ধারাবাহিক উপন্যাস – প্রতি বৃহস্পতিবার ।
পর্ব-- ৩
I have
ridden in your cart,driver,
Waved my
nude arms at villages going by
Leaning
the last bright routes,survivor
Where
your flames still bite my thigh
and my
ribs crack where your wheels wind.
-হাঁ,অব বোলিয়ে-"হৌজখাস পুলিশ ষ্টেশনে মুখোমুখি: বাভ্রবি সঙ্গে না থাকলে প্রেমমতীর
হয়ত ডাকই পড়ত না। যা হয়! আর বাভ্রবি এটা খুব ভাল করেই
বুঝতে পারছিল যে যতই
হিন্দি হিন্দি করে ভালবাসা দেখাক
না কেন ইংরেজির মহিমা এই স্বাধীনতা উত্তর দেশে
এখনও প্রবল। বাভ্রবি অকারণে ইংরেজি বলা পছন্দ করে না। তাই
হিন্দিতেই বাক্যালাপ চলছিল।
বাভ্রবি বুঝতে পারছিল,প্রেমমতীকে
ওরা একেবারেই পাত্তা দিচ্ছিল না। দেহাতী কাজ করে খাওয়া মেয়ে!
বাভ্রবির মন বিষণ্ণ হয়ে গেল আজকের ভারতবর্ষের
এই অবস্থার কথা ভেবে। আর মাত্র ১০টি বছর পর
এই শতাব্দী শেষ হতে চলেছে! আত্ম নির্ভর স্বাধীন ভারতের
প্রতিটি মানুষ এখনও মানুষের মত বেঁচে নেই। বাভ্রবি প্রেমমতী কে সরিয়ে
লরেটো ইংরেজি একসেন্টে যখন
কথা বলতে শুরু করল,তখন পুলিশ ষ্টেশনের
লোকজনের এটিটিউডই সম্পূর্ণ পাল্টে গেল। পলকেই বাভ্রবির মনে ছায়াপাত করল আরেকটি ছবি। যুধাজিৎ আর
বাভ্রবির প্রথম মুলাকাত! সব কিছু ঠিক ঠাক
হয়ে যাবার পর যুধাজিৎ দেখতে এসেছে বাভ্রবিকে। ঠিকুজি কুষ্ঠি মিলিয়ে বিয়ের প্রস্তাবনা।
--"হাই।
নাউ উই আর আওয়ারসেলভস!"
বাভ্রবি একটু আশ্চর্যই
হয়েছিল।উভয় পক্ষের গার্ডিয়ানরা সরে গিয়েছিলেন ওদের
কে কিছু সময়ের জন্য নিভৃতালাপের
সুযোগ দিয়ে। যুধাজিতের বাবা নেই। মা-ই ওকে বড় করে তুলেছেন। আর সেই মায়ের
জন্যই যুধাজিৎ মিত্র -,বোস্টন এর পি এইচ
ডি ডিগ্রি প্রাপ্ত
ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার দেশে ফিরে এসেছিলেন। শুরুতেই ইংরেজি শুনে একটু বিরক্ত
হলেও বাভ্রবি সেটা কাটিয়ে
শুদ্ধ বাংলায় জবাব দিয়েছিল। দু তিনবার এরকম
টাই হবার পর যুধাজিতের ঠোঁটের কোণে একটা তির্যক হাসি ফুটে উঠেছিল।
--"আই থিংক
উই শুড কনভারস ইন ইংলিশ। হোপ ইউ ডোন্ট
হ্যাভ এনি প্রবলেম?"
তারপর বাভ্রবির
মুখে লরেটো ইংলিশ বুলি শুনে প্রায় গলেই গিয়েছিল আমেরিকা ফেরত
ব্রিলিয়ান্ট অধ্যাপক যুধাজিৎ মিত্র।
আর বাভ্রবি ওর দিদিকে
বলেছিল--"এ কেমন বাঙালি রে দিদি?বাংলা ছেড়ে
ইংরেজি বুলির প্রতি অনুরাগ? বিয়েটা ভেঙ্গে দে।"
দিদি,জামাইবাবু, মা,বাবা,এমনকী ওর প্রাণের বন্ধু সুরঙ্গমা পর্যন্ত
হেসে উঠে বলেছিল--"কি যে
বলিস! এই সামান্য কারণে
কেউ এতো ভাল পাত্র
হাতছাড়া করে?"
কথাটা হয়ত
যুধাজিতের কানে কোনও ভাবে পৌঁছে
গিয়েছিল--ফুলশয্যার রাতে প্রথমেই বলেছিল--"আসলে আমি বাংলা বলতেই ভালবাসি। আসলে আমার বন্ধু,কলিগ--অনেকেই অবাঙালি--তাই
ইংরেজি সহজেই এসে যায়!
----------------------------------------------
--:"আর কত বার
বলব? আসা ইস্তক তো বারকয়েক আমরা দুজনেই
বলেছি।
---"ফির
বলিয়ে--"
এবার প্রেমমতী আবার
সেই কথাগুলো বলে--"মেরি বড়ি
লেড়কি, মতলব সরোজকী উমর ১৫ সাল হ্যায়।
--"ইসকা মতলব সরোজ
বালিক নেহি হ্যাঁয়?"
-"নেহি।
সরোজ নাবালিক।"
--"হাঁ,আগে
বোলিয়ে--"
-- "মেরা পতি তুলারাম উসকো লে
কর দেওরাণীকে ঘর জানে কি লিয়ে নিকলে থে। লেকিন মেরা পতি
যব আপস আয়া তব উসকে সাথ সরোজ নেহি থী। ম্যায়নে পুছনে সে ওহ বোলে সরোজ দেওরানীকে ঘর
ছোড়কে আয়া। সাম তক আপস আয়েঙ্গে।
লেকিন সাম তো ক্যায়া রাত তক
যব সরোজ আপস নেহি আয়ী, তব মেরা ডাউট হুয়া। -"
--"কিউ?"
--"কিঁউকি তুলারাম
দো একবার মেরেকো বোলাথা কি ‘তেরি বেটি বহুত
সুন্দর হ্যাঁয়--উসসে বেচকে তো
কাফি পয়সা কামায়া যা সকতা হ্যায়!"
-"তেরি বেটি
উসকি ভী তো বেটি হ্যাঁয়?"
--"নেহি।
সরোজ মেরা পয়লা পতি যোগেশ কি বেটি।"
--"হু! আগে বোল--"
--"আগলে দিন সুবেতক সরোজ যব আপস নেহি
আয়া, তব ম্যায় দেওরানীকে ঘর পৌঁছ গ্যায়া।
প্রেমমতীর চোখে জল।
--" মেরী দেওরানী যব বোলা কি
সরোজ ইয়া তুলারাম কোই ভি নেহি গ্যায়া উহা, তব
মেরা শক্ একিন মেঁ বদল গিয়া।"
- কিউ? কুছ বজায়?"--
--"হাঁ। মেরী পতি তুলারাম পাক্কা
উসকে দোস্ত কিশোরীলাল-কে পাস মেরী সরোজকো বেচ
দিয়ে সাহাব।
প্রেমমতী হিন্দিতে পুলিশকে
বলল - কিশোরীলাল মুম্বাই,দিল্লি কলকাত্তা নিয়মিত
যাতায়াত করে। অল্পবয়সী গরীব মেয়েদের
কে শাদী আর কাজের লোভ দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে খারাপ
কাজের কোঠিতে বেঁচে দেয়। আমার স্বামী অনেক দিন আমাকে সরোজকে কিশোরীলালের সঙ্গে ভেজনে কি লিয়ে বোল রহা থা। আপ
তুলারাম কো গ্রেপ্তার করিয়ে--ও সারে সচ উগাল দেগা।"
প্রেমমতী পুলিশ ষ্টেশনেই
কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। বাভ্রবি তুলারামের
বিরুদ্ধে এফ আই আর লিখিয়ে পুলিশ ষ্টেশনের বাইরে আসে। আগুনের গোলা সূর্য
তখন রক্ত বমি করছে। রাজধানীর আকাশে,বাতাসে
সেই রক্ত
ক্রমশই ছড়িয়ে পড়ছিল---।
"বিবি-জি।"
সর্বেশের ডাকে বাভ্রবি বর্তমানে ফিরল।
সিঁড়ি ভেঙ্গে
দোতলায় উঠতে উঠতে বলল
--"তুম
চিন্তা মত করো। ববিতার কিছুই হবে না। মেঁ তুমে কুছ পয়সা দে রহীঁ হুঁ। তুম
আজহি গাঁও চলা যাও। "
আলমারি থেকে টাকা বের করে সর্বেশের
হাতে তুলে দিতে দিতে বাভ্রবি একটা
দীর্ঘশ্বাস ফেলল!
--কুড়ি বছর
কেটে গেল! কিছুই তো বদলাল না।
এককাপ হানি লেমন চা নিয়ে বাভ্রবি বাগানের দোলনায় বসল। কৃষ্ণচূড়া গাছের রক্তিম পাতার ভেতর
মুখ লুকিয়ে একটি কোকিল পঞ্চমে তান ধরেছে। একটি ময়ূর
হেঁটে বেড়াচ্ছে বাগানময়। গ্রান্ডি
একলাফে বাভ্রবির কোলে এসে বসল।
এমত বহিরাঙ্গনে বাভ্রবির মন কিছুটা হলেও ভাল হয়ে উঠল। সকাল আটটা বাজল লবির দেয়ালঘড়িতে।
আর ঠিক তক্ষুনি
ওর পাশে রাখা মুঠোফোন গান
গেয়ে উঠল---
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি –
জন্ম-কলকাতায় । আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা ।
প্রকাশিত গ্রন্থ
১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)
ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত
ক্রমশ …………
৩য় পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার