Advt

Advt

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-12th-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী-উপন্যাস-কৃষ্ণা-মিশ্র-ভট্টাচার্য

ধারাবাহিক উপন্যাস প্রতি বৃহস্পতিবার ।

 

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-12th-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী-উপন্যাস-কৃষ্ণা-মিশ্র-ভট্টাচার্য

পর্ব-- ১২

I hear

as in a dream

the conversation  of the old wives

Speaking  of Womanhood.

I remember  that I heard nothing  myself.

I was alone.

I waited like a target.

বর্ষার  আকাশে মেঘের  মাদল--বৈশালীর  ঘন ছায়াবীথি পথে হারিয়ে যাচ্ছে  একটি কিশোর  আর কিশোরী। পুষ্প কুমার আর আম্রপালী। আম্রপালী  আদর করে ডাকে-"কুমার" আর পুষ্প  কুমারের আদর করে ডাকে আমরি। দুজনে বিশাল বটগাছে  দোলনায় বৃষ্টিস্নাত  হয় আর দুলতে থাকে--অকারণ  হরষে হরষিত  দুটি বন্য  হরিণ যুগলের  ন্যায় তাহারা উচ্ছ্বসিত  হইয়া ওঠে,যেমন বর্ষার  পাহাড়ি  নদী

দুরন্ত নির্ঝরিণী

ইচ্ছে বিন্দুর  হিমস্রোত

গিরিখাতের  অন্তঃস্থিত গর্জন-চল্লিশা

শরতে সবুজ বনানী এবং ঘাস মেখলায়  যেমন বৈশালী সেজে ওঠে তেমনই  ঘন অরণ্য  খেলায় হারিয়ে যায় পুষ্প কুমার আর আম্রপালী--রাতে খোলা ছাদের আলিসায় দাঁড়িয়ে জোছনা মাখতে মাখতে কিশোর এবং কিশোরীদ্বয়  ক্রমশ  যুবক যুবতীতে  পরিণত।

দুজনেই  পরিণত বয়স্ক। সুতরাং  দুজনের বাড়ি থেকেই  বিয়ের  জন্য  প্রস্তুতি  শুরু হল।-

--"তারপর "?

বাভ্রবির  প্রশ্নের  উত্তরে আম্রপালীর চোখ ছলছল।

--"বসন্ত  সমাগমে বিবাহের  দিন ধার্য  হইল। বৈশালী গণরাজ্যে বসন্তকে বরণ  করিবার  জন্য  এক অতীব  সুন্দর  প্রথা আছে। নগরীর  সুন্দরী  নারীরা পরিচ্ছন্ন  দুল  এবং রক্ত  লাল কাঁচুলি পরিধান করিয়া বকুল এবং আম্র বৃক্ষকে পরিভ্রমণ  করিয়া নৃত্য  করিতে করিতে রাজবাড়ির  তোরণদ্বার,সহ নগরীর  রাজপথ  পরিক্রমণ  করে। আম্রপালী সেই  নৃত্য দৃশ্যের  মধ্য মণি। হরিদ্রাভ, স্বর্ণ  পাড় রেশমি দুল এবং রক্ত লাল  আঁটোসাঁটো  কাঁচুলিতে  আম্রপালীর  অলোকসামান্য রূপ  যেন  বহুগুণে  বর্ধিত হইল। কথিত  আছে যে সুন্দরী রমণীকুলের  পদাঘাতে  অশোক মঞ্জরী প্রস্ফুটিত  হয়,আর  তাহাদের মুখের কুলকুচির জল হইতে বকুল গাছ পুষ্পবতী হয়। আম্রপালীর  কোমল নূপুর  পরা পা অশোক বৃক্ষে পতিত  হইল-আর

--"আর?"

