পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের অন্যতম প্রধান
শক্তিপীঠ এই রাজরাপ্পা ছিন্নমস্তা মন্দির।
দামোদর আর ভোরা বা ভৈরবী নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত এই
দেবী ছিন্নমস্তা দশমহাবিদ্যার অন্যতম।
রাজরাপ্পা নামটির পেছনেও এক লোককথা প্রচলিত আছে ।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী , " রাজা " নামের এক জনপ্রিয়
স্থানীয় রাজার স্ত্রীর নাম ছিল " রুম্পা" । এই রাজা এবং রুম্পার নাম
থেকেই নাম হয়েছে " রাজরাপ্পা" ।
এই মন্দিরের আরাধ্যা দেবী হলেন মা ছিন্নমস্তা। তাঁর দুই হাতের এক হাতে
উদ্ধত খড়্গ এবং অপর হাতে তিনি ধারণ করে রয়েছে তাঁর ছিন্ন মস্তক। তাঁর মুন্ড
বিহীন গলদেশ থেকে তিনটি ধারায় ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। লোল জিহ্বায় তিনি সেই
শোনিত ধারা পান করে চলেছেন। তাঁর কন্ঠে নরমুন্ড মালা। কাম ও রতির ওপরে দেবী
দন্ডায়মান। তবে তাঁর এই ভয়াল রূপে ভয়ের চেয়েও বেশি করে ধরা পড়ে তাঁর
মাতৃরূপের ।
মায়ের এই রূপের পেছনেও রয়েছে এক চমকপ্রদ লোককাহিনী।
কথিত আছে,একদা ডাকিনী ও যোগিনীর সঙ্গে এক সরোবরে স্নান করছিলেন দেবী । সেই সময়
ডাকিনী,যোগিনীর প্রচন্ড ক্ষুধা পেলে তাঁদের ক্ষুধাতুর অবস্থা
দেখে এবং অন্য কোথাও কোনও খাবারের সন্ধান করতে না পেরে বিচলিত হয়ে নিজেই নিজের
মুন্ডচ্ছেদ করেন। তাঁর মুন্ডহীন গলদেশ থেকে যে রক্তের তিনটি ধারা নির্গত হয় তা
এসে পড়ে ডাকিনী, যোগিনী এবং স্বয়ং দেবীর মুখে । এভাবেই
তিনি ডাকিনী, যোগিনীর ক্ষুধা নিবারণ করেন। এর থেকেই দেবীর
মমতাময়ী মাতৃরূপের পরিচয় দেন দেবী।
একদিকে দামোদর আর অন্যদিকে ভৈরবী নদীর সঙ্গমস্থলে এক
অনুচ্চ টিলার উপর অবস্থিত এই দেবী ছিন্নমস্তা মন্দির।
এখানকার এই ছিন্নমস্তা মন্দিরের সঠিক ইতিহাস জানা যায়
না। তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই অভিমত এই মন্দিরটি প্রায় ৬০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন।
এখানে এই মন্দিরটি ছাড়াও রয়েছে মহাদেব ও দক্ষিনাকালীর মন্দির । এর কাছেই
অষ্টমাতৃকা মন্দির । মায়ের ভৈরবরূপী শিবলিঙ্গটিও প্রকান্ড এবং সুউচ্চ।
ইচ্ছে হলে নৌবিহার করাও যায় দামোদর নদের বুকে। আশেপাশের
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অসাধারণ। আবার ফেরার পথে দেখে নেওয়া যায় রামগড়ের সুপ্রাচীন
শিবমন্দিরটিও ।বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই শিবমন্দিরটির বহুলাংশই বর্তমানে বিনষ্ট হয়ে
গেলেও যতটুকু অবশিষ্ট আছে সেটুকুই সেই অতীত দিনের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে
আছে।
যাতায়াত -- ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচি থেকে প্রায় ৬৮
কিমি দূরে এই স্থান। রাঁচি থেকে বাসে আসতে হবে রামগড়। রামগড় থেকে অটো বা গাড়িতে
আসতে হবে রাজরাপ্পা। আবার রাঁচি থেকে গাড়ি নিয়ে এসে আবার রাঁচি ফিরে গিয়ে
রাত্রিবাস করা যায় রাঁচিতেই। রাজরাপ্পায় থাকার ব্যবস্থা অত্যন্ত অপ্রতুল। কাজেই
রাঁচি থেকে ঘুরে নেওয়াই ভাল । রাঁচিতে থাকা খাওয়া,গাড়ি অথবা
প্যাকেজ ট্যুরে রাজরাপ্পা ঘুরে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য যোগাযোগ
করতে পারেন ০৯৮৩১৩৯০৫২৪ অথবা ০৭৭৩৯০৮৯০৫২ নম্বরে।