ধারাবাহিক উপন্যাস – প্রতি বৃহস্পতিবার ।
পর্ব-- ৮
I stand
with standing stones.
The
stones stay where they are.
The twiny
winders wind:
The
little fishes move.
A ripple wakes the pond.
--"The
Mandal commission or the socially and educationally "Backward Class Commission, (SEBC)was
established in India in 1979 by the
Janta party Government--under PM Morarji Desai,with a mandate to "identity the socially
or educationally backward class of India.এই কমিশন
এর প্রধান ছিলেন--বি পি
মন্ডল--তিনি ভারতীয় পার্লিয়ামেন্টের
সদস্য ছিলেন।এই কমিশনের
উদ্দেশ্য to
address Caste discrimination and to use
eleven social ,and educational
indicators to determine backwardness!
সুরঙ্গমা এটুকুই লিখেছিল ওর খাতায়! বাভ্রবির সামনে এখন এক আতঙ্কের আকাশ! অটো মুহূর্তেই গায়েব। কেউ একজন বলল, ভাগো, ভাগো, পুলিশ আ রহী হ্যাঁয়--"
আবার কেউ
একজন ছুটতে ছুটতে বলল--"উঁহা কিসিনে কেরোসিন ডালকে
খুদকুশী করনে কা কোশিশ কর রহা
হ্যাঁয়!"
--"সেল্ফ ইমোলেশন!"
ওদের ক্যাম্পাসেও
ছাত্র প্রতিবাদ হয়েছে--
১৯৮০-র মণ্ডল কমিশনকে প্রধান
মন্ত্রী ভি পি সিং সরকার ইমপ্লিমেন্ট করার
প্রস্তাব নেবার পরই
এই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। ৭৫% রিজার্ভেশন এর বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ!
বাভ্রবির মনে পড়ল
হোস্টেল রুমে সুরঙ্গমা আর ওর সংলাপ।
--"এভাবে কি
কাস্ট সিস্টেম উঠে যাবে?"
--একটা
ব্যাপার দেখ,এখানে ক্রিমি লেয়ার এর কোথাও কোনও উল্লেখ
নেই।"
--"ঠিক
বলেছিস--আর যারা পভার্টি লাইনের নীচে আছে--অর্থাৎ যাদের জন্য
সত্যি সত্যিই রিজার্ভেশন এর প্রয়োজন--তারা কি পাবে এর সুফল?"
--"জানিস তো
নর্থ ইন্ডিয়ার গ্রামে,গঞ্জে এখন ও জাতপাতের ,ছোঁয়াছুয়ির
ব্যাপারটা ভীষণ ভাবে রয়েছে!"
বাভ্রবির এই সময় যখন সরোজিনী নগর মার্কেটের রাস্তা জুড়ে একদিকে প্রতিবাদ মিছিল আর অন্য
দিকে আতঙ্কিত হাটুরেদের ব্যস্ত
আনাগোনা--পুলিশের সাইরেন--টিয়ার
গ্যাস--তখন অঙ্গুরির গল্প টি মনে পড়ল--
--"চাম্পারন জেলা মেঁ ঘর থা হামারা--"
--"থা মতলব?"
অঙ্গুরির দুটি
ডাগর চোখের কোলে জলবিন্দু--কালো
মেঘ হেন জমাট। একটু টুসকি দিলেই জলপ্রপাত হয়ে ঝরে পড়বে--
--"থা--অব্
নেঁহি হ্যাঁয়"
--"কিঁউ"? বাভ্রবির চোখে জিজ্ঞাসা চিহ্ন।
--"জ্বলা
দিয়া--ঠাকুর লোগোঁ নে-- জ্বলা দিয়া
হমারা ঘর।"
স্তম্ভিত বাভ্রবির
সামনে একটি নাটকের দৃশ্য যেন অভিনীত
হয়ে চলল--প্রচণ্ড তাপ প্রবাহ বয়ে চলছিল
তখন সমগ্র উত্তর ভারত জুড়ে--অঙ্গুরিদের আশেপাশের
জলাশয় গুলি শুকনো খটখটে। শাকপাতা ও আর পাওয়া যাচ্ছিল না। এরকম যখন নিদাঘ তপ্ত দিন-তখন গাঁয়ের প্রধানের বাঁধানো পাতকুয়োয় কাকচক্ষুর ন্যায়
টলটলে জল। একদিন তৃষ্ণায় যখন গলা শুকিয়ে কাঠ-তখন, অঙ্গুরির দেওরাণী--সদ্য পরিণীতা দেওরাণী প্রধানের পাতকুয়ো থেকে চুপিচুপি দু বালতি জল
নিয়ে এসেছিল। বেচারি ভেবেছিল
কেউ দেখতে পায়নি। কিন্তু ওর ফুটা নসীব। প্রধানের রক্ষিতা--রামী
-ওদেরই মতো জল অচল জাত--সে তার ঘর থেকে এই জল চুরি দেখে ফেলেছিল।
বাভ্রবি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস
করেছিল--"জল অচল,জাতের
মেয়েকে,রক্ষিতা রাখা যায় বুঝি?""
অঙ্গুরির ঠোঁটের
কোণে ম্লান এক চিলতে কান্নার মত
হাসি--"এরা তো প্রধানদের রক্ষিতা
হয়েই থাকে বিবিজী।"--
--"হুঁ!
তারপর কি হলো?"
