Advt

Advt

astropochar-er-janak-susruta-jana-ajana-feature-probondho-by-paribrajak-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-অস্ত্রোপচার-এর-জনক

astropochar-er-janak-susruta-jana-ajana-feature-probondho-by-paribrajak-tatkhanik-digital-bengali-web-bangla-online-e-magazine-অস্ত্রোপচার-এর-জনক

সুশ্রুত,হলেন একজন প্রাচীন ভারতীয় চিকিত্সক এবং শল্যচিকিৎসক,তাকে প্রায়ই "শল্যবিদ্যা ও শল্যচিকিৎসার জনক" বলা হয় ওষুধের ক্ষেত্রে তাঁর অসাধারণ অবদানের জন্য। 

৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পবিত্র শহর বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেন,সুশ্রুত ভারতে বৈদিক যুগে জীবিত ছিলেন এবং চিকিৎসা করেছিলেন বলে জানা যায়। সুশ্রুতের কাজ প্রাথমিকভাবে সুশ্রুত সংহিতায় নথিভুক্ত করা হয়েছে,একটি প্রাচীন সংস্কৃত পাঠ,যা আয়ুর্বেদের অন্যতম মৌলিক গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়, ঐতিহ্যগত ভারতীয় চিকিৎসাশাস্ত্র। মেডিসিন এবং সার্জারির এই বিস্তৃত গ্রন্থে বিভিন্ন অস্ত্রোপচার পদ্ধতি,যন্ত্র,শারীরবৃত্তীয় কাঠামো এবং রোগের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। এটিকে বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছেযা ওষুধের সাধারণ নীতি,সার্জারি,টক্সিকোলজি,চোখ ও কানের রোগ এবং প্রসূতিবিদ্যার মতো বিষয়গুলিকে কভার করে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে সুসরুতার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদানগুলির মধ্যে একটি হল ছানি সার্জারি,প্লাস্টিক সার্জারি এবং সিজারিয়ান সেকশনের মতো অপারেশন করার কৌশল সহ ৩০০ টিরও বেশি অস্ত্রোপচার পদ্ধতির বিশদ বিবরণ। সুশ্রুত -র সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ এবং সুনির্দিষ্ট নির্দেশাবলী আধুনিক অস্ত্রোপচার অনুশীলনের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং আজও অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হতে চলেছে। তার অস্ত্রোপচারের দক্ষতার পাশাপাশি,সুশ্রুত শারীরস্থানের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। তিনি হাড়,পেশী,স্নায়ু এবং অঙ্গ সহ মানবদেহের শারীরবৃত্তীয় গঠনগুলিকে নিবিড়ভাবে নথিভুক্ত করেছেন। মানবদেহের শারীরস্থান সম্পর্কে সুসরুতার বিশদ জ্ঞান তাকে নির্ভুলতা এবং নির্ভুলতার সাথে জটিল অস্ত্রোপচার পদ্ধতি সম্পাদন করতে দেয়,মানবদেহ সম্পর্কে তার গভীর উপলব্ধি প্রদর্শন করে। তদুপরি,অস্ত্রোপচার অনুশীলনে স্বাস্থ্যবিধি এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বের উপর সুসরুতার জোর দেওয়া তাঁর সময়ের জন্য বিপ্লবী ছিল। তিনি অস্ত্রোপচারের যন্ত্রের জীবাণুমুক্তকরণ,পরিষ্কার ড্রেসিং ব্যবহার এবং অস্ত্রোপচার পরবর্তী সংক্রমণ প্রতিরোধে একটি পরিষ্কার অস্ত্রোপচারের পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণের পক্ষে পরামর্শ দেন। এই অনুশীলনগুলি,যা এখন আধুনিক অস্ত্রোপচার পদ্ধতিতে আদর্শ,রোগীর ফলাফল উন্নত করতে এবং জটিলতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে সুসরুতার কাজ বিশ্বব্যাপী ওষুধের চর্চায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছে। তার সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ,উদ্ভাবনী কৌশল,এবং রোগীর নিরাপত্তা ও যত্নের উপর জোর দেওয়া বিশ্বজুড়ে চিকিৎসা চিকিৎসকদের অনুপ্রাণিত ও অবহিত করে চলেছে। "অ্যানাটমি এবং সার্জারির জনক" হিসাবে সুসরুতার উত্তরাধিকার মানবতার সুবিধার জন্য চিকিৎসা ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়ার জন্য তার অগ্রগামী চেতনা এবং উত্সর্গের প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়েছে। সুশ্রুত-র অবদান চিকিৎসা ক্ষেত্রে,বিশেষ করে শারীরস্থান এবং অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে,চিকিৎসা পেশাজীবী এবং পণ্ডিতদের দ্বারা একইভাবে অত্যন্ত সম্মানিত পদ্ধতি হিসেবে গণ্য হয়ে চলেছে। একজন অগ্রগামী চিকিত্সক এবং সার্জন হিসাবে তাঁর স্থায়ী উত্তরাধিকার প্রাচীন ভারতে চিকিৎসা জ্ঞান এবং উদ্ভাবনের সমৃদ্ধ ইতিহাসের অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে।

