ধারাবাহিক উপন্যাস – প্রতি বৃহস্পতিবার ।
-wait
Mister.which way is home?
They
turned the light out
And the
dark is moving in the corner.
শান্ত সামুদ্রিক জল উপত্যকার উপর লাল আগুন-সূর্য। একটু আগেও আকাশ গোপন রজঃক্ষরণে রক্তিম। সমুদ্র সাঁতরে তারারা উঠে আসছে। জাহাজের মাস্তলে, সাদা পতাকায় তারা গুলি সলমা জরির কারুকাজ। জাহাজের ডেকের সারি সারি চেয়ার গুলোতে একে একে বসে পড়ল তাহারা--"তাহারা,মানে ভাস্কোডে গামা, কলম্বাস ,মার্কোপোলো।" এবং তাঁদের তিনজনের মধ্যে এরকম সংলাপ চলতে থাকল।
--"আজকালকার জাহাজ
গুলো কী সুন্দর। যেন বিশাল অট্টালিকা।"
--"গামা,সে আর
বলতে?"
--অথচ,আমরা যখন
সমুদ্র যাত্রা করি তখন অর্ণবপোত গুলো কে
নিয়ে কত কষ্ট করতে হতো।"
--তিনজন
অন্ধকার সমুদ্র দেখতে দেখতে নিজস্ব স্মৃতিচারণ!
--ইন্ডিয়ার
বদলে আমেরিকা!
--কালিকট
বন্দর--আরব সাগরের নীল জল--ঢেউ এর তরঙ্গে পর্তুগীজ, দিনেমার,ফরাসি
ইংরেজ!
--বঙ্গোপোসাগরের তীরে তাম্রলিপ্ত!পাখিদের মত সেই সব নারীরা--হাতে শঙ্খ,প্রবাল
বলয়--চোখ যেন
--পাখিদের নীড়--
মেয়ে কন্ঠস্বর? তিন জনই
একসাথে তাকালেন।সমুদ্র-অন্ধকার থেকে যেন
সাগরের জলে চান সেরে উঠে
আসছে এক নারী!নারী?না মৎস্য কন্যা?কানে
কড়ির দুল,হাতে শঙ্খ
বলয় আর গলায় প্রবালের মালা।
নারীটি বসল না। ডেকের রেলিং
ধরে দাঁড়িয়ে -দুটি চোখ বিন্যস্ত সাগরের
জলে। বার বার তীব্র আঘাতের পর আঘাত করতে করতে সিন্ধুজল কল্লোল ভেঙ্গে
পড়ছে জাহাজের গায়ে।
--মার্কোপলো কিছুক্ষণ
মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে
বললেন--"কিছুক্ষণ দেখেছিলাম।
কথা বুঝিনি তার।
সেও আমার
কথা বোঝেনি।" এবার সেও নারী চোখ রাখল মার্কোপোলো র চোখে।
-"তবু কথা হয়েছিল।"
ভাস্কোডা গামা
আনমনে--ভালবাসার একটি অন্য ভাষা আছে। কালিকট
বন্দরে আমিও তার সেই প্রেম লিপি দেখেছি।"
--অতলান্ত পেরিয়ে তাকে দেখেছি। লাল প্রবালের মালা তার
গলায়! আমিও তাকে ভালবেসে ইন্ডিয়া
বলেছি।"
--সাগর বিনা
পৃথিবী সুন্দরী
ধনী সুন্দরী!
মেয়েটি
সকৌতুকে--"আপনারা বঙ্কিম বাবুর
কপালকুন্ডলা পড়েছেন?"
কলম্বাস--"কি জানি। কে
বঙ্কিম বাবু"?
