Advt

Advt

sudha-kalas-galpo-6thpart-by-juthika-chakraborty-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-সুধা-কলস-গল্প-যূথিকা-চক্রবর্তী

 ধারাবাহিক বড় গল্প

sudha-kalas-galpo-6thpart-by-juthika-chakraborty-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-সুধা-কলস-গল্প-যূথিকা-চক্রবর্তী

৬ষ্ঠ পর্ব

২য় খণ্ড – ২য় পর্ব 

যথাসময়ে রামানন্দ স্কুল ফাইনাল পাশ করে শহরে পড়তে এলো। দুবছর পর পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি হল। রামানন্দ পড়াশোনায় মন্দ না, তবে শহরে এসে চাষির ভাই বলে পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। দাদাকে তাগাদা দেয় তাড়াতাড়ি চলে আসতে। বাড়ীর সামনে দোকান দিলে ভালই চলবে। হলও তাই। ভাইয়ের তাগাদায় দেবানন্দ একটু তাড়াতাড়িই করলেন।

কিন্তু লতা বলল, "দাদা, আমি এখানকার স্কুল থেকেই স্কুল ফাইনালটা দিতে চাই, নইলে শহরে গিয়ে স্কুলে ভর্তি করতে অসুবিধাই হবে। আর তো কয়েকটা মাস মাত্র। দেবানন্দ মেনে নিলেন বোনের যুক্তি। ইতিমধ্যে সংসারে এক নতুন বাসিন্দা ঘর বারান্দা উঠোনময় হামা টেনে বেড়াচ্ছে। পুত্রটিও দেখতে সুন্দর হয়েছে। রামানন্দ ছেলের নাম রেখেছেন শুভানন্দ, ডাকেন শুভ বলে। ভাইয়ের তাগাদা সত্ত্বেও লতার ফাইনাল পরীক্ষার জন্য দেবানন্দ বাবুকে আরও কয়েকটা মাস অপেক্ষা করতে হল গ্রামের বাড়ীতে। 

৩য় পর্ব

পাঁচ বছরের মেয়ে স্বাতী, ছেলে শুভ, লতা আর স্ত্রীকে নিয়ে দেবানন্দ এলেন শহরে বাস করবার জন্য। ইতিমধ্যে আরও দুটো ঘর তুলেছেন। মাথায় অবশ্য টিনের চাল। ভাবনায় আছে সময় সুযোগ মত পাকা ছাদ করে নেবেন। বাড়ীর সামনে একটা মনোহারী দোকান দেবেন। সব ঠিক। বাদ সাধল রামা। বলল,"দাদা বাড়ীর সামনেই দোকান দিলে কোন দিনই আর বাড়ীর শো খুলবে না। আমি যা একখানা প্ল্যান করেছি না,সেইমত বাড়ী হবে আমাদের। আর একটু সবুর কর,আমি পড়া শেষ করেই চাকরী পেয়ে যাব,তখন বাড়ী করতে তোমার কোন অসুবিধাই হবে না।”

- “কিন্তু দোকান কোথায় করব তা হলে? বসে থাকলে তো চলবে না। জমিজমার সব ব্যবস্থা করে এসেছি, তাতে খাওয়া চলে যাবে কিন্তু অন্যান্য খরচ আসবে কোথা থেকে? তোর পড়া, মেয়েটার এখানকার স্কুলে ভর্তি করা তার কি হবে? তাছাড়া, রামা, শোন, বাবা মা তো কবেই চলে গেছেন, তোকে আর লতাকে আমি সমান গুরুত্ব দিয়ে লেখাপড়া শিখিয়েছি এখন আমার সবচাইতে বড় কাজ হল লতার বিয়ে দেওয়া। হাতের টাকা দিয়ে যদি খরচ চালাতে হয় তবে লতার বিয়ে দেব কি করে? এটা আমাকে করতেই হবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব”।

রামা বলে, "দাদা ব্যস্ত হবার কিছু নেই, আগে তুমি একটা দোকান ঘর খোঁজো, দোকান খুলে বস, তারপর আমিও কাজ পেয়ে যাব তখন দুভাই মিলে বোনের বিয়ে দেব। লতাকে বরং হায়ার সেকেন্ডারিতে ভর্তি করে দাও শহরের স্কুলে।

রামা সান্ত্বনা দিলেও দেবানন্দের মন কেন জানি না ভেঙে গেল। এই শহরে দোকানঘর খুঁজতে গিয়েই বুঝেছেন,দোকানঘর পেতে হলে মোটা টাকা সেলামি চাই তারপর মাস মাস ভাড়া গুনতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি দোকানঘর কিনে নিতে পারেন।

অনেক টাকার দরকার তাতে। মাধুরীর কাছে ভেঙে পড়লেন দেবানন্দ। মাধুরীরও রামুর আচরণ ভালো লাগেনি। একবার রামু ভেবে দেখল না এতগুলো বছর ধরে দুভাই বোনের পড়ার খরচ, রামুর শহরে থাকা খাওয়া ও কলেজের খরচ চালিয়ে একটা মানুষ চাষবাস করে আর কত করতে পারে। তাছাড়া লতার বিয়েটা আটকান মাধুরীর একেবারেই পছন্দ হয়নি। মাধুরীর বাবাও গত হয়েছেন, অন্য মেয়েদের বিয়ে দিয়েই গেছেন অবশ্য। মাধুরীর দুই দাদা এখন শ্রীরামপুরে ব্যবসা করে সেখানেই বাড়ী করেছে। তাদের কাছেই বা লতার বিয়ের টাকা চাইবে কোনমুখে। যদিও তারা বড়বোন মাধুরীর খোঁজ রাখে, গেলে তাদের যত্নও করে। মাধুরী অবশ্য তার দুই দাদাকেই লতার জন্য পাত্র দেখতে বলেছে। এখন যদি হাতের টাকা দিয়ে দোকানঘর কিনতে হয় তবে লতার বিয়ের খরচ কোথা থেকে আসবে। কোনটা আগে হবে লতার বিয়ে না দোকান? মাধুরীর মন ভাল নেই এইসব কারণে। এর মধ্যেই মেয়ে স্বাতী নার্সারিতে ভর্তি হল। ছোট্ট মেয়ে কেমন সুন্দর স্কুলের পোশাক পরে ছোট ছোট দুটো বেণী বেঁধে স্কুলে যায়। পিসিই দিয়ে আসে আর স্কুল ছুটির পর নিয়েও আসে। ভাইপোটাও বেড়ে উঠছে। ছোটদার উপর লতার খুব অভিমান হয়েছে। বৌদি বড়ঘরের মেয়ে হয়েও তাদের সংসারে ভোর থেকে রাত্রি পর্যন্ত একটানা পরিশ্রম করে, মায়ের স্নেহ দিয়ে লতাকে এতবড় করেছে। মাঝে মাঝেই লতার মনটা কেন জানিনা উদাস হয়ে যায়, বৌদিকে বলতে পারে না কি হয়েছে। বৌদি নানান কথা বলে ওকে বোঝায় সময়মত নিশ্চয়ই লতার বিয়ে হয়ে যাবে। লতা ঠিক সে কারণেই চিন্তিত নয়,তবে কিসে যেন আনমনা হয়ে যায় প্রায়ই। মনের কথা কি বোঝান যায়! নির্জন দুপুর বেলা হঠাৎ অচেনা পাখীর ডাক শুনলেই মনের মধ্যে কেমন যেন হয় সেটা কি কাউকে ব্যাখ্যা করে বোঝান যায়? না, সামনের মাঠের ওপারের থেকে কালো মেঘ জুটিয়ে ঝড় তেড়ে আসে, তখন সেটা বোঝান যায়? সব কিছুকে হয়ত ব্যাখ্যাও করতে নেই।

যাই হোক দিন তো বসে থাকে না। মাস গড়িয়ে বছর গেল। অবশেষে একটা দোকানের ব্যবস্থা হল বাজারের এক কোনে। যাই হোক তবু তো হয়েছে একটা ব্যবস্থা। সম্বল কমে গেছে দোকানঘর কিনতে,তাই ছোট খাট মুদি দোকানই হল।

দিন এভাবেইচলছিল। দু-একজন পাত্র ও দেখে গেছে লতাকে, পছন্দও হচ্ছে কারুর কারুর কিন্তু গোল বাধছে কম করেও পাত্রপক্ষের আকাঙ্ক্ষা মেটানো নিয়ে। দেবানন্দের মন খুবই খারাপ। ছোড়দা পলিটেকনিক পাশ করে খুব তাড়াতাড়িই পি. ডবলু ডি-তে চাকরীও পেয়ে গেল। চাকরী পাবার খবরে সবাই খুব খুশী। এতদিন বুঝি দেবানন্দের বুকের উপরে যে পাথরখানা চেপে বসেছিল যেন সেটা এবার সরে যাবে। কিন্তু আকাশটা এতদিন অনেক উপরেই ছিল, সেটা হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে নেমে এলো এই সংসারটার মাথায়। মাত্র একমাস পরেই রামানন্দ কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে বৌ এনে তুলল। বলল,"কলেজে পড়ার সময়েই রেজিস্ট্রি করে রেখেছিল,ওর বাবার চেষ্টাতেই চাকরীটা এত তাড়াতাড়ি পেয়েছে। অবশ্য বউ এখন বাপের বাড়ীতেই থাকবে,ওর বাবা বরপণ হিসাবে বাড়ীর সামনের এই ফাঁকা জায়গায় পাকা ঘর তুলে দেবেন- টিনের ঘরে মেয়ে থাকতে পারবে না।”

দেবানন্দ হাউ মাউ করে উঠলেন, "রামা আমাকে বললে আমি কি তোর বিয়ে দিতাম না? এভাবে বৌ আনলি?

রামা অকারণে রাগ দেখিয়ে বলল, "ঠিক আছে আমি চলেই যাচ্ছি, বাড়িঘর করে তবেই আসব।”

বৌদি ও লতা হা হা করে উঠল। "যাস না, নতুন বৌকে বরণ করে ঘরে তুলি, তারপরে ধীরে সুস্থে সব কথা হবে।” কিন্তু রামার মতলব আলাদা ছিল তাই সবাইকে অগ্রাহ্য করে বৌ নিয়ে চলে গেল। 

ক্রমশ ………

৭ম পর্ব পড়ুন আগামী মঙ্গলবার ।

 লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

 লেখিকার পরিচিতি 

যুথিকা চক্রবর্তীর জন্ম ১৯৪২-এ । মালদায় বেড়ে ওঠেন। সেখানে তার পড়াশোনা শুরু হয়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও বাংলায় স্নাতকোত্তর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ১৯৬২-তে মালদহ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পবিত্র কর্মযজ্ঞে প্রবেশ করে পরবর্তীতে ১৯৭১ থেকে ২০০২ পর্যন্ত সেই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার গুরুদায়িত্ব পালন করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয়, লেখালেখিতেও তার সহজাত অধিকার। তিনি সেতার বাদন ও বই পড়তে ভালোবাসেন। বর্তমান ভ্রমণকাহিনীটি তার অন্যান্য পরিচয়কে সমুন্নত করে তুলেছে।

বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত বই একটি।