ব্রহ্মগুপ্তই
প্রথম শূন্য ব্যবহারের নিয়ম বিধিবদ্ধ করেন এবং ax²+1=y² এর মত সমীকরণের (indeterminate
equations) সমাধান দেন। উচ্চপর্যায়ের গণিতে সংখ্যা বিশ্লেষণ (Numerical Analysis) নামক বিশেষ বিভাগের প্রবর্ত্তক ও-ছিলেন তিনি। সূতরাং মহান গণিতজ্ঞ ভাস্কর
যে তাঁকে গণকচন্দ্র চূড়ামণি (গণিত মহলের রত্ন) উপাধিতে ভূষিত করেন, তাতে বিস্ময়ের কোনও কারণ নেই।
ব্রহ্মগুপ্ত (Brahmagupta) ৫৯৮
খৃঃ অঃ গুজারাতের ভিল্লামলাতে (ভিনমল) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চাপাবংশীয় রাজা
ব্যাঘ্রমুখের রাজজ্যোতিষী ছিলেন। তাঁর দুটি রচনা 'ব্রহাস্ফুটসিদ্ধান্ত'
ও 'কারণখণ্ডখদ্যকের' মধ্যে
প্রথমটি বেশি বিখ্যাত। এটি পুরাতন জ্যোতিষগ্রহ ব্রহ্মসিদ্ধান্তের সংশোধিত রূপ। এই
গ্রন্থ আরবী ভাষায় অনূদিত হয় কিন্তু ভুল করে তার নাম রাখা হয়
"সিন্দহিন্দ"। কয়েক শতাব্দী ধরে ভারত ও আরব দেশে এই গ্রন্থ অনুযায়ী
জ্যোতিষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হোতো।
ব্রহসস্ফুট সিদ্ধান্তে পাটীগণিত এবং বীজগণিতের আলাদা
আলাদা অধ্যায় ছিল। শূন্য ব্যবহারের নিয়মই তাঁর প্রধান অবদান। তিনি বলেছিলেন যে
কোনও সংখ্যার ধনরাশি বা ঋণরাশির সংগে শূন্য যোগ করলে অথবা তার থেকে শূন্যবিয়োগ করলে
সেই
সংখ্যার কোন পরিবর্তন হয় না। তিনি এও বলেন যে কোন
সংখ্যাকে শূন্য দ্বারা গুণ করলে গুণফল শূন্য হয় এবং কোনও সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে ভাগ
করলে ভাগ ফল একটি অসীম সংখ্যা (Infinity) হয়। তবে তিনি ভুল করে বলে ছিলেন
যে শূন্যকে শূন্য দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল শূন্য হয়।
তিনি ax+b=0 'র মত সাধারণ সমীকরণ (simple
equation) এবং ax²+bx+c=0 মত
দ্বিঘাত সমীকরণের (quadratic equa tion) সমাধানের সূত্র
নির্ধারণ করেন। তিনি জিওমেট্রিক সিরিস যোগ পদ্ধতিও প্রবর্তন করেন। তিনিই প্রথম
পার্টীগণিত ও বীজগণিতের পার্থক্য দেখিয়ে এই দুটিকে গণিতের দুটি বিভিন্ন শাখা
হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
ব্রহ্মগুপ্তের কারণখণ্ডখাদ্যক বইটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের গণনা সংক্রান্ত গ্রন্থ। এই বইটিতে তিনি গণনার ক্ষেত্রে বীজগণিতের প্রভূত ব্যবহার করেন। তিনি সে যুগের চিন্তাধারা অনুযায়ী রক্ষণশীল ছিলেন। পুরোহিত সম্প্রদায়কে তিনি চটাতে চাইতেন না। পৃথিবী চলমান আর্য্যভট্টের এই মতের সমালোচনা করলেও পৃথিবী যে গোল তা তিনি স্বীকার করতেন।
মাধ্যাকর্ষণ সম্পর্কে তিনি বলতেন, "জলের ধর্ম যেমন বয়ে যাওয়া, তেমনই পৃথিবীর ধর্ম সমস্ত বস্তুকে নিজের দিকে আকর্ষণ করা। সেইজন্যই যে কোনও বস্তু উপর থেকে ছেড়ে দিলে পৃথিবীর দিকে পড়ে।"