Advt

Advt

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-4th-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী-উপন্যাস-কৃষ্ণা-মিশ্র-ভট্টাচার্য

 ধারাবাহিক উপন্যাস প্রতি বৃহস্পতিবার ।

iha-kanch-nagari-story-upanyas-galpo-4th-part-by-krishna-mishra-bhattacharya-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ইহ-কাঁচ-নগরী-উপন্যাস-কৃষ্ণা-মিশ্র-ভট্টাচার্য

পর্ব--

A,thousand doors ago
When  I was a lonely  kid
I lay on the lawn at night
The wise stars bedding  over me.


প্রকৃতির
  গলা ভেসে আসে--হাজার  হাজার  মাইল--সাত সমুদ্র  পেরিয়ে  জোয়ারের  জলের ন্যায়! মা,ভাবতে ভাল  লাগছে এই  সেমিনার  এ আমি জয়েন করতে পেরেছি! আমি আর  প্রতিষ্ঠা  একটা টুবেড  রুম  শেয়ার  করছি। গীনসবার্গের  কবিতার  মত এই  দেশে অনেক  বীপ্রতিপ  সহাবস্থান! দিল্লি থেকে জে এফ কে--টানা  ১৪ ঘণ্টার  উড়ান। নিউ ইয়র্ক  ইউনিভার্সিটির  হেল্প  ডেস্ক ছিল। সুতরাং  কোনও  প্রবলেম হয়নি। কাল  সকালে রেজিষ্ট্রেশন। সুতরাং ঘুমিয়ে পড়ছি। বাই।

পাপা  নিশ্চয়ই  পৌঁছে গেছে গ্লাসগো। আর প্রাকৃত ও সামার ফেষ্ট এ জয়েন করতে  জয়পুর  পৌঁছে গেছে। পরে কথা বলে নেবো। গুড ডে  মম। স্টে সেফ!
ফোন রেখে গ্রান্ডির সঙ্গে এধরনের
  কথোপকথন

--"বুঝলি গ্রান্ডি  এটা তো তোর প্রকৃতি দিদির বিদেশ যাত্রার  ট্রায়াল  হলো! নেক্সট  ইয়ার  হয়ত পড়তে  চলে যাবে।"

গ্রান্ডি  জিভটা বের করে হাসতে হাসতে বলল--"আর প্রাকৃত দাদা? সেও চলে যাবে?"

--:সে বিদেশ পছন্দ  করে না। তবে দেশেই  কোথাও  চলে যাবে।"

গ্রান্ডি সটান  বাভ্রবির  কোলে,শুয়ে পড়ল।

মেনি বেড়াল  বিড়িং  লাফিয়ে  লাফিয়ে  ঘরে বাইরে খেলে বেড়াচ্ছে--মাঝেই  গ্রান্ডির কানে সুড়সুড়ি  দিয়ে একছুট্টে পালিয়ে যাচ্ছে--জানালার  ফ্রেমে  আটকে আছে দুটি কাঠবেড়ালি--ওদের  ছায়া পড়েছে নিচের  পাতাবাহারের পাতায়--নিঃসঙ্গতার জানালায়  চোখ  রাখতেই  একটা নিঝুম  গরমের  দুপুর  আঁকতে থাকে মন এবং  চোখ।

এই  প্রেষ্টিজিয়াস আবাসিক ক্যাম্পাসের সামনের  ছোট্ট  রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে এমনি এক নিঝুম  গরমের  দুপুরে  বাভ্রবি পৌছে গিয়েছিল  প্রেমমতীর  জুগ্গিতে। সরাই। নতুন রাজধানী হলেই রাজধানীর  আশেপাশে  গজিয়ে ওঠে সরাই। বিশ্রামাগার! মেহরৌলির আশপাশে এই  সরাইগুলোত একসময়  আমীর ওমরাহদের  যাতায়াত, ব্যাপারি  ঘোড়া দেশ বিদেশের  সওদা  নিয়ে ঘুরে বেড়াতো! বেলোয়াড়ি ঝাড়বাতিতে সেজন্য উঠত সরাখানা। আরবি ইত্বরের খুশবু  -ম করতো সরাই খানার  আশেপাশে! ঘুঙুরের বোলের সাথে মিশে যেতো মোতিয়া ফুলের  সুবাস এবং আমীর খসরুর  তবলার  বোল। হিজাবে মুখ ঢেকে  বেহেস্ত  থেকে  নেমে আসত হুরিরা-শাহী সড়কে খোজা প্রহরীর  পাহারায়  বেগমমহলের  নবাব জাদীদের  তাঞ্জাম বেরিয়ে যেতো—

গজল আর কাজরীর সুর  দিল্লির  রাত হাওয়াকে  মিঠে  করে তুলত!

--উফ্! হোঁচট  খেতে  খেতে সামলে নিল  বাভ্রবি। হাসল! আকাশ বিরক্ত  হয়ে বলত--"তোকে নিয়ে  এটাই  সমস্যা। কি যে অন্যমনস্ক  হয়ে রাস্তায়  হাঁটিস।"
স্যান্ডেলের
  স্ট্র্যপটা ছিঁড়ে  গেছে।এবার?এই  পাথুরে রাস্তায় খালি পায়ে ট্যাং  ট্যাং করে হন্টন।
বিপন্ন
  চোখে এদিক  ওদিক  তাকাতেই  চোখে পড়ল গাছের  নীচে এক জুতো  সারাইওয়ালা  চোখ বুঁজে  ঝিমোচ্ছে।" আহা,বেচারা! এই  গরমে সারাদিন  কাজ  করে করে ওর  ঘুম পেয়ে গেছে।

--"ভাইয়া। হাঁ,ভাইয়া--"

লালা মিশ্রিত  একটি ভ্যাবলা  করুণ মুখ। শাহী ঘোড়ার  লাথিতে ছিটকে  পড়া  ভিস্তিওয়ালা--।
--হাঁ,হাঁ,ম্যাডাম
  জী,বলিয়ে--"চটি সারাই হতে হতে এমত সংলাপ:

--"আপকা নাম ক্যায়া হ্যাঁয়?"

--"রামদিন-"
--"কাঁহাঁ সে আয়ে?"

চটির  স্ট্রাপে হাত রেখে রামদিনের চোখ উদাস--একটা চিল উড়ছে  আকাশে--সারি সারি কয়েকটি লাশ--অথবা লাশে পরিণত  হবে এমন--। রামদিনের বাবুজি,মা,দুজনেই  লাশে পরিণত। চিলটি চক্কর  কেটে কেটে শিকার  সন্ধানে রত;দারোগা, পুলিশ-এমনকী  কালেক্টর সাহেবের  আগমনে ধন্য  সীতাপুরের  মাটি! কে কবে  ভেবেছিল  সীতাপুরে এমন  এমন সব হস্তীদের  আগমন হবে?

-"স্পুরিয়াস লিকার?ভেরি স্যাড!"

--"দেশি শরাব মেঁ এয়সা  হরবখত্ হোতে রহতেঁ--লোগ মর যাতে--ফির ভি--"
শরাবভাটিতে রামদিনের
  মা,বাবুজি দুজনেই  কাল রাতে আকন্ঠ মদ গিলেছে। নেশা করে ওখানেই  পড়েছিল। রামদিনের পেটে চুঁহা  দৌড়োচ্ছিল! হান্ডি  বর্তন  উল্টে পাল্টে কিছুই  না পেয়ে  একগ্লাস জল খেয়ে কুড়িয়ে আনা চটের বস্তায়  শুয়ে পড়েছিল। কখন যে দুচোখ জুড়ে ঘুম  নেমেছিল--দশ  বছরের  রামদিন নিজেই  সেকথা জানে না!
--"তারপর"?
সকাল
  সকাল  পুলিশের  বেদম কড়ানাড়ায় ঘুম ভেঙে  গেল।

--"কৌন।"
--"আবে খোল।পুলিশ ওয়ালে হ্যাঁয়।"

--"পুলিশ!"
পুলিশ
  নামটি  গাঁয়ের  লোকজনের  কাছে এক আতঙ্কের  নাম। এক ভয়ংকর  সর্বনাশের  নাম। রামদিন তাড়াতাড়ি চোখ কচলাতে  কচলাতে  দরজা খুলতেই  হাবিলদার  ওকে তুরন্ত  নিজের  বাইকে বসিয়ে শরাব ভাটিতে  নিয়ে যায়--সারি সারি লাশগুলোর মধ্যে ওর মা আর বাবুজির  লাশ  সনাক্ত করণের  জন্য। সারি সারি শবদেহ! এ যেন কোনও  এক যুদ্ধ ভূমি!
যুদ্ধ ভূমিই তো। জীবন যুদ্ধ! একসময়
  জমিছিল। নিজের জমি নিজেই  চাষ করত। স্বাধীনতা উত্তর  ভারতবর্ষে জোতদাররাই  জমির  মালিক। একদা মালিক ছোট ছোট  চাষীরা  বেগার খাটেন  পেট ভাতায়। নেশা করেন  দেশি শরাবে! বিলায়েতি  ওয়াইন, হুইস্কি, বীয়ার  খেয়ে  বুজ্ হবার মতো পয়সা কোথায়? ফলে স্পুরিয়াস  লিকার  পান করে --"রাম নাম সত্ হ্যাঁয়।"
রামদিনের
  উদাস চোখে চোখ রেখে বাভ্রবি আবার  ভাবনার  তরঙ্গে---।
গরম উষ্ণ
  দুপুর  মিলিয়ে গেল --রাত নামছে সীতাপুরের  জঙ্গলের  রাস্তায়--একটি কিশোর  একাকী হাঁটছিল--হাঁটতে হাঁটতে---একদিন—

--স্পুরিয়াস  লিকার খেয়ে প্রতি বছর  ভারতের  বিভিন্ন  প্রদেশে প্রচুর  লোক অসুস্থ  হয়ে পড়েন--মারা ও যান—

--স্পুরিয়াস লিকার--কি করে হয় স্যার?"

অধ্যাপক  রমেশ রসায়ন  ল্যাবরেটরি তে বসে ছাত্র  ছাত্রীদের  সামনে  যে লেকচার  দিয়েছিলেন--বাভ্রবির  এই  দুপুরে তা মনে পড়ল--রামদিন  হাঁটছিল--বাভ্রবি ভাবছিল—

 লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন । 

লেখিকার পরিচিতি –

জন্ম-কলকাতায়  আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা 

প্রকাশিত গ্রন্থ

১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)

ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত


ক্রমশ …………

৫ম পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার