Advt

Advt

paschimbanger-rupakar-bidhan-chandra-roy-feature-probondho-by-kalipada-chakraborty-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-বিধানচন্দ্র-রায়-ফিচার-কালীপদ-চক্রবর্ত্তী

paschimbanger-rupakar-bidhan-chandra-roy-feature-probondho-by-kalipada-chakraborty-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-বিধানচন্দ্র-রায়-ফিচার-কালীপদ-চক্রবর্ত্তী

 

আজ এই মহান ব্যক্তির জন্মদিন উপলক্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের পশ্চিমবঙ্গের স্থপতি ছিলেন বিধান চন্দ্র রায়। স্বাধীনতা-উত্তরকালে পশ্চিমবঙ্গের পুনঃউন্নয়নের বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্য কেউ আর তাঁরমত দক্ষতা দেখাতে পারেনি। তিনি ১৮৮২ সালের ১লা জুলাই পাটনার বাঁকিপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম প্রকাশচন্দ্র রায় এবং মাতার নাম অঘোরকামিনী।

বিধান রায়ের পৈতৃক নিবাস ছিল বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা জেলায়। চরম দুর্দশায় জীবন কাটাতে হয়েছে তার বাবাকে। প্রাইভেট টিউশনি করে সংসার চালাতে হয়েছে তাঁকে। পরে প্রকাশ চন্দ্র ত্রাণ কমিটিতে চাকরি পান। পরে তিনি এই চাকুরীতে উন্নতি লাভ করেন। বিধানচন্দ্র সংসারের এই পরিবেশে মানুষ হয়ে ওঠেন। তাই স্বচ্ছলতার মধ্যে কাটেনি তার শৈশব। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় পাটনায়। গণিতে অনার্স নিয়ে স্নাতক হওয়ার পর বিধানচন্দ্র কলকাতায় চলে আসেন এবং কলকাতাতেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ডাক্তারি পড়ার জন্য কলকাতা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন। তিনি এমআরসিপি এবং এফআরসিএস ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। যেটি এখন নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ তখন তাকে ক্যাম্বেল মেডিকেল স্কুল বলা হত। বিলাত থেকে ফিরে এসে বিধানচন্দ্র এখানে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। একই সঙ্গে তিনি চিকিৎসা ব্যবসাও শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি চিকিৎসাক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করতে সমর্থ হন এবং তাঁর নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পরে।

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, তিনি ১৯২৫ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং সুরেন্দ্রনাথের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে জয়ী হন এবং ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে বিধানসভার সদস্য হন। দেশবন্ধুর মৃত্যুর পর তিনি স্বরাজ দলের সহকারী নেতা হন।  তিনি ১৯২৮ সালে AICC-র সদস্য হন। ১৯৩১-১৯৩২ সাল পর্যন্ত তিনি একটানা পর পর দুবার কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র হন। তিনি ১৯৩৫ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সভাপতি হন। ডাঃ রায় ছিলেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিলের প্রথম ভারতীয় সভাপতি। ১৯৪২ সালে সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ভাইস চ্যান্সেলর নির্বাচিত করে।

১৯৪৮ সালের ২৩শে জানুয়ারী,ডঃ বিধান চন্দ্র রায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময়, যখন পশ্চিমবঙ্গের জনজীবনে অস্থিরতা চলছিল এবং অর্থনৈতিক কাঠামো ভঙ্গুর ছিল এবং যখন গ্রামীণ বাংলা ম্যালেরিয়ার কবলে পড়েছিল, সেই সময় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শরণার্থী, অনাহার ও নিরক্ষরতার কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে ডঃ বিধানচন্দ্র রায় অসাধারণ কর্মক্ষমতা দেখিয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প হাতে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে স্বনির্ভর করার স্বপ্নে সফল হন।

কলকাতায় গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা,বেবি ট্যাক্সি চালু,অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার প্রবর্তন,উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যক্রম প্রবর্তন,খড়্গপুরে আইআইটি প্রতিষ্ঠা, কোলাইকুণ্ডায় বিমানবন্দর স্থাপন, হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, কল্যাণী শহর ও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। জেলায় শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, ম্যালেরিয়া দূরীকরণের জন্য গ্রামীণ,মেডিকেল কলেজের আধুনিকীকরণ, বসন্ত রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অভিযান, পশ্চিমবঙ্গকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার প্রচেষ্টা,পশ্চিমবঙ্গে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি, দামোদর প্রকল্প গ্রহণের প্রচেষ্টা, ব্লক ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল গঠন, দুর্গাপুর শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা করেন

চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ফ্যাক্টরি, রূপনারায়ণপুরে ক্যাবলস ফ্যাক্টরি নির্মাণ ইত্যাদি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে সকলের কাছে একজন প্রিয় মানুষ, প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রিয় ডাক্তার হয়ে উঠেছিলেন। ভারতের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তার সুপরিকল্পিত জীবন এবং উন্নয়নের কথা চিরকাল মনে রাখবে। এই অশ্বমেধ যজ্ঞ কর্মসূচীকে সফল করে তিনি পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও মজবুত করেছিলেন।

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, বিধানচন্দ্র রায় দীর্ঘ চৌদ্দ বছর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তাকে ভারতরত্ন উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে।

দেশবাসী তাঁকে চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে কল্যাণীতে স্থাপিত হয়েছে বিধানচন্দ্র কৃষি বিদ্যালয়। তাঁর নামেই বিধাননগরের নামকরণ করা হয়েছে। তার নামে অনেক কলেজ, লাইব্রেরি, হোস্টেল প্রতিষ্ঠা করে আমরা তার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখছি। তিনি অনেক জনহিতকর প্রতিষ্ঠানে অর্থ দান করেছেন। ওয়েলিংটন স্কোয়ারের বাড়িটিও তিনি স্বাস্থ্য দফতরকে দান করেছিলেন। ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি প্রতিদিন সকালে বিনা পয়সায় কয়েকজন রোগী দেখতেন। বিধানচন্দ্র রায়কে স্বাধীনতা-উত্তর পশ্চিমবঙ্গের আইকন হিসেবে বিচার করা উচিত। ডঃ বিধানচন্দ্র রায় অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে তার যথেষ্ট সৌহার্দ্য ছিল।

১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ১লা জুলাই,আধুনিক পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠাতা এবং দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসক বিধান চন্দ্র রায় কলকাতার রাজভবনে কর্মরত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তাঁকে কোনদিনও ভুলতে পারবেন না। তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের এক আদর্শ মুখ্যমন্ত্রী।

 লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

লেখক পরিচিতি –

কালীপদ চক্রবর্ত্তী  দিল্লি থেকে প্রায় ১৮ বছর ‘মাতৃমন্দির সংবাদ’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন এবং ‘সৃষ্টি সাহিত্য আসর’ পরিচালনা করেছেন। 

দিল্লি, কলকাতা এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখেন। কলকাতার আনন্দমেলা, আনন্দবাজার পত্রিকা, সাপ্তাহিক বর্তমান, দৈনিক বর্তমান, নবকল্লোল, শুকতারা, শিলাদিত্য, সুখবর, গৃহশোভা, কিশোর ভারতী, চিরসবুজ লেখা (শিশু কিশোর আকাদেমী, পশ্চিমবঙ্গ সরকার), সন্দেশ, প্রসাদ, ছোটদের প্রসাদ,  কলেজস্ট্রীট, উল্টোরথ, তথ্যকেন্দ্র, জাগ্রত বিবেক (দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির থেকে প্রকাশিত) , স্টেটসম্যান , কিশোর বার্তা অন্যান্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রকাশিত বই-এর সংখ্যা ৬ টি এবং প্রকাশের পথে ২টি বই।

‘ভারত বাংলাদেশ সাহিত্য সংহতি সম্মান’, পূর্বোত্তর আকাদেমির পুরস্কার, ‘বরুণা অসি’-র গল্প প্রতিযোগিতায় পুরস্কার লাভ, আরত্রিক সম্মান, তুষকুটি পত্রিকা সম্মান, কাশীরাম দাস সম্মান, সতীনাথ ভাদুড়ী সম্মান লাভ করেন।  ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসবে 'আজীবন সম্মাননা' লাভ করেন। এ ছাড়া আরও কিছু পুরস্কার লাভ করেছেন।

 বর্তমানে দিল্লি থেকে প্রকাশিত 'কলমের সাত রঙ'  ও www.tatkhanik.com এর  সম্পাদক এবং দিল্লিতে প্রতিমাসে একটি সাহিত্য সভা পরিচালনা করেন।