অনিমেষ একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির
অ্যাকাউন্ট্যান্ট। দশ বছরের উপর একই কোম্পানিতে আছে। ফলে অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে
সঙ্গে স্যালারিও ভদ্রগোছের হয়েছে। একমাত্র ছেলেকে নামি স্কুলে পড়িয়েও স্বচ্ছল ভাবে
সংসার চালাতে পারছে।
ইদানিং অনিমেষ অফিস থেকে ফিরে একটু ফ্রেস হয়ে চা খেয়ে
সটান বিছানায় শুয়ে পড়ছে। ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। স্ত্রী বলল," কি গো,
তোমার কি শরীর খারাপ? নাকি অফিসে কাজের চাপ বেড়েছে? ঠিক আছে তুমি বরং রেস্ট নাও।
আমিই খোকাকে নিয়ে পড়াতে বসছি।" সেই থেকে স্ত্রী নীতা-ই ছেলের পড়ার দায়িত্ব
নিয়ে নিয়েছে।
একদিন অনিমেষ অফিস থেকে ফিরে নীতাকে বলল," কি
ব্যাপার? গতকালই তো অনেকগুলো বেগুন, পটল, ঝিঙে নিয়ে এলাম। তুমি আবার এসব কেন
কিনলে?"
নীতা বলল," তুমি এখন কিসব বাজার করো, সব শুকনো বাসী
মাল। ওগুলো পাশের বাড়ির অনিমাকে দিয়ে দিয়েছি। দেখেছো, কি টাটকা বেগুন, দেখলেই ভাজা
খেতে ইচ্ছে করে। তুমি আর বাজার করো না। এখন অনেকেই সবজি নিয়ে বাড়িতে আসে। আমি দেখে
দেখে কিনে নেব।" তবু অনিমেষ মাঝে মধ্যে বাজার নিয়ে চলে আসে। দীর্ঘদিনের
অভ্যেস ছাড়তে পারে না।
পরদিন অফিস যাওয়ার সময়
নীতা বলল," যাওয়ার সময় শংকরের দোকানে এক বস্তা চাল দিয়ে যেতে বলো। চাল শেষ
হয়ে গেছে।"
" সেকি? গত সপ্তাহেই
তো পঁচিশ কেজি চাল দিয়ে গেল। এরমধ্যে শেষ হয়ে গেল?"
নীতা বলল," তোমাকে
বলা হয় নি। অনিমার বরের চাকরিটা চলে গেছে। লকডাউনের জন্য কারখানা বন্ধ। খুব খারাপ
অবস্থা। তাতেই তো আমি চাল, ডাল, আনাজপাতি দিয়ে সাহায্য করছি। পাশাপাশি থাকি, এইটুকু
করা উচিত নয়, বলো?"
অনিমেষ আর কি বলবে, চুপচাপ বেরিয়ে গেল। ছ'মাস হতে চলল
তারও চাকরি চলে গিয়েছে। তিন মাস ধরে হন্যে হয়ে চারিদিকে চাকরির চেষ্টা করেছে।
সঞ্চিত অর্থ দিয়েই সংসার চালিয়েছে। শেষকালে বাধ্য হয়ে এক বন্ধুর পরামর্শে
মানকুন্ডু থেকে ট্রেনে বর্ধমান গিয়ে ভ্যান ভাড়া করে বিভিন্ন সবজি কিনে বাড়ি বাড়ি
বিক্রি করছে। সন্ধ্যায় সেই বন্ধুর বাড়িতেই ভ্যান রেখে ফিরে আসে।লজ্জায় কাউকে বলতেও
পারছে না। এবার ভাবছে স্ত্রীকে সত্যিটা না বললেই নয়।
লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখক পরিচিতি:
জন্ম পৈত্রিক বাড়ি বর্ধমান জেলার কাটোয়া-র পানুহাট-এ। পড়াশুনা কাটোয়া কলেজ। বর্তমান নিবাস হুগলী জেলার চুঁচুড়ায়। পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী ছিলেন।
তাঁর প্রথম গল্প---চেতনা। প্রকাশিত হয় ছোটদের পত্রিকা "শুকতারা"য়, ১৯৯৬ এপ্রিল সংখ্যায়। তারপর বড়দের পত্রিকা--দেশ, কালি ও কলম, শিলাদিত্য, শুভমসাময়িকী, তথ্যকেন্দ্র, উৎসব, কথাসাহিত্য, কলেজ স্ট্রিট, দৈনিক স্টেটসম্যান, যুগশঙ্খ, একদিন,সুখবর, সংবাদ নজর, খবর ৩৬৫ দিন এবং লিটল ম্যাগাজিন-এ নিয়মিত লেখেন।
তিনটি গল্প সংকলন ও একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। " শতানীক" (ষাণ্মাসিক) সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন।
Tatkhanik digital bengali online e magazine