একদিন গভীর রাত্রে হঠাৎ সুশ্রুতের (Susruta) ঘুম ভেঙে গেল। তিনি শুনলেন কে যেন দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছে। দেওয়াল থেকে মশালটি নিয়ে দরজার কাছে গিয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, "কে ওখানে"? জবাব এলো, "আমি পথিক, অত্যন্ত বিপদে পড়ে আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। আমাকে সাহায্য করুন।" দরজা খুলে দেখলেন, একটি লোক হাঁটু গেড়ে বসে আছে এবং তার দুচোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল পড়ছে। লোকটির নাকটি রক্তাক্ত ও বিকৃত। সুশ্রুত সুস্নেহে পথিককে ভেতরে আসতে বললেন ও সান্ত্বনা দিলেন,“চুপ করে বোসো। এখনই সব ঠিক হয়ে যাবে।"

তিনি লোকটিকে একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঘরে নিয়ে গেলেন। সেই ঘরের দেওয়ালে অস্ত্র চিকিৎসার বিভিন্ন সরঞ্জাম সাজানো ছিল। এরপর সুশ্রুত লোকটিকে একটি গদিতে বসতে বললেন। তিনি লোকটির পোষাক ছাড়িয়ে দিয়ে তার মুখ প্রথমে জল দিয়ে ও পরে বিশেষ লতাগুলোর রস দিয়ে ধুইয়ে দিলেন। তারপর তিনি পথিককে একপাত্র সুরা পান করতে দিয়ে অস্ত্রচিকিৎসার প্রস্তুতি শুরু করলেন।

বাগানের লতা থেকে পাতা নিয়ে এসে তিনি প্রথমে লোকটির নাকটা মেপে নিলেন। দেওয়াল থেকে ছুরি ও চিমটা (forcep) নিয়ে এসে তিনি আগুনে সেগুলো পুড়িয়ে নিয়ে পরে লোকটির গাল থেকে খানিকটা মাংস কেটে নিলেন। লোকটি যন্ত্রণায় একটু উঃ করে উঠলো, কিন্তু সুরা পান করার জন্য তার ব্যথার বোধশক্তি অনেক কমে গিয়েছিল।

এরপর কাটা গালটিকে পটি দিয়ে বেঁধে তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সংগে সেই লোকটির নাকে দুটো নল ঢুকিয়ে সেই মাংস বিকৃত নাকের উপর লাগিয়ে দিলেন। মাংস দিয়ে নাকের আকৃতি ঠিক করে দিয়ে তার উপর তিনি একরকম শেকড়ের গুঁড়ো, রক্তচন্দন ও একজাতীয় ফলের নির্য্যাস ছড়িয়ে দিলেন। এরপর তিনি নাকেরউপর তুলো ও শোধিত তিসির তেল দিয়ে ভাল করে পট্টি বেঁধে দিলেন। এ অবস্থায় পথিকটির কি করা উচিত এবং কি করা উচিত নয় সেই সম্পর্কে তিনি তাকে বিশদ নির্দেশ দিয়ে দিলেন। তাকে নিয়মিত ভাবে কিছু ওষুধ বিষুদ খাবার কথাও বললেন। কয়েক সপ্তাহ পরে ক্ষত স্থান পরীক্ষা করার জন্য আবার আসতে বলে দিলেন।

প্রায় তিন হাজার বছর আগে সুশ্রুত যে ভাবে নাকের উপর অস্ত্র চিকিৎসা করে ছিলেন, তার সঙ্গে আজকালকার প্লাস্টিক সার্জারীর মূলত: কোনও পার্থক্য নেই। সত্যি কথা বলতে কি, সুশ্রুতকে সারা পৃথিবীতে প্লাস্টিক সার্জারীর জনক বলা হয়। তার লেখা "সুশ্রুত সংহিতায়" চিকিৎসা বিজ্ঞান সংক্রান্ত যে সব তথ্য পাওয়া যায় আজকালকার দিনেও তার যথেষ্ট মূল্য আছে। এ থেকেই বোঝা যায় যে ভারত সমস্ত পৃথিবী থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে অনেক অগ্রসর ছিল। খৃষ্টাব্দের অষ্টম শতাব্দীতে "সুশ্রুত সংহিতা” আরবী ভাষায় "কিতাব-শ-শূন-এ-হিন্দী" এবং "কিতাব-ই-সুশ্রুদ" নামে অনূদিত হয়।

বৈদিক ঋষি বিশ্বামিত্রের বংশধর সুশ্রুতের জন্য খৃঃপূঃ ষষ্ঠ শতাব্দীতে। তিনি বারাণসীতে দিভোদাস ধন্বন্তরির আশ্রমে ঔষধা- দির দ্বারা চিকিৎসা ও অস্ত্রচিকিৎসা শিক্ষা করেন। এ ছাড়া ও অস্ত্র চিকিৎসা বিদ্যার ও ঔষধাদি প্রয়োগ বিদ্যার অন্যান্য বহু শাখায় তাঁর জ্ঞান সর্বজন স্বীকৃত হয়েছিল।

তিনিই প্রথম "সিজারিয়ান" অস্ত্রচিকিৎসার বিধান দিয়েছিলেন। তিনি সেই আমলেই অস্ত্রচিকিৎসার দ্বারা মূত্রাশয়ের পাথুরী বার করা, ভাঙা হাড়ের চিকিৎসা এবং চোখের ছানি বার করায় অত্যন্ত সুদক্ষ ছিলেন। জোসেফ লিস্টার-এর বেশ কয়েক শতাব্দী আগেই তিনি অস্ত্রচিকিৎসায় ব্যবহৃত সাজসরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করার কথা বলেছেন। তিনি যে অস্ত্রচিকিৎসার অব্যবহিত পূর্বেই রোগীকে সুরা পান করানোর কথা লিখে গেছেন, তা থেকে তাঁকে আধুনিক আবেদন ক্রিয়ার (Anasthesia) জনক বলা যায়।

তাঁর গ্রন্থে ১০১ টি উপকরণ (instruments) এর উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁর সমদংশ যন্ত্র, আধুনিক অস্ত্রচিকিৎসকের স্প্রিং সন্না ব্যবচ্ছেদ এবং ড্রেসিং সন্নার পূর্বাভাস। বিভিন্ন পশুপাখীর আকৃতির সংগে মিল দেখে, সেই সব পশু পাখীর নামের সংগে নাম জড়িয়ে অস্ত্রচিকিৎসার উপকরণ গুলির নামকরণ পদ্ধতি তিনি প্রচলন করেন। বর্তমানকালে ক্রোকোডাইল ফরসেপ, হব্বিল ফরসেপ, ইত্যাদি নামের থেকে দেখা যায় যে তাঁর সেই পদ্ধতি আজও প্রচলিত আছে।

শিক্ষক হিসেবেও সুশ্রুত খুব বিচক্ষণ ছিলেন। তিনি তাঁর ছাত্রদের সবসময়েই বলতেন যে ভাল চিকিৎসক হতে হলে চিকিৎসা শাস্ত্রের তত্ত্বীয় (theoritical) এবং ব্যবহারিক (practical) এই দুই বিভাগেই সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তিনি তাঁর ছাত্রদের সত্যিকারের অস্ত্রচিকিৎসার আগে শবদেহ এবং প্রতিমূর্তি (mod- els) ওপর হাত পাকাতে বলতেন।

মানুষের শরীরে রোগ সংক্রমণকারী কীট, রক্ত শোষণের জন্য জোঁক, ঔষধি, ক্ষার, এবং ধাতুর সঠিক শ্রেণীবিভাগ করা ছাড়াও তিনি জীবজন্তুদেরও একটা মোটামুটি শ্রেণীবিভাগ করেছিলেন।