--"আমার দেওয়ানীকে প্রধানের গুণ্ডা
তুলে নিয়ে গেল। দুদিন ধরে ওকে গণ ধর্ষণ
করে তিনদিন পরে চুল কেটে ন্যাড়া
করে আমাদের বাড়িতে ফেলে দিয়ে গেল।
রাতের অন্ধকার নামতেই
আমরা আমাদের বাড়ি ছেড়ে
পালালাম--দূর থেকে দেখলাম আমাদের পুরো বাড়িতে ওরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে! পুড়ে
ছাই হয়ে গেল আমাদের বসতবাটি। আমরা অনেক কষ্ট করে,১৫ দিন পর
দিল্লি পৌঁছলাম।"
--"কাটোরিয়া
সরাইতে কি করে এলে?"
অঙ্গুরি তেমনই ম্লান হেসে বলল--"ফুটপাথে ছিলাম--দীপকের বাবুজি
রেলস্টেশনে কুলির কাজ করে কিছু
পয়সা পেলো! রেলস্টেশনেই হঠাৎই
আমাদের গাঁয়ের এক বিরাদরির সঙ্গে দীপকের বাবুজির
দেখা হয়ে গেল। সেই আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে।"
স্তম্ভিত বাভ্রবির
সামনে প্রাক স্বাধীনতা সময়ের চাম্পারন
ভেসে উঠল। মহাত্মাজী এই চাম্পারন
থেকেই --"ইংরেজ ভারত ছাড়ো-"আন্দোলনের ডাক
দিয়েছিলেন! ইংরেজ ভারত ছেড়ে চলে
গেছে। রাজতন্ত্র, জমিদার প্রথা বিলুপ্ত!তবু অঙ্গুরিদের চালচিত্র
বদলায় না কেন? এদের
জন্যই সংরক্ষণ! কিন্তু এরা কি তা জানে?
--"অঙ্গুরি
তুমনে কোন সা কক্ষ তক্ পড়া ?"
অঙ্গুরি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে দেখে বাভ্রবি আরও
পরিষ্কার করে জিজ্ঞেস করেছিল--"তুমনে স্কুল গিয়া কি নেঁহি?"
অঙ্গুরি তেমনই বিষণ্ণ
হাসি হেসে বলেছিল--"হামারা গাঁও মেঁ লড়কি লোক স্কুল
নেঁহি যাতে। স্রেফ লড়কা লোক যাতেঁ--"
-"কিঁউ"?
--:কিঁউ কি স্কুল হমারা গাঁও
সে বহুত দূর হ্যাঁয়--অউর বীচ মেঁ
জঙ্গল হ্যাঁয়। লেড়কি লোগো কে লিয়ে খতরা
হ্যাঁয় বিবিজী।"
--"মণ্ডল
কমিশন হায়! হায়! ভিপি সিং মুর্দাবাদ।"
বাভ্রবি ও ছুটতে থাকে।
পুলিশের গাড়ি তীব্র সাইরেন বাজিয়ে লাল নীল আলো জ্বালিয়ে ছোটাছুটি
করতে করতে হঠাৎই উদভ্রান্ত বাভ্রবির সামনে দাঁড়িয়ে--"আর য়ূ অ্যা প্রটেষ্টের?" জিজ্ঞেস করতেই
বাভ্রবি প্রথমে ভয়ে কেঁপে উঠল--তারপর
এক গভীর ক্রোধ ওকে
জ্বালিয়ে তুলল। তবু শান্ত ভাবে
জবাব দিল--" হোয়াট ডু য়ূ থিংক অফিসর? অ্যাম আই
লুক লাইক অ্যা স্টুডেন্ট? কান্ট য়ূ সি মাই হ্যান্ডস?"
দ্বিতীয় পুলিশ অফিসার
ঠাণ্ডা সুরে বললেন--"স্যরি! গলতি হো গিয়া। ডু য়ূ নিড এনি হেল্প?"
-"নো।
থ্যাংকস।"
বাভ্রবির ঠোঁটের কোণে
সেদিন এক চিলতে বিদ্রূপের হাসি ফুটে উঠেই মিলিয়ে গিয়েছিল।
--"পরাধীন
দেশ আর স্বাধীন দেশের পুলিশের মধ্যে
কোনও ফারাক নেই।"
তারপরই ভাবল--"পরাধীন
দেশ আর স্বাধীন দেশের সরকারের মধ্যেই
বা কি ফারাক খুব বেশী আছে?"
সেদিন যে কিভাবে
কিছুটা হেঁটে,কিছুটা ছুটতে ছুটতে এবং
শেষমেশ একটি ছুটন্ত অটোকে থামিয়ে বাভ্রবি
ক্যাম্পাস পৌঁছেছিল--তা একমাত্র সেই
জানে। ক্যাম্পাস তখন স্লোগান মুখর। অটোকে
গেটের বাইরে ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে
ক্লান্ত বাভ্রবি রাত আটটায় যখন বাড়ি
পৌঁছল তখন ওদের কোয়ার্টার এর বাইরে যুধাজিতের সঙ্গে পাশাপাশি কোয়ার্টার এর সবাই
উদ্বিগ্ন মুখে---
প্রাকৃত আর প্রকৃতির --"মা,মা বলে
এসে জড়িয়ে ধরতেই বাভ্রবির
সমস্ত ক্লান্তি মুছে
গেল--সবার দিকে তাকিয়ে হেসে
বলল--"আমি ঠিক আছি---।"
বাভ্রবি বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরল।
ভাবতে ভাবতেই আধুনিক
বিউটি পার্লার--শীততাপনিয়ন্ত্রিত
দরজা ঠেলে ভেতরে পা রাখল বাভ্রবি---
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি
–
জন্ম-কলকাতায় । আসামের
বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা ।
প্রকাশিত গ্রন্থ
১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী
দহন--(কবিতা গ্রন্থ)
ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র
পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ।
ক্রমশ …………
৯ম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার