Advt

Advt

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-6th-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী-উপন্যাস-কৃষ্ণা-মিশ্র-ভট্টাচার্য

ধারাবাহিক উপন্যাস প্রতি বৃহস্পতিবার ।

পর্ব--

"And then how she watches him,

Her young years  bungle past

Their same marriage bed

And she wishes him cripple,or poet,

Or even lonely, or sometimes

Better,my lover,dead."

 

গ্রান্ডি কে ছেড়ে দিতেই  বিড়িং এসে বসল পাশে। বাভ্রবির  কোল ঘেঁষে। এই  সারমেয়  এবং এই  মার্জারীর  অপরূপ  বন্ধুত্ব  দেখতে দেখতে বাভ্রবি অবাক  হয়! মানুষে মানুষে এমন হয় না। কতদিন  বাভ্রবি দেখেছে গ্রান্ডি চুপচাপ  অমলতাস গাছের  ছায়ায় শুয়ে আছে আর বিড়িং আহ্লাদে  ওর গলার  কাছটা চেটে দিচ্ছে।

বাভ্রবির  হাতে এখন অনেক  কাজ। বাথরুমে শাওয়ার নিতে নিতে মনে মনে কাজের লিষ্ট  গুলো  একে একে সাজিয়ে নিতে থাকে বাভ্রবি।

বাজার যেতে হবে। বিউটি পার্লারে  চুল কাটাতে যেতে হবে।

দ্রুত  রেডি হয়ে  গাড়ি বের করে বাভ্রবি। ভিকাজি কামা হয়ে সরোজিনী নগর মার্কেটের  দিকে গাড়ি চালাতে চালাতে বাভ্রবি ভাবে কতটা পাল্টে গেছে এই  রাস্তা,এই  সরোজিনী নগর মার্কেট এরিয়া। বাভ্রবির  প্রথম  প্রেম ছিল এই  সরোজিনী নগর মার্কেটে! একসাথে সবকিছু পাওয়া যায়। অটো কিংবা বাস ধরে চলে আসত--মনের  সুখে বাজার  করে আবার  একটা অটো। ভাবতে ভাবতেই  বাজার  । এখন এখানে আন্ডার গ্রাউন্ড  পার্কিং,এবং মাল্টি লেভেল পার্কিং আছে-। চেক করে গাড়ি জমা দিতেই  গাড়িটি সুন্দর ভাবে অটো লিফটে  উপরে উঠে যায়। স্লিপ  নিয়ে বাভ্রবি বেরিয়ে এসে কফিশপে। আজ সকালে একা একা ব্রেকফাষ্ট করতে ইচ্ছে করছিল  না--সুতরাং--

কফি লাতে  আর একটা গ্রিল্ড স্যান্ডউইচ এর অর্ডার  করতে  করতে বাভ্রবির চোখের ঘোর। সরোজিনী নাইডু  মুখোমুখি ওর উল্টো দিকের সিটে!

বাভ্রবির  অবাক হয়ে তাকিয়ে --সেই সুন্দর  শাড়ি পরা,ভারতের  প্রথম  মহিলা  কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট--না--তার থেকেও  বড় পরিচয় --নাইটিঙ্গিল।

--"মহাত্মা গান্ধীর আদরের  নাইটিঙ্গিল--"দুহাত  জোড় করে বাভ্রবি

--"তুমি চেনো  আমাকে?"

-"হ্যাঁ--আপনার  lyrical  কবিতা আমাকে বড় টানে-"

বাভ্রবি আস্তে আস্তে ,ঠিক  আবৃত্তি  নয়,পাঠ করার  মত বলে যায়--

"Like a joy on the heart of a sorrow

The Sunset hangs on a cloud

A golden storm of glittering  sheaves

Of fair and  frail and fluttering leaves

The wild wind blows in a cloud."

--"বাহ্। তুমি মনে রেখেছো?"

--" Autumn song!এতো সুন্দর--যেন একটি ছবি।"

--"আমার  বাবা,অঘোরনাথ  চট্টোপাধ্যায়ের  ইচ্ছে ছিল আমিও  নার মতই  বিজ্ঞান  নিয়ে পড়াশোনা করি--কিন্ত  যখন উনি আমার  লেখা কবিতা শুনলেন--উনি মুগ্ধ  হয়ে আমাকে আমার  পছন্দ  নিয়ে পড়াশোনা করতে বললেন।"

বাভ্রবি আনমনে বলল--"সেটাই  তো হওয়া উচিত। অথচ আজ আমাদের  স্বাধীন দেশের মা- বাবারা সবাই  চান,ছেলমেয়ে যেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার  হয়। এমন কী বিশুদ্ধ  বিজ্ঞান  নিয়ে পড়াশোনাতেও তারা আপত্তি করেন।"

--"আমার ইংল্যান্ডের কেমব্রীজ জীবনে আমি এতো কিছু শিখেছি--এতো ভাল ভাল  অধ্যাপক/অধ্যাপিকা  এবং সহপাঠীদের  সান্নিধ্য  পেয়েছি যা আমার  জীবনের  প্রতি মুহূর্তে কাজে লেগেছে।"

--"আপনি একদম ঠিক বলেছেন। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষ  শুধুই  ডিগ্রিলাভের জন্য  যায় না--ভবিষ্যত  জীবন গঠনের  শিক্ষা ও পায়।"

বাভ্রবির  বেশ মজা লাগল--একটু তরল সুরে বলল--"আচ্ছা,শুনেছি আপনি মাত্র  ১২ বছর বয়সে একটি দীর্ঘ  কবিতা লিখেছিলেন  ইংরেজীতে?"

সরোজিনী চট্টোপাধ্যায় একটু হেসে বললেন--"হ্যাঁ--আমি ১৩০০ লাইনের  একটি লং পয়েম লিখেছিলাম--কবিতাটির নাম--লেডি ওব্ দ্য লেক।"

--"হুঁ। আপনার  বেশিরভাগ  কবিতাই ভারতীয় নারী,ভারতবাসীদের  নিয়ে  লেখা।"

--"ঠিক। আসলে সেই সময়কার ভারতবর্ষের চালচিত্র,পরাধীনতার  জঞ্জীর  আমাদের  অস্তিত্বের  সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল। তাই  আমরা যাই  করি না কেন,যেখানেই  থাকি না কেন এই  ভারতবর্ষের  মাটি,এই  ভারতবর্ষের  প্রকৃতি  এবং অবশ্যই  এই  ভারতবর্ষের  মানুষ  আমাদের  টানতো"--

--"হ্যাঁ,ঠিক বলেছেন একটি দেশ তো আর শুধুমাত্র  একটি ভূখন্ড  নয়--দেশের  মানুষ  দিয়েই দেশের  পরিচয়। অথচ আমরা বারবার  সেটাই  ভুলে যাই।"

--"যারা বলেন আমি আমার দেশকে ভালবাসি--অথচ দেশের মানুষের কাছ থেকে শতহস্ত দূরে থাকেন তাদের আর যাই  থাক,দেশের প্রতি প্রেম নেই।"

বাভ্রবি এবার  একটু সুর পাল্টে মজার  সুরে জিজ্ঞেস  করল--"আচ্ছা,আপনার  কেমব্রীজ  এ পড়তে যাওয়ার  সঙ্গে একটি সুন্দর  ,মজার  ঘটনা জড়িয়ে আছে,তাই  না?"

সরোজিনী চট্টোপাধ্যায়ের  চোখে এবং মুখে এক সুন্দর  হাসির  আলো জ্বলে উঠল।

--"ঠিক বলেছো। আমার পার্সিয়ান ভাষায় লেখা কবিতা--"মাহের মুনিম (Maher Munim) পড়ে হায়দরাবাদের নিজাম সাহেব  মুগ্ধ  হয়ে যান এবং তিনি আমাকে বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করার  জন্য  স্কলারশিপ গ্রান্ট করেন।"

--"দারুণ! আপনি পার্সিয়ান  জানতেন?"

--"হ্যাঁ। জানতো যত বেশি ভাষা তুমি জানবে তত বেশি তুমি ঋদ্ধ  হবে। কারণ এক একটা ভাষার  সাথে এক একটা দেশ এবং জাতির  ইতিহাস  জড়িয়ে থাকে।"

--"এককাপ কফি খাবেন?"

সরোজিনী কেমন অন্যমনস্ক  হয়ে গেলেন।

--"আমরা একসময় স্বদেশী করতাম,জানতো?"

বাভ্রবি মাথা নেড়ে সায় দিল।

--"বিদেশী বস্ত্র, বিদেশী  কাঁচ, বিদেশী যে কোনও  পণ্য আমরা রিলিজিয়াসলি বর্জন  করতাম। কেন? কারণ এই  বিদেশের মিলে প্রস্তুত  কাপড়ের  আমদানীর  ফলে আমাদের দেশের  হাতে তৈরি কাপড় মার খেয়ে যাচ্ছিল। এতে আমাদের  তাঁতী সম্প্রদায়ের  ভাতে টান পড়ছিল। জানি না,আজকাল  তোমরা ভারতবর্ষের  গ্রাম গঞ্জে  কতটা ট্রাভেল  করো,আমাদের  সময় আমরা করতাম। গ্রামে গঞ্জের অনেক বিধবা মহিলা--আর সেই সময় নিঃসন্তান অসহায় বিধবা মহিলাদের  সংখ্যা  খুব একটা কম ছিল না--তা,তারা বাড়িতে সুতো কেটে সেই  সুতো বিক্রি  করে নিজের  নিজের পেট  চালাতেন। বিলিতি বস্ত্র  আমদানির  ফলে সেই সব মহিলাদের  পেট চালানো মুশকিল  হয়ে উঠল।

এটা তো গেল ডায়রেক্ট  ইমপ্যাক্ট। ইনডায়রেক্টলি  কি হতো,বিদেশী জিনিসের  সাথে সাথে বিদেশী চিন্তা ভাবনা ও আমদানি হতো। বিশেষ করে যারা শহরে পড়াশোনা,চাকরি বিক্রি করে জীবন অতিবাহিত  করতেন।"

--"কিন্ত দেখুন  এই  বিদেশের  মুক্ত  চিন্তা ভাবনাই কি এদেশে জাতীয় চিন্তা ভাবনার  জন্ম  দেয় নি?"

বাভ্রবির  এই  প্রশ্নে সরোজিনী  চট্টোপাধ্যায় বললেন--"একশো বার। কিন্ত  সেটা সমান্য  কতিপয় যথার্থ  শিক্ষিত  বিদেশীদের  চেষ্টায় সম্ভব  হয়েছিল। বেশিরভাগ  ইংরেজী শিক্ষিত  মানুষের  মধ্যে এক বিজাতীয়  স্বদেশের  যে কোনও কিছুর  প্রতি অবজ্ঞা এবং ঘৃণাই  জন্ম  নিতো। তারা না বুঝেই  বিদেশের  যে কোনও  ভাবনাকে অণুসরণ,অণুকরণ  করত এবং দেশজ যে কোনও  ভাবনা ,আচার  আচরণ কে বর্জন  করত।"

বাভ্রবি কিছুক্ষণ  চুপ করে থেকে আনমনেই বলল--"হয়ত  আপনি ঠিকই  বলছেন। তাই  আপনার  কবিতার  ভাষা ইংরেজী হলেও  আপনার  প্রতিটি কবিতার  মধ্যেই  ভারতবর্ষ রয়েছে।--A love song from the North,A rajput love song, street  cries, village song,palanquin  bearers,পর্দানসীন--"

--"বাহ্! তুমি আমার  সব কবিতা পড়েছো?"

--"নাহ্। সব নয় কিছু কিছু। আচ্ছা,আপনার  চট্টোপাধ্যায় থেকে নাইডু হওয়ার  রোমান্টিক  গল্পটা তো শোনা হলো না--নিশ্চয়ই  খুবই  রোমান্টিক  ছিল  পথচলা--নইলে  এতো এতো রোমান্টিক  প্রেমের  কবিতা আপনি লিখলেন কি করে?"

সরোজিনী মৃদু হেসে বললেন--"যাদের  মধ্যে প্রেম আছে তারাই  তো দেশ কে ভালবাসতে পারে! সমস্ত  প্রেমই যে একই  মহাসাগরে মিশে যায়--যে সাগরের  নাম জীবন মহাসাগর! আচ্ছা এবার  আমি চলি--"

সরোজিনী চেয়ার  ছেড়ে উঠে  দাঁড়াতেই  বাভ্রবি বলল--"ওহ্--বাই দ্য  ওয়ে,আপনার--"বাজারস ওব  হায়দরাবাদ-"পড়েছি--দারুণ।"

সরোজিনী  হেসে বললেন--"এখন তোমার  সামনে সরোজিনী নগর বাজার--অথবা -বাজারস  ওব  সরোজিনী নগর--"

দুজনেই  গলা মিলিয়ে হেসে উঠতেই বাভ্রবির  সামনে বাজারস  ওব্ সরোজিনী নগর ঝলসে উঠল--এবং বাভ্রবি কফি শপ থেকে নেমে আসতেই দেখল ফুটপাথ  এবং বাইরের ছোট ছোট মেক শিফট  দোকানগুলো  তড়িঘড়ি  গুটিয়ে নিচ্ছে--বাভ্রবির  চোখের  সামনে কিছু আতঙ্কিত  অতীত পর্দা  খুলে দিল---

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন । 

লেখিকার পরিচিতি –

জন্ম-কলকাতায়  আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা 

প্রকাশিত গ্রন্থ

১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)

ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত

ক্রমশ …………

৭ম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার