Advt

Advt

iter-panjare-premer-katha-galpo-story-1stpart-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইটের-পাঁজরে-প্রেমের-কথা

 ধারাবাহিক বড় গল্প

iter-panjare-premer-katha-galpo-story-1stpart-by-shrabani-chatterjee-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইটের-পাঁজরে-প্রেমের-কথা
১ম পর্ব

রাশিকৃত ইটের পাঁজা দেখতে দেখতে বার বার মনে হচ্ছিলো .......এরা সত্যিকারের দুর্গা,লক্ষ্মী,সরস্বতী,কালী কিনা আমি জানি না! তবে এটুকু বলতে পারি এরা না থাকলে অনেক কিছুই হত না! এরা লক্ষ্য-কোটি মানুষের প্রতি মূহুর্ত্তের স্বপ্ন-সাধ পূরণ করে চলেছে নিজে হাতে নিপুণ দক্ষতায়।

গঙ্গার ওপারের বড় বড় চিমনিগুলো আমায় খুব টানে। দূর থেকে দেখা যায় চিমনিগুলো থেকে ধোঁয়া উঠছে আর সেই ধোঁয়া হাওয়ার সাথে হালকা হয়ে ধীরে ধীরে আকাশে মেঘের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে! কি সুন্দর তার নকশা!

 কেমন করে ইট তৈরি হয় তা দেখার কৌতূহল আমার অনেক দিনের। সেই সুযোগ যে কোনোদিন এভাবে পাবো তা ভাবিনি।

 একদিন হঠাৎ,রাস্তার অন্যপ্রান্ত থেকে আমার নাম ধরে কেউ ডাকল! প্রথমটা ভাবলাম ভুল শুনেছি! কিন্তু আবার সেই একই ডাক শুনে ঘুরে দাঁড়ালাম। সঙ্গে আমার কত্তা মনীশও ছিল। আমি প্রথমটা চিনতে পারিনি। ও নিজেই এগিয়ে এসে বলল কি রে! কেমন আছিস!

আমি বললাম অলকেশ!

ও বলল বাব্বা! আমাকে চিনতে এতো দেরি হল!

আমি বললাম,আসলে তুই একটু ভারিক্কি হয়ে গিয়েছিস তো!

অলকেশ বলল তুই কিন্তু একইরকম আছিস! কতো দিন পর তোকে দেখলাম!

আমি বললাম হু..ম..,তা প্রায় বছর চব্বিশ পঁচিশ হবে!

ওখানেই আমরা বকবক শুরু করে দিয়েছি একথা-ওকথা দিয়ে।

আমার কত্তা আর ওর গিন্নি দুজনেই অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি মণীষের দিকে তাকিয়ে বললাম এই হচ্ছে অলকেশ! আমার কলেজের বন্ধু। অলকেশও ওর গিন্নি রুপার সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলো। মনীশ খুব হৈ চৈ-য়ে মানুষ। ও বলল এত বছর পর সস্ত্রীক কলেজের বন্ধুর সঙ্গে দেখা! সেই আনন্দে চলো সবাই মিলে অন্তত: একটু চা হয়ে যাক।

চা খেতে খেতেও কত কথা,কথা শেষই হচ্ছে না।

মনীশ বলল,অলকেশ এত অল্প সময়ে গল্প হয় না। তোমরা দুজনেই চলে এসো একদিন আমাদের বাড়িতে জমিয়ে আড্ডা হবে।

রুপা বলল,আপনারা আসুন দাদা। ও যা ব্যস্ত মানুষ! আমাদের কোথাও যাওয়া হয় না।

ওরা দুজনেই খুব করে ওদের বাড়ি যাবার জন্য বলল। বললাম নিশ্চয়ই যাবো একদিন। কথায় কথায় জানলাম,অলকেশের একটা ইট-ভাঁটা আছে। ওর বাবা-ই কিনেছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর একমাত্র ছেলে অলকেশ এখন ইট-ভাঁটার মালিক। কল্যাণীতে “উত্তম ইট” খুব নাম করা ইট-ভাঁটা,ইটের কাটতিও প্রচুর।

