মানবদেহের অঙ্গবিচ্ছেদ (Anatomy) বিজ্ঞানের জনক
কালীপদ চক্রবর্ত্তী
Andreas Vesalius – কে আধুনিক মানব অ্যানাটমি গবেষণার প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে বিবেচনা করা হয। প্রথম জীবনে Andreas Vesaliusছিলেন একজন শিক্ষক। কিন্তু তিনি পরে সম্রাট পঞ্চম চার্লস – এর সভাসদে চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধের সময় বা সম্রাটের ভ্রমণের সময়েও সম্রাটের সাথে থাকতেন। প্রাচীন গ্রীক চিকিত্সক Galen - এর কাজ শত শত বছর ধরে চিকিত্সকরা মানব শারীরবৃত্তি (অ্যানাটমি) সম্পর্কে যা জানতেন তার ভিত্তি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু আন্দ্রেয়াস ভেসালিয়াস, ষোলো শতকের একজন ফ্লেমিশ চিকিত্সক (Flemish Physician)ছিলেন এবং মানবদেহের গঠনকে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে সবার সামনে তুলে ধরেছিলেন। তার আগে পর্যন্ত, মানবদেহ-র বিচ্ছেদ (অপারেশন) মানবদেহের শারীরবৃত্তির গবেষণায় ব্যবহার করা হতো না। গালেনের বেশিরভাগ গবেষণা প্রাণীদেহের বিচ্ছেদের উপর ভিত্তি করে ছিল। তার পূর্বসূরীদের থেকে ভিন্ন ছিলেন ভেসালিয়াস। তিনি মানবদেহ ছিন্নকরে (অপারেশন) করে সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তার গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন।
তাঁর আবিষ্কারগুলি লিপিবদ্ধ করে প্রকাশিত করা হয়েছিল
১৫৪৩ সালে “De Humani Corporis Fabrica” গ্রন্থে। তাঁর এই আবিষ্কার
চিকিৎসা বিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে এবং আধুনিক মানব জীবনে মানুষের
শারীরস্থানের উপর গবেষণার ভিত্তি স্থাপন করেছে। এ কারণেই ভেসালিয়াস-কে আধুনিক মানব শারীরস্থানের উপর গবেষণার প্রতিষ্ঠাতা
হিসাবে বিবেচিত হন।
সূত্র – দেশ বিদেশের বিজ্ঞান বিষয়ক পত্র-পত্রিকা
-------------------------------------------------------------------------------------------
রাজা
হাম্মুরাবিকে
'আইনের
রাজা'
কেন বলা হয়?
কালীপদ চক্রবর্তী
হাম্মুরাবি ছিলেন একজন প্রাচীন ব্যাবিলনীয় রাজা। তিনি সুমেরীয়দের দ্বারা বিকশিত কিউনিফর্ম (Cuneiform) লিপি ব্যবহার করে প্রথম লিখিত আইন তৈরি করেছিলেন। এই আইনগুলি হামুরাবির কোড নামে পরিচিত ছিল। ২৮২টি আইনের একটি সংগ্রহ একটি সোজা দাঁড়করানো পাথরের স্তম্ভে খোদাই করে রাখা হয়েছিল।
যদিও হাম্মুরাবি
তার রাজ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন, তবে আইনের তালিকা
সংকলনের জন্য এটিই তার একমাত্র কারণ ছিল না। যখন তিনি
ব্যাবিলনের নগর-রাজ্য শাসন করতে শুরু করেন, তখন তার
নিয়ন্ত্রণ ছিল মাত্র ৫০ বর্গমাইল অঞ্চলের। এর পর তিনি অন্যান্য শহর-রাজ্য জয় করেন এবং তার সাম্রাজ্য বৃদ্ধি পায়, তিনি তার
নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একত্রিত করার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছিলেন। হাম্মুরাবি গভীরভাবে বুঝতে পেরেছিলেন যে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, তিনি যে সমস্ত রাজ্য জয় করেছিলেন তার জন্য একটি
সর্বজনীন আইনের সংগ্রহগুচ্ছের প্রয়োজন। তাই তিনি বিদ্যমান
বিশেষজ্ঞদের আইন সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন রাজ্য থেকে স্থানীয় আইনগুলো সংগ্রহ করে আনতে পাঠিয়েছিলেন এবং পরে
সেগুলোর পর্যালোচনা করা হয়েছিল। সমস্ত আইনগুলোর
চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে সব আইনগুলোকে নিয়ে আলাপ, আলোচনা
করে কিছু আইন গ্রহণ করা হয় এবং কিছু অপ্রয়োজনীয় কিছু আইন বাদ দিয়ে ফাইনাল লিস্ট
বানানো হয়েছিল।
হাম্মুরাবির একটি বিশেষ গুণ ছিল। তার দরবারে, ধনী বা গরীব-কে
আলাদা আলাদা চোখে দেখা হতো না। কেউ আইন ভঙ্গ করলে এবং দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে
শাস্তি দেওয়ার প্রথা প্রচলিত ছিল।
যেহেতু তার নির্দিষ্ট আইনগুলি
স্পষ্টভাবে লেখা ছিল, তাই আশা করা হতো যে সবাই সেইসব আইন মেনে চলবে। তার আইনের
এই কোডটি ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিকরা ১৯০১ সালে আবিষ্কার করেন।
লেখক পরিচিতি –
কালীপদ চক্রবর্ত্তী দিল্লি থেকে প্রায় ১৮ বছর ‘মাতৃমন্দির সংবাদ’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন এবং ‘সৃষ্টি সাহিত্য আসর’ পরিচালনা করেছেন।
দিল্লি, কলকাতা এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখেন। কলকাতার আনন্দমেলা, আনন্দবাজার পত্রিকা, সাপ্তাহিক বর্তমান, দৈনিক বর্তমান, নবকল্লোল, শুকতারা, শিলাদিত্য, সুখবর, গৃহশোভা, কিশোর ভারতী, চিরসবুজ লেখা (শিশু কিশোর আকাদেমী, পশ্চিমবঙ্গ সরকার), সন্দেশ, প্রসাদ, ছোটদের প্রসাদ, কলেজস্ট্রীট, উল্টোরথ, তথ্যকেন্দ্র, জাগ্রত বিবেক (দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির থেকে প্রকাশিত) , স্টেটসম্যান , কিশোর বার্তা অন্যান্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রকাশিত বই-এর সংখ্যা ৬ টি এবং প্রকাশের পথে ২টি বই।
‘ভারত বাংলাদেশ সাহিত্য সংহতি সম্মান’, পূর্বোত্তর আকাদেমির পুরস্কার, ‘বরুণা অসি’-র গল্প প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ, আরত্রিক সম্মান, তুষকুটি পত্রিকা সম্মান, কাশীরাম দাস সম্মান, সতীনাথ ভাদুড়ী সম্মান লাভ করেন। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে 'আজীবন সম্মাননা' লাভ করেন। এ ছাড়া আরও কিছু পুরস্কার লাভ করেছেন।
বর্তমানে দিল্লি থেকে প্রকাশিত 'কলমের সাত রঙ' ও www.tatkhanik.com এর সম্পাদক এবং দিল্লিতে প্রতিমাসে একটি সাহিত্য সভা পরিচালনা করেন।