Advt

Advt

biswa-sahityer-sera-bara-galpo-2ndpart-feature-by-nalinaksha-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine

ধারাবাহিক  

biswa-sahityer-sera-bara-galpo-2ndpart-feature-by-nalinaksha-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine

২য় পর্ব

 গল্পের সারাংশ

 ১৫০০০ শব্দেরও বেশি দৈর্ঘের ‘দ্য ডেড’ গল্পটির প্রধান চরিত্র গ্যাব্রিয়েল পেশায় স্কুল শিক্ষক। ডাবলিনের দ্য ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকায় পুস্তক সমালোচনা করে বুদ্ধিজীবি মহলেও কিছুটা খ্যাতি অর্জন করেছে গ্যাব্রিয়েল। গ্যাব্রিয়েল এবং ওর স্ত্রী গ্রেটা ওর দুই অবিবাহিত পিসি মিস কেট ও মিস জুলিয়ার ক্রিস্টমাস পার্টিতে একটু দেরি করেই উপস্থিত হল। ওই দুই বৃদ্ধা পিসির সঙ্গে থাকে ওদের একমাত্র ভাগ্নি মেরি জেন। যেহেতু কেট, জুলিয়া এবং মেরি জেন পেশায় সঙ্গীত শিক্ষিকা তাই নাচ গানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে পার্টিতে। সান্ধ্য ভোজনের শেষে ডিনার স্পিচ দেওয়ার দায়িত্বটি দেওয়া হয়েছে গ্যাব্রিয়েলকে। নাচ গান চলতে থাকাকালীন গ্যাব্রিয়েলের মন মেজাজ কিছুটা খারাপ করে দেয় মিস ইভর্স নামের একজন উগ্র আইরিশ জাতীয়বাদী( আয়ারল্যান্ড তখনও ইংরেজদের অধীনস্থ একটি রাজ্য)। গ্যাব্রিয়েল যে পত্রিকায় বইয়ের সমালোচনা করে সেটি ‘ ইউনিয়নিস্ট’( যারা আয়ারল্যান্ডকে ব্রিটেনের অধীনে রাখার স্বপক্ষে) পত্রিকা হিসেবে গণ্য করা হয় তাই মিস ইভর্স গ্যাব্রিয়েলকে ব্রিটেনের সমর্থক বলে খোঁটা দেয়।    

পার্টিতে নাচ গান, হাসি ঠাট্টা চলে অনেক রাত পর্যন্ত, তারপর খাওয়া দাওয়া। ডিনার স্পিচে গ্যাব্রিয়েল আয়ারল্যান্ডের অতিথিপরায়ণতার ভূয়সী প্রশংসা করে, প্রশংসা করে তার দুই পিসি ও ম্যারি জেনের আতিথেয়তার আর বক্রোক্তি করে নতুন প্রজন্মের শিক্ষিত সেই সব তরুণ তরুণীদের যারা আয়ারল্যান্ডের জাতীয় চরিত্রকে হেয় প্রতিপন্ন করতে উঠে পড়ে লেগেছে। গ্যাব্রিয়েলের মন্দ কপাল, মিস ইভর্স তার বক্তৃতার আগেই পার্টি ছেড়ে চলে গেছে।

পার্টি থেকে বেরিয়ে আসার মুখে গ্যাব্রিয়েল লক্ষ করে ওর স্ত্রী গ্রেটা সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে একটা পুরনো গান ( The Lass of Aughrim) শুনছে। ওরা দু’জন হোটেলে ফিরে এলে গ্যাব্রিয়েল স্ত্রীর সঙ্গে যৌন মিলনে আগ্রহ দেখায় কিন্তু বিষন্ন গ্রেটা কোন উৎসাহ দেখায়না। গ্যাব্রিয়েল জানতে চায় গ্রেটার হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণ। গ্রেটা জানায় যে গানটি ও সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে শুনছিল সেটি ওকে মনে করিয়ে দিয়েছে ওর প্রাক বিবাহিত জীবনের প্রেমিক মাইকেল ফুরের কথা। গ্রেটা তখন থাকত গ্যালাওয়ে শহরে। ফুরে ওই গানটি শুনিয়েছিল গ্রেটাকে। মাত্র সতেরো বছর বয়সে পরিবারের নিষেধ অগ্রাহ্য করে অসুস্থ শরীর নিয়ে এক তুষার বৃষ্টির রাতে ফুরে এসেছিল দেখা করতে ওর প্রেমিকা গ্রেটার সঙ্গে আর সেই রাতে ওর যে ঠান্ডা লেগে গিয়েছিল তাতেই ওর মৃত্যু হয়েছিল। এই ঘটনাটি বলতে গিয়ে গ্রেটা কান্নায় ভেঙে পড়ে। গ্যাব্রিয়েল জানতনা ওর স্ত্রীর এই বিয়ের আগের প্রেমের কথা। ঘটনাটা শুনে গ্যাব্রিয়েল মানসিক আঘাত পেল আর অসন্তুষ্ট হল ওর স্ত্রীর প্রতি। কিন্তু একসময় গ্রেটা যখন ঘুমিয়ে পড়ে গ্যাব্রিয়েলের মন ছেয়ে যায় মৃত্যু চিন্তায়। অগণিত জীবিত মানুষের জীবনে মৃতরা যে গভীর ছাপ রেখে যায় তার কথা চিন্তা করে গ্যাব্রিয়েল। ওর পরিচিত সবাই – কেট, জুলিয়া, মেরি জেন এমনকি ও নিজেও একদিন চলে যাবে পৃথিবি ছেড়ে, পিছনে পড়ে থাকবে শুধু কিছু স্মৃতি। জানালায় দাঁড়িয়ে বাইরে তুষারপাত দেখতে দেখতে গ্যাব্রিয়েলের মন এক সময় দেশ কালের সীমা অতিক্রম করে মৃত্যুর মধ্যে জীবনের গভীর প্রকাশ উপলব্ধি করে। দ্য ডেড গল্পটি জয়েস শেষ করেছেন এই অমোঘ দার্শনিক বাক্যটি দিয়ে – His soul swooned slowly as he heard the snow falling faintly through the universe and faintly falling, like the descent of their last end, upon all the living and the dead.’

জেমস জয়েসের বিশ্বময় খ্যাতি তাঁর উদ্ভাবিত stream of consciousness শিল্প রীতির জন্য যার অনবদ্য ব্যবহার লক্ষ করা যায় ইউলিসিস(১৯১৬) এবং ফিন্নেগানস ওয়েক(১৯৩৯) উপন্যাস দুটির মধ্যে। সাহিত্য জীবনের বেশির ভাগ সময় আয়ারল্যান্ডের বাইরে কাটালেও গল্প উপন্যাসে ডাবলিন শহেরর রাস্তা ঘাট, মানুষজন এবং শহরটির পরিবেশ নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে তার লেখায়। জয়েস একবার বলেছিলেন যে ডাবলিন শহরটি যদি কোনদিন ধংস হয়ে যায় তবে ইউলিসিস উপন্যাসের সাহায্যে শহরটিকে পুননির্মাণ করা যাবে। ডাবলিনার্স এর গল্পগুলো, বিশেষত দ্য ডেড গল্পটিতেও প্রতিটি চরিত্র, তাদের কথোপকথন, শিল্পসংস্কৃতি, তৎকালীন পরাধীন আয়ারল্যান্ডের মনোবেদনা জয়েস এক দক্ষ, নিপুন শিল্পির তুলিতে এঁকেছেন।

২০১৪ সালে ডাবলিনার্স গল্প সংকলনের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বইটি পুনঃপ্রকাশিত হবার সময় নিউ ইয়র্ক টাইমসের ড্যান ব্যারি টি. এস. ইলিয়টের প্রশস্তির প্রতিধ্বনি করে দ্য ডেড গল্পটিকে ইংরেজি ভাষায় রচিত গল্পের শীর্ষস্থানে জায়গা দিয়ে বলেছেন just about the finest short story in the English language.’

ফ্রান্‌জ কাফ্‌কা – দ্য মেটামরফসিস (রূপান্তর) (১৯১৫)

ইউরোপীয় সাহিত্যে ফ্রান্‌জ কাফ্‌কা এক বিরল প্রতিভা। মাত্র তিনটি অসমাপ্ত উপন্যাস( দ্য ট্রায়াল, দ্য ক্যাসল এবং আমেরিকা) এবং অল্প সংখ্যক গল্প লিখে পাঠক এবং সমালোচকদের যে বিস্ময় এবং শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন কাফ্‌কা তা আজও অম্লান রয়েছে। তাঁর বহুচর্চিত এবং বহুপঠিত বড় গল্প দ্য মেটামরফসিস অতিবাস্তব, উদ্ভট(absurd) এবং রূপক এই তিন শিল্পরীতির মিশ্রণে লেখা একটি অসামান্য সাহিত্যকীর্তি।

গল্পের সারাংশ

ট্রাভেলিং সেলসম্যান গ্রেগর সামসা একদিন সকালে উঠে আবিষ্কার করল ও একটা বিরাট পোকায় রূপান্তরিত হয়েছে। অনেক দ্বিধা দ্বন্দের পর তার এই নতুন অস্তিত্বকে স্বীকার করে নিয়ে পোকার জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে গ্রেগর। সবার নজর এড়িয়ে ওকে একটি বদ্ধ কামরায় রাখা হয়। ওর বোন গ্রেটে ওর জন্য খাবার নিয়ে এলে বুঝতে পারে পোকা হয়ে যাওয়ায় গ্রেগর এখন টাটকা খাবার নয়, পচা খাবার খেতেই পছন্দ করে। এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি গ্রেগরের পরিবারে নিয়ে আসে নানা বিপর্যয়। গ্রেগর প্রচুর পরিশ্রম করে সংসারের সব খরচ জোগাত। কিন্তু এখন গ্রেগরের এই অকল্পনীয় রূপান্তরে সংসারে যে দৈন্যদশা শুরু হয় তাকে কাটাতে গ্রেগরের মা সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন আর গ্রেটা নেয় সেলস গার্লের কাজ। রোজগার বাড়ানোর জন্য সন্ধ্যায় ও শেখে ফরাসি ভাষা আর শর্ট হ্যান্ড। এমনকি গ্রেগরের বাবা দারোয়ানের কাজ নিয়ে নেয়। অর্থাভাবে একসময় একটি কামরা ভাড়া দেয় ওরা তিনটি লোককে।

বদ্ধ ঘরে সারাদিন মেঝেতে, দেয়ালে, কিংবা ছাতে বুকে হেঁটে ঘুরে বেড়ায় গ্রেগর কিন্তু দরজার ওপাশে তার পরিবার কীভাবে আর্থিক কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছে তা ভালভাবেই টের পায় ও কারণ পোকা হয়ে গেলেও মানবিক গুনগুলো ওর মধ্য থেকে লুপ্ত হয়ে যায়নি এখনও। এখন আর ওর কোন আসবাবের প্রয়োজন নেই তাই ওগুলো সরিয়ে নেয়া হয় ওর ঘর থেকে যাতে গ্রেগর খোলা জায়গায় নড়ে চড়ে বেড়াতে পারে। একদিন ওর মা ঘরে ঢুকে ওকে দেয়ালে ওর পছন্দসই একটি ছবি আঁকড়ে পড়ে থাকতে দেখে ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। গ্রেটে ছুটে গিয়ে ওষুধ আনে ওর মার জন্য কিন্তু হাত ফস্কে ওষুধের বোতলটা গিয়ে পড়ে গ্রেগরের গায়ে এবং ও আহত হয়। আরেকদিন দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলে গ্রেগরের বাবা যুগপৎ ক্রোধে এবং আতংকে ওর দিকে কয়েকটা আপেল ছুঁড়ে মারেন যার একটি গ্রেগরের শরীরের একটি সংবেদনশীল অংশে আটকে গিয়ে ওকে দারুণভাবে আহত করে। ভাড়াটেদের অনুরোধে এক সন্ধ্যায় গ্রেটে বেহালা বাজালে সঙ্গীতানুরাগী গ্রেগর দরজার ফাঁক দিয়ে মাথাটা বাড়িয়ে দেয়। ভাড়াটেরা ওকে দেখতে পেয়ে শোরগোল শুরু করে দেয়।

গ্রেগরকে ভারাটেদের এবং পাড়া প্রতিবেশিদের নজর থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পুরো পরিবার এতটাই নাজেহাল হয়ে পড়ে যে একসময় ওর বোন গ্রেটে, যে ওর দেখভাল করে আসছিল এতদিন, সে-ও ওর মৃত্যু কামনা করে। গ্রেগরও বুঝতে পারে ওর বেঁচে থাকা পরিবারের পক্ষে কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। ও খাওয়া বন্ধ করে দেয় । খিদেয় এবং দু’দুবার আহত হবার জন্য  শারীরিক যন্ত্রণায় শেষ পর্যন্ত গ্রেগর মারা যায়।

ক্রমশ ……

৩য় পর্ব পড়ুন আগামী মঙ্গলবার

লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

লেখক পরিচিতি

জন্ম এবং শিক্ষা কলকাতায়; কর্মজীবন দিল্লিতে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রালয়ে। গল্প লেখার শুরু ষাটের দশকের শেষ দিকে। বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষায় সাহিত্য চর্চা করে আসছেন গত পঞ্চাশ বছর ধরে। ইংরেজিতে দেশে এবং বিদেশে ওঁর কিছু গল্প এবং তিনটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। বিবিসি থেকেও ওঁর কয়েকটি গল্প প্রচারিত হয়েছে। বাঙলায় চারটি উপন্যাস এবং দু’টি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। দেশ, আনন্দবাজার, সাপ্তাহিক বর্তমান, নবকল্লোল, পরিচয়, কালি ও কলম(বাংলাদেশ) এবং দিল্লি ও কলকাতার অনেক সাহিত্য পত্রিকায় গল্প লেখেন নলিনাক্ষ। দিল্লি থেকে প্রকাশিত ‘ কলমের সাত রঙ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত আছেন।