কাঞ্চন অফিস থেকে ফিরল সন্ধে সাতটায়। বাড়ি এখনও ঢুকে নি।
অটো থেকে সবে নেমেছে। বড় রাস্তা থেকে তিন মিনিটের হাঁটা পথে ওর বাড়ি। থমকে
দাঁড়াল।সিগারেটের নেশা পেয়েছে সেই হাওড়া স্টেশনে ঢোকার আগে থেকেই। ট্রেন মিস করবে
বলে দ্রুত গিয়ে ধরতে হল। চুঁচুড়া স্টেশনে নেমে একটু এগিয়ে যেতেই সম্মুখে একটি অটো
দেখে উঠে পড়ল।নেমে কাঞ্চন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরাল। বাড়িতে ধূমপান করলে
সুজাতা বড্ড ঘ্যানঘ্যান করে। আসল সুখটাই হয়না। সিগারেটের শেষ টান দিয়ে সম্মুখের
পঞ্চানন সুইটস থেকে ছ'টা সিঙাড়া নিয়ে বাড়ি ঢুকবে। তার আদরের মেয়েটা সিঙাড়ার খুব ভক্ত। মিষ্টির দোকানে ঢুকতেই দেখল এক ডেকচি
ভর্তি টাটকা রাবড়ি কাচের শোকেসে রাখছে। ভাবছে মা রাবড়ি খুব ভালোবাসেন। বাবা আজ
বেঁচে নেই।বাবাকে দিয়ে প্রায়ই রাবড়ি আনাতেন। কাঞ্চন চাকরি পাওয়ার প্রথম দিকেও
বলতেন, পারলে ফেরার পথে একটু রাবড়ি নিয়ে আসিস। বছরখানেক ধরে শরীরটা ভালো যাচ্ছে না
বলে খাওয়ার প্রতি রুচিও কমে গেছে। কাঞ্চন সিঙাড়ার সঙ্গে পাঁচশো গ্রাম রাবড়িও কিনল।
মা খুব খুশি হবেন। কি মনে করে দোকানদারকে বলল,"আরও একশো গ্রাম রাবড়ি আলাদা
প্যাক করে দিন তো।ক্যারিব্যাগ দিয়ে ভালো করে মুড়ে দেবেন।" কাঞ্চন ভাবছে,
সুজাতা যদি মাকে না দেয়? বললে হয়তো নামমাত্র দেবে, তাতে মায়ের নিশ্চয়ই তৃপ্তি হবে
না। তার ধারণা, সুজাতা মাকে অতটা যত্ন-আত্তি করে না। যদিও মা সুজাতা সম্পর্কে
প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বুদ্ধিমান মায়েরা কী ছেলের কাছে বৌমার সমালোচনা করে?
কাঞ্চন বাড়ি পৌঁছে ড্রেস
ছেড়ে ফ্রেস হয়ে মায়ের ঘরে ঢুকল। ওদিকে মেয়ে সামান্য মুড়ি নিয়ে সিঙাড়া খেতে ব্যস্ত।
সুজাতা রান্নাঘরে চা তৈরি করছে। কাঞ্চন বলল," মা তোমার শরীর কেমন? এই নাও এটা
রেখে গেলাম, সময় করে খেও।"
"কি আছে বাবা এটাতে?"
"একটুখানি রাবড়ি আছে।তুমি খেতে ভালোবাসো তাই রেখে গেলাম।"
"সেকী? বৌমাতো এখনই রাবড়ি খাইয়ে গেল।অনেকটা খাইয়েছে।আরও দিতে চেয়েছিল। আমি
খাইনি। তুই এটা নিয়ে যা বাবা।অত খেলে সহ্য হবে না।"
কাঞ্চন কি করবে স্থির করতে
পারছে না। মিনিট খানেক ভাবল। তারপর রাবড়ির প্যাকটা নিয়ে বাড়ির বাইরের ড্রেনে ফেলে
দিয়ে ঘরে ঢুকল।
লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
লেখক পরিচিতি:
জন্ম পৈত্রিক বাড়ি বর্ধমান জেলার কাটোয়া-র পানুহাট-এ। পড়াশুনা কাটোয়া কলেজ। বর্তমান নিবাস হুগলী জেলার চুঁচুড়ায়। পেশায় কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী ছিলেন।
তাঁর প্রথম গল্প---চেতনা। প্রকাশিত হয় ছোটদের পত্রিকা "শুকতারা"য়, ১৯৯৬ এপ্রিল সংখ্যায়। তারপর বড়দের পত্রিকা--দেশ, কালি ও কলম, শিলাদিত্য, শুভমসাময়িকী, তথ্যকেন্দ্র, উৎসব, কথাসাহিত্য, কলেজ স্ট্রিট, দৈনিক স্টেটসম্যান, যুগশঙ্খ, একদিন,সুখবর, সংবাদ নজর, খবর ৩৬৫ দিন এবং লিটল ম্যাগাজিন-এ নিয়মিত লেখেন।
তিনটি গল্প সংকলন ও একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। " শতানীক" (ষাণ্মাসিক) সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন।
Tatkhanik digital bengali online e magazine