Advt

Advt

bidrohi-kabi-kaji-nazrul-islam-er-jonmodine-shraddhanjali-by-paribrajak-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-বিদ্রোহী-কবি-কাজী-নজরুল-ইসলামের-জন্মদিনে-শ্রদ্ধাঞ্জলি

bidrohi-kabi-kaji-nazrul-islam-er-jonmodine-shraddhanjali-by-paribrajak-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-বিদ্রোহী-কবি-কাজী-নজরুল-ইসলামের-জন্মদিনে-শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলার এক দামাল অশান্ত সন্তান। তার রক্তে ছিল বিদ্রোহের আগুন। তিনি তাঁর কবিতা ও গানের মাধ্যমে যেমন ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন,অন্যদিকে এই কবিতার মাধ্যমে তিনি সত্য ও সুন্দরের সাধনায় নিয়োজিত ছিলেন। এ জন্যই বলা হয়-

"কবিতার মধ্যে দিয়ে যিনি অন্যায়,অধর্ম অসত্যের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন তিনিই গরবিণী বাংলার বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম।"

বঙ্গমাতার এই বিদ্রোহী সন্তান ১৮৯৯ সালের ২৪ মে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে, বাংলা মতে ১৩০৬ সালের ১১ই জৈষ্ঠ-তে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী নজরুল ইসলামের পিতার নাম ফকির মোহম্মদ এবং মাতার নাম জাহেদা খাতুন।  

ছোটবেলায় নজরুলকে ডাকা হতো দুখু মিয়া নামে। গ্রামের সব দুষ্টু ছেলেদের নেতা ছিলেন এই ছোট নজরুল। দশ বছর বয়সে পড়াশোনা শেষ করেন। কিন্তু এ সময় তার বাবা মারা যান। আর তাই অভাবের কালো ছায়া নেমে আসে তাদের সংসারে। নজরুল সেই বয়সেই লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। অর্থ উপার্জনের জন্য তিনি অল্প বয়সে লেটোর দলে যোগ দেন। তারা গ্রামে গ্রামে পালা গান গেয়ে বেড়াতেন। কিছুদিন রুটির দোকানেও কাজ করেছেন। সে সময় একজন উদার মনের মাস্টার মশাই তাকে সিয়ারশোলের রাজ স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। সেই স্কুলেও সেরা ছাত্রের স্থান করে নেয় বালক নজরুল। এভাবে নজরুল যখন দশম শ্রেণিতে,তখন শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। আর নজরুল তখন পড়াশোনা ছেড়ে দেন। সেখানে তিনি সৈনিক হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

নজরুল যখন করাচি সেনানিবাসে ছিলেন,তখন থেকেই তিনি কবিতা লিখে কলকাতার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় পাঠাতেন। এরপর ১৯২০ সালে যুদ্ধ শেষ হলে নজরুল কলকাতায় চলে আসেন। এবং তিনি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সাহিত্য সাধনায় সঁপে দেন। এরপর তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রকাশিত হলে তিনি বাংলায় বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিতি হন এবং বাংলার পাঠকদের  কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। তিনি কবিতা,গান,গল্প,নাটক,উপন্যাস,প্রবন্ধ রচনায় পারদর্শী ছিলেন। তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত কাব্য গ্রন্থ হল- "অগ্নিবীণা","দোলন চাঁপা", "বিষের বাঁশি","ফণীমনসা","সাম্যবাদী","সর্বহারা","ঝিঙেফুল" ইত্যাদি। আমাদের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেবা সম্পদ হল নজরুলের লেখা গান ও কবিতা। তিনি সারা জীবন প্রায় তিন হাজার গান লিখেছেন। নিজে গান গাইতেন এবং সেসব গানে সুরও দিতেন। তাঁর গান আমরা সবাই ‘নজরুল গীতি’ নামেই জানি।

আসলে কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বিদ্রোহের কবি। তিনি সর্বহারা নিপীড়িত মানুষের কবি, তাই তাঁর গানে আমরা তাঁর কবিতায় এই নিপীড়িত মানুষের অন্যায়,অবিচার ও শোষণের প্রতিবাদের সুর শুনতে পাই। তিনি মনেপ্রাণে একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক ছিলেন। নজরুল ইসলাম পরবর্তীকালে ‘ধূমকেতু’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি এই পত্রিকায় ব্রিটিশ শাসন ও তাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে গল্প লিখতেন। ওই পত্রিকায়ও তিনি বলেছিলেন 'আমরা পূর্ণ স্বাধীনতা চাই।'এ কারণে ব্রিটিশ সরকার তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনে। ফলে তাকে বেশ কিছুদিনের জন্য জেলেও থাকতে হয়।

আর এই জন্যই নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু একবার বলেছিলেন- যেদিন আমরা মিছিল করে স্বাধীনতা যুদ্ধে যাব,সেদিন আমাদের কণ্ঠে থাকবে কাজীর গান ।

একদিকে তিনি নিপীড়িত দেশের মুক্তির জন্য বহু দেশাত্মবোধক কবিতা লিখেছেন,অন্যদিকে শোষিত-নিপীড়িত মানুষের পক্ষে,সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির পক্ষে তাঁর লেখনীতে আগুন জ্বলছে।

ব্রিটিশদের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশের পাশাপাশি নজরুল ইসলাম তার কবিতায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম্প্রীতির সুর গেয়েছেন। কারণ তিনি মনে মনে বিশ্বাস করতেম-

"সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।"

তাই তিনি সারা জীবন হিন্দু-মুসলমানের মিলনের গান গেয়েছেন।  তিনি বলেছিলেন-

"মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান। মুসলিম তার নয়নমণি,হিন্দু তাহার প্রাণ"।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৪৫ সালে এই বিদ্রোহী কবিকে 'জগত্তারিণী' পুরস্কারে সম্মানিত করে। পরবর্তীতে ভারত সরকার তাকে ১৯৬০ সালে 'পদ্মভূষণ'উপাধিতে ভূষিত করে

সারা জীবন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম অসংখ্য গান রচনা করেছেন। সব গানে সুর দিয়েছেন এবং বিভিন্ন স্বাদের কবিতা উপহার দিয়েছেন। একবার তিনি বলেছিলেন -

'দুঃখ সয়েছি, আঘাতকে হাসিমুখে বরণ করেছি কিন্তু আত্মার অবমাননা করিনি। নিজের স্বাধীনতাকে কখনো বিসর্জন দিইনি। বল বীর বল চির উন্নত মম শির-একথা আমি আমার অনুভূতি থেকেই পেয়েছি।"

এই মহান কবি ১৯৪২ সালে তার বিস্ময়কর সাহিত্য জীবনের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ করেই পক্ষাঘাতের কারণে বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এর[পর তিনি একেবারে নির্বাক হয়ে যান।

এরপর কাজী নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য ১৯৫৩ সালে ইউরোপে পাঠানো হয়। কিন্তু ইউরোপের চিকিৎসা কবিকে কোনো সুফল দিতে পারেনি। কবির উন্নতি হয়নি। এরপর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান কবিকে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে নিয়ে যান। তিনি সেখানে সম্ভাব্য সর্বোত্তম চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেন। কিন্তু এটা আমাদের সবার জন্য দুর্ভাগ্য যে আমাদের প্রিয় কবি আর কোনদিনও কথা বলেননি।

এরপর ১৯৭৫ সালের শহীদ দিবসে বাংলাদেশ সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে একুশে পদকে ভূষিত করে। এভাবে চুপ থাকতে থাকতে অবশেষে ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন এই মহান বিদ্রোহী কবি। সম্পন্ন হয় তার ইহজীবনের মহান কর্মযজ্ঞ। এরপর ঢাকাতেই রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।