ধারাবাহিক বড় গল্প
( ৯)
যেদিন ঘটনাটি ঘটল, তার মাত্র একদিনের মধ্যে এল খবরটা ।
বাণীপ্রিয়র প্রমোশন হয়েছে ।
বেড়েছে মাইনে । সেই খবরটি ই মেলে আসার পরে
, সে পুরো ব্যাপারটি অনুধাবন করার আগেই সোশাল মিডিয়াতে শোরগোল । কনগ্রাটস আর ওয়েল
ডানে ছড়াছড়ি । অনেকদিন থেকে যে প্রোমোশানের জন্যে সে মুখিয়ে ছিল তা হয়ে গেল কোন
যাদুতে ? যেন আশ্চর্য একটি কাকতালীয় ব্যাপার হচ্ছে । তার বিষ্ময় আরো বেশী হল যেখন
সে দেখল প্রায় দুবছর কতৃপক্ষ কোন সাড়াশব্দ করেননি । অথচ কর্মবিমুখতার ভয়ে বিবাহের পর
পদোন্নতি সচারচর কারুর হয় না ।
প্রমোশনের কথা বর্ণালীকে বলতেই , বর্ণালী আশ্চর্যভাবে
বলে উঠল ,
-
জানতাম ।
-
জানতে ?
-
হ্যাঁ । আমার কপালে চোখ উঠলেই নিকট কারুর ভাগ্য খুলে যায় । কপালে চোখ উঠলেই
-
কি সব বলছো তুমি !
-
না না এসব হয় , হতে পারে । খিঁচুনির
সঙ্গে সবসময়ই যে চোখটা খুলে যাবে তার মানে নেই , কিন্তু উঠলে তবেই -
-
তাহলে তুমি আগেও দেখছ –
-
প্লীজ ওসব জিজ্ঞেস কোরো না ।
-
তোমার পাস্ট জিজ্ঞেস করছি না ।
কিন্তু এ তো স্ট্রেঞ্জ একটা ব্যাপার ।
ব্যাপারটা যথেষ্ট আশ্চর্য
। উদ্বেগজনকও বটে । তবু ডাক্তারদের সাহস করে বাণীব্রত বলতে পারলে
না তৃতীয় নেত্রের কথা । কোথাও যেন আটকা পড়ে
সে । প্রত্যেকবার ভেবে নিয়ে , কি
বলবে ভাল করে গুছিয়ে নিয়েও সে বলতে পারে
না । বর্ণালী স্পষ্ট বলে দেয় , যে
তার এই রোগের চিকিৎসা আগেও চলেছিল , কি
ওষুধ খেতে হবে সে জানে । বিয়ের এক সপ্তাহ
ওষুধ খেতে সে ভুলে গিয়েছিল । তাই এই
বিড়ম্বনা । এ তার জীবনের অঙ্গ । এসব তার
অভ্যাস হয়ে গিয়েছে । সেই
জন্যে ডাক্তারবাবুদের কাছে নিয়ে যেতে
প্রতিবার বাণীপ্রিয়কে প্রায় যুদ্ধ করতে হয়েছে ।
আজ অনেক কষ্টে সে বুঝিয়ে সুজিয়ে
বর্ণালীকে তোয়াজ করে স্নায়ু-চিকিৎসকের কাছে নিয়ে এসেছে । বাইশ নম্বরে তাদের
ডাক পড়ল ।
সব শুনে অপরেশ ডাক্তার বললেন ,
-
এটা খুবই রেয়ার । কেবল ই ই জিতে
ধরা পড়বে না । ভিডিও ই ই জি দরকার ।
-
সেরে যাবে তো ডাক্তারবাবু ?
-
তা বলি কী করে ? আগে দেখে বুঝে নি । তবে ওষুধ বন্ধ করা যাবে না । ওষুধ
বন্ধ করলে এখানে এসে দেখিয়ে লাভ নেই ।
ডাক্তারবাবু শক্তভাবে বললেন কথাগুলি ।
বাণীপ্রিয় তার মেজাজটিকে রাশে রেখে , চেয়ার ঠেলে উঠে
দাঁড়ায় । দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললে ,
-
ওষুধ খেলে সেরে যাবে ?
-
সারবে না ।
-
আর প্রেগন্যান্সি ?
