Advt

Advt

paramatmiya-story-galpo-4th-and-last-part-by-dr.sunandan-shikdar-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-পরমাত্মীয়-গল্প-ডাঃসুনন্দন-শিকদার

 ধারাবাহিক বড় গল্প

paramatmiya-story-galpo-4th-and-last-part-by-dr.sunandan-shikdar-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-পরমাত্মীয়-গল্প-ডাঃসুনন্দন-শিকদার
 ৪র্থ  এবং শেষ পর্ব

( ৯)

যেদিন ঘটনাটি ঘটল, তার মাত্র একদিনের মধ্যে এল খবরটা

বাণীপ্রিয়র প্রমোশন হয়েছে । বেড়েছে মাইনে ।  সেই খবরটি ই মেলে আসার পরে , সে পুরো ব্যাপারটি অনুধাবন করার আগেই সোশাল মিডিয়াতে শোরগোল । কনগ্রাটস আর ওয়েল ডানে ছড়াছড়ি । অনেকদিন থেকে যে প্রোমোশানের জন্যে সে মুখিয়ে ছিল তা হয়ে গেল কোন যাদুতে ? যেন আশ্চর্য একটি কাকতালীয় ব্যাপার হচ্ছে । তার বিষ্ময় আরো বেশী হল যেখন সে দেখল প্রায় দুবছর কতৃপক্ষ কোন সাড়াশব্দ করেননি । অথচ কর্মবিমুখতার ভয়ে বিবাহের পর পদোন্নতি সচারচর কারুর হয় না প্রমোশনের কথা বর্ণালীকে বলতেই , বর্ণালী আশ্চর্যভাবে বলে উঠল ,

-          জানতাম ।

-          জানতে ?

-          হ্যাঁআমার কপালে চোখ উঠলেই  নিকট কারুর ভাগ্য খুলে যায়কপালে চোখ উঠলেই

-          কি সব বলছো তুমি !

-          না না এসব হয় , হতে পারে । খিঁচুনির সঙ্গে সবসময়ই যে চোখটা খুলে যাবে তার মানে নেই , কিন্তু উঠলে তবেই -

-          তাহলে তুমি আগেও দেখছ –

-          প্লীজ ওসব জিজ্ঞেস কোরো না ।

-          তোমার পাস্ট জিজ্ঞেস করছি না । কিন্তু এ তো স্ট্রেঞ্জ একটা ব্যাপার ।

ব্যাপারটা যথেষ্ট আশ্চর্য ।  উদ্বেগজনকও বটে  তবু  ডাক্তারদের সাহস করে বাণীব্রত বলতে পারলে না  তৃতীয় নেত্রের কথা । কোথাও যেন  আটকা পড়ে  সে । প্রত্যেকবার  ভেবে নিয়ে , কি বলবে ভাল করে  গুছিয়ে নিয়েও সে বলতে পারে না । বর্ণালী স্পষ্ট  বলে দেয় , যে তার  এই রোগের চিকিৎসা আগেও চলেছিল , কি ওষুধ খেতে হবে সে জানে ।  বিয়ের এক সপ্তাহ ওষুধ খেতে সে ভুলে গিয়েছিল । তাই  এই বিড়ম্বনা ।  এ তার জীবনের অঙ্গ । এসব তার অভ্যাস হয়ে গিয়েছেসেই জন্যে  ডাক্তারবাবুদের কাছে নিয়ে যেতে প্রতিবার বাণীপ্রিয়কে প্রায় যুদ্ধ করতে হয়েছে ।  আজ অনেক কষ্টে সে বুঝিয়ে সুজিয়ে  বর্ণালীকে তোয়াজ করে স্নায়ু-চিকিৎসকের কাছে নিয়ে এসেছে । বাইশ নম্বরে তাদের ডাক পড়ল ।

সব শুনে অপরেশ ডাক্তার বললেন ,

-          এটা খুবই রেয়ার । কেবল ই ই জিতে ধরা পড়বে না । ভিডিও ই ই জি দরকার । 

-          সেরে যাবে তো  ডাক্তারবাবু ?

-          তা বলি কী করে ?  আগে দেখে বুঝে নি ।  তবে ওষুধ বন্ধ করা যাবে না   ওষুধ বন্ধ করলে  এখানে এসে দেখিয়ে লাভ নেই ।

ডাক্তারবাবু   শক্তভাবে বললেন কথাগুলি ।

বাণীপ্রিয়  তার মেজাজটিকে রাশে রেখে , চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ায় । দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললে ,

-          ওষুধ  খেলে সেরে যাবে ?

-          সারবে না ।

-          আর প্রেগন্যান্সি ?

-          পারবে না ।  ওষুধের সাইড এফেক্ট আছে । প্রেগন্যান্সির সময় দিলে টেরাটোজেনিক হতে পারে । তবে লিভেরা দিয়ে দেখা যেতে পারে ঝুঁকি আছে , প্রতিকূলতা আছে ।

চোয়াল  ঝুলে পড়েছে , মাটির দিকে তাকিয়ে বাণীপ্রিয়    বর্ণালী নখ খুঁটছে ।  মাঝে মাঝে  চুলটা ঠিক করে নিচ্ছে । এমন একটা পরিণতি হতে পারে সে স্বপ্নেও ভাবেনি । সে দগ্ধ হচ্ছে বাণীব্রতর জন্যে ।  সে বেচারার দোষ নেই কিন্তু তার হৃদয়ের আশা- আকাঙ্খায় মুহুর্তের মধ্যে ছত্রাক লেগে যায়   

( ১০)

বেশ কিছুদিন ছুটি পেয়েছিলে  বাণীপ্রিয়    মাসখানেকের বেশী । মার্চেন্ট নেভিতে এমন লম্বা ছুটি বিরল নয় ।  তবু এখনই সাহস পেল না হনিমুনে যাবার   যদি কোন বিভ্রাট হয় ভাবল পরে আন্দামান , ব্যাঙ্কক বা পাটায়া  যাবে ।  কিন্তু আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের নিমন্ত্রণরক্ষা কিছুমাত্র কম হচ্ছে না । বাণীপ্রিয়  আর বর্ণালীর কাকা,কাকিমা,মামা,মামীমা সব মিলিয়ে কম লোক  তো নয় । যেখানেই যাক তবু ভয় ভয়ে থাকে ।  কোন আত্মীয়ের বাড়ি যাবার সময় গাড়িতে উঠে জিজ্ঞেস করে নেয় ,

-          আজ ওষুধটা খেয়েছিলে তো ?

-          ও আমার ভুল হয় না ।

অবশেষে একদিন ছুটি ফুরিয়ে এল । কালই ফিরবে বাণীপ্রিয়  অফুরন্ত সাগর সাম্রাজ্যের আহ্বানে।  আজকে ওরা একসঙ্গে বাজার করতে বেরিয়েছে । গেঞ্জি , সাবান , টুথপেস্ট  আর কিছু দৈনন্দিন সামগ্রী কেনার পর  বাণীপ্রিয়  বললে ,

-          এখন সব অভ্যাস হয়ে গেছে । এত নিপুন ভাবে  ব্যাগ গোছানো হয়নি অনেকদিন ।

-          আমার ক্রেডিট কার্ডটা?

-          চল তোমার ওষুধের স্টক রেখে যাই ।

-          থাক্ আমিই কিনে নেব ।

-          না , না  আমার মনটা শান্ত হবে না

অবশেষে মোড়ের দোকানের থেকে কিনতেই হল বর্ণালীকে । দুমাসের ওষুধ গুনে নিল  বাণীপ্রিয়নিজের হাতে স্ত্রীর ওষুধ কেনার মধ্যে কোথাও সূ্ক্ষ্ম একটা মহানুভাবতার বোধ কাজ করে । ফিরে এসে সে অন্তর্জালে ওষুধের পর্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখে নেয় । স্নায়ু চিকিৎসকের  মাতৃত্বের সম্বন্ধে সাবধানবাণী তবে বহুলাংশে সত্যি !

নন্দিনী  অনেকক্ষণ চিন্তান্বিত মুখে বসে । নববধূর জন্যে উপহার অভিনন্দনের অনর্গল ধারার পাশাপাশি  , মাঝে মাঝে আসছে  প্রেসক্রিপশান আর ওষুধনিজের ভাগ্য ছাড়া কাকেই বা দোষ দেবেন । কিন্তু  ছেলে-বৌমা খুলে কিছু বলে না । বয়েই গেল বলতে পারতেন , কিন্তু বলতে পারলেন না । এসব যে তাঁকে প্রবলভাবে নাড়া দেয় । উঠে  জানলার ধারে গিয়ে দাঁড়ান । একটা অপরাধবোধ তাঁকে কুরে কুরে খায় । পাত্র-পাত্রীর শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপন দেখে তিনিই তো প্রথমে ফোনটা করেছিলেন । এই কথাটা ভোলেন কি করে ?

নীচের রাস্তায় রিক্সা যাচ্ছে ।  শিস দিচ্ছে ছেলেটি  । ওরা কত সুখি । অভাব আছে  , তবে তাঁর মত মনকষ্ট নেই । পাশের ঘরে আলো নিভিয়ে তাঁর নিজের জগতে অরুণ । কোন হেলদোল নেই। এমন নির্লিপ্ততাকে তাঁর দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন মনে হয় ।  মনে হয় মার্চেন্ট নেভিতে থেকে থেকে এমন হয়ে গিয়েছে মানুষটা ।  কেমন স্বয়ংসম্পূর্ণ দুনিয়ার প্রতি আশ্চর্য একটা নির্লিপ্ততা   ছেলেটা এমন হয়ে যাবে না তো ?

 

(১১)

ওই ট্যাক্সিতে  উঠছে  । সঙ্গে চাকা দেওয়া আমেরিকান টুরিস্টারের ব্যাগ । আবার কতদিন পরে আসবে ? আজ অরুণ তাড়াহুড়োতে ঘরে পরার ছেঁড়া হলুদ জামাটি পরে ছেলেকে ট্যাক্সিতে  উঠিয়ে দিতে বেরিয়েছেন ।  জানলায় বর্ণালী আর নন্দিনী । বর্ণালীর মনে হয়েছিল রাস্তা পর্যন্ত যায় , কিন্তু বলতে সাহস হয়নি । ট্যাক্সিতে উঠতে উঠতে জানলার দিকে তাকিয়ে  একবার সাহেবি কায়দায় বাও করে বাণীব্রত ।

কয়েকটি দিন চলে গিয়েছে । বাণীপ্রিয়র জাহাজ এখন আরবসাগরে । সি-গাল আর নোনা বাতাস। জাহাজটির নাম যিনি রেখেছিলেন তাঁর যে একটি রোমান্টিক সত্বা আছে তা নামটি শুনলেই বোঝা যায় – রেনবো অর্থাৎ রামধনু ।

একদিন খবর আসে যে “ এম ভি রেনবো ” ইন্দোনেশিয়ায় যাচ্ছে ।

বাণীপ্রিয় মাঝে মাঝে ফোন করে । সেদিন খুব ঝড় হচ্ছে এতটাই ঝড় যে বর্ণালী মোবাইলেও শুনতে পাচ্ছে ঝড়ের দাপট । সামুদ্রিক ঝড়গুলি সত্যিই এমন হয় ।  একটানা চলে , হাঁসফাঁস করে সমুদ্রটা এপাশ ওপাশ করতে থাকে । খেলনার মত জাহাজটিকে নিয়ে লোফালুফি করে ঢেউগুলি ।

 বাণীপ্রিয়ের কথাগুলি পরিস্কার শোনা যাচ্ছে না । মনে হল সে ফের জিজ্ঞেস করছে , ওষুধ কিনেছ? আর কতদিনের ওষুধ আছে গুনে দেখেছ ?

বর্ণালী একা বসে বসে ভাবে । বাণীপ্রিয়কে যদি দেখতে পাওয়া যেত । মানসচক্ষে তো দেবদেবীরা অনেক কিছুই দেখতে পান । মানুষ পায় না । তার তৃতীয়নেত্রও কোন কাজে লাগল না । জানলার ধারে বসে সময় কাটে । সময় কাটে দুর্ভাবনায় ।

সন্ধ্যা থেকে মোবাইলে আর পাওয়া যাচ্ছে না বাণীব্রতকে । কানেকশান কেটে যাচ্ছে । অর্ন্তজালও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে । ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে । জাহাজ যদি হারিয়ে গিয়ে থাকে । কোনকালে পড়েছিল বার্মুডা আইল্যান্ডে একের পর এক জাহাজ হারিয়ে যায় । তাদের নাকি খুঁজে পাওয়া যায় না ।  সেরকম কিছু নয়তো ? টিভিতে ক্রমাগত দিয়ে যাচ্ছে ভারতমহাসাগরে তীব্রঘুর্ণীঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে ।  দুটোভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে । একটা বাহু সুমাত্রার দিকে এগোচ্ছে । আরেকটা বাহু আন্দামানের দিকে । বাণীপ্রিয়ের গলার আওয়াজ কোন কাজেই আসবে না – সমুদ্রকে চোখ রাঙিয়ে বললেও সে শুনবে না । অনিষ্ট হবার সম্ভাবনার কথা মাথায় আসতেই তার মনে হয় ইস্ সে যদি এমন একটা বিপজ্জনক চাকরি নিতে বারণ করত ।  এখন আর কিছু করার নেই ।

একদিন হয়ে গিয়েছে । অবস্হার কোন পরিবর্তন হয়নি । টিভিতে কেবল ঝড়ের খবর  দিচ্ছে – জাহাজের বা জাহাজের সুরক্ষার  খবর কিছু দিচ্ছে না । বাণীব্রতর অফিসে খোঁজ করেও কোন সদুত্তর পাওয়া যায় না ।   কেবল অরুণ শান্তভাবে বলেন । এসব হয় । মার্চেন্ট নেভিতে একদুবার জীবনে এইসব অঘটন ঘটবেই ।  ও আবার ফিরে আসবে । আমার একবার হয়েছিল , তখন মাডাগাস্কারের   কাছ দিয়ে যাচ্ছিলামবলতে বলতে স্মৃতি রোমন্হনে চলে যান অরুণ । আরো একবার ঝড় পেয়েছিলাম ,  তখন ক্যারিবিয়ান দ্বিপপুঞ্জের কাছে । জাহাজডুবির আশঙ্কাও ছিল । শিউরে ওঠে বর্ণালী ।

এমন দুর্ভাগ্য !

একটা কথা তার অবশ্য মনে হয়েছে । এটি আইডিয়ামাত্র ।

শ্বাশুড়ির দিকে তাকাতে কষ্ট হয় । মা বাবাও জামাইয়ের খবর নিতে উদ্বিগ্ন গলায় ফোন করেন ।  এই পরিবারের মধ্যে সেই একমাত্র যে সৌভাগ্য নিয়ে আসতে পারে ।  তারই আছে সেই অলৌকিক ক্ষমতা ।

সে ওষুধের শিশিটা  নিয়ে ওপরের তাকে রেখে দেয় ।

তারপরই তার মনে হয় এটা শ্বাশুড়ির তীক্ষ্ণ নজরকে আরো আকর্ষণ করবে । ফের শিশিটা সে যথাস্হানে রেখে দেয় । বর্ণালী  ফের  টিভির সামনে এসে দাঁড়ায় । ইতঃস্তত রিমোট ঘুরিয়ে খুঁজতে  থাকে জাহাজ হারানোর খবর    কিন্তু কোথাও কোন খবর নেই ।  তাকে দেখে নন্দিনীও এসে বসেন । কিছুক্ষণ এদিক ওদিক চেয়ে বাতে বিপর্যস্ত হাঁটুতে হাত বোলাতে থাকেন ।  তারপর অসহায়ের মত বলেন ,

-          কোন খবর পেলে বৌমা ?

-          না , কোন খবর নেই ।

-          কিছু একটা ব্যাবস্হা কর ।

কি ব্যাবস্হা করা যায় ?  তারই একমাত্র ক্ষমতা আছে – পরমাত্মীয়ের জন্যে কিছু করার তার পক্ষেই সম্ভব । কিন্তু সে কথা তো মুখে বলা যায় না ।  কথাটি  অবশ্য ঘুরিয়ে বললে নন্দিনী ।

-          আমার যদি দিব্যচক্ষু খুলে যেত , তবে হয়ত দেখতে পেতাম ।

কথার ঠেসটা অনুভব করে উত্তর দেয়  বর্ণালী ,

-          দিব্যচক্ষু কি আর ইচ্ছে করলেই পাওয়া যায় মা ?

-          তুমিই জান ।  আমরা কি জানি ।

কথাটি যেন এক বিশেষ লক্ষ্যে বলা ।

  

( ১২ )

 

দুদিন কেটে গেছে । কোন খবরই যেন সেই  সাগরের সেই ঘুর্ণী , কোন খবরই যেন সেই নিশ্ছিদ্র বাধা কেটে আসতে পারছে না ।

বর্ণালী ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে । সে এখন আপন মনে পাায়চারি করছে ।  কেন যে ওষুধ বন্ধ করে দিয়েছে বর্ণালী সে নিজেও নিজেকে বোঝাতে পারে না ।  সে শিশিটার দিকে আর ফিরেই তাকায় না ।  মুখ গম্ভীর করে বসে থাকা বর্ণালীর দিকে চেয়ে থাকেন আবার কখনও বা  নন্দিনীকে বলেন ,

-          বৌমা  ওষুধ খেয়ে নাও –

কথাটার মধ্যে কোথাও একটা মেকিভাব  নাড়া দেয় বর্ণালীকে ।  সে দাঁড়িয়ে পড়ে , দরজার ওপারে  নন্দিনী , সে  বিরক্তমুখে সেদিকে চায় । বিরক্তিভরা মুখটি অবশ্য  নন্দিনীর চোখে পড়ে না । সেটি সন্ধ্যার ঘনীয়মান অন্ধকারে ঢাকা থাকে । 

সবাই  যেন একটি দুঃসহ বোঝা কাঁধে নিয়ে চার দেয়ালের মধ্যে নির্বাক ঘোরাফেরা করছে   

কলিং বেল বাজে । ছুটে খুলতে যায় নন্দিনী ।

-          কে ?

অরুণের গলা শুনে আগ্রহের আতিশায্যে নন্দিনী উদ্বিগ্ন গলায় বলেই ওঠে ,

-          কিছু খবর পেলে ?

-          এম ভি রেনবো জাহাজটা হারিয়ে গেছে – বিলিভ মি । ওকে এই প্রফেশানে উৎসাহ দিয়ে এমন একটা পরিণতি হবে ভাবতে পারিনি ।

নন্দিনী একদৃষ্টিতে চেয়ে আছেন । হঠাৎ আসে পাশের ঘর থেকে কাঁচের  শিশি  পড়ার  শব্দ ।

পাশের ঘরে ছুটে যাচ্ছেন নন্দিনী । ভেজানো দরজা খুলতেই  দেখা যাচ্ছে বর্ণালী ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে আর খিঁচুনি হচ্ছে বর্ণালীর নন্দিনী বিষয়টা  অনুধাবন করে নিজেকে শক্ত করে রেখেছেনপিছনে ততক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছেন অরুণ । তিনি এমন একটা দৃশ্য কখনো দেখেননি । দরজা আড়াল করে বিশাল বপু নিয়ে  দাঁড়িয়ে নন্দিনী ।  যেটুকু ফাঁক তাই দিয়ে অরুণ গলে যাবার চেষ্টা করতেই  নন্দিনী তাঁর হাত চেপে ধরলেন, যেন এগিয়ে না যেতে পারেন । নন্দিনী ঠান্ডা স্বরে বললেন ,

-          দেখতে পাচ্ছ না খিঁচুনি হচ্ছে , ক’পেগ খেয়েছো ?

-          মাই গড এ তো কনভালশান , ওয়াটার নিয়ে আসি । 

-          দাঁড়াও চোখটা উঠুক ।  

-          মানে ?

-          খিঁচুনির মধ্যে ওর ওই তৃতীয় নেত্রটা খুললে, বাণীপ্রিয় ঠিক ফিরে আসবে ।

-          যাঃ ।

-          জান না ? আগের বার খিঁচুনির পর পর প্রমোশন হয়েছিল ।  এটা সত্যি ঘটনা ।

-          খুলছে কৈ ?

-          কেন চোখটা উঠছে না ? কেন ? কেন ? ছেলে কি তবে ঘরে  ফিরবে না ?

অস্বাভাবিক গলায়  বলে ওঠেন নন্দিনী ,

-          যাও , যাও এক্ষুণি  পাল ডাক্তারকে ডেকে আনো ।

-          ঠিক বলেছ , কিন্তু ফোন করলেই তো হয় ।

-          নম্বর নেই । আগের মোবাইলটায় ছিল ।

-          কি বলব ?

-          আমার মাথা ।  বলবে কোন ওষুধ যদি থাকে ,   চোখটা যদি  ওঠাতে পারেন ।  

-          চেম্বারটা কোথায় যেন ?

-          আচ্ছা দাঁড়াও এই মত্ত অবস্হায় তুমি যেতে পারবে না । এখানে পাহারা দিয়ে দাঁড়াও , আমিই  যাচ্ছি ।

সমাপ্ত

লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

লেখক পরিচিতি –

জন্ম  ১৯৭৪  পেশায় চিকিৎসক এমডি , ডিএম  কার্ডিওলজিস্ট ) কবি , সমালোচক , রবীন্দ্র অনুরাগী  শনিবারের চিঠির সম্পাদক সজনীকান্ত দাসের পৌত্র 

ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে নবকল্লোল , শনিবারের চিঠি ( নবপর্যায় ) , সুদক্ষীণা , গল্পপত্র , কাথাসাহিত্য , শারদীয়া দক্ষীণীবার্তা , কবিতা  গল্প বারোমাস , কালপত্রী , ইছামতি বিদ্যধরী অন্ধপক্ষ প্রভৃতি পত্রিকায়  নানা লিটল ম্যাগাজিনে

গল্পগ্রন্থ : সৈকত শিল্পী , বনবিহঙ্গ  

উপন্যাস:  সমান্তরাল