ধারাবাহিক উপন্যাস – প্রতি বৃহস্পতিবার ।
পর্ব-- ৭
Wait
Mister.which way is home?
They
turned the light out
and the
dark is moving in the corner
প্রকৃতি আর প্রাকৃত এর তৃতীয় জন্মদিনের বাজার করতে এসেছে বাভ্রবি।যদিও বাভ্রবি খুব ঘটা করে জন্মদিন পালনের পক্ষে কোনও দিন ছিল না। ওদের বাড়িতেও সেরকম ভাবে কোনও দিন জন্মদিন দিন পালন করা হতো না। বাভ্রবির বাবার ছিল বদলির চাকরি। A G অফিসের একাউন্টেন্ট ছিলেন। গোটা ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কেটেছে ও আর ওর দিদির ছোটবেলা। তারপর স্কুল,কলেজ, আর ইউনিভার্সিটির হোস্টেল। তবু প্রকৃতি আর প্রাকৃত -র জন্মদিনে বাভ্রবি কাছাকাছি কয়েকজন বাচ্চাকেই ডাকে। প্রাকৃত, আর প্রকৃতির জন্য দুটো সুন্দর কটন ড্রেস কিনল--তারপর রিটার্ন গিফটস। কেক অর্ডার করল দুটো--আগামী কাল ঠিক সময় বাড়িতে পৌঁছে দেবে।
পায়েস আর লুচি ও নিজে
বানাবে। চিপস,প্যারিস,মাফিন-কাজু
বরফি এবং আরও কিছু টুকটাক কিনে হঠাৎই মনে পড়ল কিছু পেপার কাপ,প্লেট
কেনার কথা। কাজের মেয়ে অঙ্গুরির উপর বেশি
চাপ পড়ে যাবে--। অঙ্গুরির ছেলে দীপক
ওদেরই বয়সী। বাভ্রবি দীপকের জন্য একটা
শার্টই কিনে ফেলল। পেপার কাপ প্লেট কিনে
বেরুতে গিয়ে দেখল একটা দোকানের সামনে
যারা জামা,কাপড়ের
পসরা সাজিয়ে বসেছিল সবাই গুটিয়ে
নিচ্ছে। বাভ্রবি প্রথমটা ভেবেছিল বোধহয়
পুলিশ আসছে তাই এরা সব মালগুলো বড় দোকান গুলোতে ঢুকিয়ে কেটে পড়ছে। সরোজিনী
নগর মার্কেটে এমন দৃশ্য নতুন নয়। হাতঘড়িতে দেখল বিকেল পাঁচটা বেজে ১৫
মিনিট। অনেক ক্ষণ বেরিয়েছে বাভ্রবি। বাচ্চা
দুটোকে যুধাজিতের ডিপার্টমেন্টে রেখে
এসেছে। তাই তাড়াতাড়ি একটা অটো ধরবে বলে
অটো স্ট্যান্ডের দিকে এগোতেই এক বিশাল
প্রটেষ্ট rally র মুখোমুখি বাভ্রবি।
--"হায়।
হায় ভি পি সিং!
মণ্ডল কমিশন মুর্দাবাদ
ইনকিলাব জিন্দাবাদ।
বাভ্রবি শুনছিল,পেপার এও পড়ছিল
মণ্ডল কমিশন নিয়ে স্টুডেন্টস প্রটেষ্টের
কথা। মণ্ডল কমিশন--ভাবতে ভাবতে বেশ
অনেকটা পথ পেছনে হাঁটে বাভ্রবি। বাভ্রবি তখন শিলং-এর ল্যাডিকেনি
কলেজ থেকে কেমেষ্ট্রি অনার্স নিয়ে
গ্রাজুয়েশন করছিল। হোস্টেল লাইফ। সুরঙ্গমার
সঙ্গে তখন থেকেই প্রগাঢ় বন্ধুত্ব।
আকাশের সঙ্গেও। আকাশ পড়ত সেন্ট
এডমান্ডস এ। সুরঙ্গমা পলিটিক্যাল
সায়েন্স নিয়ে পড়ছিল--একদিন-তখন
মেঘালয়ের আকাশ জুড়ে বর্ষার
ঘনমেঘ--বাভ্রবি শিলং পাহাড়ের পিকে বসে
একটা ছবি আঁকছিল--সুরঙ্গমা মশলা চায়ে
চুমুক দিতে দিতে হঠাৎই বলে উঠল--"বি,বি,ঐ দেখ
অমিত রায় --"বাভ্রবি তুলি থামিয়ে
বলল--"কোথায়,,?"
--"ঐ দেখ,কালো ছাতা
মাথায়,পাকদণ্ডী পথে নেমে যাচ্ছেন!"
বাভ্রবি তাড়াতাড়ি ওর ছাতা
বের করে হনহনিয়ে--পেছন থেকে ডাকল--"অমিত বাবু! অমিতবাবু!" ছাতার তলা
থেকে একটু মুখ উঁচু----"কে? বন্যা?"
--"না। আপনি
এখন টাইম মেশিনে অনেকটা সময় এগিয়ে গেছেন--আপনার
বন্যা,কেতকীরা এখন বাংলা উপন্যাসের হট ফেভারিট নায়িকা। আমি বাভ্রবি। আসুন না,একটু
গল্প করা যাক। ঐ বড় শেডের তলায় আমার
বন্ধু সুরঙ্গমাও রয়েছে! আকাশে মেঘ ব্যাপক --আবার এসেছে আষাঢ়।
অমিত রায় ধুতির কোঁচা সামলে উঠে আসতে আসতে খুব জোরে
--"হ্যাঁচ্ছো "করে উঠলেন।পাঞ্জাবীর
পকেট থেকে সুন্দর
--"মিতা" লেখা রুমাল বের
করে নাক মুছে রুমালটা আবার পকেটে রেখে
বললেন--"ইস। শিলং পাহাড়েও প্রদূষণ। সব কেমন বদলে যাচ্ছে। বর্ষায় ঠাণ্ডা লেগে গেলো।এক কাপ গরম চা খাব
কিন্তু।"
--"অবশ্যই।
গরম মশলা চা খাওয়াবো।" খাসী মহিলার
কাছ থেকে গরম গরম তিনকাপ চা নিয়ে তিনজনের
সংলাপ:
--"আচ্ছা,কেতকীর
সঙ্গে আপনার বিয়ে হলো,শোভনলালের
সঙ্গে লাবণ্যের। কেমন ছিল আপনাদের
বিবাহিত জীবন?"
অমিত রায় চায়ে চুমুক দিয়ে--""গড়পড়তা বিবাহিত জীবন যেমন চলে--তেমনই।"
--"আচ্ছা,আপনি
কেতকীর সঙ্গে সহবাস করলেন--আর ভালবাসলেন লাবণ্য কে--এটা কেমন দ্বিচারিতা নয়?"
অমিত রায় দূরের মেঘ ক্লান্ত আকাশ
দেখতে দেখতে বললেন--"প্রেম আর
বিয়ে কখনোই বোধহয় মেলে না--আসলে
দৈনন্দিন, প্রাত্যহিক জীবন যাপন
একটা অভ্যাস মাত্র! প্রেম কে আমি
কোনদিন সেই অভ্যাসে পরিণত
করতে চাইনি। হয়ত প্রেম কে
বাঁচিয়ে রাখার জন্যই প্রেমকে ছেড়ে দিতে হয়।"
--"এগুলো তো
শুধুই থিয়োরি!' অমিত রায় মুখ তুলে মৃদু হেসে
বললেন--"থিয়োরিই তো। প্লেটো থেকে
শুরু করে আধুনিক মনস্তত্ববিদ ফ্রয়েড--সবাই
তো এই প্রেম বা "LOVE"কে নিয়ে
থিয়োরির পর থিয়োরিই লিখে
গেছেন!"
--"তাই বলে
প্রেম শুধুই থিয়োরি মাত্র? "
বাভ্রবির তীক্ষ্ণ প্রশ্নের
জবাবে অমিত রায় ঠোঁটের
ফাঁকে একটু তির্যক হেসে বললেন--"কেন নয়? একটা
জিনিস খেয়াল করে দেখেছেন ম্যাডাম, প্রেম
নিয়ে সমস্ত বুলি কপচে গেছেন
পৃথিবীর পুং প্রজাতি! সে দ্বাপর
যুগের কৃষ্ণ ঠাকুরই হোন আর কলিযুগের চণ্ডীদাসই হোন! মহিলাদের তো কোনও
ভয়েসই নেই!"
বাভ্রবি একটু গুম হয়ে বসে
রইল। অমিত রায় চায়ের কাপে শেষ চুমুক
দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন--"চলি। বৃষ্টিটাও একটু ধরেছে। "তারপর নীচের
দিকে তাকিয়ে বললেন--"পাহাড়ে কি অশান্তি চলছে?"
সুরঙ্গমা ,বাভ্রবি
দুজনেই একটু আতঙ্কের সুরে বলল--"কেন বলুন তো?"
--"না নীচে
মিছিল মতো একটা কিছু দেখতে পাচ্ছি যেন!"
--"হ্যাঁ--গোটা
নর্থ ইষ্টেই অল্প বিস্তর চলছে--"
অমিত রায় এবার
গম্ভীর মুখে বললেন--"ব্রিটিশ
যুগে পরাধীনতার শেকল মুক্তির জন্য
লড়াই ছিল--এবার, স্বাধীন দেশে--" তারপর যেতে যেতে হঠাৎই ফিরে তাকিয়ে সুরঙ্গমার দিকে তাকিয়ে
বললেন--"ম্যাডাম, আপনি তো রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়ছেন? মণ্ডল
কমিশন এর খবর রাখেন?"
সুরঙ্গমা অবাক হয়ে তাকাতেই
অমিত রায় ধুতির কোঁচা সামলে পাকদণ্ডী পথে নেমে যেতে যেতে
বললেন--"আবার একটি নতুন
থিয়োরির জন্ম হচ্ছে--হোস্টেলের রুমে তাড়াতাড়ি ফিরে যান আর
মণ্ডল কমিশন এর রিপোর্টটা দেখুন!"
অমিত রায়,ঝাপসা
অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন!
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখিকার পরিচিতি
–
জন্ম-কলকাতায় । আসামের
বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা ।
প্রকাশিত গ্রন্থ
১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী
দহন--(কবিতা গ্রন্থ)
ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র
পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ।
ক্রমশ …………
৮ম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার