Advt

Advt

shathe-sathyang-anu-galpo-short-story-by-rekha-nath-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-শঠে-শাঠ্যং-অণু-গল্প-রেখা-নাথ

 


'ম্যায় তো লুট গয়া, ম্যায় তো লুট গয়া'। রামমোহন হাবলদার বুক চাপড়ে-চাপড়ে নিজের দুঃখের কথা আত্মীয়-পরিজনদের কাছে সবিস্তারে জানায়-

-কী ভাবে যে সম্বন্ধী তাকে ঠকিয়েছে। সম্বন্ধী তাকে দহেজে, পাঁচ হাজার টাকা নগদ, ছেলেকে স্কুটার, খাট, ড্রেসিংটেবিল ও সোফাসেট ইত্যাদি দেবার কথা বলেছিল কিন্তু বাস্তবে কিছুই দেয়নি। নিজের মেয়েকে নাম মাত্র গয়না ও একটি অতি সস্তার খাট দিয়েছে। বলেছিল যে, দহেজের সব জিনিষ বড়-বড় নাম করা দোকান থেকে বুক করিয়েছে। বিয়ের দিনই সকালে বাড়িতে পৌঁছে যাবে। রসিদ পর্যন্ত দেখিয়েছিল। সেগুলি যে ভাঁওতা ছিল, সে একেবারে বুঝতেই পারেনি।

ছেলে আমার লাখোঁ মে এক। পোষ্টআপিসে কাজ করে। এখন পোষ্টমাস্টারের এ্যাসিস্টেন্ট। ছেলে আমার হোশিয়ার। একদিন ঠিক পোষ্টমাস্টার হয়ে যাবে। সম্বন্ধী হাবলদার মুরারীলাল আমার বন্ধু। একই থানায় এক সঙ্গে আমরা অনেক দিন কাজ করেছি। ওর মেয়ের বিয়ে হচ্ছিল না। আমি দয়া না করলে ওর মেয়ের বিয়েই হত না। আর ওই আমার সঙ্গে এরকম বিশ্বাসঘাতকতা করল, আমাকে ধোকা দিল! এখন দহেজের কথা তুললে বলে-দহেজ কানুনন্ জুর্ম হ্যায়। মেয়েকে কষ্ট দিলে পুলিশের বড়কর্তাকে জানিয়ে দেবে। আমি এখন রিটায়্যার্ড। যদি পুলিশে থাকতাম তাহলে মুরারীলালকে দেখিয়ে দিতাম,কত ধানে কত চাল। আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার, চালাকী করার মজা ওর আমি বার করে দিতাম। আমার রাজপুত্রের মত ছেলের সঙ্গে,ওর ওই ট্যারা মেয়ে কি মানায়? দহেজ দিয়ে পুষিয়ে দেবে বলেই,আমি ছেলেকে অতি কষ্টে রাজী করিয়েছিলাম।

হাবলদার, রামমোহন একটি কথা শুধু আত্মীয়-পরিজনের কাছে চেপে গেছে, এমন কি নিজের স্ত্রীকেও বলেনি, যে কথাটি, মুরারীলাল মেয়ে বিদায় দেওয়ার সময় রামমোহনকে বলেছিল বন্ধু, তুমি তো এখন আমার সম্বন্ধী। তোমার মনে আছে নিশ্চয়, আজ থেকে দশ বছর আগে তুমি আমার থেকে পাঁচ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলে। সেই টাকাটা,সুদে আসলে এখন অনেক টাকায় দাঁড়ায়। সেই টাকাটা আর তোমায় দিতে হবে না। দহেজের সঙ্গে কাটাকুটি হয়ে গেছে। আমার কাছে তোমার আর কোনও দেনা রইল না।

লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।

 

লেখিকার পরিচিতিঃ 

যদিও জন্ম পলাশীপাড়ানদিয়া জেলাপশ্চিমবঙ্গকিন্তু তাঁর শৈশববেড়ে ওঠাশিক্ষা-দীক্ষা সব এলাহাবাদেই। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থশাস্ত্রে এম.এ.। ১৯৮১ সালে এলাহাবাদ থেকে একটি ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা "তূণীর" প্রকাশ করতেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় (দেশে ও বিদেশে) লেখা প্রকাশিত হয়। হিন্দী ও ইংরাজিতেও লেখা প্রকাশিত হয়েছে। পানামার কবিরোখেলিও সিনান এর দশটি স্প্যানিশ কবিতা বাংলায় অনুবাদ করেছেন। 'অনুশীলন পত্রিকা'সুইডেন থেকে রাইটার্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৩ সালে পেয়েছেন। ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছে "ঈশ্বর ও মানুষ" ( অণু গল্প ও ছোট গল্প সংকলন)। লেখিকার অভিজ্ঞতাজাত কোভিড  সংক্রান্ত বই "কোভিড-১৯ আমার জীবন আমার লড়াই" গাঙচিল থেকে প্রকাশিত হয়েছেডিসেম্বর ২০২২ সালে।