Advt

Advt

bharatiya-ganitaggya-vaskar-jana-ajana-feature-probondho-knowledge-science-by-paribrajak-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ভারতীয়-গণিতজ্ঞ-ভাস্কর-পরিব্রাজক

bharatiya-ganitaggya-vaskar-jana-ajana-feature-probondho-knowledge-science-by-paribrajak-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-ভারতীয়-গণিতজ্ঞ-ভাস্কর-পরিব্রাজক

লীলাবতীর বাবা একটি জলঘড়ি এনেছিলেন। ঘড়িটি তিনি যে ঘরে রেখেছিলেন,সে ঘরে লীলাবতীর যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। নিষেধ ছিল বলেই সে ঘরটি তাঁকে আকর্ষণ করতো। সুযোগ বুঝে একদিন তিনি সে ঘরে ঢুকে পড়লেন। সামনে রাখা বড় ঘড়িটি দেখে তিনি মুগ্ধ হলেন। তিনি একদৃষ্টে ঘড়িটি দেখতে লাগলেন।

এমন সময় এক বিভ্রাট ঘটলো তাঁর নাকছাবি থেকে একটি ছোট্ট মুক্তো ঘড়ির মধ্যে পড়েগেল। সেটা টের পাওয়া মাত্র তিনি ভয় পেয়ে পালিয়ে গেলেন। তার পরদিনই তাঁর বিয়ের দিন। সেই আনন্দ এবং উত্তেজনায় তিনি এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভুলে গেলেন। ঐ সময়ে তার বয়স মাত্র ছয় বছর।

লীলাবতীর বিয়ে হলো। কিন্তু এক সপ্তাহ পরেই,তাঁর স্বামী একটি পাহাড় থেকে পড়ে মারা গেলেন। জ্যোর্তিবেত্তা ও গণিতজ্ঞ ভাস্করের (Bhaskara)মনে এই ভয়টি ছিল। তিনি গণনা করে দেখেছিলেন যে যদি একটি বিশেষ দিনের বিশেষ লগ্নে তাঁর কন্যার বিবাহ না দেন তবে তার বৈধব্য যোগ আছে। বিয়ের লগ্ন নির্ধারণের জন্যই তিনি এই ঘড়িটি এনেছিলেন। মেয়ের নাকছাবি থেকে পড়ে যাওয়া মুক্তোই যে ঘড়ির সময় ভুল দেখিয়ে ছিল,সেটা তিনি জানতেন না,ফলে তিনি মনে করেছিলেন যে তাঁর গণনার ভুলের জন্যই এই অঘটন ঘটেছে।

সে আমলে বিধবা মেয়েদের বিয়ে হওয়া খুব মুশকিল ছিল। এই দুঃখ থেকে ভুলে থাকার জন্য ভাস্কর মেয়ের মনে গণিতের প্রতি আকর্ষণ জাগাতে চেষ্টা করলেন। লীলাবতী গণিত শাস্ত্রে কতটা স্বীকৃতি পেয়েছিলেন, সে সম্বন্ধে খুব বেশি জানা না গেলেও ভাস্কর তাঁর ৩০ বছর বয়সে লেখা সিদ্ধান্ত শিরোমণি গ্রন্থের একটি অধ্যায় মেয়ের নামে নামকরণ করে তাঁকে অমর করে গেলেন। এক সময়ে এ কথা প্রচলিত ছিল, যিনি 'লীলাবতী' জানেন, তিনি বলতে পারেন যে গাছে কটা পাতা আছে।

'লীলাবতী'অধ্যায়টি প্রধাণত: পাটিগণিত নিয়ে লিখিত। অন্যান্য তিনটি অধ্যায়ে "বীজগণিত” “গোলাধ্যায়” অর্থাৎ বর্তুল সংক্রান্ত গণিত,এবং "গ্রহগণিত" অর্থাৎ গ্রহনক্ষত্র গণিত নিয়ে আলোচিত হয়েছে। বইটি প্রধানত: ব্রহ্মগুপ্ত, মহাবীর এবং শ্রীধরের মত বড় বড় পন্ডিতের লেখাগুলিকে ছাত্রদের সুবিধের জন্য সহজ করে লেখা। পাঠ্যপুস্তক হিসেবে বইটি এতই জনপ্রিয়তা ও স্বীকৃতি লাভ করেছিল, যে এই বইটি চার পাঁচ শতাব্দী পরে দুবার পারসীভাষায় অনূদিত হয়।

 

গণিতজ্ঞ হিসেবে তিনিই প্রথম দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন যে, কোনও সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল একটি অসীম সংখ্যা দাঁড়ায়। তিনি এও বলেন একটি অসীম সংখ্যার সঙ্গে যে কোনও একটি সংখ্যা যোগ করলে যোগফল একটি অসীম সংখ্যা হয়। এর থেকে তাঁর মৌলিক চিন্তাধারার পরিচয় পাওয়া যায়।

বীজগণিতে ভাস্কর ব্রহ্মগুপ্তকে তাঁর গুরু মনে করতেন। বীজগণিতের "চক্রওয়াল" বা সাইক্লিক মেথডের প্রবর্তন তাঁর একটি অমূল্য দান। তাঁর ছ' শতাব্দী পরে গ্যালয়, ইউলর এবং লগরেঞ্জ প্রভৃতি ইউরোপীয় গণিতজ্ঞরা এই পদ্ধতির পুনরাবিষ্কার করে তার নাম "ইনভার্স সাইক্লিক" দেন। একটি বস্তুলের ঘনফল এবং ক্ষেত্রফল “ইনটিগ্রাল ক্যালকুলাস" দিয়ে হিসেব করার কথাও তিনিই প্রথম বলেন। এই বইটিতে পারমুটেশন, কমবিনেশন, এবং ত্রিকোন-

মিতির কয়েকটি মূল সূত্র এবং প্রতিপাদ্য আছে। পশ্চিমে আইজাক নিউটন, গডফ্রেড, লিবনিজ কে "ডিফারেন- শিয়াল ক্যালকুলাসের” আবিষ্কারক বলা হলেও তার কয়েক শতাব্দী

আগে ভাস্কর এর প্রবর্তন করেছিলেন। বর্তমানে যাকে "ডিফারেন- শিয়াল ক্যালকুলাস” বলা হয় তিনি তার একটি উদাহরণ দিয়ে- ছিলেন। 'রোলস থিয়োরেমের' মূল তত্ত্ব তাঁর লেখায় পাওয়া যায়। "তৎকালিক গতির” মূল তত্ত্বটি ও তাঁরই আবিষ্কার। এই তত্ত্বটি জ্যোতির্বিদদের গ্রহনক্ষত্রের গতিবিধির সঠিক গণনাতে সাহায্য করে।

১১১৪ সালে ভাস্কর সাহাদ্রি পাহাড়ের "বীজাড়াবিড়া” (কর্ণাট- কের বীজাপুরে) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তাঁর দেবোপম পিতার কাছে গণিত শিক্ষা শুরু করেন। ব্রহ্মগুপ্তের লেখা থেকে প্রেরণা পেয়ে তিনি গণিতচর্চায় নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে নিয়োজিত করেন। ৬৯ বছর বয়সে তিনি তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ "কারণকুতূহল” লেখেন, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের গণনার উপর লেখা। এই গ্রন্থটি তাঁর অন্যান্য গ্রন্থের মত পরিচিত না হলেও দিনপঞ্জি নির্মাণে এখনও এর ব্যবহার আছে।