ধারাবাহিক উপন্যাস – প্রতি বৃহস্পতিবার ।
পর্ব-- ১৬
The big
fat war was going on
So
profitable for daddy.
She drove
a pea green Ford
He drove
pearl gray Caddy.
--"ম্যাম, হেড মাসাজ
চাইয়ে?"
--"ওকে।"
--"হলা পিয়ে,যুদ্ধ হলে সবসময়ই
কিছু সংখ্যক মানুষের লাভ হয়,আর--
--"আর ?
--"আর কিছু
সংখ্যক মানুষের সর্বনাশ।"
বাভ্রবির চোখের
সামনে রক্ত ঝরা পৃথিবীর মানচিত্র।
ইতিহাসের পাতা গুলো যেন ফরফর করে
ফেনের হাওয়ায় উল্টে গেল! স্কুলে ইতিহাসের ক্লাসে যখন টিচার পড়ানো শেষ করে বই বন্ধ করে গোটা ক্লাসের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করতেন -
--"নাউ,মাই
ফ্রেন্ডস--এনি কোয়েশ্চন?"
সবাই চুপ
করে থাকলেও বাভ্রবির হাত ঠিক
উঠে যেতো উপরে!
--"আমার একটা কোয়েশ্চন আছে মিস!" টিচার হেসে ফেলে বলতেন--"হ্যাঁ,আই নো--ইউ
অলওয়েস হ্যাভ সাম সিলি কোয়েশ্চনস! বলে
ফেলো।"
--"আচ্ছা,ইতিহাস মানেই
কি শুধু সাম্রাজ্য জয়,যুদ্ধ? সভ্যতার মানেই
কি শুধু রাস্তা ঘাট,পরিখা নির্মাণ?"
পুরো ক্লাস খিক খিক করে চাপা
হাসিতে মুখ লুকোতো। মিস একটু সময় চুপ করে
থেকে বলতেন--"আই ডোন্ট নো বাভ্রবি! যা
সিলেবাসে থাকে তাই আমরা পড়িয়ে যাই। হয়ত
তুমি ঠিকই বলেছো--ইতিহাস পাঠ অন্য রকম হওয়া উচিত। তবে যুদ্ধই বোধহয়
মানুষের আদিমতম পিপাসা। জয়ের
নেশাই বোধহয় সবচাইতে সর্বনাশা
নেশা।"
--"হলা পিয়ে? কি ভাবছ?--
--"না,তুমি
যুদ্ধ নিয়ে কিছু একটা বলছিলে?"
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আম্রপালি বলল--
--"হ্যাঁ--যুদ্ধে
কিছু মানুষের হয়ত লাভ হয়--অবশ্য জানি না,সত্যিই লাভ হয় কিনা--যে যুদ্ধ জয় করে সে ভাবে তার যশ,ঐশ্বর্য লাভ হল--কিন্তু জীবনের
একান্ত বেলায় যখন দর্পণ-প্রতিবিম্ব তার চোখে আঙ্গুল দিয়ে
দেখিয়ে দেয় যে সে একজন পরাজিত
হত্যাকারী,অপরাধী ছাড়া কিছুই নয়। তখন? তখন
সেই রাজা,সেই সম্রাট
কি নিজেকে নিজে ক্ষমা করতে পারে?'"
"রাজা
বিম্বিসার ও পারেন নি? তাই না?"
গভীর রাতে --সেদিন নিদাঘ শেষে অজস্র
বারিবিন্দু পতিত হইতেছিল--আম্রপালির আম্র কুঞ্জ সিক্ত--আদরে বর্ধিত দাড়িম্ব
বৃক্ষের পত্র হইতে বৃষ্টি বিন্দু অঝোর ধারাস্রোতে নামিয়া
আসিতেছিল--কদম্ব বৃক্ষের ডালে
সিক্ত পক্ষীমাতা তাহার
ডানায় শাবককে আচ্ছাদিত করিয়া রাখিয়াছিল।
ত্রিযামা রাত্রির দণ্ড,পল,অতিবাহিত হইতেছিল! আম্রপালি তাঁহার শয়ন কক্ষের
দ্বার রুদ্ধ করিয়া তাঁহার প্রেমিক ছদ্মবেশী বিম্বিসার এর
সমীপবর্তী হইয়া নৃপতি
বিম্বিসারের আঁখিতে আঁখি রাখিয়া প্রশ্ন করিল -
--"কেন? কেন
পিয়ে আমার সহিত ছলনা করিলে তুমি? আমি তো
তোমাকে যথার্থ ভাবে প্রেম
করিয়াছিলাম।"
বিম্বিসারের অধর কম্পিত
হইল। তথাপি ঈষৎ কম্পিত কণ্ঠে
বলিলেন--"পিয়ে আমি তোমার
সহিত ছলনা করি নাই। বিম্বিসার আম্রপালির
হস্ত আকর্ষণ করিতে গেলে আম্রপালি দৃঢ় হস্তে সেই
হাত ছাড়াইয়া নিয়া নিজের
রৌপ্য তোরঙ্গ হইতে একটি সুন্দর তৈলচিত্র
বাহির করিয়া বিম্বিসারের সামনে পালঙ্কের উপর রাখিয়া কোমরে দুই হাত স্থাপন করিয়া স্থির এবং টানটান
হইয়া দাঁড়াইয়া প্রশ্ন করিল -
--"এই তৈলচিত্রে নিজের প্রতিমূর্তি
আপনি দেখিতে পাইতেছেন তো মহারাজ?"
বিম্বিসারের মস্তক নত হইল।
--"আপনি শুধু
আমাকে ছলনাই করেননি মহারাজ--আপনি আপনার
নিজের দেশবাসী, আপনার রাজমহিষী,আপনার পুত্র
পরিবারের সঙ্গেও ছলনা করিয়াছেন; আপনি
আমার জন্মভূমির প্রতি ও অন্যায় করিয়াছেন। কেন মহারাজ? কেন,?"
বিম্বিসার ধীরে ধীরে বলিলেন--"শুধুমাত্র তোমার
জন্য পিয়ে! তোমার রূপ,তোমার কলাবিদ্যা,,গুণরাশির কথা ভাট মুখে আমার রাজসভায়
গীত হইত। তোমার তৈলচিত্র দেখিয়া আমি মনে মনে উন্মাদ হইয়া
উঠিয়াছিলাম। তাই এই ছলনা--এই
বৈশালী অবরোধ।"
আম্রপালির নয়ন যুগল হইতে জলবিন্দু এবং অগ্নি-বিন্দু যেন একসাথে
বাহির হইতে লাগিল।
--"একটি
নারীর জন্য? একটি সামান্য নারীর
জন্য একটি রাজ্য অবরোধ? মহারাজ--ধিক্কার জানাই
আপনাকে! ধিক্কার জানাই নিজেকে। এই
দেহ রক্ত মাংস দিয়া গঠিত। এক নারী
মাংসের জন্য এই লোলুপতা?"
বিম্বিসার নীরব রহিলেন।
--"মহারাজ, আপনি
আজই--এই রাত্রি প্রভাত হইবার পূর্বেই মগধের দিকে যাত্রা করুন--আর আমার মাতৃভূমির
উপর হইতে এই অবরোধ
মোচন করুন।"
বিম্বিসার ধীরে কহিলেন--"তাহাই হইবে পিয়ে। আজ আমার আম্রপালিকে এক নবরূপে অবলোকন
করিলাম।"
বিম্বিসারের প্রস্থান পর্বের প্রতি অপলক আম্রপালি--আম্রপালির আম্র-কুঞ্জের
দ্বারদেশে আসিয়া বিম্বিসার
পশ্চাতে তাকাইলেন। দুজনের আঁখি পল্লব
শেষবারের জন্য মিলিত হইল।
** এই উপন্যাসে কোথাও কোথাও সেই সময়কার ‘প্রাকৃত’ ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।
ক্রমশ …………
১৭তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি
–
জন্ম-কলকাতায় । আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা ।
প্রকাশিত
গ্রন্থ
১--সাপ শিশির
খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)
ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত