ধারাবাহিক উপন্যাস
৪র্থ পর্ব
( চার )
মাঝে মধ্যে এমন পরিস্থিতি আসে নিজের মতামতের কোনও গুরুত্ব থাকে না। কেউ তার কথা গ্রাহ্যই করল না। মেয়েটিও দৃঢ় মনোভাব দেখাতে পারল না। কেন পারল না?যদি এক বছর আগে হতো বোধহয় মুখে মুখে জবাব দিতে পারতো। অপ্রিয় কঠিন বাক্য উগড়ে দিতে দ্বিধা করতো না।
কয়েক মাসে পরিবেশটা যে বদলে গেছে। সে এখন
পরিবারের এক আদরের মেয়ে। সকলে তার ভালো চায়। এই সহানুভূতি, ভালোবাসা মানুষকে বড্ড
দুর্বল করে দেয়। ভাবছে মায়ের কথা। মা বেঁচে থাকলে কি সম্মতি দিতেন? কঠিন প্রশ্ন।
বোধহয় দিতেন। তার যে ছেলেটিকে অপছন্দ তা কিন্তু নয়। বরং ভালোই লেগেছে। সেটা
অপ্রাসঙ্গিক। সঠিক সিদ্ধান্ত কিনা বড় প্রশ্ন। সবাই যেভাবে উঠেপড়ে লেগে প্রস্তুতি
নিতে শুরু করেছে ,এরপর কি আর পিছিয়ে আসার উপায় আছে? অবশ্য কোন যুক্তিতে পিছিয়ে
আসবে?
এরমধ্যে
পাত্রের মা-বাবা এলেন। তাঁরা চায় যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে। পুরোহিতকে
এক সপ্তাহের মধ্যে দিন দেখতে বললেন।অযথা দেরি চাইছেন না। কোনো দাবি নেই। মেয়ের সমস্ত গহনা তাঁরা আগে
পাঠিয়ে দেবেন। বিশাল অবস্থা। পাত্রী পক্ষের কিচ্ছু দিতে হবে না। সিঁদুর দান করে
সাত পাক ঘুরিয়ে দিলেই হবে। মেয়েই
তাদের একমাত্র বিবেচ্য। পুরোহিত ষোল তারিখ দিনটা ভালো বললেন। বাবা-মায়ের কথাবার্তা অমায়িক। মেয়েটিরও
পছন্দ হল। বেশ আন্তরিকতার ছোঁয়া আছে। যা মনে হয় ভদ্র এবং মিষ্টি ব্যবহার।
দেখে এবং তাদের কথা শুনে পরিবারটি সম্পর্কে একটি ধারণা করে নিল মেয়েটি। এরপর তার
ভাগ্য। মেয়েদের জীবনটাই তো ওইরকম। বড় করে মানুষ করে অজানা অচেনা পুরুষটির ভাগ্যের
সঙ্গে জুড়ে দাও। তার যদি ভাগ্য মন্দ হয় সেও অতলে তলিয়ে যাবে। কে যে এমন নিয়ম চালু
করেছিল কে জানে। শুয়ে শুয়ে রাতে মেয়েটির ঘুম আসতে চায় না। পড়াশুনা ডকে উঠেছে। এই
অবস্থায় কি পড়া হয়? পড়তে বসলেই নানা রাজ্যের চিন্তা। বার বার মায়ের কথা মনে পড়ছে। তাকে যে সবাই এত
ভালোবাসছে, দায়িত্ব নিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করছে, দেখলে বোধহয় মা খুব খুশি হতেন।
শান্তিতে যেতে পারতেন। আবার অন্যদিকেও ভাবছে।
বিয়ের
দিন স্থির হয়ে গেল। আর দশদিন পর বিয়ে। ভাবতেই মেয়েটি শিউরে উঠছে। কি থেকে কি হতে
যাচ্ছে। মানুষের জীবন কী এইভাবেই পাল্টে যায়? কি ছিল আর কি হতে যাচ্ছে ! এক বাড়িতে
পর পর তিনটে বিয়ের অনুষ্ঠান। ভাবা যায় ! আবার ব্যস্ততা শুরু হয়ে গিয়েছে। পাঁচ ভরি
ওজনের গলার হার দিয়ে বাবা-মা আশীর্বাদ করে গেলেন। সকলে বলাবলি করছে। মেয়েটার কি
ভাগ্য। কপালে ছিল রাজরাণী, খণ্ডাবে কে? এতদিন কষ্টেসৃষ্ঠে দিন কাটিয়েছে এবার সুখের
সাগরে ভাসবে। মেয়েটির কাছে সুখের সংজ্ঞা অবশ্য অন্যরকম। পাঁচটা সাধারণ মেয়ের থেকে
একটু আলাদা ভাবনা। স্বামী কোটিপতি হোক ক্ষতি নেই, তার নিজেরও কিছু রোজগার চাই।
নিজের উপার্জনকৃত অর্থ খরচ করার মধ্যে যে আনন্দ --- এর চেয়ে বড় সুখ আর নেই তার
কাছে। তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়াই আছে---- যত বাধাই আসুক পড়াশোনাটা সে ছাড়বে না।
পাত্রের বাবা-মা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, পড়াশুনাতে তাঁদের আপত্তি নেই। ছেলে নিশ্চয়ই
বেগরবাই করবে না।
সাতদিন
আগে বড়দি চলে এলেন। বড়দি কি খুশি,কি খুশি। কথাবার্তার ধরনও পাল্টে গেছে। মেয়েদের বিয়ে হলে বোধহয় এমনটাই হয়।
অভিজ্ঞ বিজ্ঞের মত চালচলন। বিয়ের পর বড়দিকে দারুন লাগছে। কপালে সিঁদুর পরাতেই
সৌন্দর্য্য বেড়ে যায় বোধহয়। বড়দি বললেন, তোর বিয়ে বলেই এক সপ্তাহ আগে চলে এলাম। এই
ক'দিন শরীরের খুব যত্ন নিস। রাত জাগিস না। সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়িস।
যদিও তুই এমনিতেই সুন্দরী। তবু ঘুম কম হলে চোখের কোণে কালি
পড়লে খারাপ দেখাবে।
তার যে
কেমন লাগছে কাউকে বলে বোঝাতে পারবে না। বড়দা বৌদি আসতে পারবেন না জানিয়েছেন।
আত্মীয়স্বজনও কেউ তেমন আসে নি। এক বাড়িতে যদি পর পর তিনটে বিয়ে লাগে, প্রতি বিয়েতে
আসা কি সম্ভব? তাদের কি কাজকর্ম নেই ? এক দিকে মেয়েটির পক্ষে ভালো। নিকট আত্মীয়দের
সহানুভূতির কথা শুনলে গা-পিত্তি জ্বলে ওঠে। মৃত বাবা-মায়ের কথা ছাড়া তাদের আর অন্য
কথা নেই। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে। সুড়সুড়ি দিয়ে অতীত কাহিনী উগড়ে দেওয়াই আসল কাজ।না
এসেছে ভালো হয়েছে।
জ্যাঠামশাই
কন্যা সম্প্রদান করবেন শুনে মেয়েটি খুব খুশি। কারণ কাকাকে মেয়েটি এতটুকু পছন্দ করে না। সর্বদা কাকীর কথায় ওঠে
বসে। কাকি এখন আদর যত্ন করলেও এক সময় কি কম জ্বালিয়েছে। চোর অপবাদ দিয়ে সকলের
সম্মুখে অপমান করেছে বেশ কয়েকবার। সেসব ঘটনা কি ভুলবে কখনো? খাওয়ার পাত থেকে টেনে তুলে দিতেন। রাঁধুনীর
মেয়ের নাকি ওঁর ছেলের সঙ্গে বসে খেলে মান যাবে। সেই
মহিলা বদলে গেছে বলে অতীতের ক্ষত কী সহজে নির্মূল হবে?
সকাল
থেকেই বাড়িতে সানাইয়ের সুরে এক অন্য পরিবেশ। মেয়েটির মনেও দোলা লাগছে। বেলা দশটা
নাগাদ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যা আনন্দ হল সারাজীবন মনে থাকবে।
বলতে গেলে জীবন স্বার্থক। তাকে নিয়েই আজকের অনুষ্ঠান, তাকে নিয়ে সকলের এত তৎপরতা তা ভেবেই মেয়েটি আপ্লুত। এতদিনে মনে হয়
জীবনের পূর্ণতা পেল। পৃথিবীতে তারও মূল্য
কম নেই। বিকেলের দিকে বিউটি পার্লার থেকে দুটি মেয়ে এসেছে তাকে সাজাতে। এসব নাকি
বড়দির তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। মেয়েটি আর
ভাবতে পারছে না। বড়দা আসতে পারেন নি, তবে ওর জন্য জম্পেশ একটি বেনারসি শাড়ি পাঠিয়ে
দিয়েছেন। পাত্রের বাড়ি থেকে যা গয়না পাঠিয়েছে বোধহয় একশো ভরির কম হবে না। এতগুলো কিভাবে পরবে সে নিজেই জানে না। বড়দি বললেন,
একেই বলে ভাগ্য, আমার বিয়েতে এর দশ ভাগের এক ভাগও পাইনি।
আর তুই দেখ, সারা
শরীর মুড়ে ফেলা যাবে। এতদিন কষ্ট করেছিস, এবার রাজরানী হয়ে থাকবি। মেয়েটিরও
ঈশ্বরের প্রতি আস্থা বাড়ছে। জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে ভগবানের প্রতি তার বিরূপ
মনোভাবই ছিল। কেন তাকে এত কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। ঈশ্বর এত এক চোখা কেন? আজ মনে মনে
ঈশ্বরকে প্রণাম করল। তুমি আমায় ক্ষমা করো ঠাকুর, এতদিন না বুঝে তোমাকে গালিগালাজ
করেছি। মা বলতেন, " ঈশ্বরের প্রতি
আস্থা রাখ। একদিন তিনিই আমাদের সুদিন দেবেন। দেখে নিস।" মায়ের কথা সত্যি
সত্যি বাস্তবে পরিণতি হল, কিন্তু মা তুমিই তো দেখে যেতে পারলে না। আনন্দের দিনেও
মেয়েটির চোখ ঝাপসা।
মেয়েটি
এমনিতেই সুন্দরী। দুধে আলতা গায়ের রঙ।নাক, চোখ,মুখের গড়ন একবারে দুর্গা প্রতিমা।
পার্লারের মেয়ে দুটি যেভাবে সাজিয়েছে চোখ ফেরানো মুশকিল। যেন স্বর্গের অপ্সরা নেমে
এসেছে মর্তে। রূপ দেখে সকলে মুগ্ধ। সেও
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কম অবাক হয় নি। সাজগোজের দিকে কোনোদিনই নজর ছিল না তার। ভালো
করে নিজেকে দেখেছে কিনা সন্দেহ। তাই কিছুক্ষণ আয়নার সম্মুখে দাঁড়িয়ে নিজেই চোখ
ফেরাতে পারছে না। আজ খুব গর্ব বোধ হচ্ছে। হবু স্বামীটিকে প্রথম দেখাতেই যে পছন্দ
হয়ে গিয়েছিল সে একমাত্র অন্তর্যামীই জানে। এমন সুদর্শনও সচারচর চোখে পড়ে না। পছন্দ
হয়েছে বলে সত্যি সত্যি তার স্বামী হবে ভেবেছিল কী কখনো? স্বপ্নও যে সত্যি হয় প্রথম
টের পেল। বড়দির কথাই ঠিক, সত্যিই সে ভাগ্যবতী। না হলে তারমত এমন দুর্ভাগার কপাল
রাজরানী হতে চলেছে কি করে?
বর এসে
গিয়েছে। শঙ্খ ধ্বনি, উলূ ধ্বনি চলছে তো চলছেই। জেঠিমা,কাকিমা বরণ করে ঘরে নিয়ে
বসিয়েছেন। মেয়েটিকেও বিবাহ আসরে নিয়ে গেল। জ্যাঠামশাই তাকে একটি আসনে বসিয়ে দিলেন।
তারপর শুরু হল মন্ত্র উচ্চারণ। কিছুক্ষণের মধ্যে বরকেও নিয়ে আসা হল। আঁর চোখে
দেখেই মন ভরে গেল। গরদের পাঞ্জাবি পরিহিত যেন সিনেমার হিরো।
না চাইতেই যে এত কিছু পেয়ে যায় তার মত ভাগ্যবতী ক'জনের থাকে? বরযাত্রী কতজন এসেছে সে জানে না, তবে তাদেরকে ঘিরে যে ক'জন রয়েছে তাদের নানা মন্তব্য
শুনে মেয়েটি বিগলিত। সুন্দরী বউকে নিয়ে উচ্চ প্রশংসার বন্যা বইছে।
রাত
তখন দশটা বেজে গিয়েছে। বিয়ের কাজ প্রায় শেষের পথে। তবে সিঁদুর দান তখনও বাকি। হঠাৎ
একটা কোলাহল, চারিদিকে কেমন শোরগোল পড়ে গিয়েছে। কিছু একটা যে ঘটেছে স্পষ্ট বোঝা
যাচ্ছে। কী সেটা আন্দাজ করা যাচ্ছে না। কেউ একজন বলল পুলিশ এসেছে। পুলিশ ! পুলিশকে
কী আমন্ত্রণ করা হয়েছে ! ছোটকাকার সঙ্গে দু'জন পুলিশের বন্ধুত্ব আছে জানে, হতে
পারে তারাই। গন্ডগোল, চিৎকার-চেঁচামেচি ক্রমশ বাড়ছে। একজন মহিলার গলা পাওয়া
যাচ্ছে। উচ্চস্বরে কি সব বলে চলেছে। পুরোহিত মন্ত্রপাঠ বন্ধ করে হাঁ করে তাকিয়ে
আছেন ওই সোরগোলের দিকে। জ্যাঠামশাই উঠে দাঁড়ালেন। বর মানুষটিরও স্থির দৃষ্টি
সেদিকেই। যারা এতক্ষণ বিয়ের অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারাও বাড়ির গেটের
কাছে ভিড় করেছে। বড়দি, সমুকেও দেখা যাচ্ছে না। জ্যেঠি, কাকিই বা গেল কোথায়? কী এমন ঘটনা ঘটল সবাই মিলে ভিড় করেছে ! সেকি বিয়ের
থেকেও বড় ঘটনা ! কাকার গলাও শোনা যাচ্ছে। কি নিয়ে তর্ক হচ্ছে সবটাই ধোঁয়াশা। একজন
বলল, দুই জিপ গাড়ি করে দশ-বারো জন পুলিশ এসেছে। তখনই দু'জন পুলিশ বিয়ের আসরে এসে
বলল, " এ বিয়ে বন্ধ করুন। বিয়ে হবে না।"
বিনা
মেঘে বজ্রপাতের মত ঘটনা ! সকলে নির্বাক ! নিশ্চল ! একী অলুক্ষণে কথা বলছে পুলিশ !
বিয়ে বন্ধ করার মানে কি !
জ্যাঠা
বললেন," কি হয়েছে বলবেন তো? হঠাৎ বিয়ে বন্ধ করার কারণ কি? এর অর্থ আপনি
বোঝেন? মেয়েটি লগ্নভ্রষ্টা হবে। এর দায় কে
নেবে? আপনি নেবেন?"
পুলিশ
বলল," যা বলছি তা শুনুন। আপনাদের সবাইকে থানায় যেতে হবে। এই ছেলেটি প্রতারক।
ঘরে বউ থাকতে আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই জিব লক লক করে। বিয়ে
বিয়ে খেলা খেলতে ইচ্ছে করে। চল থানায় তারপর তোর খেলা দেখাচ্ছি।
মেয়েটির
রীতিমত কাঁপুনি শুরু হয়ে গিয়েছে। একী শুনল সে ! বিবাহিত ! তার সঙ্গে এই ভাবে
প্রতারণা করার মানে কি? শুনেছে কাকিমার কাকার ছেলে। কাকিমাও চেপে গেলেন! কেন? কি
উদ্দেশ্য?
বর
মানুষটি এবার উঠে দাঁড়াল," শুনুন অফিসার। আমার সম্পূর্ণ কথা শুনুন তারপর
বলবেন। আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু ওর সঙ্গে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে। সে
আমার সঙ্গে থাকে না। ওর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।"
তখনই
একটি মেয়ে চিৎকার করে উঠল,"মিথ্যে কথা বলছে অফিসার। ডিভোর্স আমাদের হয় নি। ও
অত্যন্ত মিথ্যেবাদী। দিনকে রাত,রাতকে দিন করতে ওর কাছে কিছুই নয়। নিত্য নতুন নারী সঙ্গ করা ওর স্বভাব।
ডিভোর্সের কাগজ দেখাতে বলুন তাহলেই প্রমাণ হয়ে যাবে।"
জ্যাঠামশাই
বললেন," তোমাদের বিয়ে হয়েছে বলছ। তাহলে তুমি ওর সঙ্গে থাকো না কেন মা? বিয়ের
পর মেয়েদের তো স্বামীর বাড়িই আসল ঘর।"
"কেন
চলে এসেছি ওকেই জিজ্ঞেস করুন না? ঘরে
স্ত্রী থাকতে অন্য মেয়েকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ব্যবসার কাজের নাম করে অন্য ছুড়িকে
নিয়ে মুম্বাই গিয়ে বারো দিন ফুর্তি করে
এসেছে। বলতেই আমি খারাপ। আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। ওর নেশা আমি ছুটিয়ে দেব, আমাকে
চেনেনি তো, এবার চিনবে।"
পরিবেশটাই
কেমন বদলে গেছে। বউটির দিকে সবার নজর। সিঁথিতে সিঁদুর রয়েছে। দেখতেও যথেষ্ট
সুন্দরী। তাহলে কেন আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসতে এল ভাবা যায় না।
জ্যাঠামশাই
কাকিমাকে জিজ্ঞেস করলেন," তুমি তো বৌমা আগেই জানতে ও বিবাহিত। জেনেশুনে কেন
এই কাজটা করলে?"
"আরে
বিবাহিত হলে কি হবে? ছ'মাসের ওপর হলো বউ
বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। আমরা জানি আর আসবে না। এখন যে এসে ঝামেলা করবে কে জানত? তবে
বিয়ে কিন্তু আমাদের মিলির সঙ্গেই হবে। ও আর ওই মেয়েকে কিছুতেই ঘরে তুলবে না, এই
আমি আপনাকে বলে রাখলাম দাদা।"
মেয়েটি
তাজ্জব! কাকিমা সব জেনেশুনে এগিয়েছে। নষ্টের মূলে ওই কাকিমা। কি ভেবেছে কি তাকে?
দুশ্চরিত্র, নারী লোভীকে সে বিয়ে করবে? কাকিমা ভাবেটা কি?
জ্যাঠা
বললেন," তুমি এখনও বলছো বিয়ে হবে? কি ভেবে বলছ, আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে
না।"
কাকি
বললেন," আপনার ভাই পুলিশের সঙ্গে কথা বলছে। একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। একটু
সবুর করুন না। লগ্ন রাত দুটো পর্যন্ত আছে। কোনো চিন্তা নেই। মেয়েটিকেও পুলিশ টাইট
দিয়ে দেবে। একটু অপেক্ষা করুন।"
মেয়েটির
যা বোঝার বোঝা হয়ে গিয়েছে। ওরা তাকে পুতুল ভেবেছে। অর্থাৎ পুতুলের বিয়ে দেবে।
ভেবেছে কি এরা! সে উঠে দাঁড়িয়ে জ্যাঠামশাইকে বলল, "এ বিয়ে আমি করবো না
জ্যাঠা। আমি চললাম।" বলেই গট গট করে বিয়ের আসর থেকে বেরিয়ে এল।
কাকিমা
বললেন," ওলো ছুঁড়ি, লগ্নভ্রষ্ট হলে মেয়েদের আর বিয়ে হয় না। চুপচাপ বস
এখানে।"
মেয়েটি
বলল, " না হোক, তবু একজন বিবাহিত কে প্রাণ থাকতে বিয়ে করবো না।" বলেই
একেবারে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করল।
ক্রমশ ……
৫ম পর্ব পড়ুন
আগামী শনিবার
লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখক পরিচিতি -
নিত্যরঞ্জন দেবনাথ পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার
পানুহাটে ১৯৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন।কাটোয়া কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক। বর্তমানে
থাকেন হুগলির চুঁচুড়ায়। পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী ছিলেন।অ্যাকাউন্টেন্ট
জেনারেল-এর অধীন ডিভিশনাল অ্যাকাউন্টস অফিসার পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর প্রথম
গল্প " চেতনা " ছোটদের পত্রিকা শুকতারায় ১৯৯৬ - এর এপ্রিলে প্রকাশিত হয়।
এরপর দেশ, শিলাদিত্য, কালি ও কলম,মাতৃশক্তি, তথ্যকেন্দ্র, কলেজস্ট্রিট, কথাসাহিত্য, দৈনিক স্টেটসম্যান, যুগশঙ্খ, একদিন,,সুখবর ইত্যাদি
এবং বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে নিয়মিত তাঁর সাহিত্যকীর্তি অব্যাহত। ইতিমধ্যে পাঁচটি
গল্প সংকলন ও চারটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক
"শতানীক " পত্রিকাটি দীর্ঘদিন ধরে সম্পাদনা করে আসছেন।