বৌমা , তোমার শ্বশুর চলে যাবার পর আমি কোনদিন আর ছোটো আলমারিটা খুলে দেখিনি । কাজলকে বলো ওটা খুলে দেখতে ।
- আপনার ছেলে তো এই দুদিন আগেই গেলো । এ মাসে তো আর আসবে না ।
- বাবার ব্যাঙ্কের কাগজগুলো দেখতে হবে । এল আই সির কাগজগুলো দেখতে হবে।
- ছেলে যখন ছিল তখন বলেন নি কেন মা ?
- আমার মাথায় তখন আসে নি বৌমা । আসলে আমি তো কোনদিন কিছু দেখিনি । তোমার শ্বশুর বারবার বলতো সব কিছু দেখতে । আমি তখন কিছুই শুনিনি । আমি তো বুঝিনি যে , তোমার শ্বশুর হঠাৎ করে এতো তাড়াতাড়ি আমায় ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে ! তোমার বাবা আমায় বলতো , তোমার কোনোদিন অর্থকষ্ট হবে না , তুমি ঠিক মাসে মাসে হাতে টাকা পেয়ে যাবে । তোমার খাইখরচ , ওষুধের খরচ হবার পরও তোমার হাতে বেশ কিছু টাকা থাকবে যা দিয়ে তুমি অনায়াসে নাতি,নাতনীর আব্দার মেটাতে পারবে ।
- মা ,বাবা তো সরকারি চাকরি করতেন না ,যে পেনশন পাবেন ! তাহলে নিশ্চয়ই এল আই সির পেনশন যোজনা করেছিলেন । আমরা কিছুই সেসব জানিনা । বাবা তো কখনো কিছু ছেলেকে বলেন নি । দিদিভাইকে জিজ্ঞাসা করবেন , যদি কিছু জানে ! যাই হোক পরে কথা হবে , এখন আমি বাবুকে খেতে দেবো , ও পড়তে যাবে তো !
- মা,তুমি আমাকে এখানো কিছু খেতে দাও নি কেন ? আমার দেরি হয়ে যাবে !
- এখুনি দিচ্ছি । আরে , ঠাকুরমার সাথে কথা বলতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল রে ।
- কেন , ঠাকুরমার আবার কি হলো ? দাদু হঠাৎ করে চলে যাওয়ায় ঠাকুরমা খুব সমস্যায় পড়ে গেছে । এতে সমস্যার কিছু নেই তো,এ আইকে জানাবে,ও সব বলে দেবে ।
- আরে , ঠাকুরমা এল আই সির এজেন্টের নামও বলতে পারছে না । তাতে ক্ষতি হবে না , অফিসে গিয়ে কাগজের নম্বর দেখালেই এ আই সব বলে দেবে ।
- না না তোর দাদু বলেছিল কাউকে কিছু না জানাতে । আমি মোটেও কাউকে বলবো না । তোর মাকে বলেছি বলে কি সবাইকে বলবো ?
- আরে এ আই তোমার কোনো ক্ষতি করবে না ।
- তোর ঠাকুরমা তো এ আই সম্পর্কে কিছু জানে না ! সে কি করে বুঝবে !
- মা , আজ আমাদের স্যার খাওয়াবেন বলেছেন । তুমি আমার রান্না করো না ।
- আগে বলবি তো ! তোর দেরি হয়ে যাবে । দশ মিনিট পরে ঢুকলে কিছু বলবেন না । তুই বাড়ি আসার পর রাতে ঠাকুমার একটা গল্প বলবো ।
- না না এখুনি বলো , আমার তর সয় না ! আরে , পরে শুনবি ।
- না, না , খেতে খেতেই শুনে ফেলবো । প্রথম প্রথম যখন ফোন পকেটে রেখে কথা বলা আরম্ভ হলো, তখন একদিন আমি আর ঠাকুমা কলকাতা যাচ্ছিলাম ট্রেনে করে । ঠাকুমা একটা সিট খালি পেয়েছে , বসেছে । আমি সামনে দাঁড়িয়ে আছি । মার পাশে বসে থাকা একটা মেয়ে কথা বলছে কিন্তু তার ফোনটা দেখা যাচ্ছে না । মাঝে মাঝে হাসছে , আবার কাউকে রাগ দেখিয়ে কথা বলছে । তোর ঠাকুরমা খুব বিরক্ত হচ্ছে । কিন্তু আমার কিছু করার নেই । কিছুক্ষণ পর আমি উল্টো দিকে একটা সিট পাই । তোর ঠাকুরমা তাড়াতাড়ি উঠে আমার সিটে বসলো । মনে হলো যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো । তারপর হাওড়ায় নেমে ট্যাক্সিতে চাপলাম ।বসেই ঠাকুরমা বলছে - বৌমা , তুমি আমাকে একটা পাগলির পাশে বসিয়েছিলে ! নিজের মনেই হাসছে , কথা বলছে , রাগ করছে , ঝগড়া করছে , কি কান্ড রে বাবা ! আমার খুব ভয় করছিল ! আমি মাকে কিছুতেই বোঝাতে পারছিলাম না ,যে মেয়েটা ফোনে কথা বলছিল । সেই রকম মানুষ কখনো এ আই বুঝতে পারে !
