ধারাবাহিক উপন্যাস – প্রতি বৃহস্পতিবার ।
পর্ব-- ১১
Leaves
stuck out like arms out of the stem,gestures
from the sawdust root,broke pieces of plaster fallen out of the black
twigs,a dead fly in its ear,
Unholy
battered old thing you were,my sunflower
O my soul,
I love
you then!
"কবে
থেকে এই নারীদেহ নিয়ে
ব্যবসা--তুমি জানতে চাইছিলে না?"
অম্বাপালির ঠোঁটের কোণে মধুর এবং বিষণ্ণ হাসি।ডালিমের দানার ন্যায় ঠোঁট--বাভ্রবি তাকিয়ে রইল।
--"বেদের সময় থেকে এই নারী দেহ নিয়ে ব্যবসা।"
বাভ্রবি চমকে উঠল।
--"যে সময়
দর্শন,নীতি,কবিতা,এতো
গরিমার তুঙ্গে উঠেছিল--যে চতুর্বেদ হিন্দু দর্শনের চূড়ান্ত
জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত--সেই
সময় থেকে"?
অম্বাপালি কাঁচের পাত্রে সুধা ঢেলে-
--"চলবে?"
-"না।আমি
খাই না--"
অম্বাপালি মৃদু চুমুক
দিয়ে পেছনের সুদৃশ্য তাকিয়ায় হেলান দিয়ে --"কি বলছিলে? জ্ঞান, গরিমা?তাতে কি?বেদের রচয়িতা তো পুরুষ ই বটে?--তাদের ওতো
মনোরঞ্জন দরকার?আর
নারীদেহের মত এতো সুন্দর মনোরঞ্জন আর কিসে হয়,?হ্যাঁ,গণিকা
শব্দ টির উদ্ভব তখন থেকেই।নাচ গান,পারদর্শিনী
ওদের কে -"নর্ত্স " ও বলা হতো।"
--"আপনি তো
চিরস্মরনীয়া--বুদ্ধ জাতকে আপনার ভূয়সী প্রশংসা--""
অম্বাপালী এবার খিলখিল করে হেসে উঠলেন।বাভ্রবির মনে হলো একসঙ্গে হাজার টা বেলোয়ারি
ঝাড়বাতি বুঝি ভেঙ্গে পড়ল--অথবা
নায়গ্রাফলস এর বিশাল জলরাশি যেন ঝমঝমিয়ে উঠল।
অম্বাপালি র হাসি যেন আর
থামতেই চায় না--।তারপর হঠাৎই
থেমে গেল হাসি।হরিণী নয়ন টলটল করে
উঠল বিষাদ সিন্ধু জলে।
--"চলো,শোনাই
তোমায় আমার কাহিনী।চৌষট্টি কলার
পারদর্শিনী অম্বাপালি,ওরফে
আম্রপালি, ওরফে অম্বাপালিকা, ওরফে অম্রার কাহিনী।শোনাই এসো--একটু বসে এই আম্র কুঞ্জে---"
আমগাছ গল্প
শোনায়--সেই সব ইতিবৃত্ত--একটি গাছের মত কে আর কাহিনী শোনাতে পারে---
বৈশালী--লিচ্ছবি রাজাদের রাজধানী।লিচ্ছবি-আট টি
ক্যত্তিয়(বিশুদ্ধ সংস্কৃতে ক্ষত্রিয়)
ক্ল্যানের একটি--যারা সংঘবদ্ধ হয়ে বিজয়ন গণরাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।সেই সময় এই গণরাজ্যের পরিকল্পনা সত্যিই অভিনব।রাজা ,রাজা,রাজপরিবার
এবং মন্ত্রী পরিষদের ভোটের
মাধ্যমেই নির্বাচিত হতেন।সেই
সময়--অর্থাৎ-৬০০--৫০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে
এই বৈশালী গণরাজ্যে আম্রপালি নামক
একটি কন্যার জন্ম হলো--যার বাবার নাম মহানাম আর মা এক অনামী অঙ্গনা।
বাঁশি যেন তার সমস্ত সুর দিয়ে সৃষ্টি করেছে তোমাকে
মুঠো মুঠো বিস্ময়,আর সাত
সমুদ্রের জলরাশি
খেলা করে তোমার শান্ত
সরোবরে
এরকম একটি মেয়ে র নামকরণ
হলো--দুটি সংস্কৃত শব্দের সন্ধি করে--আম্রপালি--আম্র অর্থাৎ আম ,আর
পালী--মানে পল্লব।আম্র পল্লব এর মতই পল্লবিত
হয়ে উঠতে লাগল এই কন্যা।কিংবদন্তী
র নায়িকা--রাজবাড়ির রাজ উদ্যানের
চিরহরিৎ আমগাছের তলায় জন্ম--তাই স্বতঃস্ফূর্ত এই
নামকরণ।অসাধারণ রূপবতী এই কন্যা শুধু
রূপ নয় বিভিন্ন গুণের আধার।বাদন,গায়ন, চিন্তন, মনন,এবং কাব্য
, শাস্ত্র সবকিছুতেই অসামান্যা হয়ে
উঠল আম্রপালি।গণরাজ্য বৈশালীর নিয়ম ছিল রাজ্যের সর্বাপেক্ষা
সুন্দরী ,প্রতিভাময়ী নারী কখনোই এক ই পুরুষের
বিবাহিতা স্ত্রী না হয়ে
রাজ্যের প্রত্যেকের হবে।
বাভ্রবি শিউরে উঠল
--"ইস!এটা কি
রকম নিয়ম?"
আম্রপালি র বিম্বাধরে তেমনই মোহিনী হাসি।
--"কেন?গণরাজ্যে
সবাই সমান।ভাল বস্তু সবাই মিলেই
তো ভোগ করবে?"
---"what nonsense!একজন নারী
কি শুধুই
বস্তু?commodity? পণ্য?" ফুঁসে উঠল
বাভ্রবি।
শান্ত সুরে আম্রপালির জবাব
--"পণ্য ই তো?কেন?তোমাদের একবিংশ
শতাব্দীতে নারী বুঝি পণ্য নয়?"
বাভ্রবির চোখে সরোজ--এবং বিজ্ঞাপনের মডেল এবং ব্রথেল--!দাঁতের মাজন থেকে ডিটারজেন্ট--পরিধেয় পোশাক
থেকে সাবান,রূপটান--সমস্ত নারী ফিগার
গুলি হি হি করে হেসে উঠল।
--"পণ্য।পণ্য।"ছায়ামূর্তিরা ফিসফিস
করে বলে উঠল।
আম্রপালির অলোকসামান্য রূপ এবং প্রতিভার
যুগলবন্দী বৈশালীর আমাত্য থেকে
রাজার মনে আম্রপালিকে কাছে পাবার
আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠল।বৈশালীর রাজা মডুদের একদিন এক অনুষ্ঠানে আম্রপালির নৃত্য
দেখে তাকে পাবার জন্য উন্মত্ত
হয়ে উঠলেন।
আম্রপালি তখন পুষ্প কুমারের
প্রেমে আকণ্ঠ নিমজ্জিত।
--"পুষ্প
কুমার কে?"
--"আমরা দুজন
ভাসিয়া এসেছি যুগল প্রেমের স্রোতে,
অনাদি কালের হৃদয় উৎস হতে-"আম্রপালি রবিঠাকুরের কবিতা বলে চুপ
করে গেল।
"জান তো,তোমাদের বঙ্কিম বাবু ঠিক বলেছিলেন -'বাল্য
প্রণয়ে অভিশাপ আছে।'
"পুষ্প
কুমার? তোমার বাল্য প্রণয়ী?"
উদাস চোখে বীণার
তারে ঝংকার তুলে আম্রপালি বলল--"শোনো তাহলে আমার আর পুষ্প কুমারের কাহিনী।এ গল্পে,নায়ক আছে,নায়িকা
আছে আর আছে এক খল নায়ক--যার নাম মনুদেব।"
--"বৈশালী
গণরাজ্যের রাজা মনুদেব "
বাভ্রবির প্রশ্নের
জবাব দিল না আম্রপালি।শুধু
টলটল করে উঠল ওর হরিণী চোখ আর রিনরিন করে উঠল ওর সুধা
কণ্ঠ--বাতায়নে উড়ে গেল দমকা হাওয়া আর
ওর পোষা ময়ূরের পায়ে ঝমঝম বেজে উঠল মল---
ক্রমশ …………
১২তম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি
–
জন্ম-কলকাতায় । আসামের
বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা ।
প্রকাশিত গ্রন্থ
১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী
দহন--(কবিতা গ্রন্থ)
ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার
সঙ্গে যুক্ত ।