বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলাম জুন মাসের ৯ তারিখ রাত ১০ টার
সময় ব্যাংকক যাত্রার উদ্দেশ্যে কোলকাতা বিমানবন্দরের পথে । ঘড়ির কাঁটা ধরে ১০
তারিখ রাত দুটোয় কোলকাতা বিমানবন্দর থেকে আমাদের বিমান সফর শুরু হয় ।
থাইল্যান্ডের ঘড়ির সময় আমাদের থেকে আরও দেড় ঘণ্টা এগিয়ে । তাই আমরা যখন
ব্যাংকক বিমানবন্দরে নামলাম তখন দেখি ঘড়িতে ছটা বাজে । কিন্তু আমারা আকাশপথে
ছিলাম মাত্র আড়াই ঘণ্টা ।
ব্যাংকক থেকে কার্বির বিমানের সময় সকাল সাড়ে সাতটা ।
ব্যাংকক বিমানবন্দর সুবিশাল ___ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আমারা
মেট্রো রেলের মাধ্যমে অন্তর্দেশীয় বিমানবন্দরে এসে পৌঁছলাম এক ঘণ্টার মধ্যে ।
সময় কম থাকায় আমরা সকলেই চিন্তিত ছিলাম কিন্তু আমাদের চিন্তা দূর করতে সাহায্য
করেছে বিমানবন্দরের ভিতরে অবস্থিত কয়েকটি চলন্ত সিঁড়ি , চলন্ত
হাঁটাপথ , ও মেট্রো রেল । দেড় ঘণ্টার বিমান সফর শেষে আমরা
কার্বিতে এসে পৌঁছোই ।
কার্বি বিমানবন্দর থেকে হোটেলের যাত্রাপথেই আমরা
প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে থাকি । আমি এই প্রথম বিদেশ ভ্রমণে বেড়িয়েছি ।
ইতিপূর্বে ভারতবর্ষের অনেকগুলি রাজ্যে অবস্থিত সমুদ্র সৈকত আমার দেখা । আমি দেখেছি
__ পুরীর সমুদ্র তরঙ্গের ঘাত প্রতিঘাত , মুম্বাইয়ের শান্ত সমুদ্র , গোয়ার সমুদ্র সৈকতের
সৌন্দর্য , কেরালা কন্যাকুমারীর সমুদ্রের ছোটো ছোটো ঢেউ ।
কার্বির সমুদ্র গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া রং বেরঙের ছোটো
ছোটো পাহাড়ের সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করেছে । কার্বি হল আন্দামান সির তটভূমি । সেখানকার
মানুষরা ' লঙ টেল বোটে ' চাপিয়ে আমাদের বিভিন্ন দ্বীপ ভ্রমণে
নিয়ে গিয়েছিল । দ্বীপগুলোর নাম খুব মজার , যেমন __ ফি ফি আইল্যান্ড , চিকেন আইল্যান্ড , হঙ আইল্যান্ড , সামুই , পোডা ,টুপ প্রভৃতি ।
চিকেন আইল্যান্ডে
নামতে দেওয়া হয়নি । সমুদ্রে ভাসতে ভাসতেই দেখছিলাম , ঐ আইল্যান্ডটির
গঠন । আইল্যান্ডের সামনের অংশের গড়ন , ঠিক মুরগির গলা ও
মাথার মতন । ঐ দ্বীপের নামকরণ কে করেছিলেন,তা জানি না । কিন্তু তিনি সঠিক নাম দিয়েছিলেন । একেকটা
দ্বীপে অবস্থিত একেকটি পাহাড়ের রং অদ্ভুত ___ কোনটার রং
হাল্কা হাল্কা সবুজ , কোনটা কিছু অংশে কালো কিছু অংশে লাল ,
আরও কত রকম রংয়ের ঝলক। আমি তাদের বর্ণবৈচিত্র্য , তাদের আকৃতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারলাম না । পাহাড়ের খাঁজে জন্মানো
উদ্ভিদরাও যেন রূপের বাহার । ঈশ্বর রং তুলিতে সাজিয়েছেন নিপুণ হস্তে । এইসব সৌন্দর্য উপলব্ধি করার জন্য পৃথিবীর
বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকদের সমাবেশ ঘটছে কার্বিতে ।
কার্বি হল থাইল্যান্ডের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত । টুপ
আইল্যান্ড থেকে সূর্যাস্ত দর্শন অসাধারণ । পোডা আইল্যান্ড থেকে সমুদ্রে নেমে আমরা
স্নান করেছিলাম । সেখানকার সমুদ্র শান্ত । সেখানে আমরা স্থানীয় মানুষের কাছে
দুপুরের সুস্বাদু আহার করেছিলাম ।এখানের সমুদ্র তট জুড়ে সাদা বালির সৌন্দর্য
অপূর্ব । সারাদিন ধরে সমুদ্র ভ্রমণ করে আমরা এক অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করেছিলাম ।
কোলান্টায় জলের তলায় ভ্রমণ করার সাক্ষী আমি হইনি । কিন্তু অন্যান্য পর্যটকদের
কাছ থেকে আমি তার অসাধারণ গল্প শুনেছি ।
কার্বিতে আমরা চার রাত তিন দিন থাকবার পর ফ্রুকেটের
উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলাম ।
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখিকার পরিচিতি –
শিক্ষকতা ও সংসার সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে সাহিত্য চর্চার সময়ে টান পড়েছিল এক সময়ে। মনের সুপ্ত বাসনা মনেই লুকিয়ে ছিল । সময় পেলেই খাতা, কলম নিয়ে বসে যান লিখতে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখেন। মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অনুভূতিগুলো বেড়িয়ে আসে কবিতা হয়ে। কবিতাকে ভালবেসে ফেলেছেন।