আর তাহাই  আম্রপালীর  জীবনের  কালস্বরূপ হইল। রাজা মনুদেব  এই অপরূপ  রূপবতীর  সঙ্গীত  এবং নৃত্যে  মুগ্ধ  হইলেন এবং তাঁর  অমাত্যদের  বলিলেন যে এই  কন্যাকে রাজভবনে  আনিবার  জন্য  পালকি প্রেরণ  করিতে। অমাত্যদের  গুপ্তচর  খবর অনিল যে আম্রপালী বাগদত্তা। খুব শীঘ্রই  আম্রপালীর  বিবাহ  তাহার  বাল্য প্রণয়ী  পুষ্প কুমারের  সঙ্গে সম্পন্ন  হইবে।"

--"ব্যাস। তবে ?"

আম্রপালীর  ঠোঁটে আবার  সেই  বিষণ্ণ  হাসি

--"রাজা মহারাজারা যখন কোনও  বিষয়ে  মন, স্থির  করেন তখন তাহারা সেই  সিদ্ধান্ত  হইতে নড়েন  না। মনুদেবের  ক্ষেত্রেও  ইহার  অন্যথা হইল না।"

--"মানে?"

বিবাহের  সাজে সজ্জিত  আম্রপালী। অপেক্ষা করিতেছে কখন পুষ্প কুমার  আসিবে! সেই  সুন্দর  আম্র কুঞ্জ! রেশম  রক্ত  দুল আর গাড়  লাল চোলি--মাথায় রক্তিম  ওড়না--কিন্তু  পুষ্প কুমারের  ঘোড়া যখন বিবাহের  আসরে উপস্থিত  হইল তখন ঘোড়ার  উপরে সওয়ার  পুষ্প কুমার অনুপস্থিত।

আম্রপালী একটি দীর্ঘ  নিঃশ্বাস  পরিত্যাগ  করিল। বাভ্রবি অস্থির  আতঙ্কে,আগ্রহে  জিজ্ঞাসা করিল--"কেন?কেন অনুপস্থিত?"

কহিল  অশ্বথ্ব  ধীরে--"আম্রপালীর  চক্ষেও সেই  নির্বাক  প্রশ্ন  ধ্বনিত  হইয়াছিল।বধূ বেশে সজ্জিতা আম্রপালীর  অধীর  প্রশ্ন, --"কোথায় আমার  পুষ্প কুমার?"

পুষ্প কুমারের  ঘোড়া  আগে আগে  পথ দেখাইয়া চলিতে লাগিল-পশ্চাতে দুই  বাটির  লোকজন এবং কতিপয়  বন্ধু, বান্ধব।

ঘোড়া  বৈশালীর  নগর পরিখার নিকটবর্তী হইলে  দেখা গেল  পরিখা প্রাচীরের পার্শ্বে পতিত  পুষ্প কুমারের  প্রাণহীন  দেহ। কে বা কাহারা ছুরিকাঘাতে  হত্যা করিয়াছে তাহাকে। সকলে যখন আম্রপালীর  নিকটে  গিয়া এই  দুঃসংবাদ  দিল,আম্রপালীর  চক্ষের সম্মুখে যেন অমারাত্রির  অন্ধকার  নামিয়া আসিল। বধূবেশ  পরিবর্তন  করিয়া সে যখন শ্বেতবস্ত্র  পরিধান  করিবার  সিদ্ধান্ত  গ্রহণ  করিল,তখন বৈশালীর  রাজা মনুদেব  আম্রপালীকে রাজবাটীতে  লইয়া যাইবার  জন্য  সুসজ্জিত  দোলা পাঠাইলেন। রাজাদেশ  অমান্য  করিবার  মত সাহস  কাহারও  ছিল না। এতএব---

অশ্বথ্ব  চুপ করিল। একটি চাপা দীর্ঘ নিঃশ্বাস  যেন সেই  সময় অতিক্রম  করিয়া বাভ্রবিকে স্পর্শ  করিল। বাভ্রবি শিহরিয়া উঠিল। বসন্ত  বাতাসে  আম্রপালীর  রক্ত দুল দুনিয়া উঠিল। আম্রপালী দোলায় উঠিল। আম্রপালী,বধূ হইতে-"নগরবধূ " হইল।

 

ক্রমশ …………

১৩তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার

 

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন । 

লেখিকার পরিচিতি –        

জন্ম-কলকাতায়  আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা 

প্রকাশিত গ্রন্থ

১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)

ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত