বেড়াতে যাবার আগে থেকেই
শুনেছিলাম যে থাইল্যাণ্ডের ফুকে (উচ্চারণ ভেদে ফুকেট)
খুব সুন্দর জায়গা । কিন্তু জানতাম না যে,কতটা
সৌন্দর্য আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে । থাইল্যান্ডের একটা অসীম প্রাকৃতিক
সৌন্দর্যময় সৈকত শহর হলো ফুকে (উচ্চারণ ভেদে ফুকেট)। কার্বি থেকে পাঁচ ছয় ঘণ্টা
বাসে করে পৌঁছলাম ফুকে (উচ্চারণ ভেদে ফুকেট) ।
ঝা চকচকে শহর । চারিদিকে
সুন্দর সুন্দর বড় বড় হোটেল । এইরকম একটা হোটেলে আমরা তিন রাত বাস করার জন্য এসে উপস্থিত
হলাম । কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর আমরা পায়ে পায়ে হেঁটে শহরের পথে ঘুরে ঘুরে
আনন্দ উপলব্ধি করলাম । পরের দিন সকাল আটটার সময় হোটেল থেকে বেরিয়েছিলাম সমুদ্র
ভ্রমণের উদ্দেশ্যে । সমুদ্র সৈকত থেকে একটি লং টেল বোটে চড়ে আমাদের সফর শুরু হয়
। সমুদ্রের জলের বিভিন্ন রং আমাকে মুগ্ধ করেছিল । তরঙ্গের দোলায় দুলতে দুলতে এক
অনাবিল আনন্দ উপভোগ করছিলাম । সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস বোটের ভিতরে আমাদের বারবার
স্পর্শ করছিল । আমরা বোট থেকে ঝুঁকে পড়ে সমুদ্রের জলে হাত ডুবিয়ে তার রং
রূপ উপভোগ করছিলাম । মাঝে মাঝেই বোটচালক
আমাদের এই উপভোগের পথে অন্তরায় হচ্ছিল । কারণ তার বোট একপেশে হয়ে যাচ্ছিল । আমরা
আনন্দ উচ্ছ্বাসের জন্য তা লক্ষ্য করিনি । সমুদ্রে ভাসমান একটি জেটিতে এসে আমরা
নামি । সেখান থেকেই দেখা যাচ্ছিল দূরে সমুদ্র বক্ষে ভাসমান একটি পাহাড় __ যে
পাহাড়ের তলা দিয়ে ছোটো ছোটো বোটে অপর দিকে যাওয়া যাচ্ছে । ঐ পাহাড়টি যেন আমাদের
সকলকে হাতছানি দিয়ে ডাকছিল।
পৃথিবীতে আমি অনেকগুলি বছর সুখে দুঃখে কাটিয়ে
ফেলেছি । আমার অন্তরে সাহসের যথেষ্ট অভাব আছে তাই কখনো সাইকেল চালাতে চেষ্টা করিনি
। আমি ভারতবর্ষের প্রায় সবকটি সৈকত শহর ভ্রমণ করেছি । সেখানে অনেকজনকেই
প্যারাসেলিঙ করতে দেখেছি কিন্তু আমি কখনো চেষ্টা করিনি । ফ্রুকেটের সমুদ্র বক্ষের
পাহাড়টি এতটাই আকর্ষণ করছিল যে আমি সমস্ত ভয়কে জয় করে ফেলেছিলাম । ঐ জেটি থেকেই
কায়াকিঙ করে পাহাড়টির কাছে পৌঁছবার ইচ্ছায় আমরা সকল বন্ধুরা অস্থির হয়ে প্রায়
ঝাঁপিয়ে পড়ি ছোট্ট ছোট্ট কয়েকটি বোটে । একেকটা বোটে আমরা দুজন ও একজন বোটচালক,যিনি
আমাদের সাহায্য করেছিলেন । ইতিপূর্বে আমাদের কায়াকিঙ করার অভিজ্ঞতা না থাকায়
তিনি আমাদের বারবার সাবধান করছিলেন । সমুদ্র তরঙ্গে ভেসে আমরা পাহাড়টির তলা দিয়ে
গলে উল্টোদিকের জলে ভেসে অপার আনন্দ উপলব্ধি করেছিলাম । হঠাৎ দু এক পশলা বৃষ্টি
আসায় আমরা তাড়াতাড়ি পাহাড়ের তলায় এসে বৃষ্টির হাত থেকে রেহাই পাই । পাহাড়টি
ছাতার মতো আমাদের রক্ষা করেছিল । অবশেষে ফিরে আসতেই হয় কারণ ' জেমস বন্ড
আইল্যান্ড ' আমাদের ডাক পাঠিয়েছিল ।
এরপর ' জেমস বন্ড
আইল্যান্ডে ' এসে আমরা সেখানকার মানুষের
রান্না করা সুস্বাদু খাবারের মাধ্যমে মধ্যাহ্নভোজ সারি । একটি কাঠের বড়ো বোটকে
অত্যন্ত সুন্দরভাবে সুসজ্জিত করে হোটেলের আকার দেওয়া হয়েছে ।সেই আইল্যান্ডে
তিরিশটি পরিবার বাস করে । তারা প্রত্যেকে এই হোটেলটির কাজকর্মে যুক্ত । তাদের
অনেকের সাথেই আমাদের আলাপ হয় , ইংরেজি ও
হিন্দি ভাষায় অল্প অল্প কথাও হয় । বিকেলে আমরা লং টেল বোটে চেপে আবার সমুদ্র
সৈকতে ফিরে আসি । সারাদিন সমুদ্র ভ্রমণ করে যে আনন্দ উপলব্ধি করেছি তা আমার জীবনে
স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে ।
পরের দিন সকালে হোটেল থেকে
বেরিয়ে একটি বৌদ্ধ মনেষ্ট্রি দর্শন করতে যাই । সেখানে অতি অপূর্ব বৃহদাকার এক
বুদ্ধ মূর্তি দর্শন করি । সমস্ত মনেষ্ট্রি সুন্দরভাবে রং বাহারি ফুলে সুসজ্জিত ।
বিকালবেলায় আমরা আরো কয়েকটি সমুদ্রতটে ঘুরে বেড়াই __ সূর্যাস্তের
শোভা উপলব্ধি করি। সমুদ্রের জলে সূর্যাস্তের লাল আভা ছড়িয়ে পড়ায় জলের রং বদল
ঘটে,যা আমাদের মুগ্ধ করে । অবশেষে আমাদের হোটেলে ফিরে আসতেই হয় । পরের দিন
ফ্রুকেটের প্রকৃতিকে টা টা করে আমরা ব্যাঙ্ককের উদ্দেশ্যে আকাশপথে যাত্রা করি । লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখিকার পরিচিতি –
শিক্ষকতা ও সংসার সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে সাহিত্য চর্চার সময়ে টান পড়েছিল এক সময়ে। মনের সুপ্ত বাসনা মনেই লুকিয়ে ছিল । সময় পেলেই খাতা, কলম নিয়ে বসে যান লিখতে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখেন। মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অনুভূতিগুলো বেড়িয়ে আসে কবিতা হয়ে। কবিতাকে ভালবেসে ফেলেছেন।