ফুলের সাজি হাতে ঠাকুর ঘরে
ঢুকেই শৈলেশ রঞ্জন বিকটভাবে চিৎকার শুরু করে দিলেন।
-কে পূজে করেছে? পূজোর
বিধি-বিধান জানে না। শিব ঠাকুরকে কেউ অপরাজিতা ও জবাফুল দিয়ে পূজো করে?
শৈলেশরঞ্জন, স্ত্রী, রমলাকে
ডেকে জিজ্ঞেস করেন-
--আজ পূজো কে করেছে? রমলাদেবী
মিনমিন করে বলেন---বৌমারা হয়ত করেছে। পরিস্কার করে বললেন না কোন্ বৌমা পূজো করেছে।
স্ত্রীকে বকে বৌমাদের শিক্ষা দেওয়ার অজুহাতে চক্রবর্তী মহাশয় স্ত্রীর ওপর প্রচণ্ড
চোটপাট শুরু করে দিলেন "এতদিন ধরে পূজো-আচ্চা করছো তোমরা,পূজোর
বিধি-বিধান জানো না। ব্রাহ্মণ ঘরের মেয়ে হয়ে এইটুকুনও জানো না, কোন্
ঠাকুরকে কোন্ ফুল দিয়ে পূজো করতে হয়। পূজোর বিধি-বিধান যদি না জানা থাকে এবং জানার
চেষ্টাও যদি না থাকে তাহলে তোমাদের পূজোর ঘরে ঢোকার দরকার নেই।
এ বাড়ির নিয়ম,স্নান করে,পূজো করে
তবেই রান্না ঘরে ঢোকার পারমিশন মেলে। তাই যখন যার রান্না ঘরে ডিউটি থাকে,সে তখন
তাড়াতাড়ি স্নান সেরে,নম-নম করে পূজো সেরে রান্না
ঘরে ঢোকে। কারণ সময় মত ছেলেদের অফিসের ভাতও তো দিতে হবে। আজ ছোট বৌমার পালা ছিল।
বাপের বাড়িতে কখনও পুজো-আচ্চা করেনি। এখানে
শ্বশুরবাড়িতে পূজো করতে হচ্ছে,তারওপর সব
ঠাকুরকে ফুল নিবেদন করতে হয়। ছোটবৌ ভাল করেই জানে আজ শাশুড়ীমায়ের বকুনি আছে তার
কপালে।
শৈলেশরঞ্জন স্ত্রীর সম্মুখে
নিজের জ্ঞানের ভাণ্ডার মেলে ধরেন। তোমরা এতকাল ধরে পূজো-আচ্চা করছো অথচ তোমরা জানো
না,কোন্ ফুল কোন্ ঠাকুরকে নিবেদন করতে হয়। শিবঠাকুরকে শ্বেত-পুষ্প ও বিল্বপত্র
দিয়ে পূজো করতে হয়। মা-কালীকে জবা ফুল দিয়ে, গণেশ
ঠাকুরকে হলুদ ফুল দিয়ে ইত্যাদি,ইত্যাদি।
এদিকে তো দেখি গলায় বিদ্যের ডিগ্রী ঝুলিয়ে ঢ্যাং ঢ্যাং করে ঘুরে বেড়ানো হয়। মেজ
বৌমাকে কটাক্ষ করে বলা। মেজবৌমা ভাল করেই জানে যে,শ্বশুরমহাশয়
ও শাশুড়ীমায়ের প্রচণ্ড আপত্তি সত্ত্বেও সে স্কুলের চাকরীটা ছাড়েনি
তাই দোষ না করলেও সে দোষী।
সে ভাল করেই জানে, পূজো ছোট জা করেছে। নতুন
এসেছে,এখনও বাড়ির ধারা ও রীতিনীতি ঠিক করে রপ্ত হয়নি। সে মনে- মনে ভাবে কী বিচিত্র
এই সংসার। ঈশ্বর সৃষ্টি করল মানুষ,গাছ-পালা
ও জীবজন্তু আর মানুষ সৃষ্টি করল জাত-পাত ও ভেদাভেদ নীতি।