--মার্কোপলো--পূব
সাগরের দোলা দেখেছি। মেয়েটি পাখির ভাষায়
কথা বলছিল। মেয়েটির কোলে একটি শিশু
স্তন্যপান করছিল।
--ভাস্কো ডা
গামা--অসহ্য সূর্য কিরণ কে ছাপিয়ে
নেমে এসেছিল বৃষ্টি। মনসুন! আমি আর মেয়েটি
পপলার গাছের ছায়ায়! আমরা কেউ কারুর
কথা বুঝতে পারছিলাম না--শুধু এক অকারণ ভালবাসার
জল কল্লোল--
হঠাৎই দুলে উঠল
তরী। ফুঁসে উঠল সাগর। ডেকের
রেলিং এ অবিরাম আঘাত আনছে নোনা হাওয়া--সিন্ধুর গর্জনে
কেঁপে উঠছে পৃথ্বী---
--সামাল!সামাল!"
--"বিবিজি, দরওয়াজা খুলিয়ে
!
জল শব্দে আর সর্বেশের আর্থার
চীৎকারে বাভ্রবির ঘুম
ভেঙ্গে গেল! ধড়মড় করে উঠে বসে দেয়াল
ঘড়ির দিকে তাকাল--সকাল ৬ টা। রোদ এসে বলছে--"টুকি।" এতো
তাড়াতাড়ি সর্বেশ?পাশের বালিশ খালি! ওহ্। বাভ্রবির মনে পড়ল যুধাজিৎ কনফারেন্স
এটেন্ড করতে বিদেশ গেছে।
সর্বেশ এবার
জোরে কলিংবেল টিপছে! তাড়াতাড়ি নাইটির
উপর হাউসকোট পরে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে লবিতে পৌঁছেই
ফ্রেঞ্চ উনডোর নেটের
পর্দা সরিয়ে দেখল উমরো ঝুমরো
অবস্থায় সর্বেশ দাঁড়িয়ে আছে। দরজা খুলতেই সর্বেশ
ঘরে ঢুকে হাউমাউ করে চেঁচিয়ে
বলল--"বিবিজি,মেরা তো সর্বনাশ
হো গিয়া।"
তাড়াতাড়ি ওকে বসিয়ে জল খেতে দিয়ে বলল-"ক্যা হুয়া
সর্বেশ?"
--"ববিতা!"
--"হা,ববিতা কো
ক্যা হুয়া?"
--"শ্বশুরাল
সে খবর আয়া উসনে আগ লাগা কে সুইসাইড
করনে ক্যা কোশিস কিয়া!ব্ হাসপাতাল মেঁ --"
বাভ্রবি শিউরে
উঠল। মাত্র ছয় সাত মাস হয়েছে
ববিতার বিয়ে হয়েছে! ১৮ বছরের হাসি খুশি মিষ্টি মেয়েটি। খুব সাজগোজ
করতে ভালবাসে! বাভ্রবি বিষণ্ণ
সুরে বলল--"তুম আজই চলা যাও।" উত্তর প্রদেশের ফিরোজাবাদের
কাছে ওদের গ্রাম। ববিতার
সেখানেই বিয়ে হয়েছে। ওর স্বামী
মুম্বই তে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে!
বাভ্রবি সর্বেশের হাতে
একহাজার টাকা দিয়ে আভি চলা যাও! ইলাজ
করানা। কুছ নেহি হোগা। সি উইল বি
অলরাইট।" শেষের কথাটা যেন
বাভ্রবি নিজেকেই নিজে বলল।
এককাপ লেমন চা নিয়ে গার্ডেনের দোলনায় বসে চায়ে চুমুক দিতেই টাইম মেশিনে আরও বেশ কয়েকটি বছর পেছনে
হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেল একটি দু কামরার কোয়ার্টারে। এরকমই একটি গ্রীষ্মকালীন সকাল নয়,বিকেল--মাটিতে
থেবড়ে বসেছিল প্রেমমতী। বিপন্ন মুখে সোফায় হেলান দিয়ে
বাভ্রবি।
একটি গল্প অথবা গল্প
হলেও সত্যির মুখোমুখি।।
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখিকার পরিচিতি –
জন্ম-কলকাতায় । আসামের বরাক উপত্যকায় বড় হয়ে ওঠা ।
প্রকাশিত গ্রন্থ
১--সাপ শিশির খায় (গল্প গ্রন্থ)
২--দেবী দহন--(কবিতা গ্রন্থ)
ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত
ক্রমশ …………
২য় পর্ব পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার