বাঁকুড়া জেলার জয়পুর অরণ্য পর্যটকদের বেশিরভাগের কাছেই পরিচিত আরণ্যক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে। কিন্তু এর বাইরেও এই অরণ্যে আরও এমন কিছু দ্রষ্টব্য আছে তার খবর আমরা অনেকেই রাখি না।
এই যেমন গোকুলচাঁদ মন্দির। ল্যাটেরাইট পাথর দিয়ে তৈরি
৪৫ ফুট দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ বিশিষ্ট মন্দিরটির উচ্চতাও প্রায় ৪৫ ফুট। মন্দিরটির
প্রতিষ্ঠাতা কে ,
সেই সম্পর্কে দুটি ভিন্ন মত শোনা যায়। একটি মতে ১৬৪৩ খ্রিষ্টাব্দে
বা ৯৪৯ মল্লাব্দ নাগাদ সময়ে প্রথম রঘুনাথ সিংহের রাজত্বকালে এই মন্দির নির্মাণ
করা হয়। আবার অন্য একটি মতে, রাজা বীর হাম্বিরের পূর্ববর্তী
মল্লরাজ চন্দ্রমল্ল দ্বারা এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
মন্দিরের
অঙ্গনের এক প্রান্তে ভোগগৃহ বা অতিথি নিবাসটির ছাদ বর্তমানে অধিকাংশটাই ভেঙে
পড়েছে। কিন্তু পুরু পাথরের দেওয়াল আজও দৃশ্যমান। এটি দৈর্ঘ্যে ৫৯ ফুট এবং
প্রস্থে ৪১ ফুট। ৩টি ৭ ফুট ৭ ইঞ্চি ফুলকাটা খিলান রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের
প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রাহলয় অধিকার , তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ দ্বারা প্রকাশিত
" বাঁকুড়া জেলার পুরাকীর্তি " বইটিতে এই গোকুলচাঁদ মন্দির সম্পর্কে
এইসব তথ্য বিশদে বর্ণনা করা হয়েছে।
এই মন্দির থেকে
সামান্য দূরত্বে সমুদ্র বাঁধ। কাজেই শুধু অরণ্যের শিহরণ নয় , এই অপরূপ শিল্প
শৈলীতে নির্মিত সুপ্রাচীন মন্দিরটির ঐতিহাসিক গুরুত্বের আকর্ষণেও একবার ঘুরে আসা
যেতেই পারে এই জয়পুর। ইচ্ছে হলে আর হাতে সময় থাকলে এখান থেকেই ঘুরে নেওয়া যায়
মাত্র ১০ -- ১২ কিমি দূরের মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর থেকেও ।
একসময় এই জঙ্গলের কুখ্যাতি ছিল ডাকাতের অঞ্চল বলে । কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র এই জয়পুর ফরেস্ট। দুপাশে শাল , সেগুন, শিমুলের গহন অরণ্য , সেই অরণ্যের বুক চিরে চলে গেছে কালো পিচের ব্যস্ত রাজপথ। মাঝেমাঝেই মেলে সরকারের বন দফতরের দেওয়া " এলিফ্যান্ট করিডোর " বা হাতিদের চলাচল করার পথ লেখা বোর্ড। জঙ্গলে প্রবেশ করলে মনে হয় যেন হারিয়ে গেছি আধুনিক সভ্য সমাজ থেকে অনেক অনেক দূরে।
এই অরণ্যে রয়েছে হাতি ছাড়াও অজস্র বিভিন্ন প্রজাতির
পাখি, হরিণ , শজারু, আর আছে প্রচুর
ময়ূর ।
যাতায়াত -- কলকাতা থেকে বিষ্ণুপুর , বাঁকুড়াগামী
যে কোনও ট্রেন ধরে এসে নামতে হবে বিষ্ণুপুর ষ্টেশনে। সেখান থেকে বাস বা গাড়িতে
২০ -- ২৫ মিনিটের পথ জয়পুর। আর কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাঁকুড়া , মুকুটমণিপুরগামী সব বাসই যাচ্ছে জয়পুরের ওপর দিয়ে । কলকাতা থেকে দূরত্ব
প্রায় ১২৭ কিমি।
থাকা খাওয়া -- যারা হাই ওয়ের পাশে থাকতে চান তাঁরা থাকতে পারেন বনলতা রিসর্টে ফোন - ৯৭৩২১১১৭০৬ ) , আর যারা অরণ্যের শিহরণ, অরণ্যের নির্জনতা উপভোগ করতে চান তাঁরা থাকতে পারেনা তুলনামূলক ভাবে গোকুলচাঁদ মন্দির ও সমুদ্র বাঁধের নিকটবর্তী রিসর্ট আরণ্যক রিসর্টে । এখানে শিশুদের খেলার জায়গা , খাওয়ায় ব্যবস্থা ও ট্রাভেল ডেস্ক আছে। ফোন -- ৮২৪০০৮৫২৪৩ ।
লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
ছবি - সংশ্লিস্ট সংস্থার সৌজন্যে