-
পারবে না । ওষুধের সাইড এফেক্ট আছে । প্রেগন্যান্সির সময়
দিলে টেরাটোজেনিক হতে পারে । তবে লিভেরা দিয়ে দেখা যেতে পারে । ঝুঁকি আছে , প্রতিকূলতা আছে ।
চোয়াল ঝুলে পড়েছে , মাটির দিকে তাকিয়ে বাণীপ্রিয় ।
বর্ণালী নখ খুঁটছে । মাঝে মাঝে চুলটা ঠিক করে নিচ্ছে । এমন একটা পরিণতি হতে
পারে সে স্বপ্নেও ভাবেনি । সে দগ্ধ হচ্ছে বাণীব্রতর জন্যে । সে বেচারার দোষ নেই কিন্তু তার হৃদয়ের আশা-
আকাঙ্খায় মুহুর্তের মধ্যে ছত্রাক লেগে যায়
।
( ১০)
বেশ কিছুদিন ছুটি পেয়েছিলে বাণীপ্রিয় । মাসখানেকের বেশী ।
মার্চেন্ট নেভিতে এমন লম্বা ছুটি বিরল নয় ।
তবু এখনই সাহস পেল না হনিমুনে যাবার । যদি কোন বিভ্রাট হয় । ভাবল পরে আন্দামান , ব্যাঙ্কক
বা পাটায়া যাবে । কিন্তু আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের
নিমন্ত্রণরক্ষা কিছুমাত্র কম হচ্ছে না । বাণীপ্রিয় আর বর্ণালীর কাকা,কাকিমা,মামা,মামীমা সব মিলিয়ে কম লোক তো নয় । যেখানেই যাক তবু ভয় ভয়ে থাকে । কোন আত্মীয়ের বাড়ি যাবার সময় গাড়িতে উঠে
জিজ্ঞেস করে নেয় ,
-
আজ ওষুধটা খেয়েছিলে তো ?
-
ও আমার ভুল হয় না ।
অবশেষে একদিন ছুটি ফুরিয়ে এল ।
কালই ফিরবে বাণীপ্রিয় অফুরন্ত সাগর সাম্রাজ্যের
আহ্বানে। আজকে ওরা একসঙ্গে বাজার করতে
বেরিয়েছে । গেঞ্জি , সাবান , টুথপেস্ট আর
কিছু দৈনন্দিন সামগ্রী কেনার পর বাণীপ্রিয়
বললে ,
-
এখন সব অভ্যাস হয়ে গেছে । এত
নিপুন ভাবে ব্যাগ গোছানো হয়নি অনেকদিন ।
-
আমার ক্রেডিট কার্ডটা?
-
চল তোমার ওষুধের স্টক রেখে যাই
।
-
থাক্ আমিই কিনে নেব ।
-
না , না আমার মনটা শান্ত হবে না ।
অবশেষে মোড়ের দোকানের থেকে
কিনতেই হল বর্ণালীকে । দুমাসের ওষুধ গুনে নিল
বাণীপ্রিয়। নিজের
হাতে স্ত্রীর ওষুধ কেনার মধ্যে কোথাও সূ্ক্ষ্ম একটা মহানুভাবতার বোধ কাজ করে ।
ফিরে এসে সে অন্তর্জালে ওষুধের পর্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখে নেয় । স্নায়ু
চিকিৎসকের মাতৃত্বের সম্বন্ধে সাবধানবাণী
তবে বহুলাংশে সত্যি !
নন্দিনী অনেকক্ষণ চিন্তান্বিত মুখে বসে । নববধূর জন্যে
উপহার অভিনন্দনের অনর্গল ধারার পাশাপাশি ,
মাঝে মাঝে আসছে প্রেসক্রিপশান আর ওষুধ । নিজের ভাগ্য ছাড়া কাকেই বা দোষ
দেবেন । কিন্তু ছেলে-বৌমা খুলে কিছু বলে
না । বয়েই গেল বলতে পারতেন , কিন্তু বলতে পারলেন না । এসব যে তাঁকে প্রবলভাবে নাড়া
দেয় । উঠে জানলার ধারে গিয়ে দাঁড়ান । একটা
অপরাধবোধ তাঁকে কুরে কুরে খায় । পাত্র-পাত্রীর শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপন দেখে তিনিই তো
প্রথমে ফোনটা করেছিলেন । এই কথাটা ভোলেন কি করে ?
