স্টেটসম্যান কাগজের
প্রথম পৃষ্ঠাতেই একজোড়া নবজাত শিশুর ছবি। রাস্তার ঝাড়ুদার,
রামলখন সাত সকালে পাব্লিক টয়লেট পরিস্কার করতে গিয়ে শিশু দুটিকে
পায়। তখনও ওই কচি দুটি হৃদয়ে প্রাণের ধুকপুকুনি দেখে,রামলখন
কাছের হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডাক্তারদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও শিশু দুটিকে বাঁচানো
যায়নি। ডাক্তারদের মতে শিশুদুটি জন্মের পর প্রায় পনেরো ঘন্টা বেঁচে ছিল। এই ছোট্ট
খবরটি খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠাতেই স্থান পেয়েছে।
নবজাত শিশুদুটি মায়ের
অন্ধকার গর্ভ থেকে বেরিয়ে এসে পৃথিবীর মুক্ত আলো বাতাসে এসে প্রাণ হারালো। মায়ের
অমৃত সুধা থেকে বঞ্চিত হল কার অভিশাপে? মায়ের
প্রাণ কি এত নিষ্ঠুর হতে পারে? সন্তান দুটিকে সে দশ মাস ধরে
জঠরে লালন করল এবং ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র তাকে অবলীলায় পরিত্যাগ করল? লোকলজ্জার ভয়ে? শিশুদুটিকে ফেলে দিতে মায়ের প্রাণ কি
যন্ত্রণায় নীল হয়ে যায়নি? কে জানে? এইসব
কথাই মনের মধ্যে আলোড়ন করছিল। হঠাৎ দেখি ভাই বাগানের মধ্যে ঢুকে পড়া একটি রাস্তার
কুকুরকে লাঠিপেটা করছে। কুকুরটির মাথা ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে, কিন্তু
কুকুরটি কিছুতেই গেটের বাইরে গেল না। বাগানের এক কোণে, যেখানে
ঝোপ-ঝাড় ও আগাছা রয়েছে সেখানেই কেঁউ-কেঁউ করতে করতে ঢুকে পড়ল। ভাই যতই লাঠি-দিয়ে
কুকুরটাকে খোঁচায় সে ততই কেঁউ কেঁউ চীৎকার করে ঝোপের মধ্যে সেঁধিয়ে যায়। বাগানে
ঘাসের ডগায় রক্তের ফোঁটা।
ভাইকে আমি বললাম --
কুকুরটাকে ছেড়ে দে। আমরা আছি বলেই ও যাচ্ছে না। আমরা চলে গেলেই ও আপনা থেকেই চলে যাবে। আমরা
আছি বলেই ও বোধহয় বেরোচ্ছে না। ভাই বলল--না,ও এখান থেকে যাবে না। কুকুরটা
বাচ্চা দিয়েছে। ছটা বাচ্চা নিয়ে ওই ঝোপের তলায় কুকুরটার সংসার। রক্তাক্ত অবস্থায়
কুকুরটি বাচ্চাগুলি আগলে বসে আছে।
লেখিকার পরিচিতিঃ
যদিও জন্ম পলাশীপাড়া, নদিয়া জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, কিন্তু তাঁর শৈশব, বেড়ে ওঠা, শিক্ষা-দীক্ষা সব এলাহাবাদেই। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থশাস্ত্রে এম.এ.। ১৯৮১ সালে এলাহাবাদ থেকে একটি ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা "তূণীর" প্রকাশ করতেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় (দেশে ও বিদেশে) লেখা প্রকাশিত হয়। হিন্দী ও ইংরাজিতেও লেখা প্রকাশিত হয়েছে। পানামার কবি, রোখেলিও সিনান এর দশটি স্প্যানিশ কবিতা বাংলায় অনুবাদ করেছেন। 'অনুশীলন পত্রিকা'সুইডেন থেকে রাইটার্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৩ সালে পেয়েছেন। ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছে "ঈশ্বর ও মানুষ" ( অণু গল্প ও ছোট গল্প সংকলন)। লেখিকার অভিজ্ঞতাজাত কোভিড সংক্রান্ত বই "কোভিড-১৯ আমার জীবন আমার লড়াই" গাঙচিল থেকে প্রকাশিত হয়েছে, ডিসেম্বর ২০২২ সালে।