(১)
আব্বুর কথা শুনে সখাওৎ রাগে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল।
কী করবে? কী বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। আব্বুর মুখোমুখি আর এক মিনিটও যদি দাঁড়িয়ে থাকে
তাহলে নির্ঘাত সংঘর্ষ। তাই নিমেষে ঝড়ের বেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। পিছুপিছু
দৌড়াতে-দৌড়াতে অম্মীজান এসেছিল তাকে বোঝাতে। আগুন ঝরা চোখে অম্মীজানের দিকে
তাকিয়ে রাগতস্বরে বলেছিল সখাওৎ - আমাকে বুঝিয়ে কোনও লাভ নেই। ব্যবসা যদি বাঁচিয়ে
রাখতে চাও তাহলে আব্বুকে বোঝাও। জেদের বশে আব্বু যে পথটা বেছে নিয়েছেন, জেনো, দাদা-পরদাদার
রমরমা ব্যবসাটা এক্কেবারে লাঠে উঠবে এবং আমাদের পথে বসতে আর বেশী দেরী নেই।
আমিনা বেগমের হয়েছে মুশকিল।
বাপ-বেটা মুখোমুখি হলেই বাধে সংঘর্ষ। ছেলে কে বোঝাতে গেলে, ছেলে
ক্ষেপে যায়, বলে - আব্বুকে বোঝাও। ছেলের
বাপকে বোঝাতে গেলে, উনি হাজারটা কথা শুনিয়ে
দেন। বলেন, ছেলে কে বোঝাও। এই বাপ-বেটার
লড়াইয়ে আমিনা বেগমের প্রাণ ওষ্ঠাগত। বাড়ির পরিবেশটাই একদম পাল্টে গেছে। আগে যে
ফুরফুরে খুশির হাওয়ায় বাড়িটা সবসময় মাতোয়ারা থাকত এখন যুদ্ধকালীন স্থিতির মতো
সবসময় থমথমে থাকে।
ইদানীং বাপ-বেটার মধ্যে কথা বলাবলি বন্ধ। আমিনা বেগমকে দূতের কাজ করতে হয়। একবার ছেলের স্ফুলিঙ্গ ভরা বক্তব্য ভয়ে-ভয়ে বাপের কাছে পেশ করেন এবং অপেক্ষা করেন বোমা ফাটার। জবাবে, বাপের রূঢ়, কঠিন শব্দগুলি পৌঁছে দেন ছেলের কাছে। শুনে, ছেলে তিল মিল করে জ্বলে ওঠে। বাপ-বেটার এই লড়াইয়ে আমিনা বেগমের প্রাণ জর্জরিত। ব্যবসা সম্পর্কিত মতামত যখন ছেলে, সখাওৎ এর কাছে শোনেন তখন আমিনা বেগমের মনে হয় ছেলে তো ঠিকই বলছে। আর যখন উনি ব্যবসা সম্পর্কে নিজের মতামত বলেন, তখন মনে হয় উনি তো ঠিকই বলেছেন। ছেলে কেন বুঝতে চায় না। মাঝে-মাঝে ধন্দ লাগে আমিনা বেগমের। কে ঠিক, কে বেঠিক বুঝতে পারেন না। বাড়ির এই নিরন্তর চলতে থাকা অশান্তির মাঝে আমিনা বেগম কেবলই আল্লাতালার কাছে আকুল প্রার্থনা করেন, বাপ-বেটার এই লড়াই যেন বন্ধ হয়ে যায় চিরতরের জন্য। বাড়িতে আবার ফিরে আসুক অমন, শান্তি ও শুকুন।
(২)
দু বছর হয়ে গেল ফ্যাক্টরি
বন্ধ রয়েছে। এভাবে আর চলা যায় না। সখাওৎ
মনে মনে ভাবে। একবার শেষ চেষ্টা করে দেখবে। আব্বুর মত ফেরানো যায় কিনা! আব্বু যদি
নিজের জেদে অটল থাকে তাহলে সেও নিজের পথ বেছে নেবে। অম্মীজান খুবই কষ্ট পাবেন তবু
সে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেই যাবে। বাড়িতে বেকার বসে অন্ন ধ্বংস করতে সে পারবে না।
১৯৯৯ ফেব্রুয়ারি মাস।
কাশ্মীরের বাতাসে এখনও বেশ শীতের আমেজ। হুসেন অলি অনেক সকালে ওঠেন যদিও এখন
ফ্যাক্টরি যাওয়ার তাড়া নেই তবু অভ্যাস মতো রোজই খুব সকালে ওঠেন। নমাজ অদা করে
সকালের ব্রেকফাস্ট সেরে অনেকক্ষণ ধরে আদ্যোপান্ত খবরের কাগজ টা পড়েন। আজকাল খবরের
কাগজ পড়ে খুব খুশি হন। লক্ষ্য করেন হিন্দুস্তান ও পাকিস্তানের সম্বন্ধ স্বাভাবিক
হওয়ার পথে। কাগজে খুব ফলাও করে প্রকাশ হচ্ছে বাস ডিপ্লোমেসির খবর। ভারতের
প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী ও পাকিস্তানের হুকুমৎকা উজীরে আজম, জনাব
নওয়াজ শরীফের সঙ্গে হৃদয়তাপূর্ণ বৈঠক
হয়েছে লাহোরে। আশা করা যাচ্ছে দুই দেশের সম্বন্ধ স্বাভাবিক হবে এবং দুই দেশের
নাগরিকদের রক্ষা, ভিসা, পাসপোর্ট
ইত্যাদির ব্যবস্থা সরলীকরণ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। যদিও হুসেন অলি
মনোযোগ দিয়ে খবরের কাগজ পড়েন তবু সারাক্ষণ উৎকর্ষ হয়ে থাকেন সখাওৎ এর পদশব্দ
শোনার জন্য। কতদিন হল ছেলের সাথে একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করেননি। আজকাল তো কথাও বন্ধ।
ছেলে পারতপক্ষে বাবার মুখোমুখি হয়। মনে মনে তিনি কষ্ট পান কিন্তু কারোর কাছে
প্রকাশ করেন না। এ বিষয়ে আমিনা বেগমকেও কিছু বলেন না। তাঁর মনে কি কম দুঃখ! তাঁর
বাপ-দাদার ফ্যাক্টরি টা দু বছর থেকে বন্ধ রয়েছে। মনে পড়ে যেদিন মিনিস্ট্রি অফ
ডিফেন্স থেকে চিঠি পান যে তাঁর প্রেরিত পাঁচ হাজার জোড়া আর্মি বুট লো কোয়ালিটির
জন্য খারিজ হয়ে গেছে। অকস্মাৎ বজ্রাঘাতে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। একটু শরীর
খারাপের জন্য তিনি সেদিন ফ্যাক্টরি যাননি। বাড়িতেই ছিলেন। কতক্ষণ স্থাণুবৎ বসে
ছিলেন খেয়ালই ছিল না। আমিনা বেগমের ডাকাডাকিতে সম্বিৎ ফিরে পেয়েছিলেন। বেগমের
উদ্বেগ মথিত মুখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা কথা বলেছিলেন- কিছু হয়নি, ঘুমিয়ে
পড়েছিলাম বোধহয়। বিনা মেঘে বজ্রপাতের কথা,তিনি
বেগমের কাছে চেপে গিয়েছিলেন। বাপ-ঠাকুরদার ব্যবসাটা যখন তাঁর ঘাড়ে ন্যাস্ত হল
তখন তিনি শক্ত হাতে হালটা ধরেছিলেন। নিজের শ্রম, নিষ্ঠা ও
প্রত্যুৎপন্নমতি দ্বারা ব্যবসাটা আরো বাড়িয়ে তুলেছিলেন। Advanced
Army Boot House তাঁর ঠাকুরদা যখন পত্তন করেন
তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জওহরলাল নেহরু। সেই সময় থেকে Advanced
Army Boot House ইন্ডিয়ান আর্মি কে নিয়মিত
আর্মি বুট সাপ্লাই করছে। তাঁর কারখানায় মরুভূমিতে 50° temp এ যেমন
যুদ্ধরত সৈনিকদের উপযুক্ত বুট যেমন তৈরি হয় তেমনি কাশ্মীরের পাহাড়ের চূড়ায়-
চূড়ায়, -50°temp. এ যুদ্ধরত
সৈনিকদের উপযুক্ত বুটও তৈরি হয়।
কখনও লো কোয়ালিটির জন্য মাল
রিজেক্ট হয়নি। তিনি সব সময় কোয়ালিটি মেনটেন রেখেছেন। সময়-সময়
স্বীট্জারল্যান্ড ও ঘটলে থেকে স্পেশলাইজড্ প্রযুক্তি বিদ আনিয়ে জুতোর উত্তরোত্তর
কোয়ালিটি বাড়িয়ে তুলেছেন। আর সেই ছেলে বলে কিনা- তুমি জমানার সঙ্গে চলতে জানো
না। আরো বলেছিল- তুমি জমানার সঙ্গে চলতে না পারলে মুখ থুবড়ে পড়বে। হুসেন অলির
বুকে চিনচিন করে একটা ব্যথা উঠছে। তিনি প্রাণপণে চাইছেন ব্যথাটা ভুলে খবরের কাগজে
মনোনিবেশ করতে কিন্তু কিছুতেই পারছেন না। আঘাত করা ঘটনাগুলি তাঁর চোখের সামনে
ফিরে-ফিরে আসছে।
সখাওৎ এসপার ওপারের মনোভাব
নিয়ে আব্বুর সামনে গিয়ে দাঁড়াল এবং বলল -আব্বু, তুমি মেজর
রহমান সাহেবের শর্তটা মেনে নাও। তাহলে আমাদের rejected মালগুলি
পুনরায় Indian
Army কে সাপ্লাই করতে পারব।
হুসেন অলি বললেন - তুমি বলতে
চাইছো যে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে আমি আমাদের টেন্ডারটা পাস করিয়ে নিই। আমি কেন
মিছিমিছি ঘুষ দেব? আমাদের আর্মি বুট জুতো উমদা
কোয়ালিটির এবং আন্তর্জাতিক মানের। আমরা কখনও কোনও দিন ঘুষ দিইনি। একে তো আমাদের production
cost ক্রমশঃ বেড়েই চলছে তার ওপর লক্ষ-লক্ষ টাকা ঘুষ দেশের এই গদ্দারদের দিতে
হবে।
-- আব্বুজান Advanced
Army Boot house কে যদি বাঁচিয়ে রাখতে চান
তাহলে ঘুষ দিতেই হবে। জমানার সঙ্গে চলতে না পারলে আপনি মুখ থুবড়ে পড়বেন । দেখছেন
না গঙ্গাধর পটেল ও হরিকৃষ্ণ সপ্রু কেমন Army Boot Supply করছে। এই
ফিল্ডে কোনও অভিজ্ঞতাই ছিল না, ফ্যান্সী
জুতোর কারবারি তবু কি তাড়াতাড়ি এই ফিল্ডে নিজের স্থান করে নিয়েছে। ইন্ডিয়ান
আর্মির ও মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স এর ভার প্রাপ্ত অফিসারদের মোটা রকমের ঘুষ খাইয়ে
তারা নিজেদের টেন্ডারবিড পাস করিয়ে নেয়।
হুসেন অলি মনে-মনে ভাবেন-
ঘুষ দিয়ে নিজের টেন্ডারবিড পাস করিয়ে নেওয়াই জমানার সঙ্গে চলা, না করতে
পারলে তুমি বোকা, তোমার জমানার সঙ্গে চলার
কোনও হ্যাসিয়তই নেই! নিজের ক্ষোভটা নিজের মনে চেপে রেখে হুসেন অলি তাঁর হোশিয়ার, জওয়ান ও
বিদেশ থেকে ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি আয়ত্ত করা ছেলের দিকে চেয়ে বললেন - এবার শুনি
প্রোডাকশন কস্ট কম করার সম্পর্কে তোমার কী
মতামত!
সখাওৎ খুব আত্মবিশ্বাসের
সঙ্গে বলল - মুখ্যতঃ র মেটরিয়াল ও লেবার কস্ট-এর জন্যই
প্রোডাকশন কস্ট বেড়ে যায়। তাই, এই দুটোই
কমাতে হবে। একটু ঘাটিয়া কোয়ালিটির র মেটিরিয়াল ও
আনস্কিল্ড লেবার দিয়ে কাজ করালে আপনার প্রোডাকশন কস্ট অনেক কমে যাবে। অবশ্য জুতোর
কোয়ালিটি আগেকার মতন হবে না, একটু ঘাটিয়া হবে
কিন্তু গঙ্গাধর পটেল ও হরিকৃষ্ণ সপ্রুর চেয়ে খারাপ হবে না।
হুসেন অলি গর্জে উঠলেন -
খবরদার এরকম কথা মুখেও আনবে না! জুতোর কোয়ালিটি আমি একচুলও কম করতে পারব না। যে
জওয়ানরা দেশের সুরক্ষার জন্য নিজের জান বলিদান দিতে পিছপা হয় না তাদের কে
ঘটিয়া কোয়ালিটির জুতো সাপ্লাই করে তাদের
জীবনকে আরো বিপন্ন করে তোলা। তুমি কান খুলে শুনে নাও, আমি দেশের
গদ্দারদের এক পয়সাও ঘুষ দেব না। আমার ফ্যাক্টরি চিরতরের জন্য বন্ধ হয়ে যাক না
কেন, আমি নিজের ইমানের সৌদা করব না। আমি না খেয়ে মরতে রাজি আছি কিন্তু দেশের
সঙ্গে গদ্দারদের করব না। আল্লাহ যদি মেহরবান থাকেন তাহলে Advanced
Army Boot House এর বন্ধ দরজা আবার খুলবে
একদিন।
খাপ খোলা তলোয়ারের মতো
হুসেন অলির শাণিত শব্দগুলি সখাওৎ এর হৃদয়ে বিঁধে যায়। সে রাগে দিশেহারা হয়ে
যায়। আগুন ঝরা গলায় সে বলল - ওই ঝুটা খোয়াব আপনি দেখতে থাকুন। মেজর রহমান
সাহেবের শর্ত আপনি না মানলেও তাঁর কিছু এসে যাবে না। গঙ্গাধর পটেলর মতো অনেক
প্রার্থী তাঁর কাছে আছে। একদিন দেখবেন এই গঙ্গাধর পটেল ও হরিকৃষ্ণ সপ্রু আর্মি বুট
সাপ্লাইয়ের পুরো মার্কেটটা ক্যাপচার করে নিয়েছে। যেখানে একদিন আমাদের সম্পূর্ণ
বোলবালা (আধিপত্য) ছিল। তখন হাজার চেষ্টা করলেও Advanced
Army Boot House এর বন্ধ দরজা আর খুলবে না।
শাহেনশাহ থেকে ফকির হতে বেশি সময় লাগবে না। আপনি দেখে নেবেন। আপনার ও আমার রাস্তা
আলাদা আলাদা। আমি চললাম। খুদা হাফিজ।
হুসেন অলি স্থাণুবৎ বসে
রইলেন। ছেলে কে দেখলেন চলে যেতে, চুপচাপ।
মনে-মনে ছেলেকে রুখতে চাইলেন কিছু বলতে
চাইলেন কিন্তু পারলেন না। বলতে চাইলেন যে একদিন সু সময় আসবেই, দেখিস।
মনে-মনে ভাবেন আজকালকার ছেলেদের ধৈর্য বড় কম। একটু তেই বড় অস্থির হয়ে পড়ে।
(৩)
হুসেন অলির মরার ফুরসৎ নেই। ভীষণ ব্যস্ততা। মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স থেকে তিনি একটি চিঠি পান। চিঠি পেয়ে তিনি যুগপৎ আনন্দিত ও যারপরনাই অবাক হন। দশ হাজার জোড়া আর্মি বুট সাপ্লাই করার জন্য মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স অনুরোধ করেছেন Advanced Army Boot House এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কে। তাই তিনি কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন কাজে। পাঁচ হাজার জোড়া তৈরি আর্মি বুট তো মজুদ রয়েছে আরও পাঁচ হাজার তৈরি করে যত তাড়াতাড়ি পারেন পাঠাতে হবে। টেন্ডারবিড পাস হওয়া সত্ত্বেও হঠাৎ তাঁর সাপ্লাই করা পাঁচ হাজার আর্মি বুট লো কোয়ালিটির জন্য খারিজ হয়ে গিয়েছিল। আবার তাঁকে সাপ্লাই করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে - এর রহস্য ভারত সরকারই জানে!
তিনি ও আমিনা বেগম আল্লাহর
শুকরিয়া অদা করেন বারংবার। Advanced Army Boot House এর বন্ধ
দরজা খুলে গেছে বলে। এই খুশির খবরটা ছেলে কে দিতে পারলে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি
হতেন। আমিনা বেগমও যারপরনাই খুশি কিন্তু ছেলের জন্য দুশ্চিন্তায় থাকেন। ছেলে কোথায়
আছে? কেমন আছে, কে জানে?
হুসেন অলি এবার বুঝতে পারছেন
মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স তাঁকে আর্মি বুট সাপ্লাই করার জন্য এত তাগাদা দিচ্ছে কেন! প্রতি বছর মে-জুন মাসে কাশ্মীরের
হিম পাহাড়গুলি গলতে শুরু করে এবং এই সময় পাকিস্তান থেকে আতঙ্কিরা কাশ্মীর
উপত্যকায় ঢুকে পড়ে আতঙ্কি হামলা করার
জন্য। এবার বাস ডিপ্লোমেসির আড়ালে,পাক
বাহিনী কাশ্মীরের বাতলিক, কারগিল ইত্যাদি অঞ্চলে
ব্যাপক ভাবে ঢুকে পাহাড়ের উঁচু জায়গাগুলো দখল করে নিয়েছে। নিয়ন্ত্রণ রেখার
মধ্যে অনেকটা ঢুকে পড়েছে। হিন্দুস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে লেগে গেছে যুদ্ধ।
কারগিলে চলছে ভয়ংকর যুদ্ধ। হুসেন অলি খবরের কাগজে যুদ্ধ সংক্রান্ত খবরগুলি পড়েন
আর রোষে ফুঁসে থাকেন। দেশের এই সিমান্তে চোদ্দো হাজার ফুট উঁচুতে প্রবল ঠান্ডায়, কী ভীষণ ও
বিষম পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের হিন্দুস্তানের জওয়ানরা লড়ছে, দেশ
রক্ষার তাগিদে। না আছে তাদের উপযুক্ত আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র,না আছে
তাদের উপযুক্ত ভালো বুট ও জ্যাকেট ইত্যাদি। একটা ইটালির ফার্ম
আমাদের ৩৪৩৮ জোড়া বুট বিক্রি করেছে তার জন্য আমাদের ১৮•৫ মিলিয়ন
টাকা দিতে হয়েছে। অথচ বুট গুলো কাজেই লাগল না,এতই ছোট
যে আমাদের জওয়ানদের পায়েই ঢুকল না। হায়রে আমাদের হিন্দুস্তান! কাদের হাতে আছে
দেশের বাগডোর! আমাদের কত তরতাজা তরুণ জওয়ান শত্রুদের কবল থেকে নিজের দেশের জমি
ছিনিয়ে আনতে অক্লেশে নিজেদের প্রাণ বলিদান করছে। জাঁবাজ ভারতীয় জওয়ানরা টলোলিং
পয়েন্ট, ৪৮৭৫,৪৮১২ পয়েন্ট ও গুরুত্বপূর্ণ টাইগর হিল
শত্রুদের কবল থেকে ছিনিয়ে এনেছে। তাঁর পূর্ণ বিশ্বাস ভারতীয় জওয়ানরা শত্রুদের
কবল থেকে ছিনিয়ে আনবে দেশের সমস্ত দখল করা জমি। বিজয় পতাকা উড়বে। সগৌরবে। তিনি
নিজেও গৌরান্বিত। তাঁর ফার্মের বুট পরে ভারতীয় জওয়ানরা লড়ছে। বীরদর্পে।
আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা
করছেন ছেলের ফেরার। হুসেন অলি মনে-মনে ভাবেন - সুবহ কা ভুলা শাম কো ঘর লৌটে তো উসকো ভুলা নহী কহতে।
লেখিকার পরিচিতিঃ যদিও জন্ম পলাশীপাড়া, নদিয়া জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, কিন্তু তাঁর শৈশব, বেড়ে ওঠা, শিক্ষা-দীক্ষা সব এলাহাবাদেই। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থশাস্ত্রে এম.এ.। ১৯৮১ সালে এলাহাবাদ থেকে একটি ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা "তূণীর" প্রকাশ করতেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় (দেশে ও বিদেশে) লেখা প্রকাশিত হয়। হিন্দী ও ইংরাজিতেও লেখা প্রকাশিত হয়েছে। পানামার কবি, রোখেলিও সিনান এর দশটি স্প্যানিশ কবিতা বাংলায় অনুবাদ করেছেন। 'অনুশীলন পত্রিকা'সুইডেন থেকে রাইটার্স অ্যাওয়ার্ড ২০১৩ সালে পেয়েছেন। ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছে "ঈশ্বর ও মানুষ" ( অণু গল্প ও ছোট গল্প সংকলন)। লেখিকার অভিজ্ঞতাজাত কোভিড সংক্রান্ত বই "কোভিড-১৯ আমার জীবন আমার লড়াই" গাঙচিল থেকে প্রকাশিত হয়েছে, ডিসেম্বর ২০২২ সালে।