নীচের রাস্তায় রিক্সা যাচ্ছে
। শিস দিচ্ছে ছেলেটি । ওরা কত সুখি । অভাব আছে , তবে তাঁর মত মনকষ্ট নেই । পাশের ঘরে আলো
নিভিয়ে তাঁর নিজের জগতে অরুণ । কোন হেলদোল নেই। এমন নির্লিপ্ততাকে তাঁর দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন
মনে হয় । মনে হয় মার্চেন্ট নেভিতে থেকে
থেকে এমন হয়ে গিয়েছে মানুষটা । কেমন
স্বয়ংসম্পূর্ণ দুনিয়ার প্রতি আশ্চর্য একটা নির্লিপ্ততা । ছেলেটা
এমন হয়ে যাবে না তো ?
(১১)
ওই ট্যাক্সিতে উঠছে ।
সঙ্গে চাকা দেওয়া আমেরিকান টুরিস্টারের ব্যাগ । আবার কতদিন পরে আসবে ? আজ অরুণ
তাড়াহুড়োতে ঘরে পরার ছেঁড়া হলুদ জামাটি পরে ছেলেকে ট্যাক্সিতে উঠিয়ে দিতে বেরিয়েছেন । জানলায় বর্ণালী আর নন্দিনী । বর্ণালীর মনে
হয়েছিল রাস্তা পর্যন্ত যায় , কিন্তু বলতে সাহস হয়নি । ট্যাক্সিতে উঠতে উঠতে জানলার
দিকে তাকিয়ে একবার সাহেবি কায়দায় বাও করে
বাণীব্রত ।
কয়েকটি দিন চলে গিয়েছে ।
বাণীপ্রিয়র জাহাজ এখন আরবসাগরে । সি-গাল আর নোনা বাতাস। জাহাজটির নাম যিনি
রেখেছিলেন তাঁর যে একটি রোমান্টিক সত্বা আছে তা নামটি শুনলেই বোঝা যায় – রেনবো
অর্থাৎ রামধনু ।
একদিন খবর আসে যে “ এম ভি রেনবো
” ইন্দোনেশিয়ায় যাচ্ছে ।
বাণীপ্রিয় মাঝে মাঝে ফোন করে ।
সেদিন খুব ঝড় হচ্ছে । এতটাই
ঝড় যে বর্ণালী মোবাইলেও শুনতে পাচ্ছে ঝড়ের দাপট । সামুদ্রিক ঝড়গুলি সত্যিই এমন হয়
। একটানা চলে , হাঁসফাঁস করে সমুদ্রটা
এপাশ ওপাশ করতে থাকে । খেলনার মত জাহাজটিকে নিয়ে লোফালুফি করে ঢেউগুলি ।
বাণীপ্রিয়ের কথাগুলি
পরিস্কার শোনা যাচ্ছে না । মনে হল সে ফের জিজ্ঞেস করছে , ওষুধ কিনেছ? আর কতদিনের
ওষুধ আছে গুনে দেখেছ ?
বর্ণালী একা বসে বসে ভাবে ।
বাণীপ্রিয়কে যদি দেখতে পাওয়া যেত । মানসচক্ষে তো দেবদেবীরা অনেক কিছুই দেখতে পান ।
মানুষ পায় না । তার তৃতীয়নেত্রও কোন কাজে লাগল না । জানলার ধারে বসে সময় কাটে ।
সময় কাটে দুর্ভাবনায় ।
সন্ধ্যা থেকে মোবাইলে আর পাওয়া
যাচ্ছে না বাণীব্রতকে । কানেকশান কেটে যাচ্ছে । অর্ন্তজালও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ।
ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে । জাহাজ যদি হারিয়ে গিয়ে থাকে । কোনকালে পড়েছিল বার্মুডা
আইল্যান্ডে একের পর এক জাহাজ হারিয়ে যায় । তাদের নাকি খুঁজে পাওয়া যায় না । সেরকম কিছু নয়তো ? টিভিতে ক্রমাগত দিয়ে যাচ্ছে
ভারতমহাসাগরে তীব্রঘুর্ণীঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে ।
দুটোভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে । একটা বাহু সুমাত্রার দিকে এগোচ্ছে । আরেকটা বাহু
আন্দামানের দিকে । বাণীপ্রিয়ের গলার আওয়াজ কোন কাজেই আসবে না – সমুদ্রকে চোখ
রাঙিয়ে বললেও সে শুনবে না । অনিষ্ট হবার সম্ভাবনার কথা মাথায় আসতেই তার মনে হয় ইস্
সে যদি এমন একটা বিপজ্জনক চাকরি নিতে বারণ করত ।
এখন আর কিছু করার নেই ।
একদিন হয়ে গিয়েছে । অবস্হার কোন
পরিবর্তন হয়নি । টিভিতে কেবল ঝড়ের খবর
দিচ্ছে – জাহাজের বা জাহাজের সুরক্ষার
খবর কিছু দিচ্ছে না । বাণীব্রতর অফিসে খোঁজ করেও কোন সদুত্তর পাওয়া যায় না
। কেবল অরুণ শান্তভাবে বলেন । এসব হয় ।
মার্চেন্ট নেভিতে একদুবার জীবনে এইসব অঘটন ঘটবেই । ও আবার ফিরে আসবে । আমার একবার হয়েছিল , তখন
মাডাগাস্কারের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলাম । বলতে বলতে স্মৃতি রোমন্হনে চলে
যান অরুণ । আরো একবার ঝড় পেয়েছিলাম , তখন
ক্যারিবিয়ান দ্বিপপুঞ্জের কাছে । জাহাজডুবির আশঙ্কাও ছিল । শিউরে ওঠে বর্ণালী ।
এমন দুর্ভাগ্য !