- মাগো , তোমার কথা শুনে আমার পেটের ভেতর থেকে হাসি বেরিয়ে আসছে । তাহলে এখন কি করবে ?
- তোরা আমাকে নিয়ে যতই হাসাহাসি কর , আমি তোর দাদুর কথাই শুনে চলবো । কোনো এ আই ফে আইকে আমি চিনি না , আমি কিছু বলবো না , দেখাবো ও না । ঠিক আছে , আমি ফিরে এসে ঠাকুরমাকে বোঝাবো ।
- মা আপনি তো এল আই সির এজেন্টকে চেনেন না , হয়তো সেও আপনাকে চেনে না । বলছেন , বাবা বোধহয় অফিসে জমা দিত । এখন অফিসে গিয়ে কোনো কিছু জানতে চাইলে তারা যদি সাহায্য না করে তাহলে তো আমাদের এ আই-এর সাহায্য নিতেই হবে । বাবার নাম থেকে আপনার নামে করতে হবে , কোন যোজনায় টাকা রাখলে লাভ বেশি , এককালীন টাকা রাখলে বেশি লাভ কি না __ তার সবকিছুই এ আই আপনাকে জানিয়ে দেবে । আচ্ছা , আপনি মেয়ের কাছে এবিষয়ে একবার জানতে চাইবেন । ও আপনাকে সব বুঝিয়ে দেবে । মা জানেন , এ আই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজ ও করে দেবে । এবার হ্য়তো আপনার ছেলে ও একটা এ আই ঘরে রাখবে ।
- বৌমা , তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ? তুমি নিজের স্বামীর ঘরে অন্য কাউকে ঢোকাবে ? কি অলুক্ষণে কথা বলছো !
- মাগো , এ আই কোনো মানুষ নয় , সে একটা কম্পিউটার পুতুল মাত্র ।
- তা পুতুল আবার কি করবে ? মা ওটা একটা যন্ত্র পুতুল , কম্পিউটার তাকে দিয়ে সব কাজ করাবে । ওটা বিজ্ঞানের একটা নতুন সৃষ্টি । ও একাই অনেক কাজ করে দেবে । ভাবছি , আপনার ছেলের কাছে এ আই একটা থাকলে ওর অনেক সুবিধা হবে । অফিস থেকে ফিরে এসে ওকে রান্না করতে হবে না , ঘর গুছাতে হবে না । অফিসে অনেক কর্মচারীদের কাজ ও একাই করে দেবে ।
- সে কি গো বৌমা , তাহলে তো ছেলেদের কাজ কমে যাবে । চাকরির ক্ষেত্র কমে যাবে। তুমি আনন্দ করছো আর ভবিষ্যত ভাবছো না ! মা আমি ভাবছি বাড়ীতে একটা এ আই রাখবো । আমার অনেক কাজ কমে যাবে । আপনাকেও সে সাহায্য করবে ।
লেখিকার অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
লেখিকার পরিচিতি –
শিক্ষকতা ও সংসার সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে সাহিত্য চর্চার সময়ে টান পড়েছিল এক সময়ে। মনের সুপ্ত বাসনা মনেই লুকিয়ে ছিল । সময় পেলেই খাতা, কলম নিয়ে বসে যান লিখতে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখেন। মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অনুভূতিগুলো বেড়িয়ে আসে কবিতা হয়ে। কবিতাকে ভালবেসে ফেলেছেন।