কলেজে পড়ার সময়,পোশাকে-আশাকে এবং পড়াশুনায় অলকেশ একটু সাধারণ মানের ছিল বলে কেউ তেমন পাত্তা দিতো না। আমার সঙ্গেই যা একটু বন্ধুত্ব ছিল। কলেজ ছাড়ার পর আর কোনও যোগাযোগ হয়নি। ও যে আমায় চিনতে পেরে ডেকে আলাপ পরিচয় করেছে দেখে খুব ভালো লাগলো। এরপর থেকে ফোনেই কথা হতো।

ওর গিন্নি রূপা একদিন হঠাৎ ফোন করে বলল,দিদি মনীশবাবুকে নিয়ে কাল সকালে তোমরা এসো আমাদের এখানে। আমি বললাম কাল! আচ্ছা দেখছি ওর সঙ্গে কথা বলে। রুপা বলল,কোনও কথা শুনবো না। তোমাদের আসতেই হবে। এসে দেখো খারাপ লাগবে না। তাছাড়া আমি শুনেছি তোমার নাকি ইট-ভাঁটা দেখার খুব ইচ্ছে,সেটাও পূরণ হয়ে যাবে।

অলকেশের বাড়িতে সকাল সকাল পৌঁছে গেলাম। কল্যাণীতে ওদের বাড়ি। খুব ভালো বাড়ি করেছে অলকেশ। বাড়ির কাছেই গঙ্গার ধারে ওর ইট-ভাঁটা। অলকেশের গিন্নি রুপা খুবই উচ্ছল মেয়ে। দেখতে ভারী মিষ্টি এবং যথেষ্ট উচ্চশিক্ষিত। খুবই অবস্থাপন্ন  বাবার একমাত্র মেয়ে। কিন্তু অত্যন্ত সাদাসিধে আর হাসিখুশি। কথা বললেই একরাশ হাসি ঝরে পড়ে। ওর উপর ঠোঁটের বাঁ-দিকের কোণে ছোট্ট একটা তিল আছে। আর একটা গজ দাঁত আছে। দুয়ে মিলে ওকে আরও সুন্দরী করে তুলেছে। কেমন সুন্দর একটা লক্ষ্মী লক্ষ্মী ভাব আছে ওর ভেতর। গল্প করতে খুব ভালোবাসে। আর খুব মিশুকে এবং খুব আলাপী। ক’দিনের পরিচয়ে ও আমাকে এমন আপন করে নিয়েছে,যেন আমি ওর বহু দিনের চেনা।

কথা বলতে বলতে আমি অলকেশকে মজা করে জিজ্ঞেস করলাম এমন ভালো মেয়েকে তুই পেলি কি করে! অলকেশ বলল,আমাদের পরিচয় এবং বিয়েটাও বেশ উপভোগ্য। রাতে থাকবি তো! তখন জমিয়ে বসে গল্প করবো,কোনও তাড়া থাকবে না। এখন আমি একবার ইট-ভাঁটায় যাবো। তোরা এখন যেতে চাইলে চল একবার ঘুরে আসবি।

আমি বললাম রাতে থাকতে পারবোনা রে। রুপা একেবারে নাছোড়। সে বলল দিদি,কোনও কথা শুনবো না। প্লিজ একটা দিন থাকো,খারাপ লাগবে না গো। ছোট বোনের আবদারটুকু রাখো। তোমারা থাকলে আমাদেরও খুব ভালো লাগবে। ওর কাছে শুনেছি তোমার কথা। কলেজ ছাড়ার পর পরই নাকি তোমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে! আর তখন তো ফোনের এত চল ছিল না তাই যোগাযোগ রাখতে পারেনি। ও তোমাকে বোনের মতো ভালবাসত আর তুমি নাকি কেউ ওকে কিছু বললে সব সময় প্রতিবাদ করতে!

আসলে,তোমাদের সব গল্প আমার শোনা আছে। শুধু দেখাটাই হয়নি এই যা!

আমি বললাম হ্যাঁ গো! ওর ওই গোবেচারা চেহারা আর ভালো মানুষ মুখ দেখে সবাই পিছনে লাগতো। কেউ তেমন ভাবে পাত্তাই দিতো না! তাই দেখে আমার খুব রাগ হতো। অলকেশ ছিল খুবই ভালো ছেলে আর খুবই উপকারী। সবাই দরকারে ওকে ডাকতো।

রুপা বলল দিদি,ও যে ভালো ছেলে তার প্রমাণ তো আমি! সেদিন ও না থাকলে……

আমি বললাম আচ্ছা,বলো তো শুনি!

রূপা বলল বলবো,রাতে থাকবে বলো।

রুপা আর আমি গল্প করছি,এমন সময় মনীশ আমাদের গল্প শুনতে শুনতে বলে দিলো,রুপা আজ আমরা থাকবো। অনেকদিন জমিয়ে আড্ডা হয়নি। আজ একটা নির্ভেজাল আড্ডা হবে।

জলখাবার খেয়ে আমরা গেলাম ইট-ভাঁটায় ইট তৈরি দেখতে। সেদিন ছিল শুক্রবার।

মঙ্গল আর শুক্রবার ভাঁটি হয়। “ভাঁটি” মানে কাঁচা ইটকে ফায়ার-প্লেসে পুড়িয়ে পাকা ইট তৈরি হয়।

 ইট-ভাঁটাতে গিয়ে অলকেশ ম্যানেজার এর সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলো। ম্যানেজার খুবই শান্ত-শিষ্ট ভালো মানুষ। অলকেশ আমাদের বলল তোরা ওনার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে দেখ। আমি তাহলে ব্যাংকের কাজটা সেরে আসি। আজ লেবার পেমেন্ট আছে,তাছাড়া একটা বড় কন্ট্রাক্ট পেয়েছি রে,সে ব্যাপারে একটু কথা বলতে যাবো। আমি বললাম তুই যা ভাই,ম্যানেজার বাবু আছেন,আমাদের কোনও অসুবিধে হবে না।

অলকেশ চলে যাবার পর ম্যানেজার-বাবু আমাদের সঙ্গে নিয়ে খুবই খাতির করে ইট-ভাঁটা ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলেন আর সেই সঙ্গে কমেন্ট্রির মতো বলে যেতে লাগলেন ইট তৈরি সম্পর্কে। ওনার বলা কথাগুলোই আমি লিখলাম। সঙ্গে আমার চোখে ইঁটভাঁটার ইতিবৃত্ত।

 গঙ্গার ধারে সাত-আট বিঘে জায়গা নিয়ে আমাদের এই ইট-ভাঁটা গড়ে উঠেছে.......

 আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি রাশি রাশি স্তূপীকৃত ইট! যতদূর চোখ যায় শুধু ইট আর ইট,পুরো এলাকাটায় বিভিন্ন রকমভাবে ইট সাজানো রয়েছে। কোথাও কাঁচা ইট,কোথাও পোড়া ইট বিভিন্ন আদলে সাজানো। ইটগুলো এভাবে রাখারও নাকি কারণ আছে।    

 বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ইটের রাজ্য,ফায়ারিং প্লেস,বিশাল বড় মাপের গগনচুম্বী চিমনি,যেগুলো দূর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। অনেকগুলো ট্রাক-লরি দাঁড় করানো আছে। অনেকগুলো তিনচাকার ভ্যান আছে। কতকগুলো ঠেলা গাড়ি আছে আর আছে শ্রমিকদের ঘর-সংসার,পরিবার,বাচ্চা-কাচ্চা,গেরস্থালী।

ক্রমশ ………

                                  ২য় পর্ব পড়ুন আগামী শনিবার।

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

লেখিকার পরিচিতি –

লেখিকার জীবনের সঙ্গে গল্প অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িয়ে আছে যা দেখেনযা শোনেন, যা শোনেন, যা কিছু স্মৃতির পাতায় জড়িয়ে আছে মনের সাথে,তাই নিয়ে লিখতেই বেশি পছন্দ করেন

লেখা শুরু স্কুল-ম্যাগাজিনকলেজ -ম্যাগাজিন দিয়ে বর্তমানে কিছু লেখা প্রকাশিত হচ্ছে কয়েকটি মাসিক-ত্রৈমাসিক পত্রিকায়  পাখিদের নিয়ে অনেক লিখেছেন। গল্প, ভ্রমণ, ফিচার, কবিতা নিয়মিতভাবে লিখে থাকেন।  দিল্লি থেকে প্রকাশিত কলমের সাত রঙ এবং তাৎক্ষণিক ডট কম-এর নিয়মিত লেখিকা।