একটা কথা তার অবশ্য মনে হয়েছে ।
এটি আইডিয়ামাত্র ।
শ্বাশুড়ির দিকে তাকাতে কষ্ট হয়
। মা বাবাও জামাইয়ের খবর নিতে উদ্বিগ্ন গলায় ফোন করেন । এই পরিবারের মধ্যে সেই একমাত্র যে সৌভাগ্য নিয়ে
আসতে পারে । তারই আছে সেই অলৌকিক ক্ষমতা ।
সে ওষুধের শিশিটা নিয়ে ওপরের তাকে রেখে দেয় ।
তারপরই তার মনে হয় এটা
শ্বাশুড়ির তীক্ষ্ণ নজরকে আরো আকর্ষণ করবে । ফের শিশিটা সে যথাস্হানে রেখে দেয় ।
বর্ণালী ফের টিভির সামনে এসে দাঁড়ায় । ইতঃস্তত রিমোট ঘুরিয়ে
খুঁজতে থাকে জাহাজ হারানোর খবর ।
কিন্তু কোথাও কোন খবর নেই । তাকে
দেখে নন্দিনীও এসে বসেন । কিছুক্ষণ এদিক ওদিক চেয়ে বাতে বিপর্যস্ত হাঁটুতে হাত
বোলাতে থাকেন । তারপর অসহায়ের মত বলেন ,
-
কোন খবর পেলে বৌমা ?
-
না , কোন খবর নেই ।
-
কিছু একটা ব্যাবস্হা কর ।
কি ব্যাবস্হা করা যায় ? তারই একমাত্র ক্ষমতা আছে – পরমাত্মীয়ের জন্যে
কিছু করার তার পক্ষেই সম্ভব । কিন্তু সে কথা তো মুখে বলা যায় না । কথাটি অবশ্য
ঘুরিয়ে বললে নন্দিনী ।
-
আমার যদি দিব্যচক্ষু খুলে যেত ,
তবে হয়ত দেখতে পেতাম ।
কথার ঠেসটা অনুভব করে উত্তর
দেয় বর্ণালী ,
-
দিব্যচক্ষু কি আর ইচ্ছে করলেই
পাওয়া যায় মা ?
-
তুমিই জান । আমরা কি জানি ।
কথাটি যেন এক বিশেষ লক্ষ্যে বলা
।
( ১২ )
দুদিন কেটে গেছে । কোন খবরই যেন
সেই সাগরের সেই ঘুর্ণী , কোন খবরই যেন সেই
নিশ্ছিদ্র বাধা কেটে আসতে পারছে না ।
বর্ণালী ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে
দিয়েছে । সে এখন আপন মনে পাায়চারি করছে ।
কেন যে ওষুধ বন্ধ করে দিয়েছে বর্ণালী সে নিজেও নিজেকে বোঝাতে পারে না
। সে শিশিটার দিকে আর ফিরেই তাকায় না
। মুখ গম্ভীর করে বসে থাকা বর্ণালীর দিকে
চেয়ে থাকেন আবার কখনও বা
নন্দিনীকে
বলেন ,
-
বৌমা ওষুধ খেয়ে নাও –
কথাটার মধ্যে কোথাও একটা
মেকিভাব নাড়া দেয় বর্ণালীকে । সে দাঁড়িয়ে পড়ে , দরজার ওপারে নন্দিনী , সে
বিরক্তমুখে সেদিকে চায় । বিরক্তিভরা মুখটি অবশ্য নন্দিনীর চোখে পড়ে না । সেটি সন্ধ্যার ঘনীয়মান
অন্ধকারে ঢাকা থাকে ।
সবাই যেন একটি দুঃসহ বোঝা কাঁধে নিয়ে চার দেয়ালের
মধ্যে নির্বাক ঘোরাফেরা করছে ।
কলিং বেল বাজে । ছুটে খুলতে যায়
নন্দিনী ।
-
কে ?
অরুণের গলা শুনে আগ্রহের
আতিশায্যে নন্দিনী উদ্বিগ্ন গলায় বলেই ওঠে ,
-
কিছু খবর পেলে ?
-
এম ভি রেনবো জাহাজটা হারিয়ে
গেছে – বিলিভ মি । ওকে এই প্রফেশানে উৎসাহ দিয়ে এমন একটা পরিণতি হবে ভাবতে পারিনি
।
নন্দিনী একদৃষ্টিতে চেয়ে আছেন ।
হঠাৎ আসে পাশের ঘর থেকে কাঁচের শিশি পড়ার
শব্দ ।
পাশের ঘরে ছুটে যাচ্ছেন নন্দিনী
। ভেজানো দরজা খুলতেই দেখা যাচ্ছে বর্ণালী ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে আর খিঁচুনি হচ্ছে
বর্ণালীর । নন্দিনী
বিষয়টা অনুধাবন করে নিজেকে শক্ত করে
রেখেছেন। পিছনে
ততক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছেন অরুণ । তিনি এমন একটা দৃশ্য কখনো দেখেননি । দরজা আড়াল করে
বিশাল বপু নিয়ে দাঁড়িয়ে নন্দিনী । যেটুকু ফাঁক তাই দিয়ে অরুণ গলে যাবার চেষ্টা
করতেই নন্দিনী তাঁর হাত চেপে ধরলেন, যেন
এগিয়ে না যেতে পারেন । নন্দিনী ঠান্ডা স্বরে বললেন ,
-
দেখতে পাচ্ছ না খিঁচুনি হচ্ছে ,
ক’পেগ খেয়েছো ?
-
মাই গড এ তো কনভালশান , ওয়াটার
নিয়ে আসি ।
-
দাঁড়াও চোখটা উঠুক ।
-
মানে ?
-
খিঁচুনির মধ্যে ওর ওই তৃতীয়
নেত্রটা খুললে, বাণীপ্রিয় ঠিক ফিরে আসবে ।
-
যাঃ ।
-
জান না ? আগের বার খিঁচুনির পর পর
প্রমোশন হয়েছিল । এটা সত্যি ঘটনা ।
-
খুলছে কৈ ?
-
কেন চোখটা উঠছে না ? কেন ? কেন
? ছেলে কি তবে ঘরে ফিরবে না ?
অস্বাভাবিক গলায় বলে ওঠেন নন্দিনী ,
-
যাও , যাও এক্ষুণি পাল ডাক্তারকে ডেকে আনো ।
-
ঠিক বলেছ , কিন্তু ফোন করলেই তো
হয় ।
-
নম্বর নেই । আগের মোবাইলটায় ছিল
।
-
কি বলব ?
-
আমার মাথা । বলবে কোন ওষুধ যদি থাকে , চোখটা
যদি ওঠাতে পারেন ।
-
চেম্বারটা কোথায় যেন ?
- আচ্ছা দাঁড়াও এই মত্ত অবস্হায় তুমি যেতে পারবে না । এখানে পাহারা দিয়ে দাঁড়াও , আমিই যাচ্ছি ।
সমাপ্ত
লেখক পরিচিতি –
জন্ম ১৯৭৪ । পেশায় চিকিৎসক , এমডি , ডিএম ( কার্ডিওলজিস্ট ) ।কবি , সমালোচক , রবীন্দ্র অনুরাগী ও শনিবারের চিঠির সম্পাদক সজনীকান্ত দাসের পৌত্র ।
ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে নবকল্লোল , শনিবারের চিঠি ( নবপর্যায় ) , সুদক্ষীণা , গল্পপত্র , কাথাসাহিত্য , শারদীয়া দক্ষীণীবার্তা , কবিতা ও গল্প বারোমাস , কালপত্রী , ইছামতি বিদ্যধরী, অন্ধপক্ষ প্রভৃতি পত্রিকায় ও নানা লিটল ম্যাগাজিনে।
গল্পগ্রন্থ : সৈকত শিল্পী , বনবিহঙ্গ ।
উপন্যাস: সমান্তরাল ।