Advt

Advt

paramatmiya-story-galpo-2nd-part-by-dr.sunandan-shikdar-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-পরমাত্মীয়-গল্প-ডাঃসুনন্দন-শিকদার

 ধারাবাহিক বড় গল্প

paramatmiya-story-galpo-2nd-part-by-dr.sunandan-shikdar-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-পরমাত্মীয়-গল্প-ডাঃসুনন্দন-শিকদার

২য় পর্ব

                                                            (৩)

সেই রাত্রে  নন্দিনীর  ঘুম এল না ।

অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন  একজন মেয়েকে ঘরের বৌ করে আনা কতটা সমীচিন তা ভাবছেন , তাঁকে ভাবাচ্ছে,  ঘুম আসছে না । কি রকম ধরনের অলৌকিক ক্ষমতা আছে মেয়েটির? নন্দিনী মাঝরাতে উঠে বসলে , মশারী তুলে নামলে । অঘোর ঘুমে নাক ডাকাচ্ছেন অরুণ বাইরের বারান্দায় চাঁদের হাল্কা  আলো । চাঁদের ধূলো মেখে চামচিকেগুলি উড়ে যাচ্ছে । সামনের গ্রিলের ছায়া বারান্দায় । কোথা থেকে ফুলের আশচর্য গন্ধ আসছে । এমন একটা পরিবেশে সব কিছুই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে  একটু ঠান্ডা লাগায় একটি চাদর নিয়ে এলেন ভিতরের ঘর থেকেতবু মনের উদ্বেগ কাটল না ।    নন্দিনী ঘরে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে , মেয়েটির যে ফটোগ্রাফ ওরা পাঠিয়েছিল সেটি খুলে বের করলেন  সাদা খামটি থেকে ।  বর্ণালী সোজা তাকিয়ে আছে , গলায় একটা স্কার্ফ তার মুখের শ্রী ভালই , তবে কোন  দেবীসুলভ  শোভা তাতে আছে বলে মনে হল না তাঁর ।   

আলো জ্বালানোতে বোধহয় অরুণের  ঘুম ভেঙে গিয়ে থাকবে ।   পাশের ঘর থেকে বিরক্ত  অরুণের গলা পাওয়া গেল ,

-          করছোটা কি ?

-          ঘুম আসছে না ।            

-          ওষুধ খেয়ে নাও ।

-          আচ্ছা একটা কথা বল ।

-          কী ?

-          তুমি কি মনে কর মেয়েটির মধ্যে একটা অলৌকিক ব্যাপার আছে  ?

 পাশ ফিরে ঘুমে ভিজে আসা গলায় বলেন অরুণবাবু    ,

-          এই সময় এই কথা ?   

-          কেমন যেন মনে হচ্ছে আমাদের পাত্রীর সাধারণ নয়      

-          ক্ষেপেছো ?

বলেই ঘুমিয়ে পড়লে ।

কথাটা বলে  ছবিটির দিকে চেয়ে রইলে  নন্দিনী ।

(৪)

বাণীপ্রিয় অনেকদিন পরে বাড়ি ফিরেছে । সে ছবি দেখেছে । কথা শুনেছে নন্দিনীর ।  তেমন উৎসাহ যে প্রকাশ করেছে তা নয় । তবে অবশেষে নিমরাজি হয়েছে । যেন বিয়ে ব্যাপারটা দায়ে পড়েই করতে হচ্ছে । তবে ঘুণাক্ষরে তাঁর সন্দেহের কথা বলেননি নন্দিনী । তবু যেন মেয়েটিকে তাঁর নির্বাচিত তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলতে পারলেন না । ছুটিতে এসে ক’দিন বাণীপ্রিয় বেশ শান্ত ছিল । পাড়ার লোকেরাও টের পায়নি । তারপর একদিন নন্দিনী বললেন , চল বাণী একবার নিজে দেখবি । 

আজ যেন প্রতিমুহুর্তে নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হয় নন্দিনীর । এই যে আঁকাবাঁকা গলি , অপর্যাপ্ত জঞ্জাল , এই সব বাণীপ্রিয়কে প্রত্যক্ষ করতে হবে । প্রত্যক্ষ করতে হবে সম্বন্ধের সূত্রপাত হলে । বন্দর ঘোরা , বিদেশ ঘোরা পুত্র তার সম্পর্ক কী ভাবতে পারে তা ভেবে শঙ্কিত হয় তবু তো বাণীপ্রিয় তাঁকে অসম্ভব ভালবাসে , ভরসা করে , তাঁকে নিশচই ভুল বুঝবে না ।  তবে তাঁকে স্বস্তি দিয়ে , গাড়ি করে  নিশ্চিন্ত যাত্রায় ফ্ল্যাটে পৌঁছনো পর্যন্ত , বাণীপ্রিয় কোন কথা বললে না  পুরো সময়টা সে ফোনে সোশাল মিডিয়াতে  উক্তি- কটুক্তি নিয়ে ব্যাস্ত ছিলে 

আশ্চর্য  আজও আশুতোষই খুললেন দরজা । উচ্ছসিত গদ গদ গলায় আপ্যায়ন করলেন বাণীপ্রিয়কে । হঠাৎ বাণীপ্রিয় যেন লাজুক হয়ে গেল । কোথায় গেল তার প্রসিদ্ধ বদমেজাজ । এখন সে কেমন কৃত্রিম হেসে চেয়ারটা টেনে বসলে । সে আশেপাশে তাকাচ্ছে । এতদিন যেন সমুদ্রের এঘেয়ে একাকীত্বর পর ডাঙায় এসে সে যেন প্রাণ খুঁজে ফিরছে । চারিদিকে  নতুন  মানুষ  , নতুন অভিজ্ঞতা , নতুন সম্বন্ধ – যা রক্তের নয় , সমাজের , আইনের ।  সে একটা নতুন ছন্দ খুঁজছে । আশুতোষ বললেন ,

-          আসার সময় রাস্তাঘাট ফাঁকা পেয়েছিলেন  ?

-          ফাঁকা আর কোথায় ? রাস্তা জুড়ে বাজার – কী যেন নাম –

-          সাহা  মার্কেট ।

-          দুনিয়ায়  কোথাও কী কোন জায়গা ফাঁকা আছে ?

অত্যন্ত সহজভাবে এলে বর্ণালী । তবে আজকে সে শাড়ি পড়েছে ।  বোধহয় সচেতন ভাবেই । হলুদ ফুল আঁকা কমলা রঙের শাড়ি ।  বাণীপ্রিয়কে দেখে এক বিপন্ন সৌন্দর্য লেগে আছে তার  মুখে । কেমন যেন আশ্চর্য হয়ে গিয়েছে   নন্দিনীর হঠাৎ তীব্রভাবে অপছন্দ হয় মেয়েটিকে । কেন যে হয় তা যেন তার  অবচেতনার অন্ধকারে ।  জানার কোন উপায় নেই ।  নন্দিনী নিজেকে নিজে চিমটি কাটেন । মনে হয় কেন যে আনলেন বাণীব্রতকে । না আনলেই বুঝিবা ভাল হত । কিন্তু এখন আর পিছোবার পথ আছে কি ?

বাণীপ্রিয় বর্ণালীকে কিছু বলে না ।  কিছুক্ষণ আড়ষ্টভাবে বসে থেকে   হঠাৎই আশুতোষ বলেন ,

-          বর্ণালী তোরা কথা বল । আমরা সিনিয়ররা সামনের ঘর  থেকে ঘুরে আসছি ।

  বাবা মায়েরা চলে যেতেই  বাণীপ্রিয় যেন গাম্ভীর্যে অবনত হয়ে যায় ।  বর্ণালী  খিলখিলিয়ে হেসে উঠে বলে ,

-          আপনি তো খুব শাই ।

এমন একটি অভিযোগের উত্তর না দিলে পৌরুষে বাধে । অগত্যা উত্তর দিতে হয় বাণীপ্রিয়কে ।   

-          পরিচয় হয়নি তো তাই ।

-          আপনি এই যে সমুদ্রে সমুদ্রে ঘোরেন , সি সিকনেস হয় না ?       

-           দ্যাট’স আ পার্ট অফ আওয়ার জব ।   তবে অনেক দেশ দেখা হয় ।

-          কোন মানুষের তিনটি চোখ দেখেছেন ?

-          অসম্ভব । হঠাৎ  এমন কথা ?

-          যদি বলি আমার  তিনটে  চোখ , তাহলে ?

-          ইন্টারেস্টিং –ডাক্তার দেখানো   উচিত ।

-          ছেলেরা বোধহয় এমনই কথা বলে ।  তারা আশ্চর্য  হতে শেখেনি ।  

  দুজনেই  লাজুকভাবে হেসে ওঠে একসঙ্গে । বাণীপ্রিয়  চেষ্টা  করেও তার তৃতীয় নেত্র দেখতে পায় না ।  তবু যেন তারও মনে হয় সেটা আছে । 

কিছুক্ষণ  কথা বলতে বলতে  হয়ত ওরা সময়ের ইঙ্গিত ভুলে গিয়েছিল – আশুতোষের গলার আওয়াজ পেয়ে সম্বিৎ ফিরল । আশুতোষ বললেন ,

-          এত সিক্রেট গবেষণা কী নিয়ে করছ তোমরা ?   

বর্ণালী হাসতে হাসতে বললে ,

-          আমরা ভাবছি  মানুষ  দুটো চোখ দিয়েই দেখে শেষ করতে পারে না তিনটে চোখ দিয়ে কী করবে ?

-          যাঃ ।  এসব কেমন সুপারনেচারাল ব্যাপার স্যাপার ! প্রথম দিন এসব আলোচনা করতে নেই ।

 দুই চোখই হোক আর  তিন চোখ , দেড় ঘন্টার শেষে দেখা গেল বাণীপ্রিয় আর বর্ণালীর মধ্যে বেশ একটা বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছে ।  সেটা আর যাই হোক  নন্দিনীর চোখ এড়ালে না ।  তেমন উৎসাহিত যে বোধ করলেন তা নয় । বরং কেমন একটা অস্বস্তি যেন তাঁকে গ্রাস করল ।

(৫)

ফিরে এসে নন্দিনী অনেকক্ষণ চুপ  করে বসে থাকলেন  টিভি দেখার আছিলায় ।  চোখের সামনে চলে যাওয়া দৃশ্য বা সংলাপ – কিছুই যেন মাথায় ঢুকছে না । কোথায় যেন একটা অস্বস্তি তাঁকে স্হির হতে দিচ্ছে নাঅতি পরিচিত চরিত্রগুলির  নড়াচড়া যেন আজ বোধগম্য হচ্ছে না ।     

রাত্রে  নৈশভোজের টেবিলে খাবার পরিবেশন করতে করতে ভাতের হাতাটা  নিজের থালায়  নামিয়ে অরুণের দিকে চেয়ে বললেন ,

-          এখানে সম্বন্ধ হতে পারে না । 

অরুণ  অবাক হয়ে চেয়ে বললেন ,

-          একদিনও কাটল না , তোমার এই ডিসিশান ! দাঁড়াও , ধীরেসুস্হে ভেবে দেখ ।

আজ বেরিয়েছিলেন বলে বাইরে থেকে খাবার আনানো হয়েছে । কেবল রুটি আর বেগুনের ভর্তাটি নন্দিনীর নিজের । ক্যাসেরোল থেকে গরম গরম রুটি দিতে দিতে ছেলের দিকে তাকাচ্ছেন । ছেলের মুখের কোন ভাবের পরিবর্তন হল না । রুটি দিয়ে দোকান থেকে আনানো  আলু পটলের তরকারি মুখে পুরতে পুরতে বললে ,

-          এরা বেশ ঝাল দেয় ।

-          আজকের মতো খেয়ে নে বাবা ।

বাণীপ্রিয় নির্বিকারে খেতে খতে প্রসঙ্গান্তরে চলে গেলে । বাঙালির চাকরির অভাব, বাঙলায় শিল্পের অভাব যে সব কথায় ঘন্টার পর ঘন্টা কাল কেটে যায় তাই আলোচনা করতে লাগলে । কিন্তু নন্দিনীর কানে সেসব গেল না। বিয়েটা ঘটতে দেওয়া যাবে না সম্বন্ধ ভাঙেন কি করে?

এই ভয়ঙ্কর প্রশ্নটি ঘুর্ণীর মত তার চারিদিকে  পাক খেতে লাগল । কিছুতেই  স্হির হতে দিল  নাতবু একবারও তার মনে হল না বাণীপ্রিয় কী ভাবছে । তার পছন্দ অপছন্দ কী । যতই ভাবছেন ততই মনে হচ্ছে মঙ্গল হবে না , কিছুতেই মঙ্গল  হবে না । ছেলের মেজাজ সম্বন্ধে তাঁর ভরসা নেইকিন্তু সম্ভব অসম্ভবের মাঝে দোদুল্যমান যে সন্দেহটি তা হল মেয়েটি কি সত্যি সাধারণ,অসাধারণের বাইরে ? বাণীপ্রিয় ও মেয়েটির কথোপকথনের সময় মেয়েটি তৃতীয় নেত্রর কথা বলছিল। এই কথাট তার কানে এসেছিল। এই তিনটি চোখের কথা কেন তুললে মেয়েটি ? সন্দেহ আর কাটতেই চায় না । কেন এমন মনে হচ্ছে ? অথচ তৃতীয় চোখটি যেন বাস্তবের চেয়েও বেশী হয়ে উঠেছে । এতটাই যে মন বুঝতে চাইছে , কল্পনা করতে চাইছে সেটি কপালে থাকলে কী হতে পারে , কী হতে পারে চোখটি মাথার পিছনে থাকলেকিন্তু একটা কথা ঠিক,বিয়ে তিনি এখানে চাইছেন না

লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ক্রমশ ………

৩য় পর্ব পড়ুন আগামী শনিবার

 লেখক পরিচিতি –

জন্ম  ১৯৭৪  পেশায় চিকিৎসক এমডি , ডিএম  কার্ডিওলজিস্ট ) কবি , সমালোচক , রবীন্দ্র অনুরাগী  শনিবারের চিঠির সম্পাদক সজনীকান্ত দাসের পৌত্র 

ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে নবকল্লোল , শনিবারের চিঠি ( নবপর্যায় ) , সুদক্ষীণা , গল্পপত্র , কাথাসাহিত্য , শারদীয়া দক্ষীণীবার্তা , কবিতা  গল্প বারোমাস , কালপত্রী , ইছামতি বিদ্যধরী অন্ধপক্ষ প্রভৃতি পত্রিকায়  নানা লিটল ম্যাগাজিনে

গল্পগ্রন্থ : সৈকত শিল্পী , বনবিহঙ্গ  

উপন্যাস:  সমান্তরাল