচ্ছে। এ আমাদের প্রেমজ
সন্তান। কিন্ত মহারাজ, আমি যেহেতু আপনার অগ্নি সাক্ষী করে পরিণীতা
বধূ নই--নেহাতই এক নগর-বধূ--তাই আপনার
ঔরসজাত হলেও এই সন্তান
(পুত্র অথবা কন্যা যাই হোক) জারজ বা
কানীন সন্তান। আর রাজ ঔরসজাত হলেও কানীন সন্তান
কানীনই থাকে। আর এই বিধি, বিধান তো আপনাদের
মত পিতৃতান্ত্রিক সমাজ/ রাষ্ট্র ব্যবস্থাই
সৃষ্টি করেছে মহারাজ। সুতরাং সবিনয়ে
নিবেদন করছি-আমার সন্তান--সে পুত্র হোক অথবা কন্যাই হোক সে আমার অর্থাৎ নগর-বধূ আম্রপালির সন্তান হয়ে জন্ম নেবে--আম্রপালির সন্তান
হয়েই বড় হবে, আম্রপালির কোঠিতেই আম্রপালির
শিক্ষা দীক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠবে। মহারাজ, আমি মনে করি একজন সন্তান প্রথমে
তার মায়েরই সন্তান। একটি বাগানে পাখীর ঠোঁট থেকে অথবা মল-মূত্র থেকে অথবা হাওয়ার সাথে ভেসে আসে অনেক ফুল, ফলের বীজ। সেই
বীজ থেকে জন্ম নেয় যে ফল ফুলের বৃক্ষ-তার গায়ে কোনও পরিচয় পত্র
লেখা থাকে না। সেই পুষ্প আপনাতে আপনি বিকশিত
হয়ে বাগানের শোভা বর্ধন করে--সেই পতিত বীজ
থেকে বড় বড় মহীরুহ আকাশের দিকে মাথা উন্নত করে দন্ডায়মান থাকে। তাহলে মনুষ্য সমাজের মধ্যে এই অসম বিধি কেন মহারাজ? কেন এই বৈষম্য! আর হয়ত বা এই বৈষম্যের
জন্যই, সৃষ্টি হয় নগর বধূ--গণিকা--আর কানীন সন্তান। মহারাজ, আমি এক সামান্যা নারী-তবু অসামান্যা!
আমার ধৃষ্টতা মার্জনীয়।
আশা
করব ভবিষ্যতে আপনি আমাকে এ বিষয়ে আর কদাপি পত্র লিখবেন না--অথবা যোগাযোগ করবেন না।
অলম
ইতি
বৈশালী
গণরাজ্যের নগর-বধূ-
আম্রপালি
আকাশের
বুকে উড়ান ভরল শিক্ষিত কবুতর। চুপ চাপ নিজের বাতায়ন থেকে এই উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে দুচোখ জলে ভরে উঠল আম্রপালির।
আর কোনদিন হয়ত নৃপতি বিম্বিসারের সঙ্গে তার
দেখা কিংবা পত্রালাপ হবে না।
পাটলিপুত্রে
বিম্বিসারের শয়ন কক্ষে যখন এই দূতীর নখ
নিঃসৃত পত্র বিম্বিসারের হাতে পৌঁছল
তখন বিম্বিসারের চোখে এক কোমল বিষণ্ণতা! ক্লান্ত বিম্বিসার পত্রটি খোলা রেখেই ঘুমিয়ে পড়লেন।তাঁর প্রধান
মহিষী কোশলা দেবী কৌতূহল
ভরে সেই পত্র হাতে তুলে নিয়ে চোখ রাখলেন অতীব সুন্দর
হস্তাক্ষরে লেখা সেই পত্র-পড়তে পড়তে তাঁর মুখ কখনও
ক্রোধে কখনও ব্যথায়
রক্তিম এবং বিষণ্ণ হয়ে উঠল। লোকমুখে যা শুনেছেন সেটা তাহলে সত্য।
নৃপতি বিম্বিসার বৈশালী অবরোধ
করেছিলেন এক নগর বধূর শারীরিক
আকর্ষণ এর জন্য? লালসা চরিতার্থ
করার জন্য? তাঁদের সন্তান অজাতশত্রু
সাত বছরের বালক! তেজোদৃপ্ত! এক ধারালো তরবারির
মত। মহারাজ সেই পুত্রের
কথা না ভেবে এক নগর-বধূর গর্ভজাত সন্তানের
কথা ভেবে উন্মাদ হয়ে উঠলেন? এক গণিকার
শারীরিক আকর্ষণ কী এতটাই
তীব্র। কোশলা দেবীর চোখের কোণে দৃঢ় অঙ্গীকারের সংকেত। যেভাবেই হোক অজাতশত্রুকে ভবিষ্যত মগধের রাজা হিসেবেই
প্রতিপালন করতে হবে! চিঠিটি সেভাবেই রেখে কোশলা দেবী বিম্বিসারের শয়ন কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেন! মহারাজ বিম্বিসার বুঝতেই পারলেন না মগধের রাজসিংহাসনের
জন্য লড়াই এর বিষবৃক্ষটি রোপিত হয়ে গেল।
ক্রমশ …………
১৮তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি –
জন্ম-কলকাতায় । আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা ।
প্রকাশিত গ্রন্থ
১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)
ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত